ইতিহাসের নিকৃষ্ট রক্ত পিপাসুর জীবনাবসান
লিখেছেন লিখেছেন ট্রাস্টেড থিফ ১৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:০৬:৪৪ সকাল
ইসরায়েলের সাবকে প্রধানমন্ত্রী অ্যারয়িলে শ্যারনকে আজ সকালে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু আপনি তাকে কি ভাবে স্মরণ করবেন? অ্যারয়িলে শ্যারন ইসরায়েলেরে সাবকে প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকলেও সারা পৃথিবী তাকে এক জন বড় মাপের সন্ত্রাসী হিসেবেই মনে রাখবে। শ্যারন ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্সের কুখ্যাত ইউনিট ১০১ এর ইন-চার্জ ছিল যার আসল কাজ ছিল নির্বিচারে হত্যা করা এবং তা শুধু মাত্র ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের উপরি নয় বরং আবাল বৃদ্ধা বনিতা সহ সকলেই। অ্যারয়িলে শ্যারনের এই রক্তপিপাসু মনোভাবেই তাকে ইসরায়েলী আর্মিতে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
August 1953, সাউথ গাজার El-Bureig রিফিউজি ক্যাম্পের ছোট ছোট কুটিরের জানালা দিয়ে শ্যারনের লোকেরা ঘুমন্ত উদ্বাস্তুদের উপরে বোম ছুঁড়ে মারে যার ফলে হতাহত হয় অসংখ্য । তাদের উপর আগ্নেয় অস্ত্র এবং অটোম্যাটিক উইপন (অস্ত্র) ব্যাবহার করা হয়েছিল এবং তাতে করে ৫০ এরও বেশি জন লোক মারা গিয়েছিল। এরা অন্যত্র থেকে উচ্ছেদিত হয়ে এখানে বসতি গড়েছিল।
October 1953, শ্যারন তার লোকদের আদেশ করেছিল Qibya এর অধিবাসীদের আক্রমণ করে তাদের বাড়ী ঘর উপড়ে ফেলার জন্য। তারা গ্রামকে ধ্বংস স্তূপে পরিণত করেছিল: ৪৫টি বাড়িকে ঘুড়ীয়ে দেয়া হয়েছিল এবং ৬৯ জন সিভিলিয়ান দের হত্যা করা হয়েছিল যাদের দুই তৃতীয়াংশ ছিল শিশু ও নারী।
১৯৭০ এর শেষের দিকে ইসরাইলী আর্মির ভারি সাঁজোয়া যান গুলে নির্বিঘ্নে চলাচল করার জন্য প্রশস্ত এবং সোজা রাস্তা তৈরি করতে শ্যারনের লোকেরা বুলডোজার দিয়ে ১০০ টি বাড়ী ঘুড়ীয়ে দিয়েছিল যেগুলো জাতিসঙ্ঘের সহায়তায় ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য গাঁজা বীচ রিফিউজি ক্যাম্পে তৈরি করা হয়েছিল। শ্যারনের রাস্তা চওড়া করতে একদিনের ধ্বংসযজ্ঞে আবারো ঘর ছাড়া হল শত শত রিফিউজি।
August 1971, শ্যারন নিজেই আদেশ দিলেন গাজা স্ট্রিপের ২,০০০ বাড়ীকে ধ্বংস করার জন্য যার ফলে ১৬,০০০ মানুষকে তাদের জীবনে দ্বিতীয় বারের মত উচ্ছেদ করা হল। শত শত ফিলিস্তিনি যুবকদেরকে গ্রেফতার করা হল এবং পাঠিয়ে দেয়া হল সিনাইতে। ১৯৭১ এর দ্বিতীয় ভাগে ১০৪ জন ফিলিস্তিনিকে গুপ্ত হত্যা করা হয়। তাদের পলিসি ছিল সন্দেহভাজন হলেই হত্যা কর এরেস্টের দরকার নেই।
1982, শ্যারন ইসরাইল আর্মির কমান্ডার দায়িত্ব পালনে লেবাননে আক্রমণ চালায় যার পরিণতিতে প্রায় ২০,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং লেবানীজের জীবনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয় এবং ১০০০ এর ও বেশী ইসরাইলি সৈন্য মারা যায়। ইসরাইল সিভিলিয়ানদের উপর বোমা বর্ষণ করে। লেবানন আক্রমণকে “Peace for the Galilee” বলে বিশ্ববাসীর কাছে জায়েজ করতে চেয়েছিল শ্যারন আর এই মিশন হাজার হাজার সাধারণ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছিল প্রতিদানে ৫ লাখ গৃহ হীন হয়েছিল।
September 16, 1982, শ্যারন প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকা কালীন সময়ে তার লোকেরা রিফিউজি ক্যাম্পে ঠাণ্ডা মাথায় গণহত্যা চালায়। সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টা থেকে তারা রিফিউজিদের জবাই করা শুরু করে এবং শেষ করে ১৮ তারিখ সকাল ৮ টায়। এই আক্রমণ কারীরা ছিল Phalange মিলিশিয়া, ১৯৭৫ সালে লেবাননে গৃহ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লেবাননের এই গ্রুপটি ইসরাইলের সাথে খুবেই ক্লোজলি কাজ করতো এবং তাদেরকে ইসরাইলই অস্ত্র সরবরাহ করতো। তাদের এই ৬২ ঘণ্টার উন্মত্ত্ব আক্রমণের শিকার হন ২,০০০ জন যাদের মধ্যে ছিল নবজাতক, শিশু, মহিলা, প্রেগন্যান্ট মহিলা, বয় বৃদ্ধ, এদের মধ্যে অনেকের দেহকে ছিন্ন ভিন্ন করা হয়েছে মারার আগে কিংবা পরে। সাব্রা এবং সাতিলা ক্যাম্পে গন হত্যার ভূমিকায় শ্যারনকে কখনোই ক্ষমা করা যেতে পারে না।
শ্যারন সব সময় ফিলিস্তিনিদের সাথে শান্তির পথে অন্তরায় ছিল।
January 18, 1979, একজন ক্যাবিনেট মেম্বার হিসেবে শ্যারন মিশরের সাথে শান্তি চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেন। ১৯৮৫ সালে সে দক্ষিণ লেবাননের theso-called security zone থেকে সৈন্য পথ্যাহার বিপক্ষে ভোট দেন। ১৯৯১ সালে সে মাদ্রিদ পিস কনফারেন্সের বিরোধিতা করে। ১৯৯৩ সালে সে তাদের আইনসভায় ওসলো এগ্রিমেন্টে নো ভোট করে। পরের বছর সে তাদের আইন সভায় জর্ডানের সাথে একটি শান্তি চুক্তি বাতিল করে। ১৯৯৭ সালে সে হেব্রন চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেন।
September 28, 2000, আলআকসায় ইন্তিফাদা (ইসরাইলি দখলদারিত্বর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া) ছড়িয়ে পড়লে অ্যারয়িলে শ্যারন অন্তত একহাজার সুসজ্জিত সৈন্য এবং পুলিশ দিয়ে সোচ্চার হওয়া জনতার উপর গুলী চলায় যার ফলে শত শত ফিলিস্তিনিদের মারা যায় এবং সহস্রাধিক আহত হয়।
শ্যারন তার সৈন্যদেরকে এভাবে আদেশ করেছিল "ফিলিস্তিনিদের আঘাত করতে হবে এবং এবং এটা অবশ্যই হতে হবে খুবেই যন্ত্রণা দায়ক। আমরা তাদের ক্ষয় ক্ষতি এবং হতাহতের কারণ হব যাতে তাদের কঠিন মূল্য দিতে হয়।"
মার্চ ২০০২ সাল, আরব দেশ গুলোর শান্তি আহবান পত্যখ্যান করে সে ডিফেন্স শিল্ড নামক অপারেশন লঞ্চ করেছিল। শ্যারন তার সৈন্যদেরকে আদেশ করেছিল জেনিন ক্যাম্পকে ঝাটিয়ে দেয়ার জন্য এমনকি পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার জন্য। জেনিনি ছিল ১৩,০০০ ফিলিস্তিনির আবাস ভুমি যাদেরকে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করবার জন্য উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তাদের বর্বর, নৃশংস আগ্রাসন চলেছিল ১৬ দিন, এপ্রিল ৩-১৮. ইসরাইলী আর্মি সব ধরনের ভারী যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করেছিল এই ধ্বংস যজ্ঞে যেগুলোর মধ্যে ছিল হেলিকপ্টার, মিসাইল, রকেট, ট্যাংক, মেশিনগান এবং স্নিপার্স। ক্যাম্পের ভিতরের প্রায় সব বাড়িগুলোকে তারা ধূলিসাৎ করে দেয় এবং ক্যাম্পের সাধারণ মানুষদের দিয়ে অন্যের ঘরে আক্রমণ করাতে বাধ্য করায়।
মৃত্যুর আগে শ্যারন কোমাতে ছিলেন আট বছর, আর্টিফিশিয়াল সাপোর্টে রাখা হয়েছিল মেশিনের দ্বারা যা ছিল জীবন এবং মৃত্যু দুটো থেকেই সাসপেন্ডেড কিন্তু তার আত্মা অন্তহীন জগতে অভিশপ্ত আর নিদারুণ যন্ত্রণার দিকে ধাবমান ( মৃত্যুর আগে ৮ বছরের কথা), কি শোচনীয় পরিণতি।
এখান থেকে বাংলায় অনুবাদ করা
বিষয়: বিবিধ
১৭২০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7218
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> যমুনার চরে লিখেছেন : মৃত্যু তো নবী মোহাম্মদকেও পাকড়াও করেছে...............০ দুনিয়াতে এর চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কি হতে পারে !
পরকালের শাস্তি আমাদের ধারনারও বাইরে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন