ঈদের ছুটিতে গ্রামে কি যে আনন্দ...!

লিখেছেন লিখেছেন বটবৃক্ষ বলছি ১২ আগস্ট, ২০১৩, ০২:২৪:৫৪ রাত





ঈদের আজ তৃতীয় দিন শেষ হলো। দূরদুরান্তের শহরাঞ্চলে থাকা মানুষগুলো গ্রামে ফিরে এসেছে নাড়ীর টানে। গ্রামের কাদা মাটির গন্ধ পেতে, প্রকৃতির প্রাণবন্ত ছোঁয়া পেতে, পুরোনো বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠতে, মা-বাবা ভাই বোনের ভালোবাসায় সিক্ত হতে, পড়শীর সাথে দুষ্টমীতে মেতে উঠতে, কী এক আবেগীয় টানে! ঈদে ছুটে আসি আমরা নগর থেকে গ্রামে।

এবারের ঈদের ছুটিতে ভালোলাগার পরশে মুগ্ধ হলাম! আড্ডা, গল্প, ছুটাছুটিতে বেশ ব্যস্তই কাটলো ঈদের এ সময়। ঈদের দিনে গোসল সেড়ে মলিদা খেলাম, এরপর দলে দলে মসজিদের দিকে রওয়ানা হলাম নামাজ আদায় করার জন্য। নামাজ শেষে খুব উচ্ছ্বাসে কোলাকুলি করলাম হাসিমুখে। এরপর শুরু হলো ঘোরাঘুরি। বন্ধুরা মিলে দল বেধে এবাড়ি থেকে ওবাড়ি গিয়ে সেমাই'র হাড়ি খালি করি। আনন্দে, উচ্ছ্বাসে সবাইকে নিয়ে করি মাতামাতি! সে এক অন্যরকম পরিবেশ!

প্রতিবছরের মত এবারো স্কুল লাইফের বন্ধুরা অনেকেই আমরা একত্রিত হয়েছি। নিজেরা আনন্দ করি অন্যকেও আনন্দ দেই। এরপর আমাদের ঘোরাঘুরির পর্বটা হয় আরো লং টাইমের। এবারে আমরা ঘুরতে বেড়োই এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে অনেক রাত হয়ে যায়।

অবশেষে প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরা প্রাইমারির সেই স্কুল মাঠে সবাই গোল হয়ে বসি। এবারে শুরু হয় আমাদের দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে আমরা ঈদকে ঘিরে মজার মজার অনুভূতি শেয়ার করি। সংগীত করি, গল্প করি। কে কি করছি বর্তমানে, আর সেই বর্তমান জীবন-যাপনে ঘটে যাওয়া বৈচিত্রময় ঘটনাবলি, আর কে কি করবো আগামিতে এসব খিচুড়ী টাইপের প্যাচাল পাড়ি গভীর রাত অবধি। আরেকটি বিশেষ কাজ খুব রসালোভাবে আয়োজন করি, তাহল- কার প্রেমের কি খবর? কার বিবাহের কি খবর?

এবারের ঈদে আমাদের আলোচনার মূখ্য বিষয় ছিল- জীবন ও প্রেম।আমাদের বন্ধুদের মধ্যে আমি ও মুকিব ছিলাম প্রেমের জগতে সবচেয়ে হাবাগোবা। এজন্য আমাকে ওরা বাবু নামে আর মুকিবকে আবুল নামে ডাকতো। নজরুল, জাহিদ ও আরিফ প্রেমের বিষয়ে ছিল খুব পটু। বিশেষ করে আরিফ মেয়েদের সাথে দ্রুত মিশতে পারতো। ওর এই গুণটাই প্রেমের পথে ওকে পটু বানিয়েছে। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে থেকে নজরুল প্রেম করে বিবাহ করেছে। আজ সেই প্রেমের দম্পতি একে অপরের অত্যাচারে অতীষ্ঠ! কেউ কাউকে মূল্যায়ন করেনা। ঝগড়া বাঁধলে কেউ কাউকে ছাড়েনা! তুই-তোকারিতে নেমে গিয়ে মাঝে মাঝে হাতের কাজটাও সেড়ে নেয়। বড় দু:খ হয় ওদের নিয়ে! ওদেরকে অনেকভাবে বুঝাই, মিলিয়ে দেই কিন্তু আবার যেইসেই!

ওদের দাম্পত্য জীবন থেকে আমাদের একটি বিরাট শিক্ষা হয়, তাহল- বিবাহ পূর্ব প্রেম দাম্পত্য সুখকে মেরে ফেলে। আমাদের আলোচনার সময় কথা ওঠে, প্রেমের বিবাহে কেন এমনটি হয়???

আমি বললাম- দোস্ত! প্রেমের প্রিয়ট কম-বেশি দু'থেকে তিন বছরের হয়, তাইনা? তাহলে এই দু'তিন বছরে একে অপরের সম্বন্ধে আপ টু বটম জানা হয়ে যায়। অথচ একে অপরের ত্রুটিগুলো তখন চাপা পড়ে থাকে শুধু মোহ আর আবেগীয় ভালোবাসায়। বিবাহের পূর্বেই ঝগড়াঝাটির রিহার্সেল চলতে থাকে প্রতিনিয়ত। এরপর যখন বিবাহ হয়, কিছুদিন পর মোহটা কেটে যায়, ভালোবাসার হিসেব নিকেশ করতে গিয়ে একে অপরের ত্রুটিগুলো তখন ধরা পড়ে, জীবনটা ক্রমে জটিল হয়ে যায়...!!! এরপর শুরু অনাকাঙ্খিত জীবনাচরণ...।

আমার কথাশুনে বন্ধুরা সবাই হেসে বলে উঠলো দোস্ত, খুব সুন্দর যুক্তি তুলে ধরেছ!

আরিফ বললো- তবে তুই এটা শুনে রাখ, প্রেম যুক্তি মানেনা।

আমি বললাম, মানাইলেই মানে। অনেকে মানাতে চায়না, আবার অনেকে মানাতে জানেনা।

ওরা আমাকে বললো তোর কথা ঠিক। কিন্তু তুই এসব কথা কেমনে বলিস? তুইতো প্রেম করোনা!

আমি বললাম জানার অনেক উপায় আছে- নিজের ঘটনা থেকে জানা, অন্যের ঘটনা থেকে জানা, বই পড়ে জানা, আরো কত উপায় আছে কে জানে!

বন্ধুরা যাইহোক, আজ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে, আমাদের কারো জীবন যেন নজরুলের জীবনের মত না হয়! অথাৎ আমরা কেউ আর বিবাহ পূর্ব প্রেম করবোনা।

চেষ্ট করবো।

চেষ্টা নয়, বরং আমরা যারা এজগতে সংযুক্ত আছি, এই সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।

ওরা বললো আচ্ছা ঠিক আছে।

আমি বললাম দেখাযাক, কে কে আমরা ঠিক থাকতে পারি??!!!

এভাবে ঈদের ছুটির প্রতিদিন আমরা বন্ধুরা মিলে আনন্দ করেছি, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি, আত্মসমালোচনা করেছি। ঈদটাকে জমিয়ে উপভোগ করেছি। ঈদের ছুটিতে গ্রামে কি যে আনন্দে কাটে, তা বলে বুঝানো যাবেনা।

বিষয়: বিবিধ

২১৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File