কেমন আছে কম্যুনিস্ট কিউবা
লিখেছেন লিখেছেন ট্রাস্টেড থিফ ২১ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৪১:৫৯ দুপুর
বিবিসির একটা রিপোর্ট এর সার সংক্ষেপ এখানে তুলে ধরছি। তার আগে বলেন একজন মানুষ কতটুকু জানলে তাকে শিক্ষিত বলা যায় ? আমাদের দেশে সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা সমবন্টনের জন্য জান প্রাণ কুরবান করে দেয়। কেউ খাবে তো কেউ খাবে না তা হবে না তা হবে না। আহা কতইনা চমৎকার কথা। কিন্তু এই সব নাদান শিক্ষিতরা একটা বিষয় জানে না বা কখনই জানতে চায় না তা হল তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী রাষ্ট্র যদি সবার খাবার খাইয়ে দেয় তাহলে একটি নাগরিকদের আদৌ কাজ করার দরকার আছে কি? তাহলে চলুন ঘুরে আসি সমাজ তন্ত্রের ১০০% এপ্লিকেবল হওয়া কিউবা থেকে। কিউবা ১৯৫৯ সালে আমেরিকার পা চাঁটা কিউবিয়ান সেনাদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ফিদেল কাস্ত্রো এবং তারই ঘনিষ্ঠ সহযোগী চে গুয়েভারা এর হাত ধরে। রাশিয়ার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় কিউবা সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই সমাজ তন্ত্রের ঝাণ্ডা পত পত করে দিকে দিকে বিস্তৃত হতে লাগলো। তার মধ্যে সোবিয়েত রাশিয়া, যুগোস্লাভিয়া, চীন এবং ল্যাটিন অ্যামেরিকার কিউবা অন্যতম।
কিউবা স্বাধীন হবার পরবর্তী কয়েক বছরের ইতিহাস হয়তোবা স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে কারণ সমাজতন্ত্রের স্লো পয়জন তাদেরকে তখনো গ্রাস করা শুরু করে নাই। সেই সময়ের আমলারা শ্রমিকের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে দেখা যায়। কিন্তু তা যে শুধু মাত্র আই ওয়াশ ছিল সেটা তারা যতদিনে বুঝেছিল ততদিনে সমাজতন্ত্রের শকুনিরা তাদেরকে ইতিমধ্যেই কব্জার মধ্যে নিয়ে নিয়েছে। কিউবা স্বাধীনতার আগে তাদের যে কল কারখানা ছিল সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল চিনির করল। এই কিউবিয়ানরা মিলিয়ন মিলিয়ন টন চিনি উৎপাদন করতো। আর এই চিনিই ছিল তাদের প্রধান অর্থকরী ফসল কারণ দেশের অর্থের সিংহ ভাগ যোগান দিত চিনির মাধ্যমে। কম্যুনিস্ট সরকার ক্ষমতায় আসন গ্রহণ করলো। স্কুল, হসপিটাল এবং ইন্ডাস্ট্রিকে জাতীয়করণ করা হল। কাস্ত্রোর সরকারের গুরুত্বের তালিকায় যা ছিল তা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। তারা ফ্রি নিউট্রেসান, ফ্রি ফিউনারেল, চাইল্ড কেয়ার এবং আর্টস নতুন করে শুরু করলেন। জীবন মানও কিছুটা উন্নত হল কারণ স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাখাতে প্রচুর টাকা ঢালা হয়েছিল।
মানুষ ভীষণ খুশি। কিন্তু কথায় আছেনা এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে। কিউবা হচ্ছে এমন একটা দেশ যেখানে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল, এবং এখানে প্রকৃত অর্থে কোন ইলেকসান নেই। হিউমেন রাইটস ওয়াচের মতে কিউবা ল্যাটিন অ্যামেরিকার একমাত্র দেশ যেখানে সব ধরনের পলিটিকাল ডিসেন্টকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। যারাই তাদের এই শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তাদের সবাইকে জেলে যেতে হয়েছে। কিউবাতে প্রচুর পরিমাণে ভুর্তকি দেয়া হয় খাদ্যের উপর। তাদেরকে একধরনের রেশন কার্ড দেয়া হয় যা দিয়ে তার নিত্য নৈমিত্তিক বেসিক খাবার গুলো কিনতে পারে। যেমন চাল, তেল, সুগার ম্যাচ্যেস ইত্যাদি। রিপোর্টার সাইমন একটা রাশিয়ান কাস্টমারকে দেখিয়ে দোকানিকে জিগ্যেস করলো যে তুমি কি চাইলে রাম কিনতে পার? দোকানি তাকে উত্তর করল না তাকে পে করতে হবে। সে হাভানায় একটা পরিবারের সাথে কথা বললো। এই পরিবারটিও অন্যান্য কিউবিয়ান মত রাষ্ট্র মালিকানাধীন একটি বাড়িতে থাকে। হাভানার অধিকাংশ বাড়ী খুবেই পুরানো এবং খুবেই জীর্ণ শীর্ণ। অনেক বাড়ী আছে ১৬০০ শতাব্দীতে স্প্যানিশ কলনীয়ানদের তৈরি।
বিপ্লব পরবর্তী কালে রাষ্ট্রীয় ইনফ্রাস্ট্রাক্সারে তেমন উন্নয়নের কোন চোয়া তারা দেখেনি। এই বাড়ীও খুবেই জীর্ণ। বাড়ীর ছাদ ভাঙ্গা। ষোল বছর যাবত এরা অপেক্ষা করছে বাড়িটির ছাদ রিপেয়ার করার জন্য। বৃষ্টি হলে বাড়ির ফ্লোর ভেসে যায়। যাকে বলে কোন রকম মাথা গুঁজা। কিউবাতে জব খুবেই নির্দিষ্ট করা। সেখানে শুধুমাত্র ১৯১ টি সেক্টরে মানুষ জব করতে পারেন (যারা জব মার্কেট সম্পর্কে জানেন একটা স্টেটে কত হাজার হাজার জব পজিশন থাকে।) সেখানে বিজনেস করার অনুমুতি ছিল না। খুব সাম্প্রতিক কালে এর অনুমোদন মিলেছে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা জীবন মানের উন্নয়ন চায়। সাইমন, আজিজ নামের এক ট্রুমা ডাক্তারে সাথে কথা বলল। আজিজ রাস্তার ধারে দাড়ায়ে প্লাম্বিং্যের কিছু স্টাফ বিক্রি করে। সাইমন অবাক হয়ে হয়ে জিগ্যেস করলো তুমি একজন প্রক্টিসিং ডাক্তার। আর তুমি রাস্তার ধারে দাড়িয়ে প্লাম্বিং সাপ্লাই কর! সে উত্তর করলো যে এটা আমার পরিবারের জন্য কিছুটা অতিরিক্ত ইনকাম।
একটা দেশের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে ঠেকলে একজন প্রাক্টসিং ডাক্তার রাস্তার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে প্লম্বিং সাপ্লাই করতে পারে! উল্যেখ্য স্বাস্থ্য খাত ফ্রি এবং ডাক্তারদের সরকার থেকে লিমিটেড কিছু বেতন দেয়া হয় ।
কিউবার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার মুল কারণ হচ্ছে তাদের সুগার মিল। কিউবা একসময় পৃথিবীর সবচাইতে বড় সুগার উৎপাদনকারী দেশ ছিল এবং সুগার মিলগুলোর উপর ভিত্তি করেই তাদের অর্থনীতি নির্মিত হয়েছিল। এই সুগার মিলগুলো জাতীয় করন করার পর কয়েক বছর ভালোই চলছিল। ১৯৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কলাপ্স শুরু হয়। উল্যেখ্য রাশিয়া কিউবাকে ব্যাপক পরিমাণে সাবসিডি দিত এবং তারা কিউবা থেকে আখের কাঁচামাল কিনত। এদিকে রাশিয়া ভেঙ্গে যাবার পর তারা সাবসিডি বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতি সাথে চিনির আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা টিকতে না পারায় অর্থনীতির মেরুদণ্ড তখনি ভঙ্গে যায়। আর সেই ভাঙ্গনকে পাকা পোক্ত করে তদের স্রমিকেরা। তদের অলসতাই ছিল চিনির কলগুলোর বন্ধ কফিনে শেষ পেরেক। তাদের কথা হচ্ছে যে তারা কাজ করছে জীবন ধারণের জন্য তা যখন স্টেটই নিশ্চিত করছে তাদের কাজ করার দরকার কি। আহা দুনিয়ায়ায়ায়ার মজদুর এক হও...।
গাড়ি গুলো দেখুন মান্দাতার আমলের
শেষ কথা, শ্রমিকদের কাজের উপর ইনসেন্টিভ থাকে এবং যারা বিজনেস নিয়ে পড়াশুনা করেছেন তারা জানেন যে ইমপ্লয়ীদের মোটিভেট অ্যান্ড একটিভ রাখার জন্য কত কিছুই না করা হয়। সেখানে এরা দশকের পর দশক কাজ করে আর তাদের ইনসেন্টিভ হচ্ছে একই রেশনের চাল এবং খাবার। যেখানে কাজের এবং মেধার মূল্যায়ন হয় না সেখানে শ্রমিকদের খুব বেশী দোষ দেয়া যায় না। আরেকটা বিষয় তাদের প্রাপ্য খারাপ হোক আর ভালো হোক তাদের মৌলিক চাহিদা যদি স্টেট জুগিয়ে দেয় তাহলে তাদের কাজ করার আদৌ দরকার আছে কি? ব্যাপারটা কিন্তু অযৌক্তিক না।
কিন্তু সবাই যদি কাজ ছেড়ে দেয় তাহলে দেশের অর্থনীতি চলবে কি করে। সেটা কতো জনকে বুঝানো যাবে তাছাড়া অর্থনীতির উপর যে এফেক্ট পড়বে তাতো সাথে সাথেই উপলব্ধি করার মত নয়। অবশেষে কিউবা তাদের সমাজতন্তের কিছু মডিফিকেশান আনছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেচা কেনা করা যাবে আর রিপোর্টার সাইমন বলছে এটা আসলে ক্যাপিটালিজমের মুল ভিত্তি। আমি ক্যাপিটালিজমের পক্ষ নই কিন্তু একটা নষ্ট সিস্টেম সারা বিশ্ব থকে যেভাবে উষ্ঠাঘাত হয়েছে সেই সিস্টেমকে যারা আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে তারা প্রকৃত অর্থে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্যই আন্দোলন করছে ধর্মটা বাদই রাখলাম।
টিপুস
বিষয়: বিবিধ
২৫৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন