একটি আন্ডার আত্মকাহিনী
লিখেছেন লিখেছেন ট্রাস্টেড থিফ ২৯ জুলাই, ২০১৩, ১২:৩৪:৪২ রাত
আমি একটি আন্ডা। চেম্বার টেম্পারেচারে একটি প্রাকৃতিক চেম্বারে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি। একটি নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হবার পর দুনিয়াতে আগমন হল আমার। মাতৃ জঠরে অনেক শান্তিতেই ছিলাম। যে কোন আঘাত থেকে মা আমাকে নিরাপদে রাখতো। পৃথিবীতে আসার পরে মনব সম্প্রদায় আমাকে অনেক খাতির যত্ন করল। আমাকে নীয়ে যাওয়া হল একটি শীততাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে। আমি হিম হিম অনুভব করলাম। অপেক্ষা করছি মায়ের তা পাওয়ার, যেখানে রয়েছে চেম্বার টেম্পারেচার। একটা দিন চলে গেল না আমি আর কখনই মায়ের দেখা পাব না। আমি তা এর অনুপযোগী হয়ে গেলাম যে। একি আমাদের কে ট্রেতে রাখল কেন? আমাদেরকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোথায়?
কয়েক দিন পরে একটা নরম হাতের কোমল ছোঁয়া পেলাম। একি আমার সাথীদেরকে ভেঙ্গে ফেলছে কেন? তারপর কি আমার পালা! ওহ: ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে গেল। গৃহিণীর আপাতত আমাকে দরকার হল না। আপাতত বেঁচে গেলাম। জানি একদিন আমাকেও শেষ হয়ে যেতে হবে। এক দিন তো সবাইকেই চলে যেতে হবে। দুঃখ নেই আমার। হয়তোবা আমাকে দিয়ে কোন এক নতুন বধু তৈরি করবে মনের মাধুরী মিশিয়ে বাহারি রকমের পিঠা। হতে পারি ছেলের পানে তাকিয়ে থাকা কোন এক মায়ের হাতে বানানো ডিমের জর্দা অথবা হতে পারি সকালের নাস্তার একটা অমলেট। অথবা তেলে ভাজা একটা সেদ্ধ ডিম। তোমরা তো কত রকম করেই না খাও আমাদের। আমাদের কে কাচা খাও সেদ্ধ খাও, আমরা যখন ডিম ফুটে বের হই তখন খাও আবার পরিপূর্ণ বয়স হলেও খাও। কোরমা পোলাও তেহেরি কোনাটাই বাদ নাই। তবুও তোমাদের সবুর নাই।
তোমরা তো মানবতার জন্য কত কিছুই না করলে। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে ডিম্বতার জন্য কি করেছো তোমরা। তোমরা শুধু করতে পারো বিতর্ক, “ডিম আগে না মুরগী আগে”। তোমরা শুধু খাও দাও ফুর্তি কর আর আজাইরা তর্ক কর। তাও দুঃখ নেই। করন আমরা খোদার বিধান মানি। খোদা আমাদেরকে তৈরি করেছে তোমাদের আহারের জন্য তেমনি আমাদের মায়েরা খেয়েছে অসংখ্য চোট পোকামাকড়। আবার তোমরা মরে গেল তোমাদেরকে খাবে লক্ষ লক্ষ অণু জীব। খোদা প্রদত্ত এই ইকো-সিস্টেম আমরা মানি। তোমরা না তার কোন বিধান মান না তোমরা প্রভুর দেওয়া নিয়ামত শোকর কর। তোমরা তো শুধু নিজেদের আখের গুছাতেই ব্যস্ত। তোমরা মানবতা ধ্বজা ধারিরা এতটাই স্বার্থ পর যে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মানবতার ধুয়া তুলে নিজেদেরকে নিজেরাই খুন করছ। খুন ঝরছে দেশে দেশে আর তোমরা মানবতার সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে বিশ্বময় শান্তির কবজ বিক্রি করছ । আর তোমাদের ধোঁকায় প্রতারিত হয়ে যারা মজলুমের পাশে থাকবার কথা ছিল তারা বসে বসে তোমাদের দেওয়া কবজ পানিতে চুবিয়ে চুবিয়ে খাচ্ছে। আর বলছে তোমারাই শান্তির দূত আর সবাই গেঁয়ো ভুত। অথচ তোমরা একটুখানি চোখ বুঝলেই দেখতে পেতে সৃষ্টি কর্তার নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিশ্ব ময়। কিন্তু তোমরা কখনোই তা দেখতে পাবে না। করন বিধাতা তোমাদের অন্তঃকরণ আর কান সুমুহ বন্ধ দিয়েছেন আর তোমাদের চোখ গুলোকেও পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। তোমাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
একটি ডিম হয়ে জন্ম নেবার জন্য আমাদের আসলেই কোন দুঃখ নেই করন পুনরুত্থান দিবসে তোমরা ছাড়া আর সকল প্রাণীকেই মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু তোমরা যদি পার হতে না পার? তাহলে! তোমাদেরকে ভোগ করতে হবে অনন্ত কালের কঠিন শাস্তি।
* সুরা বাক্বারাহ ৭
বিষয়: সাহিত্য
১৪৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন