প্রশ্নবিদ্ধ বিবেক ।
লিখেছেন লিখেছেন শারমিন হক ০৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:০৭:২৯ দুপুর
কিছুদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভন্ড,প্রতারক মুসা ইব্রাহিমের এভারেস্ট জয়ের নাটক ব্যাপক আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে।সে সম্পর্কে আমার ভাল কোন ধারণা না থাকলেও ৭১’এর রিপোর্টারের ভিডিও ক্লিপে যা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে মুসা ইব্রাহিমকে এভারেস্ট জয়ী প্রমাণ করতে ব্যর্থ চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট এর ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছিলাম।আমার বায়োলজি ব্যবহারিক পরীক্ষা চলছিল।আমাকে ডাকা হল বাইবাতে।আমার কলেজে শিক্ষক পরীক্ষকের কাছে আমার অনেক প্রশংসা করলেন।বললেন-মেয়েটা অনেক চেষ্টা করে ।আশা করছি সে জি পি এ-৫ পাবে।এবার পরীক্ষক আমাকে কিছু প্রশ্ন করলেন আমি ও তাঁর যথাযথ উত্তর দিলাম।পরীক্ষকের শেষ প্রশ্ন ছিল-বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট জয়ীর নাম কি?আমি কোনপ্রকার দ্বিধা-দ্বন্ধ ব্যতিরেকেই বললাম-মুসা ইব্রাহিম।আমার কলেজ শিক্ষক রীতিমত অবাক হয়ে গেলেন।তিনি বললেন-জানতাম তুমি ক্লাশে অনেক ভালো কর আজ দেখছি দেশের ও খবরাখবর রাখ।ম্যাডাম এ কথা বলার কারণ হচ্ছে আমাদের কলেজটা একেবারেই গ্রামে।যেখানে ভি টি বি ব্যতীত অন্য কোন মিডিয়াজগত সহজলভ্য ছিল না।আমি বললাম- না, ম্যাডাম তেমন একটা পারি না।তবে মাঝেমধ্যে পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করি।গতকাল পত্রিকাতে দেখলাম বাংলাদেশে প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহিমের নাম সহ ছবি।পরীক্ষক বেশ খুশি হলেন এবং বললেন মুসা ইব্রাহিমের এই পর্বতের চূঁড়া জয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ নতুনভাবে পরিচিত হয়েছে।
যাই হোক এ বিষয়টা নিযে তখন আমি ভাবিনি।কিন্তু,পরীক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরে আমার কাছে মনে হয়েছিল এভারেস্ট জয়ী মুসা ইব্রাহিমের থেকে আমি বড় কোন এভারেস্ট জয় করে ফেলেছি।
তখন না ভাবলেও এখন ভাবি-
যে দেশে প্রকাশ্যে দিবালোকে চাপাতি দিয়ে কুঁপিয়ে মানুষ খুন করা হয়,
যে দেশে ঘুমন্ত অবস্থায় শোবার ঘরে সাংবাদিক খুন হয়,
যে দেশে একজন জ্যান্ত মানুষ দিন দুপুরে সবার সম্মুখে গুম হওয়ার পর তাঁর লাশ মিলে পদ্মা অথবা মেঘনার চড়ে,
যে দেশে অহরহ চলছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড,
যে দেশে নেই কোন স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা,
যে দেশে নেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা,
যে দেশে সত্য সংবাদ প্রকাশনার অপরাধে সাংবাদিককে দিনের পর দিন পার করতে হয় অন্ধকারের কারাপ্রকোষ্টে
যে দেশের শ্রমিক শ্রমের মূল্য দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুড়ায়,
যে দেশের গনতন্ত্র আজ বাকশালীতে বন্দী।
সে দেশে ৫০ কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে গিনেস বুকে রেকর্ড করাও নাকি একটা গৌরব ও সম্মানের বিষয়।
৭১’এর রিপোর্টার যখন মুসা ইব্রাহিমকে প্রশ্ন করল-নেপালে প্রকাশিত বইয়ে পর্বতের চূড়া বিজয়ীদের মধ্যে তাঁর নাম না থাকার কারণ কি?তখন সে অপরাধীর মত তথমত কন্ঠে উত্তর দিলেন –আমার নাম না থাকার ব্যাপারে কেউ হয়তো লবিং করেছে।বিশ্বের এটাই প্রথম ঘটনা এভারেস্ট জয়ের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নেপাল থেকে প্রকাশিত তালিকায় মুসা ইব্রাহিমের নাম নেই।আশ্চর্যের বিষয় আমাদের দেশের কোমলমতি শিশুরা ও জানে মুসা ইব্রাহিম বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী ।আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিষয়টা কিভাবে নিয়েছে বলতে পারি না!তাছাড়া মুসা ইব্রাহিম যে ছবি দিয়েছে তাও সন্দেহজনক।মুহিত এর অভিযোগও যথাযথ।হয়তো এটা কোন ফটোশপ থেকে এডিট করা কোন ছবি!ছবি এডিট করা আমাদের দেশে নতুন কোন বিষয় নয়।এর আগেও আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ফ্লিম স্টাইলে গুলি করাকে ছবিকে জামাতশিবিরের তান্ডব বলে চালিয়ে দেয়ার মিথ্যে প্রচেষ্টা করেছে।কলকাতার ফটোশপকে
কপালে লাল টিপ দিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে চালিয়েছে। প্রতারণা আমাদের দেশের জন্য নতুন কিছু নয়।আমাদের দেশের নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যে বলতে পারেন।এতে তাঁরা লজ্জিত হন না।আর এ মিথ্যা কে সত্য বলে প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগে যায় দলীয় কর্মিরা।
প্রথম শুনলাম-এই জিয়া সেই জিয়া নয়।তারপর শুনলাম-২৪ শে মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে একটি চিরকুট পাঠানো হয়েছে।এরপর আদালত থেকে রায় হল-বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।প্রশ্ন থেকে যায় তাহলে ২৬ শে মার্চেকে কেন স্বাধীনতা দিবস বলা হয়?কেন ঘটা করে ২৬ শে মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উৎযাপন করা হয়!জানি কিং সায়মনের রাজত্বে প্রশ্ন করা যায় না।তাছাড়া আমাদের দেশে সত্যকে মিথ্যা ,মিথ্যাকে সত্য বলা বুদ্ধিজীবিদের কদরও কিন্তু কম নয়।আর,যেসব বুদ্ধিজীবিদের এই বিষয়গুলো সামান্য একটু খটকা লাগে তাঁরা বিষয়গুলো চেপে যায়।আমি একজন সাহসী কলমসৈনিকের গল্প জানি যিনি সত্যের জন্য কলম ধরে আজ অন্ধকার কারাপ্রকোষ্টে।যিনি চেতনাবাজদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন।এছাড়াও আমাদের দেশে বিদেশী লেখকের লেখা চুরি করেও বড় লেখক হওয়া যায়।কাগজের প্লেন বানিয়ে বিজ্ঞানী হওয়া যায়।রাজাকার পীরের আস্তানায় থেকেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চেতনা ব্যবসা করা যায়।
বিস্ময়কর বিষয়গুলো কেন জানি মনকে বারবার নাড়া দিয়ে যায়।তারপরও আমি লজ্জিত নই!
বিষয়: রাজনীতি
১০৯৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
স্বভাবিক দায়-দায়িত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসাবে বৃহত্তর সমাজ ও বিশ্বকে নিজের মধ্যে ধারন করে 'লজ্জিত হবেন না কেন, বরং সব লজ্জা সামহাউ নিজেদের মধ্যে ধরে রাখতে হবে'।
পুরো সমাজ লজ্জাহীন হলে যে, লজ্জা নামক অমূল্য সম্পদটিই মানব সমাজ হতে বিলুপ্ত হবে।
ধন্যবাদ চমৎকার লিখনী ও সমসাময়িকবিষয়াদির সুসামন্জস্যপূর্ন রিপ্লেকশানের জন্য।
ভালো লাগ্লো...
মন্তব্য করতে লগইন করুন