কোরআনের আলোকে মানব জীবন ?
লিখেছেন লিখেছেন কোহিনূর ইসলাম সুমি ১২ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:১৭:৩৫ দুপুর
পবিত্র কোরআনুল করিম মানবজাতির চিরন্তন সংবিধান। এ সংবিধানের ব্যাখ্যাকারী সরওয়ারে কায়েনাত হজরত রাসুলে মকবুল (সা.) তাঁর নিজ জীবনের অসংখ্য কর্ম-ঘটনাবলির মাধ্যমে মানবজীবনের আদর্শ, শিক্ষা, নীতিমালা স্থাপন করে গেছেন_তা চিরকালের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। আল্লাহপাক কোরআনুল করিমে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন : 'লাক্কাদ কানা লাকুম ফি রাসুলিল্লাহে উস্ওয়াতুন হাসানা।' অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুলের জীবনে তোমাদের জন্য সুন্দরতম আদর্শ রয়েছে। তাই মানবজীবন গঠনের জন্য মহানবী (সা.)-এর আদর্শ তথা ওহির মাধ্যমে যে আইন, বিধান বা অনুশাসনপ্রাপ্ত হয়েছেন, তা-ই আমাদের সহায় বা অবলম্বন।
আল্লাহপাক মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে। মানুষ যাতে পথভ্রষ্ট হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত না হয়, তাই পবিত্র ইসলামকে একমাত্র জীবনব্যবস্থা হিসেবে আমাদের জন্য মনোনীত করেছেন। আল-কোরআনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম এবং আল-কোরআনের দৃষ্টিতে মানবজীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে পারলৌকিক জীবনে পরিত্রাণ পাওয়া ও বেহেশতে গমন। এ সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, 'ওমা খালাকতুল জিন্নাওয়াল ইন্সা ইল্লালিয়াবুদুন।' অর্থাৎ আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা সফল করার জন্যই মানব ও জিন জাতির সৃষ্টি। ইসলামে জীবন গঠনের জন্য আল-কোরআনে রূপরেখা নির্দেশ করেছেন। নৈতিক মূল্যবোধ, উজ্জীবন ও জীবন গঠনের জন্য ব্যক্তিচরিত্র তথা আখলাকে হামিদা সুন্দরতম আদর্শ নির্মাণে আল-কোরআনের নির্দেশিকা মেনে চলা অপরিহার্য। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থান বাস্তবায়নে পবিত্র কোরআনের আলোকে যে শিক্ষা আমরা লাভ করি, তা হলো ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক সহানুভূতি-সহমর্মিতার মাধ্যমে সম্প্রীতি অটুট রাখা। এ সম্প্রীতির জন্য মন-দিল থেকে সব স্বার্থপরতা, নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা ও হৃদয়হীনতার পাশবিক কর্মকাণ্ড দূর হয়ে যায়। মৌলিক মানবিক চরিত্রের সর্বনিম্ন মানরক্ষা ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালার মূল দায়িত্ব। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, মানবজীবনকে সর্বোচ্চ মানে উন্নীত করার দায়িত্ব সম্পন্ন করছে পবিত্র ইসলাম। বিশেষ করে ইসলামের নৈতিক উপদেশগুলো সারা বিশ্বে রাখছে শান্তি ও সুখকর পরিবেশ। অতএব, আল্লাহপাকের আল-কোরআন ও মহানবী (সা.)-এর বাণী পবিত্র হাদিসের শিক্ষা ও আলোকে আমরা আমাদের জীবন গঠনে প্রধানতম ভূমিকা রাখতে পারি। আল-কোরআনের আলোকে আমাদের চরিত্র গঠন সর্বকালের একটি বৈপ্লবিক আদর্শ। কেননা মানবজীবন সুন্দরতম আদর্শ ও শিক্ষায় খাঁটি কামেলে ইনসানে ভূষিত হয়, এটিই আল-কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। হজরত রাসুলে মকবুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি যুদ্ধে বিজয়ী হয়, সে প্রকৃত বীর নয়। প্রকৃত যোদ্ধা-বীর সেই ব্যক্তি, যে রাগ-ক্রোধ বশে আনতে পারে। এর অর্থ হলো, বস্তুগত শক্তি-দাপটের চেয়ে যে বা যারা ক্রোধ-রাগ-গোস্বাকে বশে আনতে পারে এবং কাজকর্মে সংযত হতে পারে, সেই বড় বীর।
অতএব, পবিত্র কোরআন মজিদের আলোকে জীবন গঠন এবং এর মানবিক গুণাবলি অর্জন করা আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন। সত্যিকার সেই ব্যক্তি খাঁটি মানুষ, যার মধ্যে দৃঢ়সংকল্প, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, ধৈর্য, সহনশীলতা, বীরত্ব, সাহস, ত্যাগের মহিমা, সংযম, ওয়াদা পালন, আনুগত্য, নিষ্ঠা, পবিত্রতা, ভদ্রতা, সৌজন্য-শিষ্টাচার ইত্যাদির গুণ বিদ্যমান। এসব গুণের মহিমায় শাশ্বত মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ, উন্নয়ন, পূর্ণতা সাধিত হয়।
বিষয়: বিবিধ
২৮৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন