নজরুল এবং নুর হোসেনের পোস্ট মর্টেম.।।।.।
লিখেছেন লিখেছেন চিন্তিত মন ০১ মে, ২০১৪, ১০:৫৮:০৩ রাত
কে এই নজরুল? নুর হোসেনই বা কি পরিচয়? ওরা আসলে এক বৃন্তে ফোটানো দুটি ফুল। আমাদের স্থানীয় ভাষায় এক মার পেটের খালাতো ভাই। দুজনেই চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, খুনি, ধর্ষক এবং দুজনেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা। নুর হোসেনের সাথে নজরুল ইসলামের রেশারেশি ক্ষমতার রুটি হালুয়া নিয়ে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক সিন্ডিকেট, বেশ্যালয় সহ শত শত অবৈধ ব্যবসার মালিকানা নিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী লড়াই। ১৭ বছর একনাগাড়ে চলতে থাকে এ লড়াই।
১৯৯৭ সালের ১৭ই জুলাই। মাগরিব নামাজের পর মিজমিজি চৌধুরী পাড়া এলাকায় নজরুলের ক্যাডারদের হাতে খুন হন সাইফুদ্দিন নামের এক ভদ্রলোক। পরে বের হয় ভুল টার্গেট ছিল এই সাইফুদ্দিন। নামের গোলমালে প্রাণ দিয়ে হয় তাকে। ২০০০ সালের ১৭ই আগষ্ট। নুর হোসেনের সমর্থক জহিরুল ইসলাম নামের এক সব্জি বিক্রেতা নির্বাচনী পোস্টার লাগানোর দায়িত্ব পালন করছিলেন। নজরুলের উপস্থিতিতে তার ক্যাডাররা খুন করে জহিরুল ইসলামকে। এর প্রতিদান ফিরিয়ে দিতে দেরি করেনি নুর হোসেন। তার ক্যাডাররা ১লা অক্টোবর স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে খুন করে নজরুলের সমর্থক যুবলীগ নেতা আবদুল মতিনকে। তারও আগে ১৯৯৬ সালে শিমরাইল মোড়ে নিহত হন আওয়ামী লীগ কর্মী আলী হোসেন। নুর হোসেনকে আসামী করা হলেও ভগবানের হাত ধরে অব্যাহতি পান মামলা হতে। নজরুলে ক্যাডার শিপন, রনি ও ফারুখ ২০০১ সালের ৩১শে মার্চ শিল্পী নামের এক তরুনীকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। তার অপরাধ, বিয়ের প্রস্তাবে অনিচ্ছা প্রকাশ। ২০০০ সালের ৩রা মার্চ ধানমন্ডির ১৫ নং সড়কের ১৬নং বাড়িতে খুন হন এডভোকেট বাবর এলাহি। তদন্তে প্রকাশ পায় নজরুল ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করায় তাকে। খুনের মূল্য ছিল ৫ লাখ টাকা। দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ২০০৪ সালে নজরুলকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করে। পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে যান এই নেতা। এবং ফিরে আসেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার বছর। হাইকমান্ডের নির্দেশে হাইকোর্টের আওয়ামী বিচারকগণের হাত ধরে খালাস পান খুনের মামলা হতে। ২০০৯ সালের ১৩ই অক্টোবর মিজমিজি পূর্বপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে খুন হন বাংলাদেশ চুন প্রস্তুতকারক সমিতির সহ-সভাপতি জনাব আবু তালেব। তদন্তে পাওয়া যায় নজরুলের সংশ্লিষ্টতা।
দেশে আইন আছে, আদালত আছে, আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশাল বিশাল খাল, বিল, নদী-নালা, সাগর মহাসাগর। জাতি হিসাবে আমরা এসব জলাশয়ে অনবরত সাতার কাটছি এবং চেতনার প্রসব বেদনায় জন্ম দিচ্ছি তারেক, মিল্কি ও চঞ্চল নামের সৈনিকদের। রাজনীতি নামের যুদ্ধের ময়দানে এরাই আসল সৈনিক। এরা টেন্ডারবাজী করে বলেই নেতা-নেত্রীদের রাজনীতি এত মধুর।
পাঠক, নুর হোসেন,নজরুল এবং শামীম ওসমান কি কেবলই বিচ্ছিন্ন কতগুলো নাম, বখে যাওয়া কিছু চরিত্র? খুঁজলে আপনার শহরে কি পাওয়া যাবেনা এসব সিরিয়াল কিলারদের বৈমাত্রেয় ভ্রাতাদের? বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এদের অবাধ বিচরন। রাজনীতির ছত্রছায়ায় বিষাক্ত জীবাণুর মত মিশে আছে আমাদের রক্তে। জাতির মগজে জামাতি হিজাব আর হাতে হেফাজতি তসবি ধরিয়ে নেতা নেত্রীরা লুটে নিচ্ছেন গোটা দেশ। তারেক, মিল্কি, চঞ্চলের কাফেলা এ সংস্কৃতিরই ধারক, বাহক ও রক্ষক। এরা আছে বলেই ক্ষমতার মসনদ জ্বল জ্বল করে, আলো ছড়ায় এবং সে আলোতে ঝাঁপ দেয় গোটা জাতি। এখানে কে আসল অপরাধী, খুচরা সৈনিকদের দল না আড়ালে থাকা ক্ষমতার গডমাদার গডফাদারের সিন্ডিকেট ? কান ধরে টানলে মাথা চলে আসবে বলেই কি ক্ষমতা ছাড়তে এত ভয়? দলকানা জলদাস আর হামিদ চাচার বৌমাদের মত কৃতদাসরাই গোটা বাংলাদেশ নয়। এর বাইরেও কিছু মানুষ আছে যারা সহ্য ও ধৈর্য্যের বাধে ইট সিমেন্ট গাঁথতে বাধ্য হচ্ছে। ৪২ বছর ধরে এর দেখছে, দেখছে আর জ্বলছে। অন্যায়, অবিচার, অনাচার আর মিথ্যাচারের ফাঁদে আটকে একটা জাতিকে আজীবন দাসত্বের শৃংখলে আটকে রাখার যারা স্বপ্ন দেখছেন তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হতে পারে যেদিন এরা ঘুম হতে জেগে উঠবে। সেদিন আর ক্রসফায়ার নামক জালিয়াতি, ধোকাঁবাজি, বেশ্যাবৃত্তির প্রয়োজন হবেনা, খোলা ময়দানে ঘোষনা দিয়েই প্রতিশোধ নেবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাই হচ্ছে এখন।
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এদের অবাধ বিচরন। রাজনীতির ছত্রছায়ায় বিষাক্ত জীবাণুর মত মিশে আছে আমাদের রক্তে।
একমত আপনার মন্তব্যগুলোতে। মোবারকবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন