পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের একটি মূল্যায়ন - জাতীয় সংসদ নির্বাচন-’৯১ এর ফলাফল বিশ্লেষণ
লিখেছেন লিখেছেন পূস্পিতা ২৭ জুলাই, ২০১৩, ০১:৪৫:১১ রাত
জাতীয় সংসদ নির্বাচন-’৯১ এর ফলাফল বিশ্লেষণ
নির্বাচনে মোট ৭৫টি রাজনৈতিক দল, জোট ও গ্রুপ প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর নাম ও প্রার্থী সংখ্যা,প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা দেয়া হয়েছে। যে সকল দল নির্বাচনে আসন লাভ করেছে তাদের ফলাফল নিম্নরুপঃ
বিভিন্ন দলে বিজয়ী সদস্যদের (৩০০জন) এবং সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত ৩০ জন মহিলা সদস্যার তালিকা পরশিষ্ট খ’ তে রয়েছে।
প্রদত্ত ভোট সংখ্যা
নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮০৩ টি। তন্মধ্যে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ৩ কোটি ৪১ লক্ষ ৩ হাজার ৭৭। সর্বমোঠ বাতিল ভোটের সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩২২টি যাপ্রদত্ত ভোটের শতকরা ১ দশমিক ০৮ ভাগ। সর্বমোট টেন্ডার ভোটের সংখ্যা ছিল ৭০৪টি অর্থাৎ০·০০২% ভাগ।
নির্বাচনে শতকরা ৫৩·১৭% ভোটার ভোট প্রদান করে।
জামানত বাজেয়াপ্তঃ
নির্বাচনে মোট ১৯৩৪ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। প্রতিটি দলেরই কম বেশী প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। প্রার্থী সংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে কম জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মাত্র ৩ জন। প্রার্থী সংখ্যার ব্যাপকতার তুলনায় জামানত বাজেয়াপ্ত প্রার্থীর সংখ্যাধিক্য হচ্ছে জাতীয় পার্টি, জমায়াতে ইসলামী, বাকশল, সিপিবি, ইসলামী ঐক্যজোট, ওয়াকার্স পার্টি, ন্যাপ, (মো), জাসদ (সিরাজ), জাকের পাটি, জাসদ (রব) জাসদ (ইনু) ফ্রীডম পার্টি, মুসলিম লীগ প্রভৃতি দলের।
সংখ্যালঘু প্রার্থী
এবারের নির্বাচনে মোট ৮১ জন সংখালঘু শ্রেণীর প্রার্থী বিভিন্ন দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীই ছিল বেশি ১৮ জন। দলীয় ভিত্তিক আওয়ামীলীগ সর্বোচ্চ ১০ জন সংখ্যালঘু শ্রেণীর প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। এছাড়া সিপিবি ৬ জন এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জকসদ (রব), জাতীয় পার্টি ও হিন্দুলীগ ৫ জন করে সংখ্যালঘু প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। উল্লেখ্য, সয়খ্যালঘু প্রার্থীর মধ্যে ১১ জন উপজাতীয় বাদে অন্যান্যরা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। মোট ৮১ জন প্রার্থীর মধ্যে মোট ৯ জন নির্বাচিত হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জনব আওয়ামী লীগ থেকে এবং ১ জন গণতন্ত্রী পার্টি থেকে।
নির্বাচনে এলাকাভিত্তিক অবস্থান
নির্বাচনে প্রধানতঃ বিএনপি ও আওয়ামী লীগই প্রতিদন্দ্বিতায় অবর্তীর্ণ হয়েছে। বিএনপি ১৪০ টিতে জয়লাভ এবং ১৫৩ টিতে জয়লাভ এবং ৫৭ টিতে স্থান লাভ করে। আওয়ামী লীগ ৮৮টিতে জয়লাভ এবং ১৫৩টিতে দ্বিতীয় স্তান লাভ করে। জাতীয় পার্টি ৩৫ টিতে জয়লাভ এবং ২৮টিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। জামায়াতে ইসলামী ১৮ টিতে জয়লাভ এবং ৩০টিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। উল্লেখ্য, বিএনপির মোট ৮৯ জন প্রার্থী তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান লাভ করে অর্থাৎ তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেনি। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীওগর মাত্র ২৪ জন প্রার্থী যথাক্রমে তৃতীয় (১৯) ও চতুর্থ(৫) হয়। জাতীয় পার্টির মোট ৮৯ জন প্রার্থী তৃতীয় ও চতুর্থ এবং ১২০ জন প্রার্থী পঞ্চম ও আরো খারাপ অবস্থা লাভ করে। জামায়াতে ইসলামী মোট ৯৮ জন তৃতীয় ও ৪৬ জন চতুর্থ স্থান লাভ করে।
ভোট পাপ্তির হার
নির্বাচনে বেশীসংখ্যক এিনপি প্রার্থী সর্বাধিকহারে ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। বিএনপির ৪১ জন প্রার্থী মতকরা ৫০ ভাগের বেশী ভোট পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের মাত্র ১১ জন প্রার্থী ৫০% বেশী ভোট লাভ করেন। জাতীয় পার্টির মাত্র ৪ জন ৫০% ভোট লাভ করতে পারেননি। ২০% এর নীচে ভোট পেয়ে মাত্র ১ জন প্রার্থী বিজয়ী হন। তিনি জাতীয়া পার্টির । সব দলের অধিকাংশ প্রার্থীই ৩০%-৫০% এর মধ্যে ভোট লাভ করেন। বিএনপির ৯২ জন, আওয়মিী লীগের ৭২ জন, জাতীয় পার্টির ২৫ জন, জামায়তে ইসলামীর ১৭ জন এবং অন্যান্য দলের ১৫ জন প্রার্থী এরূপ ভোট লাভ করেন।
বিজয়ী প্রার্থীদের ভোটপ্রাপ্তির শতকরা হার
মতাদর্শভিত্তিক ভোট ভাগাভাগি
নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী শক্তি এককভাবে সর্বোচ্চ ৪৩·৯৬% ভোট লাভ করেছে। এছাড়া ইসলামপীÿ দলগুলো পেয়েছে ১৪·৯৫% ভোট। এ উভয় শক্তিকে ধর্মনিরপেক্ষ ও বামপন্থীবিরোধী ধরলে তারা সম্মিলিতভাবে পেয়েছে প্রায় ৫৮% ভোট। উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে বুঞা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠি ধর্মনিরপেক্ষতা ও বামপন্থি রাজনীতির বিরুদ্ধে এবং জাতীঘতাবাদী ও ইসলামপন্থীদের পক্ষে তাদের রায় প্রদান করেছে।
নগরভিত্তিক ভোট বিভাজন
নির্বাচনে ৬৪টি জেলাশহরে মোট ৭৪টি আসনের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি লাভ করে। এবার শহরে ভোটাররা বিএনপির প্রতি বেশী ঝুকে পড়ে বলে প্রতীয়মান হয়। বিএনপি মোট ৪৩টি শহরে আসন পায় এবং শহর এলাকায় দলটির ভোট প্রাপ্তির হার শতকরা ৫৮·১১% ভাগ। অপরদিকে আওংামী লীগ ১৯টি আসন এবং শতকরা ২৫·৬৮ হারে ভোট লাভ করে। জাতীয় পার্টি ৭টি আসন সহ মোট ৯·৪৬% ভোট এবং জামায়াতে ইসলামী ৩টি শহরে আসন লাভ করতে সমর্থ হয়।
নির্বাচনি বিএনপি প্রার্থীরা ১১২ টি আসনে আওয়ামী লীঘ, ৬টি আসনে জাতীয় পার্টি ও ১৩টি আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রর্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৫০টি আসনে বিএনপি, ১৭টি আসনে জাতীয় পার্টি এবং ১০টি আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। জাতীয় পার্টি ২টি আসনে বিএনপি , ২১টি আসনে আওয়ামী লীগ ৫টি আসনে জামায়াত প্রার্থীকে পরাজিত করে। জামায়াতে ইসলামী ৩টি আসনে বিএনপি, ১৩টি আসনে আওয়ামী লীগ এবং ২টি আসনে বাকশাল প্রার্থীকে পরাজিত করে। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সাথে সরাসরি প্রতিদন্দিতা হয়নি। জামায়াতের একজন প্রার্থী সিপিবি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
বিভাগভিত্তিক ভোট বিভাজন
বাংল দেশ জাতীয়তাবাদি দল ঢাকা বিভাগে অত্যন্ত ভালো ফল করেছে। এ বিভাগে এ দলের ভোট প্রাপ্তর হার ৩৮·৩৫% এবং আসন প্রাপ্তর হার ৬২%। উল্লেখ্য, এ বিভাগে বিএনপি যে পরিমাণ ভোফ পেয়েছে সে তুলনায় আসন সংখ্যা অনেক। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ এ বিভাগে ৩৩·৪৩% ভোট পেয়েও আসন পেয়েছে মাত্র ৩০% বিএনপির রাজশাহী বিভাগে ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার অপেক্ষাকৃত কম মাত্র ২৫·৫২%। অবশ্য আসন প্রাপ্তির হার সে তুলনায় বেশী ৩৭·৫০%। বিএনপি ভোট ও আসন উভয়ই কম পেয়েছে খুলনা বিভাগে যথাক্রমে ২৭·৭৯% এবং ৩৩·৩৩%। উলেখ্য, খুলনা বিভাগে আওয়ামী লীগ ভোট ও আসন উভয়ই বিএনপির চাইতে বেশী পেয়েছে যা যথাক্রমে ৩২· এবং ৪৫%। চট্টগ্রাম বিভগে আওয়ামী লীগ ও বিচএনপি প্রায় সমান ভোট (যথাক্রমে ২৯·৬৬%ও ২৯·৮১%) পেলেও বিএনপি আসন লাভ করেছে প্রায় দ্বিগুণ (বিএনপি ৪৭·৪৪% ও আওয়ামী লীগ ২৪·৩৬%)। আওয়ামী লীগ রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছে ২৪·৬২% ভাগ এবং আসন পেয়েছে মাতও ২০·৮৩% ভাগ। আওয়ামী লীগ খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চসংখ্যা আসন ৪৫% পেয়েও ভোট সবচেয়ে বেশী পেয়েছে। ঢাকা বিভাগে ৩৩·৪৩% কিন্তু ঢাকা বিভাগে দলটির বিএপির অর্ধেকিরও কম আসন লাভ করে। লক্ষণীয় যে, আওয়ামী লীগ প্রতিটি বিভাগেই বিএনপির কাছাকাছি ভোট পেয়েও আসন পেয়েছে অনেক কম।এরদ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অধিকাংশ আসনেই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আওয়ামীলীগ। জাতীয় পার্টি রাজশাহী ও চট্টগাম বিভাগে ভালো করেছে। ঐ দুটো বিভাগে ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার যথাক্রমে ১৫·৯০% এবং ১৪·৮১%। দলটি ঢাকা ও খুলনা বিভাগে খুব খারাপ করেছে। ঐ দুটো বিভাগে প্রাপ্ত ভোটেরা হার যথাক্রমে ৮·০৫% এবং৯·১০%। জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে যথাতওমে ১৯·৮৬% এবং ১৬·৮৭% ভোট পেয়েছে, পকষান্তরে ঢাকা বিভগে জামায়াতের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা খুবই কম অর্থাৎ ৪·৫৬%। চট্টগওামেও এ দলটি মাতও ৮·৭৩% ভোট পায়।
নির্বাচনী ব্যয়
নির্বাচনী ব্যয় তিন লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও রংপুরের কোন কোন এলাকায় তিন কোটি টাকা খরচ করেছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। পরাজিত প্রার্থীদের ধারণা রংপুরের পাঁটটি এলাকায় ১৫/১৬ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। পরাজিত প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, এই পাঁচটি এলাকার জন্য ১৮ লাখ পোষ্টার ছাপা হয়েছিল। এসব পোষ্টার ছাপাতে প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করা হয়। একটি সূত্র জাতীয় পার্টির রংপুরে নির্বাচনী ব্যয় উল্লেখ করেছে এভাবে দৈনিক বেবী, জীপ, মাইক ভাড়া বাবদ খরচ ২২,৪০০ টাকা। প্রতিদিন মোট খরচ ২ লাখ ৬ হাজার ৮শ’। তিন মাসে খরচ ১ কোটি ৮৬ লাখ ১২ হাজার।
বিষয়: বিবিধ
২১৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন