ছারপোকা

লিখেছেন লিখেছেন কণ্ঠনালী ২২ জুলাই, ২০১৩, ০১:৪৪:১৭ রাত

রাত দুটোর কাছাকাছি। ঘুম থেকে উঠেই হঠাৎ কি যেন খুঁজতে শুরু করে রুম্মান। ঘুম জড়ানো মুখটার সব জায়গা জুড়ে তখন রাগ ও বিরক্তির ছাপ। পাশে নির্ঝর তখনো ঘুমোয়নি। আস্তে আস্তে নির্র্ঝর জিজ্ঞেস করে কিরে, কি খুঁজছিস?

শালা ছারপোকা!পেলেই খতম করে দেবো, ঘুমটাই মাটি করে দিলো। ভালো করে খুঁজে দেখ। পাজি পোকার দল কামড় দিয়ে কেমন সটকে পড়ে। দিনের পরে বিরক্তির রাতটা যেন শেষ হতেই চায় না। নির্ঝর মনে মনে বিরক্তির রাতটাকে এক হাজার বার গালি দয়ে। হঠাৎ নির্ঝরের দৃষ্টি রাফিদের পিঠে কয়েকটা ছারপোকার অস্তিত্ব দেখে থমকে যায়। একটু জোরেই বলে উঠে নির্ঝর

আরে দেখ, রাফিদের পিঠে কতোগুলো ছারপোকা! মার ওগুলোকে তাড়াতাড়ি মার।

রাগের মাথায় ছারপোকাগুলোকে খুব জোরেই মারে রুম্মান। তার চড় খেয়ে বেচারা রাফিদের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম জড়ানো অবস্থায় তখন কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি রাফিদ। নির্ঝর ও রুম্মানের হাসিতে ওর সন্দেহ হয়। রাগত স্বরে বলে উঠে, এতো রাতে এটা কোন ধরনের মশকরা করছিস তোরা ?

ছারপোকাই তো মারছিলাম আমরা। সব রক্তই তো চুষে নিচ্ছিল তোর। বর্তমান যুগে উপকার করলেও দোষ।

বিরক্তির সঙ্গেই জবাব দিলো রুম্মান। রাফিদ আবারো ঘুমিয়ে পড়লো। ছারপোকার কামড় খেয়েও ঘুমাতে পারার এক অসাধারণ ক্ষমতা আছে রাফিদের। এবার নির্ঝর বলে উঠে

কামড় খেয়েও কেমন দিব্যি ঘুমাতে পারে দেখো।

বাদ দে ওর কথা, এখন আমরা কি করতে পারি বল। বললো রুম্মান। ঠিক এমন সময় রুম্মানের জামার ভেতর আরেকটি ছারপোকা কামড় দিয়ে বসলো তাকে।

রাগে, ক্ষোভে চিৎকার করে উঠলো রুম্মান। চিৎকার আর চেঁচামিতে আরো পাঁচ-ছয় জনের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘটনা শোনার পর সবাই বিরক্তির হাসি হাসলো। তাদের হাসিতে রয়েছে বিষণœতার করুণ চাহনি, চরম উপহাস এবং নিজেকে টিকিয়ে রাখার ভয়। এরপর কিছুক্ষণ সবাই চুপ থাকলো।

রুম্মান, রাফিদ, নির্ঝররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকে। ভার্সিটির সব হলগুলোতেই ছারপোকা ও মশার নিরাপদ বাসস্থানে পরিণত হয়েছে। ওরা এক রুমে পঁচিশ জন থাকে।

অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকট, তার মধ্যে মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর সিটের রাজনীতি। সব মিলিয়ে একরকম বলির পাঠা হতে হচ্ছে রুম্মান নির্ঝরদের। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের এ দশা অবিশ্বাস্যভাবে স্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে।

চল, সবাই বাইরে বাগানে বসে রাতটা কাটিয়ে দিই। ছারপোকার বিশ্রী স্বাদের কামড় আর সহ্য হচ্ছে না। নীরবতা ভেঙে রুম্মানের প্রস্তাব শুনে এবার কারো মন্দ লাগলো না।

মজার আইডিয়া! এতো রাতে খুব মজা হবে। তার উপর ছারপোকার কামড় থেকে তো অন্তত রক্ষা পাবো, বললো নির্ঝর। এরপর সবাই বাগানের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। সারারাতের খোশগল্পে হলো জীবনের দুঃখগুলো মোচন করার এক অপূর্ব সুযোগ ওরা মিস করলো না।

রাতটা কাটিয়ে দিয়ে ফজরের নামাজ পড়ে রুমে ঘুমাতে গেলো ওরা। প্রসঙ্গত,

সকাল ১০টা। আস্তে আস্তে ঘুম থেকে উঠে যার যার ক্লাসে চলে গেলো। আজ হলে ছারপোকা নিধন কর্মসূচি চলবে। রুমের মধ্যে বিষপ্রয়োগ হবে। সবার মধ্যে আনন্দের রেখাটা তাই প্রসারিত হচ্ছিল। তবে আশঙ্কাও দেখা দিলো, সারাদেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যগুলো যেভাবে ভেজালে সয়লাব হয়ে গেছে, সেখানে বিষের মধ্যে যে ভেজাল নেই সেটা কে বলবে। আজকাল বিষ খেলেও নাকি মানুষ মরে না। যেখানে বিষপ্রয়োগে মানুষ মরছে না, সেখানে ছারপোকারা বিষ পেয়ে দিব্যি খুশি হয়েছে বৈকি।

বিষে কাজ হয়নি। আজ রাতেও রুম্মান, নির্ঝররা ঘুমাতে পারেনি। আবার কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে হল ছেড়েছে। দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে মেধাবীরা এভাবেই দিন কাটায়। নির্ঝরের মুখ দিয়ে তখন একটি দীর্ঘশ্বাস বেরুলো। সে বলে উঠে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে জাতির স্বপ্ন পূরণে তবুও আমরা অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাবো। রুম্মান নির্ঝরের মুখের দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকে।

বিষয়: সাহিত্য

১৩০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File