যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের পরেই মুসলিমদের ওপর আক্রমণ

লিখেছেন লিখেছেন আকবার১ ০৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:২০:৩২ রাত



অক্টোবরের ৯/১০ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস অঙ্গরাজ্যের গার্ডেন সিটি শহরে অতি চাঞ্চল্যকর অভিযোগে তিন শ্বেতাঙ্গকে গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করা হয়েছে। অভিযোগটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের নিউজ এজেন্সিগুলোতে গ্রেফতারের সংবাদটি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! কেন? ‘যে জন বুঝহ, করহ সন্ধান’।

তবে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রকাশিত শীর্ষস্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্র ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ গ্রেফতারদের চিত্রসহ সংবাদটি প্রকাশ করায় ঘটনাটি জানাজানি হলো। কানাডার শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘টরন্টো স্টার’ ১৬ অক্টোবর ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলে কানাডাবাসীও ঘটনাটি জানতে পেরেছে।

ঘটনাটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি ‘ধর্মযুদ্ধ’ প্রজ্বলিত করে দেয়ার উদ্দেশ্যে তিন শ্বেতাঙ্গ ‘ক্রুসেডার’ (ঐতিহাসিকভাবে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টান ধর্মযোদ্ধা) মুসলমানদের হত্যা করার পরিকল্পনা করছিল মর্মে আদালতে অভিযুক্ত হয়েছে। নিচে ‘ওয়াশিংটন পোস্টে’র নিজস্ব প্রতিবেদক ক্লিভ আর, উটসন জুনিয়র লিখিত প্রতিবেদনটি হুবহু অনুবাদ করে দেয়া হলো:

‘এই ‘ক্রুসেডার’রা স্বেচ্ছায় মুসলিমদের হত্যা করতে চেয়েছিল এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে এই ‘রক্তপাত’কে ব্যবহার করে একটি ধর্মযুদ্ধ প্রজ্বলিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে চিন্তাভাবনা করেও তারা এর পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত করতে পারছিল না।

সব চেয়ে সহজ পন্থা ছিল, তারা বন্দুক হাতে বেশির ভাগ সোমালি মুসলিমদের আবাসিক বহুতল কমপ্লেক্সে, যেটা তারা নজরদারি করে আসছিল, ঢুকে পড়ে লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটগুলোর ভেতরে হত্যাকাণ্ড চালানো। আদালতের নথিপত্রে এ তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তারা একজনকেও রেহাই না দিয়ে নির্বিচারে এমনকি শিশুদেরও হত্যা করত।

তবে শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বহুতল ভবন কমপ্লেক্সের ভেতরে তারা একাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটাবে, যেমনটি করে টিমোথি ম্যাকভেই ১৯৯৫ সালে ওকলাহোমা সিটিতে ১৬৮ জনকে হত্যা করেছিল। তদন্তকারীরা বলছেন, ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হওয়ার পরেই তারা এই আক্রমণের পরিকল্পনা আঁটছিল।

বিচার দফতর শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) ঘোষণা করে, ব্যাপকভাবে ধ্বংসকারী অস্ত্র ব্যবহার করে একটি বহুতল আবাসিক ভবন কমপ্লেক্স, একটি মসজিদ এবং সোমালিয়া থেকে আগত মুসলিম অভিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার কার্টিস অ্যালেন, গ্যাভিন রাইট এবং প্যাট্রিক ইউজিন স্টেইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।

ফেডারেল কোর্টের নথিপত্রে প্রকাশ পেয়েছে, এই তিন ব্যক্তির জিঘাংসা এবং তার সাথে ‘ইসলামোফোবিয়া’ (ইসলামবিদ্বেষ) মিশ্রিত হয়ে কিভাবে ‘ডোমেস্টিক টেররিজম’ (স্বদেশী সন্ত্রাস)-এর এক পরিকল্পনার জন্ম দিয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত এফবিআই গোপন সূত্র এবং অ্যালেনের বান্ধবীর মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছে। বান্ধবীর সাথে ঝগড়ার সময় অ্যালেন তাকে প্রহার করার কারণে বান্ধবী কর্র্তৃপক্ষকে অ্যালেনের সরঞ্জাম রাখার কক্ষটি দেখিয়ে দেয়।

ইতঃপূর্বে এই বছরের প্রথম দিকে পূর্বোক্ত গোপন সূত্র তদন্তকারীদের তথ্য দেয় যে, সংশ্লিষ্ট সূত্ররূপী ব্যক্তিটি নিজেদের ‘ক্রুসেডার’ (ইসলামের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টান ধর্মযোদ্ধা) দাবিকারী একটি গ্রুপের কয়েকটি বৈঠকে উপস্থিত ছিল। তদন্তকারীরা বলেন, ধ্বংস ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা প্রণয়নে এবং নেতৃত্ব দেয়াতে ছিল অ্যালেন, রাইট ও স্টেইন।

গোপনে তথ্য প্রদানকারী বলে যে, এই গ্রুপটির লক্ষ্য ছিল ক্যানসাস অঙ্গরাজ্যের গার্ডেন সিটিতে একটি বহুতল ভবন কমপ্লেক্স, যেখানে একটি অ্যাপার্টমেন্টকে রূপান্তরিত করে মসজিদ স্থাপন করা হয়েছিল এবং সেখানে সোমালিয়া থেকে আগত মুসলিমরা প্রার্থনা করত। ক্রুসেডাররা এই মুসলিমদের ‘তেলাপোকা’ বলে অভিহিত করেছে।

এই সপ্তাহে কোর্ট কর্র্তৃক গোপনীয়তা অবমুক্ত করা ফৌজদারি অভিযোগে বলা হয়েছে, (অভিযুক্তরা) এই অবস্থানটিকে তাদের টার্গেট করেছিল এদের প্রতি জিঘাংসার কারণে এবং তাদের এই ধারণা থেকে যে, এরা মার্কিন সমাজের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং গ্রুপটি চাইছিল, তাদের ধ্বংসকর্ম অন্যান্য জঙ্গি গ্রুপদের উৎসাহিত করুক এবং এভাবে তাদের ধ্বংসকর্ম দ্বারা ‘জনগণকে জাগিয়ে তুলতে’ চাইছিল।

যখন তারা পরিকল্পনা কার্যকর করার দিকে এগোচ্ছিল, তখন স্টেইন লক্ষ্যস্থলের ওপর নজরদারি করার কাজে এগিয়ে যায়। কখনো সে একাই গাড়ি চালিয়ে যেত, কখনো কখনো গোপনে তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তিটি গাড়ি চালাত। স্টেইন বহুতল আবাসিক কমপ্লেক্স, মসজিদ এবং নিকটস্থ ‘মল’ (বাজার এলাকা) কড়া পর্যবেক্ষণ করত।

গাড়ির ভেতর সে একটি পিস্তল, একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও অ্যামুনিশন, একটি বুলেট প্রতিরোধক বুকঢাকা পোশাক এবং রাতে দেখতে পাওয়ার জন্য একটি ‘নাইট ভিশন স্কোপ’ রাখত।

এই পর্যবেক্ষণ সে গোপনে করত না।

অভিযোগে আরো বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে সোমালি নারীদের তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে যেতে দেখলে স্টেইন চিৎকার করে ‘বে... ন্যাকড়ার টুপি মাথায় দেয়া বে...’ বলে তাদের গালিগালাজ করত।

গত সপ্তাহে এই তিনজনকে গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।’

লেখক : প্রবীণ সাংবাদিক, প্রবাসী

বিষয়: বিবিধ

১০৮১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379476
০৫ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:০৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : তবু মুসলিম রাই শুধু সন্ত্রাসি মিডিয়ার চোখে!
২১ নভেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫১
314484
আকবার১ লিখেছেন : yes, brother

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File