ন্যায়হীন একটি অবিচারের দেশ।
লিখেছেন লিখেছেন শারমিন হক ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:০৯:০৬ রাত
গুরু ও শিষ্য ভ্রমণে বেরিয়েছে।তাঁরা ভ্রমণ করতে করতে এমন এক দেশে গেল যেখানে ঘি এবং দুধের দাম অভিন্ন।
শিষ্য:আজ থেকে আমরা এদেশেই থেকে যাই।
গুরু:কেন?
শিষ্য:এখানে ঘি ও দুধের দাম একই।
গুরু:তাতে কি হয়েছে !ঘি এবং দুধের দাম এক হতে পারে না।এটা ন্যায়হীন একটি অবিচারের দেশ।
শিষ্য:কিন্তু,শিষ্য নাছোড়বান্দা সে এখানে থাকবেই ।
গুরু:কি আর করা গুরুও রাজি হল।
ঘটনাক্রমে ঐ দেশে এক বাড়িতে দুই চোর চুরি করতে গিয়ে এক চোর সিঁদ কেটে ঘরের ভিতরে ঢুকতে গিয়ে দেয়াল ধসে মারা যায়।আরেকটি চোর ঐ দেশের মহারাজের কাছে গিয়ে বিচার চায় এবং বলে আপনার দেশে এরকম আবিচার কেমন করে হয়?
মহারাজ:যাও,ঐ বাড়িওলার মালিক কে ডেকে নিয়ে এস।
বাড়ির মালিক:যেই বলা সেই কাজ ।বাড়ির মালিক ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মহারাজর কাছে হাজির।
মহারাজ:তুমি কি রকম নড়বড়ে বাড়ি তৈরি করেছ?যেখানে একটি চোর চুরি করতে গিয়ে মারা গেল।
বাড়ির মালিক:কি করব মহারাজ !আমার দোষ কি আমি তো রাজমিস্ত্রীকে ঠিকমত বেতন দিযেছি?
মহারাজ:ছেড়ে দাও একে ডেকে নিয়ে আস রাজমিস্ত্রীকে।
মহারাজের অর্ডার বলে কথা রাজমিস্ত্রীও হাজির ।
মহারাজ:তুমি কিভাবে বাড়ি তৈরি করলে যে বাড়িতে একটি চোর চুরি করতে তার প্রাণ হারাল?
রাজমিস্ত্রী:আমার দোষ কোথায় আমি সঠিকভাবেই ভীত করছি!দোষ যদি করে থাকে তবে তা করেছে আমার সহকারী ।সে হয়তো কোনটা (বালি,সিমেন্ট,পানি,ইট) কমবেশি দিয়েছে।
রাজমিস্ত্রীকেও ছেড়ে দেয়া হলে ডাকা হল তাঁর সহকারীকে।
মহারাজ:তুমি তোমার কাজ সঠিকভাবে করনি বলেই আজ এক চোর মারা গেল।
রাজমিস্ত্রীর সহকারী:আমি আবার কি করলাম দোষ তো পাগলা হাতির।পাগল হাতি দেখে আমি ভয় পেয়েছিলাম বলেই তো আমার হাত কাঁপছিল যার ফলে পরিমানের থেকে বেশি পানি পড়ে যায়।রাজমিস্ত্রীর সহকারীও রেহাই পেল।
ডাকা হল পাগল হাতির মাহুতকে।সে বেচারাও হাজির।
মহারাজ:তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলান হবে তোমার কারণেই আজ এক চোর মারা গেল।
মাহুত:আমার কোন দোষ নেই।আমার পাগলা হাতি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তখন অলংকার পরিহিত এক মহিলার অলংকারের ঝনঝনানিতে ভয় পেয়ে যায় সে এবং দিক বেদিক ছোটাছুটি শুরু করে।মাহুতকেও মুক্তি দেয়া হল।
ডাক পড়ল অলংকার পরিহিত সেই মহিলার ।তৎক্ষণাৎ উপস্থিতও হল সে।
তাঁর যুক্তির কাছেও মহারাজ হেরে গেল।
মহিলা:অলংকার তো আর আমি তৈরি করিনি তো আমার দোষ হবে কেন!অলংকার তৈরি করেছে স্বর্ণকার।তাঁকেও আর ফাঁসিতে ঝূলতে হল না।
ডাকা হল স্বর্ণকারকে ।
মহারাজ:তোমাকে ফাঁসি দেয়া হবে ।কারণ,তোমার কারণেই আমার দেশে অবিচার নামক কথাটির সৃষ্টি হয়েছে।
স্বর্ণকার:এর আর কিছুই বলার থাকল না।কারণ,সে এ কাজটি শিখেছিল তাঁর বাবার কাছে এবং তাঁর বাবা অলরেডি পৃথিবী থেকে বিদায়ও নিযেছে।
স্বর্ণকারকে ফাঁসি দেয়ার জন্য একটা রশি আনা হল কিন্তু স্বর্ণকারের গলা এতটাই চিকন ছিল যে ঐ রশি দিয়ে তাঁকে ফাঁসি দেয়া যাচ্ছিল না।
মহারাজ হুকুম করল দেখ আমার দেশে সবথেকে বেশি মোটা কে তাকেই ফাঁসি দেয়া হবে।খুঁজতে খুঁজতে যাকে পাওয়া গেল সে হচ্ছে ঐদেশে ঘুরতে আসা সেই শিষ্য।শিষ্য ঘি খাইতে খাইতে এতই মোটা হয়েছিল যে ঐদেশের মোটা মানুষদের শীর্ষস্থান তাঁর দখলে।
শিষ্য:গুরু আমাকে বাঁচাও না!
গুরু:কিভাবে বাঁচাব বল তোকে সেসময়ই বলেছিলাম এটা অবিচারের দেশ।
শিষ্য:দেখ না চেষ্টা করে।
গুরু এবং শিষ্য দু’জনেই মহারাজের সামনে হাজির।শিষ্যকে ফাঁসি দিতে গেলে গুরু বলে ওঠল আমাকে ফাঁসি দেন মহারাজ।আপনারতো একজনকে ফাঁসি দিতে পারলেই হল।
শিষ্য:না,গুরু এটা হয় না।ফাঁসি আমাকেই দিক।
এ নিয়ে শুরু হয়ে গেল দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা।
মহারাজতো অবাক!
মহারাজ:দু’জনকেই ডাকল এবং জিজ্ঞাসা করল আচ্ছা কেউ তো স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে চায় না তোমরা চাচ্ছ কেন?
গুরু:আমি গননা করে দেখেছি আজকে যাকে ফাঁসি দেয়া হবে সে বৈকুণ্ঠে স্বর্গে যাবে।
মহারাজ:অতঃপর মহারাজ নিজেই নিজেকে ফাঁসি দেয়ার হুংকার দিল এবং বলল আমাকেই ফাঁসি দেয়া হোক আমিই যাব বৈকুণ্ঠে স্বর্গে।
আসলেই আমরা আজ এক অবিচারের দেশে বাস করতেছি যেখানে নেই কোন সু-শাসন,চলছে শুধু দুঃশাসন।
কোন কারণে কাকে ফাঁসি দেয় তার কোন কিছুই পরিষ্কার নয়।আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বক্তা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী একজন সফল ব্যক্তিত্ব।অথচ,বিনা কারণে মিথ্যার ধুম্রজালে তাঁকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে।কি দোষ তাঁর জনপ্রিয়তা!হ্যাঁ,তাই।মানুষকে সে পছন্দ করতে বলেনি ,মানুষই তাঁকে পছন্দ করেছে।
বিষয়: বিবিধ
১৭১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন