‘মানবাধিকার বঞ্চিত ড. আফিয়া সিদ্দিকী’
লিখেছেন লিখেছেন শারমিন হক ১৩ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:০৯:১২ রাত
শারমিন হক : আধুনিক শিক্ষা যাকে বলে তার সর্বোচ্চ স্থান অর্জনকারী নির্যাতিত-নিপীড়িত এক মুসলিম আদর্শবাদী সাহসী নারী নাম হচ্ছে ড. আফিয়া সিদ্দিকী। ইসলামের জন্য সর্বস্ব হারানো এক ত্যাগী বীর, মহীয়সী নারী তিনি। আফিয়া সিদ্দিকী ইসলামের প্রতি প্রবল অনুরক্ত ছিলেন। উইকিপিডিয়া থেকে উদ্ধৃতি, ‘In 1999, while living in Boston, Siddiqui founded the Institute of Islamic Research and Teaching as a nonprofit organisation. She served as the organisation\'s president. She attended a mosque outside the city where she stored copies of the Quran and other Islamic literature for distribution. She also helped establish the Dawa Resource Center, a program that distributed Qurans and offered Islam-based advice to prison inmates.
ড. আফিয়া সিদ্দিকী ১৯৭২ সালের ২ মার্চ পাকিস্তানের করাচীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ সালেহ সিদ্দিকী। আফিয়া সিদ্দিকী তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট এবং তিন সন্তানের জননী। তিনি Massachusetts Institute of Technology (MIT)-এর উপর গ্রাজুয়েট করেন। Cognitive Neuroscience-G Brandeis University (USA) থেকে পিএইচডি করেন। যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি তিনটি গাইড লিখেছেন।
পড়াশুনা শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই তার পেশাগত এবং ইসলামিক কর্তব্য নিরাপদে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ৯/১১-এর ঘটনার পর অবস্থার পরিবর্তন ঘটলো। যুক্তরাষ্ট্রে তখন মুসলিমদের সন্দেহের চোখে দেখা হত। আফিয়া সিদ্দিকী অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তান চলে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে বেশ কয়েকজন ইসলামিক স্কলারের সাথে তার পরিচয় ছিল; যাদের তালেবান-সংশ্লিষ্ট বলে সন্দেহ করা হয়। বসনিয়ার নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি বিশাল ফান্ড গঠন করেছিলেন।
এই সূত্র ধরে তালেবানের সাথে জড়িত সন্দেহে ২০০৩-এর মার্চে পাকিস্তান থেকে তিন সন্তানসহ পারভেজ মোশাররফ সরকারের সহায়তায় তাকে অপহরণ করা হয়। দীর্ঘদিন আফগানিস্তানের কুখ্যাত বাগরাম কারাগারে পুরুষদের সাথে একই সেলে বন্দি রাখা হয়। এরপর ড. আফিয়া সিদ্দিকীকে কথিত এটেম টু মার্ডারের অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তার উপর নেমে আসে অবর্ণনীয় নির্যাতন। তাকে ধর্ষণ করা হয়, খুলে নেয়া হয় একটি কিডনি।
দীর্ঘ প্রহসনের বিচার শেষে মার্কিন সৈন্য হত্যার কথিত অভিযোগে ৮৬ বছরের কারাদ- দেয়া হয় তাকে যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং মানবতাহীন।
অথচ মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তানের একটি গ্রামের ১৭ জন ঘুমন্ত মানুষকে গুলি করে মারার অপরাধে শাস্তি পায় মাত্র কয়েক বছরের কারাদ-।
ড. আফিয়া সিদ্দিকী কাউকে হত্যা করেননি ; কেবলমাত্র এটেম টু মার্ডারের অপরাধে ৮৬ বছরের কারাদ-ে দ-িত করা হয়। পৃথিবীর কোন আইনের ভিত্তিতে এ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কিংবা ৮৬ বছরের কারাদ- যুক্তিসঙ্গত!!!
ইরাকের আবু গারিব কারাগারের ইতিহাস আমাদের অজানা নয়। বন্দীদের উলঙ্গ করে পরস্পরকে সমকামিতায় বাধ্য করা হয়, পুরুষদের যৌনাঙ্গে সিগারেটের ছেঁকা দিয়ে নারী সৈনিকরা উল্লাসে মেতেছিল। হত্যা করা হয়েছিল অসংখ্য নিরপরাধ বেসামরিক লোক। মার্কিনী সৈন্যরা এত অপরাধ করা সত্ত্বেও তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি যা ও দু-একটি করেছে নামে মাত্র বিচার। সেখানে ডঃ আফিয়া সিদ্দিকীকে ৮৬ বছরের কারাদ- বিষয়টা সত্যিই হাস্যকর!!!!
আবু গারিব, বাঘরাম কিংবা গুয়েন্তানামো যাই বলেন সব জায়গার চিত্রই ছিল অভিন্ন। মার্কিনীরা চরমভাবে মানবতাকে পদদলিত করেছে। ডা. আফিয়া সিদ্দিকীর চিঠির কিছু অংশবিশেষ-
হে আমার জাতি- আমার নাম ড. আফিয়া সিদ্দিকী, আমি Massachusetts Institute of Technology (USA) থেকে লেখাপড়া শেষ করেছি। আমার তিনটি বাচ্চা আছে। আমার উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের সহায়তায় অর্জিত আমার উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আমার জাতিকে সাহায্য করা। আমাকে অপহরণ করা হয় আমার নিজের দেশ পাকিস্তান থেকে আমার দেশের তথাকথিত মুসলিম নামধারী মুরতাদ সেনাবাহিনীর দ্বারা এবং আমায় বিক্রি করে দেয়া হয় আমেরিকার কাছে। এর পর তারা আমার ওপর চালায় পাশবিক অত্যাচার! আমাকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করা হয়; আঘাত করা হয় এবং ধর্ষণ করা হয় একের পর এক! আমি এখন মুসলিম দেশ আফগানিস্তানের কারাগার থেকে আমার বন্দিজীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দোয়া করি আমার ভাই সেই মুহাম্মদ বিন কাশিমের জন্য। আমি সারা বিশ্বের জনসংখার এক-পঞ্চমাংশ জনসংখার মুসলিমদের বোন।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৩৯৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন