কওমী আলেমদেরকে অধিক conservative মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
লিখেছেন লিখেছেন শারমিন হক ১৮ অক্টোবর, ২০১৩, ১০:০৮:৪২ রাত
আল্লামা শফি সাহেবের ওয়াজের একটি অংশ নিয়ে আওয়ামি নাস্তিকরা অপপ্রচারে লিপ্ত।প্রথমেই বলে রাখি আল্লামা শফি সাহেব তাঁর বক্তব্যে যা বলেছেন তা তাঁর বক্ত্যদের জন্য।তাতেই যারা হাতাকাটা ব্লাউজ পড়ে,লিভ টুগেদার করে,আজ এক স্বামী ধরে তো কাল অন্য স্বামী তাঁদের গা জ্বালা শুরু হয়ে গিয়েছে।
গ্রামের মানুষদেরকে বুঝানোর জন্য ওয়াজিগণ এরকম অনেক উদাহরণ টেনে থাকেন যেটা আল্লামা শফি করেছেন।তাছাড়া,আল্লামা শফি অবাস্তব কিছু বলেন নি।তবে একটি জায়গায় আমি তাঁর সাথে দ্বিমত পোষণ করি তা হল-”মেয়েদের পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করাই যথেষ্ট।”কিন্তু,অনেকে বলে এটা মিডিয়ার কারসাজি যদি তাই হয়ে থাকে তবে তা অনেক ঘৃণিত কাজ হয়েছে।আর যদি সত্যিই তিনি বলে থাকেন তাহলে উনি যেভাবে সমাধান খুঁজেছেন সেভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়।কারণ,পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া একটি মেয়ে কখনই শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ হতে পারে না।এছাড়া ,যেখানে দিনে দিনে নাস্তিকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে,সেখানে পঞ্চম শ্রেণীর একজন ছাত্রী কিভাবে তাঁর প্রতিবাদ করবে!আর এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে একদিন সবকিছুই চলে যাবে নাস্তিকদের নিয়ন্ত্রণে।অনেকে বলতে পারেন নাস্তিকদের প্রতিবাদ করতে ছেলেরাই যথেষ্ট কিন্তু তা কখনই সম্ভব নয় কারণ নাস্তিক ছেলেদের অপেক্ষা নাস্তিক মেয়েদের সংখ্যাই অধিক।তবে এক্ষেত্রে নারীদের শিক্ষা ব্যবস্থা ইসলামিক চিন্তাধারায় উন্নত মানের হওয়াটা মনে হয় বেশি উপকারী হবে।
কওমী আলেমরা সবাই সমান নয় তবে অধিক কঠোরতার সংখ্যার পরিমানটা একটু বেশি।যার উদাহরণ আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি-আমরা চারবোন দুই ভাই।বোনের মধ্যে আমি মেজ।আমাদের তিন বোনের বিয়ে হয়েছে এবং তিন জামাই কওমী আলেম।আমার বড় বোনের এস এস সি পাশ হওয়া মাত্রই বিয়ে হয় দুলাভাইয়ের ইচ্ছায় লেখাপড়ার জীবন সামনে আর এগুতো পারে নি।আমি এখনও পড়ালেখা করতেছি।সেজ বোনের এস এস সি পরীক্ষার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়।অবশ্য আমরা এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চায়নি কিন্তু আমার দুলাভাইয়ের(গহর ডাঙা মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন) পিড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত আব্বা রাজি হয়ে যান।তখন আমার মত কিছুটা থাকলেও আমার হাসবেন্ডের মত একেবারেই ছিল না।সে অনেকবার নিষেধ করেছে তখন বিয়ে দিতে।যাহোক ছেলে পক্ষ আমার বোনকে দেখে তখনই বিয়ে করতে চায়।তখন আমার বাবা বলেছিল বিয়ের পর ওকে অন্তত এস এস সি পরীক্ষাটা যেন দেওয়ানো হয় ,তাঁরা বিয়ে করাতে বদ্ধ পরিকর হওয়া তখন আব্বার কথা মেনে নেয়।কিন্তু,বিয়ের পর ওর স্বামী ওকে স্কুলে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে চায় এবং হয়ও তাই।আমার বোন এতে দারুণভাবে আঘাত পায় এবং দিনে দিনে সংসারটা কেমন এলোমেলো হয়ে যেতে শুরু করে।আরো কিছু পারিবারিক কারণে ও ওর স্বামীর বাড়ি থেকে চলে এসে ওখানে আর যেতে চায় না।তখন আমি এবং আমার হাসবেণ্ড বাবাকে অনেক বুঝিয়ে ওকে এস এস সি পরীক্ষাটা দেওয়াতে বলি সুযোগও পেয়ে যায় দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়ার এবং মানসম্মত একটি রেজাল্ট ও করে।তারপর ওকে কলেজেও ভর্তি করি ।এখন ও ইন্টার মিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট।ওদের সংসারটা এখনও টিকে আছে কিন্তু স্বামীর কাছ থেকে কোন সাহায্যই পায় না সে।তারপরও স্বামীর হাজারও অভিযোগ কি হবে এ লেখাপড়া দিয়ে।একটি কথা বলে রাখা দরকার,সে এসবই করতেছে ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় ।তাঁর একটি ভাল গুণ আছে সে যত বড় অপরাধই করুক না কেন কখনও মিথ্যা বলে না।
আমার আজকের এ লেখার উদ্দেশ্য বাহবা পেতে নয়।কিন্তু,আমার এ ক্ষুদ্রমনে মনে যতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি ততটুকু উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।আমার ধ্যান ধারণা ঠিক নাও হতে পারে তবে আমাদের বিশেষ করে কওমী আলেমদের এ ধরণের মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।এগিয়ে নিতে হবে নারী শিক্ষা,তবে তা ইসলামিক জীবনব্যবস্থায়।আমরা মুসলিম নারীরা যদি শিক্ষিত না হতে পারি তবে রোকেয়া প্রাচি,মিতা হক,তসলিমা নাসরিনদের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলবে।
বিষয়: বিবিধ
১৬১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন