দরবেশের যাদু-টোনায় আচ্ছন্ন গোটা দেশ, এমপি রনির কি হবে ?

লিখেছেন লিখেছেন নিপাতনে সিদ্ধ ২২ জুলাই, ২০১৩, ০৮:০৮:৩৭ রাত



সামাজিক যোগাযোগ সাইট ও সর্বমহলে এমপি রনিকে নিয়ে তোলপাড় যাচ্ছে। একি করলেন এমপি রনি ? সাংবাদিক পেটালেন? তিনিতো একজন এমপি, লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন,অনেক দায়িত্ব তাঁর কি করে তিনি এমন একটা জঘন্য কাজ করতে পারলেন। আবাল বৃদ্ধ-বনিতা অনেকের মুখে এই প্রশ্ন। ঘটনাটা কি ঘটেছিল আমার কাছে অনেকে জানতে চায়, আমি তখন মিটি-মিটি হাসছিলাম কারন তখন দৃশ্যপটে এমপি রনির অগ্নিমূর্তি মুখটা সামনে ভেসে উঠলো। একেবারে রগরগে উত্তেজিত এমপি রনি, মেলাতে পারছিলাম না। সদালাপী, চঞ্চল, রসিক মহাজোটের এই সাংসদ বিভিন্ন সময় আমাদের সামনে আসেন টকশোতে কথা বলেন, দলের নানাহ কু-কর্মে বিভিন্ন সময় প্রতিপক্ষের হাতে ধরাশায়ীও হন, কই কখনো তাঁকে চটতে দেখিনি কিংবা রাগে ক্ষোভে রক্ত-লাল হতেও দেখিনি বরং হাকিকত ও মারফত দিয়ে প্রতিপক্ষের সামনে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। তাঁর ভাষায় নান্দনিকতা আর ছন্দের সম্মিলন ঘটায় আমরা প্রণোদিত হই, এছাড়া তিনি অনেকসময় দলের উর্ধে এসে ন্যায় বলেন তাই অনেক তরুন-যুবাদের মনে স্থান করে নিতে পেরেছেন। সেই লোকটা কি করে এমন কাজটা করলেন? আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন, তারতো ঐ নির্যাতিত সাংবাদিকদের কাছে করজোড়ে মাফ চাওয়া উচিৎ। আমরা সকলে তাঁর বিচার চাই প্রয়োজনে তাকে দন্ড দেওয়া হোক মাননীয় আদালতের কাছে এটাই আমাদের প্রর্থনা।

কিন্তু ঐ শুভ্র-শ্বেত কেশধারী দরবেশ বাবার কি হবে ? যিনি দয়ার সাগর, তাঁর দৃষ্টি যেখানে পড়ে সেখানের বালিও সোনা হয়ে যায়। এছাড়া তিনি কখনো কারো উপর চটেননা, যদিও কেউ তার উপর রেগে বসেন তখন তিনি মৌনতা অবলম্বন করেন। পর্দার পেছন থেকেই খেল স¤পন্ন করেন। দরবেশ স¤পর্কে পড়ে বলছি, তার আগে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের দায়িত্বে থাকা খালেদ মহিউদ্দিন সাহেবের কাছে আমার জানতে ইচ্ছে হয়, চার-পাশে এত এসাইনমেন্ট থাকতে আচমকা কষ্ট করে তার তালাশ টিমকে সেই দশমিনা-গলাচিপায় কেন পাঠিয়েছেন? এছাড়া কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো এনাদার থিং যে খালেদ সাহেব কি আমাদের শেয়ার বাজারের মহা চোরদের নিয়ে অন্তত ১৫ মিনিটের একটি এসাইননমেন্ট করে দেখাবেন? তবে গোটা জাতি আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো। এছাড়া তৃতীয় মাত্রায় তিনি জোড় গলায় বলেছে একেবারে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করেন তিনি এই প্রেক্ষিতে তার কাছে আমি চ্যালেঞ্জ করছি শুধু তিনি নন বাংলাদেশের কোন মিডিয়া ৬০ শতাংশের বেশি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করেননা। এ প্রসঙ্গে যদি আরো বলতে হয় তবে বলা যায় যে, দেশের গণমাধ্যমগুলোর মালিক কারা এবং কি তাঁদের আয়ের উৎস? সেসব বিষয় আমাদের সবার জানা। গণমাধ্যমগুলো যে পর¯পর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ন হয়ে আছে তা শীর্ষ স্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো আর কালের কন্ঠের পর¯পর বিরোধী জঘন্য মিথ্যাচার থেকেই বুঝা যায়। অন্যদিকে গণমাধ্যম যে তাদের প্রভুদের কু-কর্ম আড়াল করার জন্যই কাজ করছেন তা-ও বুঝা যায় যখন আমরা দেখি প্রেসক্লাবের সামনে এটিএন নিউজের সাংবাদিকরা মাহফুজুর রহমানকে বাঁচাতে প্রতিপক্ষের উপর নগ্ন হামলা চালান। এমপি রনি সাংবাদিক পিটিয়ে নি:সন্দেহে নিন্দনীয় কাজ করেছেন; উনার বিচার হওয়া উচিত। তবে বিচারের আগেই যে মিডিয়া ট্রায়াল শুরু হয়েছে তা নিয়ে দুটো কথা আছে। সাগর-রুনিও সাংবাদিক ছিলো। তাদের হত্যাকারীরা তো দিব্যি গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে; কেউ তো তাদের গ্রেফতার করার বা বয়কট করার ডাক দিচ্ছে না। কারন সেই হত্যাকারীর হাতে মিডিয়া আছে।

থাক এসব কথা এবার আসি দরবেশ বাবার প্রসঙ্গে, উনাকে চিনেন না এমন লোক এই বাংলায় পাওয়া ভার। আলোচনার খাতিরে উনাকে আবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। উনি সেই দরবেশ বাবা যার শুরুটা ১৯৭২ সালের কোন এক সুন্দর সকালে। বাংলাদেশ আমদানী-রফতানী কো¤পানীর ছায়াতলে যে শিশুর জন্ম আজ তার ব্যবসার টার্নওভার কয়েকশ মিলিয়ন ডলার। ৪০,০০০ কর্মচারী কর্মকর্তা নিয়ে এই বাবা ও তার সাগরেদ মুরিদের দল এ পর্যন্ত যে স¤পদ আহরণ করেছেন তা-ও কয়েক বিলিয়ন ইউএস ডলারে পৌঁছেছে। বেক্সিমকো ফার্মা, বেক্সটেক্স, সাইনপুকুর সিরামিকস, জিএমজি এয়ারলাইনস,দ্যা ইনডিপেনডেন্ট, দ্যা ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন সহ দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল¯, টেক্সটাইল, সিরামিক, জুট, এভিয়েশন, মিডিয়া, ফাইন্যান্স, রিয়েল এস্টেট, নির্মান, এনার্জি সহ এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে বাবাজিরা বিনিয়োগ করেননি। অন্যদিকে বাবার কিছু অভিনব কেরামতি আমরা দেখেছি শেয়ার বাজারে, মূলত ধরা হয় এ বাবার জন্ম শেয়ার বাজারের উদরে। ৯৬ এর শেয়ার বাজার থেকে শুরু আর এবারের শেয়ার বাজারের ৬০ হাজার কোটি টাকায়(মতান্তরে আরো বেশী) এসে বাবা কিছুটা ক্ষান্ত হয়েছেন। এছাড়া বাবার জনতা,রুপালি,অগ্রনী,সোনালী ব্যাংকের উপর-ও রয়েছে বিশেষ আশির্বাদ। একবারতো ৫ হাজার কোটি টাকার একটা ধান্দার খবর ফলাও করে ভেসেছিল আকাশে বাতাসে, অবশ্য এটা সামান্য ক-টাকা, বাবার ধান্দা হয় মিলিয়ন-মিলিয়ন ডলারে। বাবাকে কেউ ছুঁতে পারে না সবাই আশিব্বাদ নিতে আসেন বাবার খানকায়ে। দরবেশ বাবা তাঁর অলৌকিক যাদু-টোনায় প্রচ্ছন্ন আবেশে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন গোটা সমাজ, গোটা জাতি।

এবার আসা যাক এমপি রনি প্রসঙ্গে, তাঁর এমন হঠাত রেগে যাওয়ার পেছনে যে কারণটি প্রধান ভূমিকা রেখেছিল সেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, এই পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করে এবং প্রচণ্ড গরমে বেচারা রনি নিজেকে আর সংযত করতে পারেননি, এছাড়া বেশ কয়েকদিন ধরে তাঁকে যে ক্যামেরা অনুসরণ করছিল তাও তাঁর সহ্য হয়ে উঠেনি। তবে পুরো বিষয়টি আমার কাছে এমন মনে হয়েছে যে ধরুন, গ্রামে আপনার বাড়িতে এক মস্ত-বড় চোর রাতের বেলা দুইজন লোখ পাঠিয়েছে আপনাকে অনুসরণ করার জন্য আর আপনি বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ঐ দুই জনকে ধরে দিলেন বেধড়ক মার আর তা দেখে ছুটে এল এলাকার চকিদার ও মাতব্বরেরা। আর তাঁরা এসে আপনার পক্ষ না নিয়ে পক্ষ নিল ঐ দুই অনুসরণকারীর তখন ব্যাপারটি কেমন লাগবে একবার ভাবুনতো? এই গেল রনির ব্যাপারটি, তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে মিলছে না, এমপি রনি কেন বারবার তাঁর দলে ঘাপটি মেরে বসে থাকা সর্বগ্রাসীদের নানাহ কু-কির্তীর প্রতিবাদ করে আসছেন? এমপি রনি কি তাঁর দলকে জনগণের ভাষাটা বোঝাতে চাইছেন? নাকি অন্য কিছু? আর কি হবে এখন? এ অপরাধে দায়ে কি দল থেকে বহিষ্কৃত হবেন এমপি রনি ?

নিপাতনে সিদ্ধঃ

বিষয়: রাজনীতি

১০৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File