ডিজিটাল প্রতারণা...!

লিখেছেন লিখেছেন বটবৃক্ষ বলছি ১৮ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:৫৮:১৩ বিকাল





সবুজে শ্যামলে ভরা অনেক সুন্দর একটি গ্রাম, হায়াতসার। নামকরণের সঠিক ব্যাখ্যা আমার জানা নেই, তবে অনুমান করে বলতে পারি- হয়ত এই গ্রামের ভূমির ঊর্বরতার হয়াত অনেক বেশি, যার বদৌলতে নামকরণ হতে পারে হায়াতসার। নামের ব্যাখ্যা যাইহোক, গ্রামটি অত্যন্ত সুন্দর! এই গ্রামের মানুষগুলোও খুব সুন্দর! বলা যায় সুন্দর পরিপাটি একটি শিক্ষিত গ্রাম। গ্রামের অনেকে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন, তারপরও শিক্ষার দিকেই অধিকাংশের ঝোক বেশি। সেটা বোধকরি হায়াতসার মাধ্যমিক বিদ্যালয়য়ের কারণেই। অনেক সুন্দর ক্যাম্পাস কাঠামো আর বৃহৎ এড়িয়া নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বিদ্যালয়। সবচেয়ে বড় কথা হল এই বিদ্যালয়ের পড়াশুনার পরিবেশ, শিক্ষকদের গঠনমূলক আন্তরিক পরিশ্রম, সিলেবাস ও টিচিং সিস্টেমের বৈচিত্রময়তা ও ভিন্নতার কারণে সর্বদাই এই বিদ্যালয় প্রত্যাশিত ফলাফল উপহার দিচ্ছে।

এই গ্রামের একটি সুন্দরী মেয়ে, নাজমুন্নাহার নাজু। মেয়েটি ঐ স্কুল থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করে পাশের গ্রামের একটি কলেজে ভর্তি হয়েছে। এরপর আইএ পাশ-ও করলো ভালোভাবে। আইএ পরীক্ষা যখন শেষ হলো তখন ঢাকাতে ওর বড় বোনের বাসায় বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ছোট বোনকে নিয়ে রওয়ানা হলো। ছোট ভাই জামাল গ্রামের লঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে ডেকে (লঞ্চের মেঝেতে) বিছানা করে দিল। যদিও শুধু দু'বোন যাবে ঢাকাতে তাতেও কোনো সমস্যা নেই ভাবলেন ওদের দুখিনি মা। কারণ এর আগেও কয়েকবার ওরা দু'জনেই ঢাকাতে গিয়েছে। আর সুবিধে হল ওদের বড় ভাই সদরঘাট এসে ওদেরকে নিয়ে যায়।

ওদের বাবা নেই, কয়েকবছর আগে তিনি মারা গেছেন। প্রাইমারি স্কুল মাস্টার ছিলেন। খুব নামডাক ছিল তার। পড়াতেন খুব ভালোভাবে। পড়া ক্লাসেই মুখস্ত করিয়ে দিতেন। তবে তিনি খুব রাগি স্বভাবের ছিলেন। একটু এদিক সেদিক হলে মাড়তেন খুব কড়াভাবে। আমার মনে আছে একগাল টেনে অন্যগালে কষিয়ে সেকি চড়-থাপ্পর! ইস! সে থাপ্পরের কথা আজও ভুলিনি, ভুলতে পরবোনা কোনোদিন। একবার তো তার থাপ্পরে আমার চোখে রক্ত জমে গিয়েছিল। তারপরও তার একেকটি থাপ্পর ঐসময়ে কলিরূপে ফুটছে আমার জীবনে। তখন বুঝিনি, আজ বুঝি। এই পরিণত বয়সে সেই কলিগুলো প্রস্ফূটিত হয়েছে স্বাধীনভাবে। সেই চপেটাঘাতের কলির বদৌলতেই জীবনটা আজ আমার সুন্দর হয়েছে।

নাজুরা তিনভাই চারবোন। সবার বড় হলো বোন, সে বোনের বাসাতেই বেড়াতে যেতে লঞ্চে উঠেছে ওরা দু'বোন নাজু আর সাজু। ছোট ভাই জামাল সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়ে নেমে গেছে, কারণ লঞ্চ বিদায়ী হুইসেল দিচ্ছে বারবার। একটু পরেই ছেড়ে দিবে। ওরা রেলিংয়ের পাশে বিছানা করেছে। রেলিংয়ের পাশে সুবিধে হল, মুক্ত বাতাস আর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার মজা, যা লঞ্চ ভ্রমণকে আনন্দময় করে তোলে। যদিও এই আনন্দ বেশিক্ষণ থাকেনা, অন্য আনন্দের সুচনা হওয়ার পর। মানে সন্ধ্যের পর নিঝুম নিরবতায় ঐ আকাশের কালো মেঘের কিংবা চাদনী রাতের তারার মাঝে নিজেকে হারিয়ে, বিস্মৃত হয়ে যাওয়া স্মৃতিকে হাতড়ানো, সে আরেক মজা!

বিকাল তিনটায় লঞ্চ ছেড়ে দিল। পাশে আরেকটি মেয়ে বিছানা করেছে। তার সাথে বিভিন্ন গল্প করে ভ্রমণটাকে জমিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে নাজু। রাতে খাবার খেয়ে আবার গল্পের ডালি নিয়ে বসলো আয়েশ করে। ছোটবোন ঘুমিয়ে পড়েছে। ওরা মধ্য রাত পর্যন্ত গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো। হঠাৎ মেঘ গর্জন করে উঠলো। বাতাস আর তার সাথে শুরু হলো বৃষ্টি। বাতাসে বৃষ্টি ঝাপটা রেলিংয়ের খোলা স্থান দিয়ে ভিতরে আসছে। নাজু আর সাজু বৃষ্টির ঝাপটায় লাফিয়ে উঠলো। তরিঘরি করে বিছনাপত্র গুটিয়ে লঞ্চের ডেকের মাঝ বরাবর আরেকজনের বেডে গিয়ে দাড়ালো। ওই বিছানার যাত্রী বললো আপু আমার এখানে বসতে পারেন, আমি একা। একটু ইতস্তত করছিল নাজু। কিন্তু বেশিকিছু ভাবার সুযোগ ছিলনা, তাই বসে পড়লো। লঞ্চের দু'পাশের রেলিংয়ের যাত্রীরা সবাই গাদাগাদি করে ডেকের মাঝ বরাবর বসলো একে অন্যের বিছানায়।

আপু আপনার সাথে পরিচিত হতে পারি? নাজুদেরকে বসার স্থান দিয়েছে যে লোকটি সে বললো।

জী হ্যা... কাঁপা কণ্ঠে বললো নাজু। না বললে যদি আবার উঠিয়ে দেয়!

লোকটি বললো আমার নাম আকাশ, থাকি ঢাকাতে, পরাশুনা করি ঢাকা কলেজে, মাস্টার্সে।

আমি নাজমুন্নাহার নাজু। থাকি গ্রামে, এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ তাই ঢাকাতে বোনের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছি।

ও আচ্ছা তাতো ভালোই, এই ফ্রি সময়ে বেড়িয়ে মনটা ফ্রেশ কারার এক দারুণ সুযোগ!

হ্যা ঠিক তাই।

তা কেমন হল পরীক্ষা?

ভালো হয়েছে।

কেমন রেজাল্ট প্রত্যাশা করেন?

আশা করি এ গ্রেড পাবো।

জীবনের লক্ষ্য কি?

না, তেমন কিছু নয়!

যেটুকো আছে সেটা কি?

এই তো অনার্স পাশ করবো তারপর একটি চাকরী করবো।

আর কিছু নয়?

আর কি? জীনা আর কিছু নয়।

না মানে বলছিলাম, আরেকটি স্বপ্ন সবারই থাকে, সেই কমন স্বপ্নটি আপনার নেই?

নাজু বুঝতে পেরেছে তারপরও উত্তর না দিয়ে বলল- সেটা কি?

আপনিকি আসলেই বুঝতে পারেননি? সেটা হলো রাজা-রানী হওয়ার স্বপ্ন।

নাজু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো। দারুণ বললো তো ছেলেটি, রাজা-রানী হওয়ার স্বপ্ন! অমন সুখ কি আল্লাহ তার ভাগ্যে রেখেছেন?

কি হল মাইন্ড করলেন নাকি? সরি!

না, না, সরি বলার কি আছে! আমি মাইন্ড করিনি। সবার মাঝে যেটা স্বাভাবিক স্বপ্ন, আমি তার ব্যতিক্রম হবো কেন?

কিছু মনে না করলে জানতে পারিকি রাজার কাহিনী?

নাজু আরো লজ্জা পেল! মাথা আরো নিচু করে বললো সরি, আমার এমন কেউ নেই। আর সবার জীবন রাজা-রানীময় হয় না।

রাজা-রানী বলতে আমি বুঝিয়েছি ভালোবাসার রাজা-রানী। সম্পর্ক, বন্ধনের দুটি প্রাণ একটি রাজা অন্যটি রানী। যার যার অবস্থান থেকেই এ বিষয়টি বাস্তব সত্য।

আপনি খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারেন।

আমার কথা হয়ত আপনার ভালো লেগেছে। কিন্তু আপনার কথা-কায়া-বদন, সবকিছু অসাধরণ! যে কোনো ছেলেকে পাগল করার মত রূপ আপনার।

অতিরিক্ত প্রশংসা হয়ে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত আরো সৌন্দর্য আপনার রয়ে গেছে, যার প্রশংসা আমি এখনো করিনি।

আচ্ছা আপনার জীবনের কি স্বপ্ন?

আমি এক স্বপ্নবাজ মানুষ, আমার অনেক স্বপ্ন। ইচ্ছা আছে গার্মেন্টস ব্যবসাটা শিখবো। আমার এক মামা গার্মেন্টস কোম্পানীর মালিক। আমার মাস্টার্স কমপ্লিট হলে মামার ওখানে বিগ সেলারির জব প্রস্তুত। কিছুদিন ঐ জবটা করে তারপর নিজেই গার্মেন্টস ব্যবসা খুলবো। পাশাপাশি স্টুডিও ব্যবসাও করবো। আর শাদীটা শীঘ্রই করবো। তবে যাকে বিয়ে করবো তার সাথে আগে প্রেম করবো, তাকে ভালোভাবে জেনে, বুঝে নেব, তারপর স্বপ্নের ঘর বাঁধবো। আমার ভালোবাসার রাজ্যের রানীর অপেক্ষাতে এখনো প্রহর গুনছি আমি।

আপনার স্বপ্নগুলো খুব সুন্দর!

খুব ভালোলাগলো আপনার সাথে পরিচিত হয়ে। লঞ্চ ঘাটে আসার সময় হয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই লঞ্চ ভিড়বে। আপনার মোবাইল ফোনের নাম্বারটি পেতে পারি?

এসময়ে আড়চোখে তাকিয়ে সাজু নাজুকে একটি খোঁচা দিল।

নাজু বলল খুব বেশি দরকার?

না মানে, বন্ধু না হয় নাই ভাবলেন, ভাই হিসেবে নাম্বারটি পেতে পারি!

নাজু কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়লো, অবশেষে বললো- আচ্ছা আপনার নাম্বারটি দেন, আমিই আপনাকে ফোন দিব।

=========================

লেখা বেশ দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে এখনকার মত এখানেই ইতি টানলাম। এটি একটি বাস্তব সত্য ঘটনা, চলবে...

বিষয়: বিবিধ

১৩০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File