রায় পাঠকালে ‘নন স্টপ’ সালাউদ্দিন কাদের” রায় পড়াকালীন পুরো সময় ধরে তিনি বিভিন্ন মন্তব্য কর। (একটি কপি পোষ্ট)

লিখেছেন লিখেছেন শারমিন হক ০১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:২০:৫৫ সন্ধ্যা

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় পড়াকালীন পুরো সময় ধরে তিনি বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারব্যবস্থাসহ বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে একের পর এক মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে ট্রাইব্যুনালে যাদের রায় দেয়া হয়েছে তাদের কেউ রায়ের সময় কোনো ধরনের মন্তব্য করেননি।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রায় পড়ার শুরুতেই বিচারপতিদের উদ্দেশে বলেন, “কী রায় আর দেবেন। রায় তো কালই বেরিয়ে গেছে। যা পড়েছেন, পড়েছেন। বাকিটা ওয়েবসাইট থেকে নিয়ে নিলেই হয়!”

এদিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে উঠানোর আগেই তার ছোট ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেছেন, বাবা চুপ থাকবেন না। আগের মতোই কথা বলবেন।

এজলাসে উঠানোর পর তার কথাই প্রমাণিত হলো।

সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা ও চকলেট রঙের জুতা পরিহিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ট্রাইব্যুনালের হাজতখানা থেকে সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে এজলাসে হাজির করা হয়। এজলাস কক্ষে এসে তিনি পানি পান করে আসামির কাঠগড়ায় রাখা চেয়ারে বসেন।

প্রথমে তাকে বেশ কয়েক মিনিট চিন্তিত মনে হলেও পরক্ষণে তা কেটে যায়। একে একে আদালতে হাজির হন তার স্ত্রী, মেয়ে, দুই ছেলে, ছেলের বউ, ফুফু ও ভাতিজারা।

১০টা ৪৪ মিনিটে রায় পড়া শুরু হলে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

রায় পড়া শুরু হওয়ার পর তিনি একেএকে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন। আর গতকালের রায়ের সঙ্গে আজকের রায় মিলে যাওয়া প্রসঙ্গে বলতে থাকেন।

রায়ের এক পর্যায়ে বিচারপতি আনোয়ারুল হক যখন পড়তে থাকেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাঁচবারের সংসদ সদস্য- সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ জানিয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, “জনগণ আমাকে ছয়বার সংসদে পাঠিয়েছে। তবে যেহেতু আপনারা রায়ে তা লেখেই ফেলেছেন, পাঁচবারই থাকুক।”

এই সময় তার স্ত্রী ফরহাদ কাদের চৌধুরী বলেন, “ওয়েবসাইটে যে রায় প্রকাশিত হয়েছে, তাই পড়া হচ্ছে। এই রায় আইনমন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়েছিল।”

তখন সালাহউদ্দিন কাদের হাসতে হাসতে বলেন, “এত দিন বলা হয়েছে দেশী আইনে বিচার হচ্ছে। এখন বলা হচ্ছে বিদেশী আইন। আর আইনমন্ত্রী বলছেন দেশী আইনে বিচার হচ্ছে।”

বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর আলমকে লক্ষ করে বলেন, “আইন করেছি আমরা। তাই তোরা জজ হইছোছ। দুই দিন আগে প্রকাশিত রায়ও তোরা ঠিকমত রিডিং পড়তে পারছো না। দুঃখ লাগে তোদের কেন চাকরি দিলাম।”

তিনি বলেন, “আমাকে নির্বাচন করতে না দেয়ার জন্য বেচারারা এত কষ্ট করছে। ৯৬ সালে বিএনপি থেকে যখন বাদ পড়েছিলাম, তখন আমি ছিলাম দেশপ্রমিক। পরে আবার বিএনপিতে যোগ দেয়ায় কবীরা গোনাহ করে ফেলেছি।”

মন্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি এ রায়কে ‘সহিহ হাদিস’ বলে আখ্যা দেন।

রায় পড়াকালীন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী উচ্চস্বরে বলেন, “এই রায় বেলজিয়াম ও দিল্লি থেকে লেখে আনা হয়েছে। স্যার (বিচারপতি) এগুলো অনলাইনে চলে এসেছে। পড়ার দরকার নেই। গত দুই দিন আগেই তা প্রকাশ পেয়েছে। এখন খামাখা পড়ে লাভ কী? সময় নষ্ট।”

এই সময় বিচারপতিরা রায় পড়া কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ করে দেন। তবে কেউই কোনো কথা বলেননি।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, “এখন সংসদ অধিবেশন চলছে। আর তারা জবরদস্তি করে রায় দিয়ে দিচ্ছে। যে সব জায়গায় আমি জীবনেও যাইনি, এমনকি ভোট চাইতেও না অথচ রায়ে বলা হচ্ছে আমি নাকি সেখানে গিয়ে মানুষ হত্যা করেছি।”

নতুন চন্দ্র সিংহ চট্টগ্রামে অনেক জনপ্রিয় ছিলেন উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল যখন মন্তব্য করেন তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, “জনপ্রিয় তো হবেই। মদ বিক্রিয় করলে জনপ্রিয় হবে না?”

জাতিসংঘের অধিবেশনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিদেশীদের সাহার্য্য চেয়েছেন দাবি করে তিনি এই সময় এজলাসে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ডেইলি স্টারের প্রতিবেদককে বলেন, “তুমি যে পত্রিকায় কাজ কর, তা বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনায় চলে। তোমার সম্পাদককে বইলো আমি তাকে স্মরণ করেছি।” এ সময় তিনি ডেইলি স্টারকে দিল্লি স্টার বলেও মন্তব্য করেন।

৩ নাম্বার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন যখন রায় পড়ছিলেন তখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তোমার বইনের (বোন) লগে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, শালা।”

এই সময় তিনি আরো বলেন, “সোনা লাল হইয়া গেছে, কিন্তু এখনো ঠিক আছে। ফাঁসি দিবা তো, দাও সমস্যা নাই।”

আজানের সময় রায় পড়া বন্ধ রাখায় তিনি বলেন, “আজানের সময় নাস্তিকরা এভাবে মুখ বন্ধ কইরা দিল অথচ তারাই সংবিধান থেকে আল্লাহ ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়েছে।”

বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, “সাঈদী (আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) সাহেবের মতো লোককে যেখানে ফাঁসি দেয়া হয়, সেখানে আমি তো অনেক বড় গোনাহগার। কাদের মোল্লাকে কসাই কাদের বইলা ফাঁসি দিয়া দেয়া হয়েছে।”

এক পর্যায়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, “উনি দেশটারে একটা পাগলখানা বানাইছে।”

তার বিরুদ্ধে আনীত ২৩ অভিযোগের মধ্যে ৯টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্থ করে ট্রাইব্যুনাল যখন তাকে সাজা দেয় তখন তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, নো নেভার।

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এক কথায় বললেই তো হয় যে, ৩০ লাখ লোক আমি মারছি।

রায় পড়ার সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বেশ স্বাভাবিক ছিলেন। এমনকি ফাঁসির আদেশ শোনার পরেও তিনি বিচলিত হননি। বরং তাকে ঘিরে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে তিনি মজা করেন। রায় নিয়ে ব্যাপক ব্যঙ্গ ও হাস্যকর মন্তব্য করেন। আদালতে পুরো সময়টা সালাহউদ্দিন কাদরে চৌধুরীর মুখে হাসি দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

রায়ের পর কড়া পুলিশ পাহারায় তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সূত্র : নতুনবার্তা।

বিষয়: বিবিধ

১০৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File