ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হয়ে আর কত দিন????????
লিখেছেন লিখেছেন চিন্তিত মন ২৭ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:২৬:৪১ রাত
প্রতিজ্ঞা টা কাউকে বলিনি। এমনকি লেখালেখিতে অনুৎসাহ যোগানো প্রিয় মানুষ টাকে পর্যন্ত না। নিজ এলাকায় উপজেলা নির্বাচনে যদি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জিতে যায় বাংলাদেশের রাজনীতির উপর লেখালেখির এখানেই সমাপ্তি, এমনটাই ছিল সংকল্প। অবশ্য এর কতটা রাখতে পারতাম তা নিয়ে নিজেই ছিলাম সন্দিহান।
২০০৭ সালে জাতীয় নির্বাচনের সর্বশেষ পর্বে নিজ এলাকা পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছিলাম কাছ হতে বিএনপি-জামাত জোটের পরাজয় উপভোগ করবো বলে। নিজেকে কথা দিয়েছিলাম, আলীবাবা চল্লিশ চোরের জোট (আমার কলমে এমনটাই ছিল জোটের উপমা) ক্ষমতায় এলে নাকে খত দিয়ে রাজনীতির রাস্তা হতে কী-বোর্ড সরিয়ে নেব। প্রয়োজন হয়নি নিজেকে প্রতারিত করার। যা হওয়ার তাই হয়েছিল। জোট বিপুল বিক্রমে পরাজিত হয়েছিল। অনেকের বিচারে আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল জেনারেলদের উপহার দেয়া বিজয়, প্রতিবেশী দেশের ঘোড়া উপহারের প্রতিদান। হতে পারে তা বহুলাংশে সত্য। তবে একজন সচেতন নাগরিকের জুতায় পা রেখে দেশ তথা বিশ্ব রাজনীতিকে কাছ হতে দেখলে এ সত্য বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে হিটলার, মুসোলিনি অথবা ইয়াহিয়া খানদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী হয়না। ভাণ্ডারে পারমাণবিক বোমা ও কপালে সুপার পাওয়ারের তকমা নিয়েও সোভিয়েত দেশের কম্যুনিস্ট শাসকরা টিকতে পারেনি। দেশের শিক্ষিত জনসংখ্যার প্রায় সবটা নির্মূল করে কম্বোডিয়ার পল পট-ইয়াং সারি গং ভেবেছিল ক্ষমতার পানসিতে ভেসে কবর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। কিন্তু তা আর হয়নি। তাদের জন্য গহীন জঙ্গল ও জেলখানার অন্ধ প্রকোষ্ঠ ই হয়েছিল কবর। সে কবরে তিলে তিলে মরতে হয়েছিল খেমাররুজ নামক জল্লাদদের। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা কি সে পথেই হাঁটেননি? সে খাতায় নাম লেখাননি?
ক্ষমতা হাতে পাওয়া মাত্র তা পারিবারিক সম্পত্তি ভেবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়ার সংস্কৃতি দেশীয় রাজনীতিতে নতুন কোন আবির্ভাব নয়। শেখ মুজিবকে দিয়ে শুরু। জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনা হয়ে তা চক্রাকারে ঘুরছে। যে তত্ত্বাবধায়কের জন্য তিনি রাজপথে লাশের উপর ব্রাজিলিয়ান সাম্বা নাচালেন, চলন্ত বাসে যাত্রীদের পুড়িয়ে মারলেন, হরতালে হরতালে দেশ অচল করে দিলেন, বঙ্গভবনের পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিলেন, একটার বদলে দশটা লাশ ফেলার ঘোষনা দিলেন, সে তিনিই স্বপ্নে পাওয়া তাবিজের মত অলৌকিক বাণী পেলেন; তত্ত্বাবধায় সরকার অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক, তাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। দেশ নিরাপদ একমাত্র আওয়ামী লীগের হাতে, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বে। কারণ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, বাকিরা পাকিস্তানী। ৯০ হাজার পাকি সেনার মত বিরোধী দলের সবাইকে পাকিস্তানে পাঠানোটা যেন দেশ শাসনের একমাত্র এজেন্ডা। স্বাধীনতার ২০ বছর পর জন্ম নেয়া জামাত শিবির কর্মীরাও আজ যুদ্ধাপরাধী। তাই রাজনীতির ময়দান তাদের জন্য নিষিদ্ধ। জামাতিদের সহযোগী হিসাবে বিএনপিরও অধিকার নেই এ দেশে রাজনীতি করার। যে হেফাজত ছিল সংখ্যালঘুদের মত আওয়ামী ভোটব্যাংক, তারাই আজ উচ্ছিষ্ট, বিতারিত, রক্তাক্ত। নিজেরা বোমা ফাটিয়ে, দোষ বিরোধীদের উপর চাপিয়ে, নেতৃবৃন্দের পায়ে ডান্ডা-বেরী লাগিয়ে আদালত পাড়ায় প্রদশর্নীর মধ্যে হয়ত জৈবিক আনন্দ ও সন্তুষ্টি আছে, ইটের বদলে পাটকেল মন্ত্রের সফল বাস্তবায়নও সম্ভব এ পথে। তবে এর নাম দেশ শাসন নয়। বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে এ পৈশাচিকতা, এটাই ইতিহাসের অমেঘো শিক্ষা। সে পথেই কি হাটছে না আজকের আওয়ামী সরকার? শেখ হাসিনা কি সে শাসনই কি উপহার দিচ্ছেন না জাতিকে?
দিনের পর দিন জাতি অসহায়ের মত দেখেছে একদল লুটেরার উলঙ্গ হয়ে লুটছে, দেখছে ছাত্রলীগ নামক হিংস্র হায়েনাদের পৈশাচিক বর্বরতা, অসহায়ের মত হজম করেছে দলীয় পুলিশদের বিরামহীন হত্যা, গুম, খুন ও গ্রেফতার বানিজ্য। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ তথা ক্ষমতাসীন দলের নেতা, উপনেতা, ছটাক নেতা, পাতি নেতাদের জন্য সিসিম ফাঁক মন্ত্রে খুলে দেয়া হয়েছে দেশের সবকটা ব্যাংক। শকুনি কর্তৃক মৃত পশু খাওয়ার মত চেটেপুটে খেয়েছে ব্যাংকের ভান্ডার। শেয়ার বাজার লুটেছে, মজিদ মিয়ার লাল সালুর কায়দায় কবর দিয়েছে পদ্মাসেতু, তুতসি-হুতুদের কায়দায় দিবা লোকে, হাজার হাজার মানুষের সামনে নির্মম ভাবে খুন করেছে বিকাশদের, শত বছরের পুরানো কলেজ হোষ্টেল পুড়িয়েছে অনেকটা রাজা-রানীদের শীত নিবারণের কায়দায়। কেবল মাত্র এক ব্যক্তির হিংসার কারণে ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসের মত আর্ন্তজাতিক ব্যক্তিত্বকে টেনে হিঁচড়ে হাজির করা হয়েছে বিচারক লীগের বিচারকদের এজলাসে। ১৯ টুকরা হওয়ার গিলোটিনে আছে দেশের অন্যতম সফল আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রামীন ব্যাংক। এ যেন ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে উনিশ টুকরা করে দেবীর চরণে পূজা দেয়ার মহা আয়োজন।
এ দেশের মানুষ ভুল করেনা। ৬৯’এ করেনি, ’৭১’এ করেনি, ২০১৩ সালেও করবেনা। প্রধানমন্ত্রীর গলাবাজি, চাপাবাজি ও মিথ্যার বেশাতি বিকলাঙ্গ দলদাসদের বিমোহিত করলেও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। শেখ রেহানা, শেখ জয় ও শেখ পুতুলদের সম্পদ আহরনের মধুচন্দ্রিমায় ভাটা লাগতে বাধ্য, যেমনটা লেগেছিল তারেক-ককো ও মামুন গংদের। এ ভাটায় খালেদা জিয়ার হাত লাগবেনা, হেফাজতের প্রয়োজন পরবেনা, এক জনগণই যথেষ্ট। সরকার প্রধানের হয়ত জানা নেই দেশের সবাই বঙ্গবন্ধু নেশায় নেশাগ্রস্ত নয় যে ঘুম পরানী মাসি পিসি গান গেয়ে আজীবন তাদের গুম করা যাবে, খুন করা যাবে, ঘর হতে মা-বোনদের উঠিয়ে এনে ধর্ষন করা যাবে, টেন্ডার বাক্স লুট করা যাবে, পদ্মাসেতু, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, ডেসটিনির নামে দেশকে পতিতা বানানো যাবে। অস্ত্রের মুখে লিমনকে পঙ্গু বানানো গেলেও তার মগজ পঙ্গু করা যায়নি। এই লিমনরাই যখন চারদিক ঘেরা ভোট কেন্দ্রে যাবে ব্যালটের মাধ্যমে হাল্কা করবে নিজেদের জমানো ঘৃণা।
পাকিস্তানী সামরিক স্বৈরশাসক ও তাদের দোসর ২২ পরিবারের শাসন, শোষন, নির্যাতন, নিপীড়ন হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য এ দেশের মানুষ অস্ত্র হাতে নিয়েছিল, যুদ্ধ করেছিল, শহীদ হয়েছিল। ২২ পরিবারের খপ্পর হতে বেরিয়ে দুই পরিবারের অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত, চোর, বাটপার ও ডাকাতদের হাতে বছরের পর বছর ধরে নিগৃহীত হবো এবং বিনিময়ে ভোট নামের যাদুর কাঠিতে তাদের মসনদ পাঁকা করে দেব, এমন স্বপ্ন আজীবনের স্বপ্ন হতে পারেনা। অন্তত ইতিহাস তাই বলে। সময় আসবে যেদিন জনরোষের দাবানলে পুড়ে ছাড়খার হবে প্রধানমন্ত্রীর কাচের ঘর। আমরা যারা বন্দুক ও পেশি শক্তির কাছে জিম্মি হয়ে শাকসবজিতে পরিনত হয়েছি সেদিন হাসবো, থুথু ফেলবো। সুরঞ্জিত ও আবুল চোরা ও পর্দার অন্তরালের থাকা তাদের প্রভুদের যেদিন ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে জন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে আমরা দেখেও না দেখার ভান করবো। দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি ভেবে গা বাঁচিয়ে চলবো।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন