মিডিয়া কি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে?

লিখেছেন লিখেছেন ভাবনার ল্যাম্পপোস্ট ১৯ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:০১:৩৮ দুপুর

দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে বাংলাদেশের মীমাংসিত ইস্যু তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে

বি,এন,পি-জামায়াত জোট আন্দোলন করে যাচ্ছে। গত ১৮ই অক্টোবর থেকে দেশে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে সর্বাত্বক আন্দোলন শুরু করার পর থেকেই শুরু হয়েছে মিডিয়ার বিভিন্ন মায়া কান্না। আবার একই সাথে দিন দিন ইন্ডিয়ার নগ্ন আধিপত্য এবং আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থান পরিস্কার হয়েছে। দেশ আজকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে আ,লীগ-বাম চক্র আরেকদিকে জাতীয়বাদী শক্তি। সমীকরনটা হয়েছে এমন যে স্বাধীনতা-সার্বভোউমত্ব রক্ষা করতে হলে সরকারের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাডিয়েছে সেটা কি ভাবে হবে?

অবশ্যই গনতান্ত্রিকভাবে হতে হবে। সমস্যাটা এখানেই হয়েছে, আ,লীগ নিশ্চিত হয়ে গেছে যে তারা নির্বাচনে বিপুল ভাবে হারবে এবং সেটা হতে পারে তাদের নির্বাচনী ইতিহাসের সবচেয়ে করুন পরিনতি। আবার ইন্ডিয়ার সেভেন সিস্টার, চট্টগ্রাম বন্দর, ট্রানজিট সহ সাংস্কৃতিক আধিপত্য এবং রাজনৈতিক আনুগত্য স্থায়ী করতে হলে আ,লীগকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখতে হবে। বর্তমান সময়ে সরাসরি দেশ দখল করা সম্ভব নয় বলে এদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের ভিতর দিয়ে এখন অর্থনৈতিক খাত গুলির মাথা আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে এই ভাবে আমাদের আবার পলাশীর প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের ভিতর দিয়ে যে দুই শত বছরের দাসত্বের সূচনা হয়েছিল তেমনি ভাবে এখন একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকী, প্রফেসর দিলারা চৌধুরী, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডঃ আসিফ নজরুল,

ডঃ আতাউর রহমান এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান পরিস্কার করেছেন।

মিডিয়া এবং সুশীল সমাজ এই পরিস্থিতিতে যা বলছে বা করছে-

১। হরতালে সহিংসতা হচ্ছেঃ

উত্তরঃ প্রথম আলো, ডেইলি স্টার সহ সব টিভি মিডিয়া নিউজে হেডিং করছে, হরতালের সহিংসতায় এত জনের মৃত্যু বা এত জন আহত। আসলে ঘটনা যা ঘটছে তা হল ১৮ দলের মিছিল বা পিকেটিংএ আ,লীগ এবং পুলিশ-বিজিবি গুলি করছে। অনেক নিউজপেপার দেখলে ছবি দেখতে পারবেন যে পুলিশ গুলি করছে পাশে আ,লীগের লোকজন সশস্ত্র ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে হরতালে কিভাবে সহিংসতা হল? না আ,লীগ -পুলিশ আক্রমন করল? তার অর্থ মিডিয়া কি মানবাধিকার, গণতন্ত্র বা আইনের শাসনের বিপক্ষে সরকারের পক্ষে সরাসরি অবস্থান করলনা??? পৃথিবীর কোন দেশের মিডিয়াই এই রকম নগ্ন অবস্থান নেয় কিনা সন্দেহ। এর ভিতর দিয়ে মিডিয়া কি সরকারের দমন-পীড়নকে সহয়তা করে অটোক্রেসীকে উৎসাহিত করছে না?

২। আগুনে পোড়া মৃত্যু নিয়ে কথা বিশেষ প্রতিবেদন এবং টকশোর আয়োজন হচ্ছে।

যে কোন মৃত্যুই কামনীয় হতে পারে না। কোন মানুষ সেটাকে সমর্থনও করতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হল। এগুলি কি বিরোধীদল করছে?? আমি যতদূর টিভিতে দেখেছি হরতাল সমর্থকরা যখন গাড়িতে আগুন দেয় তখন যাত্রীদের নামার সময় দেয়। (যদিও আমি গাড়িতে আগুন দেয়াকেও সমর্থন করি না)। তাহলে এই আগুন গুলি কে দিচ্ছে??

ক) যে যানবাহন গুলিতে যাত্রী সহ আগুন দিচ্ছে তার সময় কি হরতালের সমর্থনে কোন পিকেটিং হয়েছে বা কোন মিছিল থেকে এটা করা হয়েছে? কে কে করেছে??

খ) প্রতিটা এই জাতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, কেউ এক/দুই জন এটা করছে, কারা কিভাবে আগুন দিচ্ছে কেউ জানে না। তাহলে আপনারা এটা বলছেন না কেন?

গ) কোন একটা আগুন দেবার সন্দেহজনক ঘটনার কি আপনারা একটাও অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন করেছেন??

ঘ) হরতালে যে বিরোধীদলের কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে তাদের বিষয়ে আপনারা নিশ্চুপ কেন??

ঙ) গুম, সড়ক দূর্ঘটণায় যে কত মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে বা হারিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে আপনাদের নজর নাই কেন???

চ) ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বলা হচ্ছে যাদের মারা যাবার ৩০% সম্ভাবনা ছিল তারাও মারা যাচ্ছে, এটা নিয়ে আপনাদের কি কোন চিন্তা দেখা যাচ্ছে??

এই সব প্রশ্নের উত্তর হল এরা দলকানা এবং দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে বাকশালের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে এই শক্তি গুলি।

৩। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পকে হাইলাইট করা হচ্ছে।

আসলে রাজনৈতিক পরিস্থিতির দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুড়ানোর জন্য এরশাদের কৌশল আ,লীগ গ্রহন করেছে। এরশাদ ছিল অসহায় কারন সে মিডিয়া এবং সুশীল সমাজ থেকে প্রতিরোধের মুখে ছিল, আর বর্তমানের চিত্র পুরাই উল্টা। সমস্থ মিডিয়া এবং সুশীল সমাজের বৃহৎ অংশ মিলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে আ,লীগ’র এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টায় আছে। ধরুন কেউকি জানেন যে ২০০৬ সালে বি,এন,পি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয় সেই বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৮%, যা দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশী এবং এখন সেটা রিচ করা সম্ভব হয় নায়, তার মানে তারা তখনও জোটের বিরুদ্ধে ছিল এখনও বিরুদ্ধে।

৪। বি,এন,পির নেতারা মাঠে নামছে না।

এই সুশীল মিডিয়ার একটাই কান্না যে, বি,এন,পির নেতারা মাঠে নামছে না, সুতরাং হরতাল হচ্ছে না। কোন কোন মিডিয়া একই স্ক্রিপ্ট প্রতিদিন দেখাচ্ছে, আজ হরতাল হয় নায়। গাড়ী আগের মতই চলছে। এই প্রচারনার ভিতর দিয়ে কিছু বিষয় ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে

ক) ঢাকার প্রশাসনে ব্যাপক ভাবে দলীয়করন এবং আঞ্চলিকীকরন করে অবাধে গুলির লাইসেন্স দিয়ে গনতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারকে ভুলন্ঠিত করা হয়েছে।

খ) ঢাকার প্রতি মোড়ে মোড়ে আ,লীগের নেতা-কর্মীরা পাহাড়া দিচ্ছে। পাশেই পুলিশ বসে আছে।

গ) ঢাকা মহানগরীর বাইরের বাংলাদেশ যে ১৮ দলময় সেটা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।

ঘ) ঢাকার বাইরে ১৮দলের যে বিশাল বিশাল মিছিল হচ্ছে, ইউনিয়ন লেভেল পর্যন্তযে আন্দোলন চলছে সেই চিত্রকে হাইড করে এমন একটা অবস্থায় নেয়া হয়েছে যেন মনে হচ্ছে, ঢাকাতেই ২৮০ সংসদীয় আসন আর বাইরে ২০ টি। আসল হিসাবযে আলাদা তা সবাই জানে।

ঙ) ঢাকা মহানগরীর আন্দোলন যে ১৮দলের পলিসি হতে পারে সেটাও কখনই প্রকাশ না করে ক্রমাগত উস্কানী দেয়া হচ্ছে।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আসলে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হতে বাধ্য কারন

গনতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার এবং ৮০% মানুষের মতের বাইরে গিয়ে এই ষড়যন্ত্র কখনই সফল হবে না।

জনতার বিজয় অবশ্যম্ভাবী............

বিষয়: রাজনীতি

১০৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File