স্পেনে মুসলমানদের অধঃপতনের মূল কারণ হচ্ছে অপসংস্কৃতি।

লিখেছেন লিখেছেন শারমিন হক ০১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:০৩:৪৫ সকাল

ইসলামের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ভাগ্যাকাশে উদিত

হয়েছিল আধুনিক জীবনব্যবস্থা।বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত ইউরোপের মাটিতেও ইসলামের সুন্দর ও শাশ্বত জীবনব্যবস্থা অধিষ্ঠিত হয়েছিল।যার প্রমাণস্বরুপ দাঁড়িয়ে আছে গ্রানাডা,আলহামরা,টলোডা,কর্দোভা প্রভৃতি।৭১২ সালে মুসলিম সেনাপতি তারেক বিন জিয়াদ কর্তৃক স্পেন বিজিত হওয়ার পর সেখানে সুদীর্ঘ ৮০০’শ বছর মুসলিম শাসনব্যবস্থা অব্যাহত থাকে।সেই সময়ে মুসলমানদের নিরলস প্রচেষ্টায় জ্ঞান-বিজ্ঞান,শিক্ষা-সস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি ঘটেছিল।

অবাক করার মত অনেক বিষয়ই আমাদের জানার বাহিরে আছে যা সম্পূর্ণরেুপে জানলে মনে হবে -এক কথায় মুসলমানরা সবকিছুর অগ্রযাত্রার নায়ক।মুসলমানরা বিজ্ঞানের বহু বিষয়ের সূচনা ঘটিয়েছিলে যে ক্ষেত্রে তৎকালীন উন্নত স্পেনের মুসলমানদের ভূমিকা সর্বাধিক।আমরা এয়ারোপ্লেন আবিষ্কারের জনকদয়ের কথা জানি;কিন্তু কজন’ই বা জানে-রাইটদের প্রায় ১০০০ বছর আগে, একজন মুসলিম বিজ্ঞানি আব্বাস ইবন ফিরনাস প্রথম উড়ন্ত যান আবিষ্কার করেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, জ্যোতির্বিদ এবং ইঞ্জিনিয়ার। তিনি স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন।

৮৫২ সালে তিনি স্পেনের গ্র্যান্ড মস্ক থেকে প্রথম উড়ার চেষ্টা করেন।একটি কাঠের কাঠামোয় তিনি কাপড় লাগিয়ে তার ফ্লায়িং মেশিন তৈরি করেছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে পাখির মত উড়তে পারবেন। কিন্তু,কাঠামোতে কাপড় ব্যবহার করায় তিনি ব্যর্থ হন। তবে তার এই প্রচেষ্টা প্রথম প্যারাশুট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে ৮৭৫ সালে ৭০ বছর বয়সে তিনি আবারো চেষ্টা করেন। এবার তাঁর বানানো যন্ত্রে ভিন্ন উপকরণ সিল্ক এবং ঈগল পাখির পালক ব্যবহার করেন। তিনি একটি পাহাড়ের উপর থেকে লাফ দিয়ে প্রায় ১০ মিনিটের মত উড়তে সফল হন। কিন্তু,তাঁর যন্ত্রে তিনি ল্যন্ডিংয়ের কোন ব্যবস্থা না রাখায় ক্র্যাশ করেন।

ধারণা করা হয়-আমেরিকা আবিষ্কারে সূচনা স্পেন থেকে ঘটেছিল।তখনকার সময়ে আমেরিকাকে নয়াদুনিয়া বলা হত।ইসলামের অগ্রযাত্রায় কেবলমাত্র স্পেনই আলোকিত হয় নি;যাত্রা শুরু করেছিল ফ্রান্স ,পর্তুগীজ।তারেক বিন জিয়াদ ও মুসা ইবনে নুসাঈরের হাত ধরে যে স্পেন মুসলমানদের অধীনে আসে এবং খ্রিস্টানদের হাতে পতনের পূর্ব পর্যন্ত , স্পেনই ছিল সমগ্র পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ, স্পেন হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম দেশ, যে দেশে রাস্তায় স্ট্রীট ল্যাম্প জ্বলেছিল, এবং তা হয়েছিল ইসলামী খিলাফতের শাসনামলে।এ থেকেই বুঝা যায়-তখনকার স্পেন মুসলমানদের অধীনে কতটা উন্নতি লাভ করেছিল!

কিন্তু,স্পেনের মুসলমানরা তাঁদের এই সফলতাকে ধরে রাখতে পারে নি।স্পেনের মুসলমানরা ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা ভুলে গিয়েছিল।অপসংস্কৃতির ছোবলে নৈতিক চরিত্রের ধ্বংস হতে থাকে।মুসলমানদের মাঝে শুরু হয় অনৈক্য ও ক্ষমতায় টিকে থাকার তীব্র বাসনা।যার মূল্য মুসলমানদের কঠিনভাবে দিতে হয়েছিল।ইতিহাসবিদরা মনে করেন-স্পেনে মুসলমানদের অধঃপতনের মূল কারণ হচ্ছে অপসংস্কৃতির কালো থাবা।খুব কম সংখ্যক মুসলমানই স্পেন থেকে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসতে পেরেছিল।

এ দুর্বলতার সুযোগকে ষোল আনায় তৎকালীন খ্রিস্টানরা গ্রহণ করেছিল।তাঁরা জটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল।খ্রিস্টানরা সিদ্ধান্ত নিল- যে করেই হোক স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করতে হবে।যেই কথা সেই কাজ শুরু করে দিল তাঁদের কুচক্রী চিন্তা-ভাবনার বাস্তবায়ন।এ চিন্তা নিয়েই পর্তুগীজ রানী ইসাবেলা চরম মুসলিম-বিদ্বেষী পার্শ্ববর্তী খ্রিস্টান সম্রাট ফার্দিনান্দকে বিয়ে করে।বিয়ের পর দু’জন মিলে মুসলমান নিধনের সকল কার্যক্রম চালাতে শুরু করে।খ্রিস্টানদের সম্মলিত বাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে হাজার হজার নারী পুরুষকে হত্যা করে জয়ের উল্লাস করতে করতে রাজধানী গ্রানাডায় ছুটে আসে।

পথহারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকা মুসলমান খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রতিরোধ গড়তে পারে নি।মুসলমানদের এতদিনে হুশ হয় যে –তাঁরা নিঃশ্চিহ্ন হতে চলেছে।সম্মুখে যুদ্ধ করে মুসলমানদের কখনও পরাজিত করতে পারে নি বলে চতুর ফার্দিনান্দ মুসলমান নিধনে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম পথ বেঁচে নিল।ঘোষণা দিল-“মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্হভাবে মসজিদ এবং জাহাজে আশ্রয় নেয় তবে তাঁরা প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাবে।”

১লা এপ্রিল ।১৪৯২ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৮৯৭ ‍হিজরির ১২ই রবিউল আউয়াল।প্রতারক ফার্দিনান্দের কথায় আশ্বস্ত হয়ে অসহায় গ্রানাডাবাসী মসজিদ এবং জাহাজে আশ্রয় গ্রহণ করল।তারপর ফার্দিনান্দের লোকেরা মসজিদগুলোতে তালা লাগিয়ে আগুন দেয় এবং জাহাজগুলোকে পানিতে ডুবিয়ে দেয়।খ্রিস্টানদের মুসলমান মারার এ উৎসব তিনদিন ধরে চলতে থাকে।আগুনে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকল স্পেন গড়ার কারিগরের উত্তরসুরীরা।অগিন্দগ্ধ এবং পানিতে ডুবে মারা যায় অসহায় মুসলিম গ্রানাডাবাসী।যখন অগ্নিদগ্ধ মুসলমানদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী ও শোকার্ত হয়ে ওঠছিল তখন ফার্দিনান্দ খ্রিস্টানরা জয়ের অট্রহাসিতে মেতেছিল এবং পর্তুগীজের রানী ইসাবেলা খুশিতে আত্মহারা হয়ে স্বামী ফার্দিনান্দকে জড়িয়ে ধরে বিজয়ের হাসি হেসে বলল-হায় মুসলমান!শত্রুর আশ্বাসে বিশ্বাস করা এপ্রিলের ফুল(এপ্রিল ফূল=এপ্রিলের বোকা) ছাড়া আর কিছুই নয়।সেই থেকে ১লা এপ্রিল ,এপ্রিল ফুল হিসেবে প্রচলিত হতে থাকল।

১লা এপ্রিল মুসলমানদের জন্য একটি বেদানাদায়ক ও রক্তাত্তময় লোহমর্ষক দিন।অপরদিকে, এটি হচ্ছে খ্রিস্টানদের আনন্দ উল্লাসের দিন।স্বাভাবিকভাবে এ দিনটি কোনক্রমেই মুসলমানদের উৎসবের দিন হতে পারে না।মুসলমানদের ক্ষেত্রে এপ্রিল ফুল পালন করা বোকামী ব্যতীত আর কিছুই নয়!সেইদিন নিরীহ মুসলমানদেরকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে হত্যা করার নেশায় মাতোয়ারা খ্রিস্টানদের এপ্রিল ফুলকে পালন করা মুসলমানদের জন্য অত্যান্ত ঘৃণিত কাজ।আসুন আমরা যে কোন কিছু পালন করার আগে সেই সম্পর্কে জানি এবং বুঝতে চেষ্টা করি।এপ্রিল ফুল পালন করা থেকে আমরা বিরত থাকি এবং এ দিনে কোন মুসলমানকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানো পরিহার করি সেই সাথে সকল ধরণের অপসংস্কৃতিকে বর্জন করি।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

201170
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৩৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটির জন্য।
গ্রানাডায় সেদিন কেবল মুসলিম দের হত্যাই করা হয়নি সেই সঙ্গে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল ৮০০ বছরের সঞ্চিত জ্ঞান। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল অনেক বই পুস্তক। কারো কাছে বই পাওয়া গেলে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এমনকি সে খৃষ্টান হলেও।
201177
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৪২
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : গ্রানাডায় সেদিন কেবল মুসলিম দের হত্যাই করা হয়নি সেই সঙ্গে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল ৮০০ বছরের সঞ্চিত জ্ঞান। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল অনেক বই পুস্তক। কারো কাছে বই পাওয়া গেলে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এমনকি সে খৃষ্টান হলেও।
201186
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : তথ্যসমৃদ্ধ পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
201213
০১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৩০
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আমার কাছে সবথেকে আফসোসের ইতিহাস মনে হয় এটাকেই। আহারে..যদি আজ ওই সমৃদ্ধি মুসলমানদের থাকতো..ইতিহাসটাই পাল্টে যেত!
201258
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:১৫
আকাশকুসুম লিখেছেন : আসলে "এপ্রিল ফুল"এর এই ইতিহাস প্রমাণিত নয়। যদিও "এপ্রিল ফুল" পালন ইসলামে যায়েজ নয়, আমাদের জন্য এটাও ঠিক নয় যে যাচাই না করেই প্রচার করব।

For more info:

null
201260
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:১৭
আকাশকুসুম লিখেছেন :
null" target="_blank"]"এপ্রিল ফুল"এর ইতিহাস[/url]
201261
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:১৮
আকাশকুসুম লিখেছেন : However, please let me know if you have authentic references for that.
201375
০১ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৪২
নীল জোছনা লিখেছেন : জাজাকাল্লা খায়র... অনেক ভালো লাগলো পড়ে। আরো বেশী বেশী লিখুন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File