জলতরঙ্গের প্রতিধ্বনি - ১

লিখেছেন লিখেছেন ট্রাস্টেড থিফ ০৯ মার্চ, ২০১৪, ০৩:১৬:৪১ দুপুর

আজ যখন এই লেখাটি লিখছি তখন আমার কি বোর্ড থমকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব ভার ভর করেছে আমার দুই হাতে। দুই দিন পর একটা এক্সাম আছে কিন্তু মন বসাতে পারছি না। এক অসহায়ত্ব ঘিরে ধরেছে আমাকে যা বুকের মাঝে শেল হয়ে বিদছে। একটু আগেই আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ডের সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলে রাখলাম। ছেলেটিকে আমি কখনোই কাঁদতে দেখিনি আজ সে বাচ্চাদের মত করেই কাঁদছে। একসাথেই ছিলাম আমারা। কিছু দিন হয় তাকে দেশে ফিরে যেতে হয়েছে। কিন্তু আজব বিষয় হচ্ছে আমার তার জন্য যতটা না কষ্ট লাগছে তার চাইতে বেশী খারাপ লাগছে তার গার্ল ফ্রেন্ডের জন্য আবার তার উপর রাগও হচ্ছে সমান তালে। পৃথিবীর কিছু নির্মম পরিহাস থাকে যাকে কখনোই এড়ানো যায় না। হয়তো মালিকের এটাই বিধান। সব বিষয়কে এক্সপোজ করা যায় না। আবার না বলার উপায় থাকে না। কারণ মানুষ অন্তত জানুক পৃথিবীতে এই রকম ঘটনাও ঘটে থাকে যার মূল্য কোন কিছু দিয়েই পরিশোধ করা যায় না একই সাথে মানুষ এটাও জেনে নিক যে পৃথিবীতে নিকৃষ্ট হায়েনার পরেও অতি নিকৃষ্ট কোন হায়েনা আছে।

ধরুন বাংলা ছবি থেকে এক জনের না নিলাম সাগর আরেক জনের নাম নদী। সাগর নদীর ইচ্ছা ছিলে তাদের মিলন কোন এক মোহনায় হবে। আট দশটা তথাকথিত প্রেমের মতই শুরু হল তাদের প্রেম। তাদের প্রেমটাও অনেকটা বাংলা মুভির মত। ২০০৭ সাল সাগর একটি প্রাইভেট ইউনিতে ভর্তি হয় এবং ঢাকায় থাকতো। তার এক বছর পরে তার কোন এক বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে যায় ঢাকার অদূরে গাজীপুরে( জায়গার নাম ঠিক আছে)। তার বন্ধুর চাচাত বোনের সাথে সেখানেই তার পরিচয়। প্রেমের আদান প্রদানটাও হয় হটাত করেই। সাগর যখন তার বন্ধুর বাড়ীতে যায় তখন সেখানে নদীর সাথে নদীর কয়েক জন বান্ধবীও ছিল। তার কয়েকে সপ্তাহ পরে এক দিন এক বান্ধবী সাগরকে তার ভালো লাগার কথা নদীকে জানায় এবং তাদের যোগাযোগ করিয়ে দেবার অনুরোধ করে। নদীর আর সহ্য হোল না সে সাথে সাথেই সাগরকে দেয় ফোন

- আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?

- সরি কে বলছেন

- কে আমি, চিনতে পারেন নাই?

- আপনি কি নদী

- পুরুষ মানুষ সহজেই সব ভুলে যায়

- ওহহো সরি বুঝতে পারি নাই

- আপনি আমার উত্তর এখনো দেন নাই।

- কি উত্তর

- আপনি আমাকে ভালো বাসেন কি না?

সাগর পালটা প্রশ্ন করল

-আপনি আমাকে ভালোবাসেন?

-একটা মেয়ে ফোন করে যখন করে এরকম কিছু জিগ্যেস করে তা কি আপনি বুঝেন না?

- ক্লিয়ার উত্তর চাই

- আমি যেহেতু আগে প্রশ্ন করেছি উত্তরটাও আগে আশা করছি।

সাগর ভাবল একটু ভাব নেই, গলা খাকিয়ে

- একটু সময় দেয়া যায় না?

নদী চিন্তা করলো চান্স মিস করা যাবে না

-না সময় দেয়া যাবে না। ইয়েস অর নো

- আসলে আপনাকে দেখার পর থেকে যা কিছু দেখি সবখানেই আপনি। রাতে ঠিক মত ঘুমাতেও পারিনি। চোখের নিছে কালি পড়ে গেছে।

- আমি ক্লিয়ার উত্তর চাই

- এত কিছু বলার পরেও বুঝলেন না

- তাহলে আপনি করে বলছেন কেন?

- সময় লাগবে।

- দু জনেই নীরব কেউ কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না।

- নদীই শুরু করলো। আপনি এখন কি করছেন

- আমি ......

সাগর নদীর কথা আর থামছেই না। কিন্তু আমাকে থামতে হবে।

ভাগ্য পরিবর্তনে (স্টুডেন্ট ভিজা) সাগর বিলেতে পাড়ি জমায় ২০০৯ সালে। তার কয়েক মাস পরে আমিও একই পথ ধরে লন্ডনে । যাই হোক সাগর নদীর প্রেম লীলা ভালোই চলছে। সাগর কিছুটা ধার্মিক ছিল আর নদীদের পরিবারে কেউ নামাজটাও ঠিক মত পড়তো না (একর্ডিং টু সাগর)। নদী সাগরকে এতটাই ভালোবাসতো যে এখন পর্যন্ত সে সাগরের জন্য ৪ বার সুইসাইড o নিজের ক্ষতি করতে গিয়েছিল। দুবার ঘুমের বড়ী খেয়েছে ১৫, ২২ টা করে। আরেকবার কঠিন ঠাণ্ডায় পুকুরে জাপ দিয়ে আরেকবার জানালার ভিতর দিয়ে হাত ঢুকেয়ে দিয়ে। তো সে কারণে সাগর যা বলতো সে বিনা বাক্যে তা মেনে নিত। সাগর তাকে নামাজ পড়ার জন্য বলতো সে নামাজ পড়তো, এমন কি কুরআনও পড়তো। যাই হোক এই সব দেখে নদীর পরিবার

পরে ভেজায় খুশি। এদিকে নদী ২০১১ তে ইন্টার মিডিয়েট পাশ করার পর পাবলিক ইউনিতে চান্স না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ে। রেজাল্ট খারাপ ছিল না HSC তে ৪.৫ মানবিক থেকে। সাগর ভাবল যে তার ফ্যামিলিকে কনভিন্স করানোর জন্য হলেও তাকে

ভার্সিটি পড়ানো দরকার। তাই সে নিজের খরচে তাকে ভার্সিটি ভর্তি করাল অতঃপর ভার্সিটিতে চান্স না পেলে শেষে সে তাকে প্রাইভেট ইউনিতে ভর্তি করাল।

২০১৩ সালের শেষের দিকে সাগর যখন দেশে ফিরে যাবার চূড়ান্ত পর্যায়ে তার কিছু আগে নদী অ্যামেরিকা যাবার জন্য ভিসা প্রসেস করতে শুরু করে। সাগর নদীর ফ্যামিলিকে জানাল দেখুন ইউকেতে যেহেতু আমার আর সম্ভব না তাহলে আপনারা নদীকে আমেরিকাতে পাঠানোর প্রসেস করুন আমিও আপনাদের সাথে খরচ শেয়ার করবো তাহলে আমিও তার ডিপেন্ডেন্ট হয়ে যেতে পারবো। সেই ভাবেই যখন এগুচ্ছিল ঠিক তখন সাগর এখানকার ল-ব্রেকের প্যাঁচে পড়ে ডীটেনশনে এবং অনেক চেষ্টা করানোর পরেও তাকে রাখা যায় নি।

যাইহোক সাগর যখন দেশে ফিরে গেলে নদীর মায়ের সাথে তার কথা হয় এরকম

- তুমি কথা দিয়েছ বলেইত আমরা এই পথে নামলাম, এখন তুমি আমাদের মাঝপথে নামিয়ে এব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিচ্ছ না

- আমি যখন বলেছে তখন আমি মাসে দু লাখ টাকা করে কামাতাম। আমি কি জানতাম এ রকম কিছু হবে। এখন আমি বেকার আমার হাতে কোনই টাকা নেই।

- তোমার কথাতেই তো আমরা নামলাম।

- আরে আপনি বার বার একই কথা বলছেন কেন?

এভাবে তাদের মধ্যে অনেক কথা কাটাকাটি হচ্ছে এক পর্যায়ে সে গরম হয়ে গেলে তার মা লাইন কেটে দেয় এবং নদীকে বকাজকা করা শুরু করে সাগর নাকি তার সাথে বেয়াদবি করেছে।

(আসল কাহিনীতে এখনো আসিনি আমি)। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নদী আমেরিকান এম্বাসীতে দাঁড়ায় এর আগে এমব্যাসি ফেইস করার আগে যা যা প্রসেস আছে নদীর মা তাদের এলাকার একটি ছেলেকে দিয়ে করায়। ধরুন এর নাম বোতা কামাল। আর সুদের উপর থকে ২৫ লাখ টাকা নেয়, ব্যাক সল্বেন্সি দেখানোর জন্য। নদীর মা কূট কৌশল আঁটলও যেহেতু সাগর টাকা পয়সা দিতে পারেনি সেহেতু তিনি সাগরকে না জানিয়ে সব কাজ সারলেন। কিন্তু নদী তার সবই সাগরের সাথে শেয়ার করতো। নদী জানালো জানুয়ারির ৫ তারিখে তারা এমব্যাসি ফেইস করবে। ওই দিন সাগর যতবারই ফোন দিয় কেউ ফোন ধরছে না। সে পাগলের মত সবাইকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন ধরে না।

পরের দিন নদী জানালো তার মায়ের বারণ ছিল তাই সে ধরেনি।

সাগর এর মাঝেই টের পেল নদীর এমেরিকাতে যে ছেলেটি কাগজ পত্র ঠিক করলো নদীর মা চাচ্ছে তাকে তার সাথে বিয়ে দেবার জন্য। সাগর কৌশল আঁটল কিছুটা বাস্তবও, সে নদীকে এবং তার মাকে বুঝালো এভাবে এক একটা মেয়েকে পাঠাবেনে না কারণ লন্ডনে দেখেছি কত মেয়েকে প্রশটিটিঊট হয়ে যেতে। একথা শুনে নদীর মা কিছু ঘাবড়ে গেছে। আর নদীতো সাগরের কথাই কথা। যাই হোক তার কয়েক সপ্তাহ পরে নদী যখন ভাইবা ফেইস করে তখন সে ইচ্ছে করে উলটা পালটা উত্তর দেয়া শুরু করে। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে তারা তাকে রিফিউজ না করে আবার এপ্লাই করার সুযোগ দেয় যদিও সে আর করে নাই।

বিষয়: বিবিধ

১২৬৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

189372
০৯ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৪
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ভাল লাগলো, ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য
189861
১০ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১৬
সজল আহমেদ লিখেছেন : অনেক ভাল লাগল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File