নারীর অধিকার ও মর্যাদা

লিখেছেন লিখেছেন কোহিনূর ইসলাম সুমি ১১ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৫০:৩০ রাত



অধিকার ও মর্যাদা দুটো ব্যাপারের সাথেই, আবার আরেকটি বিষয় অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত – তা হচ্ছে এই যে, একটা ইসলামী জীবনব্যবস্থায়, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নারী ও পুরুষ, কার ভূমিকা কি? এই ভূমিকা কি এক ও অভিন্ন?? অথবা আরো সাধারণ ভাবে – যে কোন সমাজব্যবস্থায়ই এই ভূমিকা কি এক হওয়ার কথা, না ভিন্ন হওয়ার কথা ৷ আপনি যদি মনে করেন যে, আল্লাহ্‌প্রদত্ত পৃথিবীর এই জীবনে, নারী ও পুরুষের ভূমিকা এক ও অভিন্ন – তা হলে তা মনে করার পিছনে আপনার প্রধান যুক্তি হতে হবে এরকম যে, নারী ও পুরুষ ‘মানবতার ইউনিট’ হিসেবে হুবহু এক ও অভিন্ন – যেমন একটা বিল্ডিং এর প্রতিটি ইঁটই মূলত একই এবং প্রতিস্থাপনযোগ্য! কিন্তু আসলে কি তাই?? ইসলাম তা মনে করে না এবং আপনি যদি বিস্মৃত হয়েও থাকেন, তবে শুনে নিন যে, বিজ্ঞানও তা মনে করে না! একই প্রজাতির, অর্থাৎ, মানবসম্প্রদায়ের অভিন্ন সদস্যপদের বিচারে এবং আল্লাহ্‌র সৃষ্টি হিসেবে তারা সমান – কিন্তু একই সময় তারা অত্যন্ত ভিন্নও বটে ৷ একটি বেলী ফুল ও একটি গোলাপ ফুলের কথাই ধরুন – ফুলের একক হিসেবে তারা সমান – অর্থাৎ, আমরা বলবো বেলী ও গোলাপ দু’টোই ফুল, কিন্তু গুণাগুণে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন – প্রত্যেকে নিজ গুণে বিশেষ ৷ কিন্তু আমি যদি বলি যে, তারা একই ভাবে আমাদের কাছে নিজেদের প্রকাশ করে – তবে কি কথাটা ঠিক হবে? না হবে না ! বরং আমরা বলবো – বেলীফুলের গন্ধটাই তার প্রধান বৈশিষ্ট্য – বহুদূর পর্যন্ত তার গন্ধ ছড়ায়; পক্ষান্তরে গোলাপের নজরকাড়া রং বা অবয়ব আমাদের চোখে সুন্দর দেখায় ৷ দু’টো ফুলেরই নিজস্ব গুণাগুণ রয়েছে – এবং নিজ গুণে তারা বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ ৷ ঠিক সেভাবে শরীরের গঠন, কন্ঠস্বর, চোখের চাহনী, ভ্রূর বক্রতা, ত্বকের মসৃণতা বা চলার গতির মত বাহ্যিক গুণাগুণ থেকে শুরু করে, স্নেহ-মায়া, সহিষ্ণুতা, করুণা, সৌন্দর্যজ্ঞান, মেজাজ, আনন্দবোধ, মেধা ইত্যাদির মত সকল অদৃশ্য বিষয়েও – প্রতিটি তন্তুতে ও প্রতিটি কোষে নারী ও পুরুষ ভিন্ন ও স্বতন্ত্র ৷ সেজন্যই এই পৃথিবীতে, নারী ও পুরুষের বিপরীত মেরুধর্মিতা এবং সম্পূরক ও পরিপূরক গুণাগুণের সমন্বয়ে গঠিত – একটা আদর্শ ও সুখী দাম্পত্যজীবন এত সুন্দর এবং এত প্রশান্তিময় ৷ আর এই ভিন্নতা ও স্বাতন্ত্র্যের জন্যই, আল্লাহ্‌ তাদের পালন করবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন ৷ সেজন্য, রণকৌশলে খুবই চৌকস একজন সেনাপতি যদি মনে করেন যে, তিনি বিশাল কৃতিত্বের দাবীদার, – অথচ, তার মা যদি প্রশ্ন তোলেন যে, তাকে ঐ রকম একজন বীর হিসেবে গড়ে তোলার পিছনে তার যে ভূমিকা রয়েছে, সে জন্য তিনিও সমধিক কৃতিত্বের দাবী করতে পারেন – তাহলে আমাদের কি কিছু বলার আছে?? অথবা, ধরুন সকল বিচারে ভীষণ ভাবে সফল কোন একটা পরিবারের, প্রতিপালন ও বিকাশে ঐ পরিবারের বাবা যদি দাবী করেন যে, তিনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, একটা সন্তোষজনক উপার্জনের ব্যবস্থা করেছিলেন বলেই না তার পরিবার এমন সফল পরিণতিতে পৌঁছালো – তাহলে ব্যাপারটা কি ঠিক হবে ? যে মা তার জীবনের প্রতিটি দিনের সময় ও সুখ ঐ পরিবারের জন্য ‘ব্যয়’ করেছেন – স্বামী ও সন্তানের জন্য একটা নিবিড় আশ্রয়স্থল হিসেবে ঘর ও সংসারকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এবং তা আবাদ রেখেছেন – তার অবদানকে কি আমরা ছোট করে দেখতে পারি ? পরিবারের উন্নতির জন্য তিনি যে কাজ করেছেন, তার বিনিময়ে হয়তো দৃশ্যত কোন পয়সা উপার্জন হয়নি সত্যি, কিন্তু তাই বলে কি সমাজ ও জাতি গঠনে তার অবদানকে বা তার মর্যাদাকে খাটো করে দেখা যাবে ? মোটেই না ! ইসলামী ঐতিহ্যে লালিত ও পালিতরা অতি অবশ্যই স্বীকার করবেন যে, কোন পরিবারের সন্তানদের ভালো মুসলিম তথা সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে একজন ভালো মায়ের অবদান অনস্বীকার্য ও তার মর্যাদা অতি অসামান্য ৷ বিশ্বাস হারিয়ে বস্তুবাদী নাস্তিকে রূপান্তরিত হওয়া পশ্চিমা সভ্যতার পন্ডিতেরা, দেরীতে হলেও, তা বুঝতে শুরু করেছেন

বিষয়: বিবিধ

১৩৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File