ধর্ষণ.............

লিখেছেন লিখেছেন ওয়ালী আহমাদ ২৩ জুলাই, ২০১৩, ১২:২৪:১৯ রাত

ধর্ষণ বলতে বুঝায়, “বেআইনী ভাবে কারো মতের বিরুদ্ধে তার শরীরের যৌনঅঙ্গ সমুহের ব্যবহার”। যদিও ধর্ষণের সাথে জোরপুর্বক শাররীক সম্পর্ক যুক্ত, ধর্ষণ মানে প্রচণ্ড আবেগ কিংবা অন্তরঙ্গ শাররীক মিলন নয়। ধর্ষণ হচ্ছে একপ্রকার আগ্রাসন এবং সহিংস অপরাধ।

নারীই কি সবসময় ধর্ষিত হয়?

কিশোরী এবং নারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকেন, তবে পুরুষও ধর্ষনের শিকার হয়ে থাকেন। ধর্ষিত মানুষের মাঝে ৭% থেকে ১০% পুরুষ! তবে জরিপে দেখা গেছে পুরুষ কিংবা নারী যেই ধর্ষিত হোক না কেন, ৯৯% ক্ষেত্রে পুরুষই ধর্ষকের ভুমিকায় দেখা যায়।

ধর্ষণঃ কার ভুল?

অনেক মানুষকে বলতে শুনি “ধর্ষিতা তার কাপড়চোপড় কিংবা অঙ্গভঙ্গিতে ধর্ষনকারীকে অপরাধটি করতে উৎসাহী করেছিল”।

ধর্ষিতার দোষ বলে বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাবার উপায় নেই। সর্বক্ষেত্রেই ধর্ষনকারী অপরাধী এবং ঘটনার জন্য শুধু ধর্ষনকারীই দায়ী থাকবে। দুইজন পুর্বপরিচিত কিংবা প্রেমের সম্পর্কে থাকাকালীন সময়েও ধর্ষণ একটি অপরাধ। কোন মানুষই অন্যের যৌন সম্পর্ক তার অধিকার মনে করতে পারার কোন অবকাশ নেই – উভয় পক্ষের পুর্ন সম্পর্ক ব্যতিত! (বিবাহিত সম্পর্কে ধর্ষণ – এ বিষয়ে পরে একদিন পোষ্ট করা হবে)।

মদ্যপনা, মাদক এবং ধর্ষণঃ

পরিচিত ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের সাথে মাদক অনেকাংশে জড়িত। রাসায়নিক কারনে মদ নারী এবং পুরুষের শরীরে ভিন্ন প্রভাব ফেলে। মদ্যপান কিংবা অন্যন্য মাদক গ্রহনের কারনে হারানোর সম্ভাবনা থাকে, সাধারন জ্ঞান অকার্যকর হয়ে যায় – অনেক মানুষ নেশার ঘোরে আগ্রসন অথবা সহিংসক হয়ে উঠেন। যার ফলশ্রুতিতে ধর্ষনের মত জঘণ্য বিষয়ও অনায়াসে ঘটিয়ে ফেলে।

ধর্ষণের হাত থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবেন?

আপনার সঙ্গী আপনাকে কোন নির্জন স্থানে নিতে চাইলে যতক্ষন পর্যন্ত আপনি তাকে সম্পুর্ন বিশ্বাস করতে না পারবেন তার কথায় কোন নির্জন স্থানে যাবেন না। “কোন নির্জন স্থানে একজন পুরুষ এবং একজন নারী থাকলে শয়তান তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে হাজির হয়” – তাই কোন গোপন স্থানে দেখা করা থেকে বিরত থাকুন, এমনকি পুরুষটি আপনার বিস্বস্ত হলেও।

এমন কোন ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখবেন না যে চরিত্রহীন এবং সুযোগ সন্ধানী।

সংযত এবং সচেতন থাকুন – শাররীক মিলনের প্রশান্তিই জীবনের সবকিছু নয়। ইজ্জৎ হারালে তা ফেরত পাওয়া যায়না। অন্য কেউ না জানলেও প্রিয়জন দ্বারা ধর্ষিত হবার পর আপনার নিজের প্রতি নিজের ঘৃনাবোধ কাটিয়ে উঠতে পারবেন?

আপনি কি চান তা অবগত হউন।

কোথাও ঘুরতে গেলে অনেক বন্ধু বান্ধবের সাথে যান এবং একজন আরেকজনের প্রতি নজর রাখুন।

আইনী সহায়তা কিংবা লোকলজ্জার ভয়ে নিশ্চুপ থাকবেন না। ধর্ষনের হুমকিতে পড়লে গর্জে উঠুন।

অত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে কুংফু / কারাতে শিখে রাখুন। সাইড ব্যগে বোতল ভর্তি মরিচের গুড়া কিংবা গুড়া মিশ্রিত পানি রাখুন।

ধর্ষনের শিকার হলে কি পদক্ষেপ নিবেন?

দুর্ভাগ্যবশত আপনি যদি ধর্ষনের শিকার হন তাহলে নিন্ম লিখিত বিষয় সমুহ আপনার করনীয় হতে পারেঃ

আপনি যদি শাররীক আঘাতপ্রাপ্ত হন তাহলে দ্রুত হসপিটালে ইমাজেন্সি সেকশানে যান। অনেক হসপিটালের ইমাজেন্সিতে ধর্ষিতা নারীর বিশেষ সহায়তার জন্য প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ডাক্তার থাকেন।

ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিংবা পরিবারের অন্য কোন সদস্যের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করুন যাদেরকে আপনি নিরাপদ মনে করেন এবং আপনার সাথে সংগঠিত বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনা করুন।

আইনের শরনাপন্ন হতে চাইলে সবার আগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করুন। কোন প্রকার আঘাতের চিহ্ন মুছে ফেলবেন না। আমাদের দেশে নারীরা ধর্ষনের পর নিজকে অপবিত্র মনে করতে থাকেন এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতায় বার বার গোসল করেতে থাকেন – ফলে ধর্ষনের অনেক আলামত মুছে যায়। এ বিষয়টি খেয়াল রাখা পরিবারের অন্য সদস্যের খুবই জরুরী।

ঘটনার যতটুকু মনে পড়ে তা বিস্তারিত লিখে রাখুন।

যদি আপনি সীদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন “কি করবেন?” তাহলে নিকটস্থ মানবাদিকার সংঘঠনে যোগাযোগ করুন।

পরিশিষ্টঃ

গত দশ বছরে পৃথিবী ৫০০ বছর এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের মানসিকতা সেই ৫০-১০০ বছর পিছে পড়ে আছে। এখনো কোন নারী ধর্ষনের শিকার হলে আমরা প্রথমেই ধরে নেই মেয়েটির দোষে এমন ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগেও একটি মেয়ের আত্ম হত্যার খবর পড়লাম পত্রিকাতে। ধর্ষনের ভিডিও মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় লজ্জায় আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে।

আমাদের দেশের পুরুষরা যেন সব কলঙ্গের উদ্ধে! একজন নারীর একমাত্র অবলম্বন তার ইজ্জত! সেই ইজ্জত নষ্ট করে পুরুষটির মনে বিন্ধুমাত্র অপরাধবোধ দেখা যায়না। অনেক ছেলেকে দেখা যায় শুধু শাররীক মিলনের উদ্দেশ্যেই কোন মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সব ধর্ষনের খবর হয়তো আমরা শুনি না। কিন্তু যে কাজটি ঘটাচ্ছে এবং যে নারী ধর্ষনের শিকার হচ্ছে তারা কি মানসিক শান্তি পেয়েছে/পাবে?

অনেকে বলেন আমি কেন পোষ্টে ধর্ম এবং মা-বোন নিয়ে আসি? সত্য হলো এই, আমাদের মনে যদি ধর্মীয় মুল্যবোধ থাকে এবং আমরা কোন অপরাধ করার সময় যদি এমনটা চিন্তা করি “কেউ আমার বোনের ইজ্জত কেড়ে নিলে আমার কেমন লাগবে” তাহলে আমাদের সমাজের অর্ধেক পাপাচার কমে যাবে।

বিষয়: বিবিধ

৯৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File