নেংটা রাজনীতির উলঙ্গ প্রদর্শনী...!!!
লিখেছেন লিখেছেন চিন্তিত মন ০৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৩:৪৭:৪৩ রাত
এক ভরা বসন্তে, চারদিক যখন জংলী আর জঙ্গলের প্রণয়লীলা তুঙ্গে, মা আমায়ডেকে পাঠালেন জরুরী তলবে। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মত না হোক অন্তত নিজের মত করে রাজধানী হতে৫ ঘন্টায় পাড়ি দিয়ে যখন হাজির হলাম ততক্ষণে গতরের পরিধান ধৌত হয়ে গেছে নতুন এক খুশবোতে। ‘মা, তোমার ভবঘুরে সন্তান হাজির’, বলেই জানতে চাইলাম জরুরী তলবের কারণ। বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে মুহুর্তেই ভুলিয়ে দিলেন কিছুক্ষণ আগের হাস-মুর্গী সমভিব্যহারে মহাযাত্রা। ’মন দিয়ে শোন, তোর দূর সম্পর্কের এক চাচাত বোন এসেছে গ্রাম হতে, বেচারীর বিয়ে নিয়ে মহা সমস্যায় আছে তার মা-বাবা।‘ কথার সারমর্ম করলে যা দাড়ায় তা হল, নতুন এক পাত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে,আগামীকাল তারা দেখতে আসবে পাত্রীকে। আশপাশের পরিচিত মুরুব্বি দল ৪০ দিনের চিল্লায় এখন দেশান্তরী, তাই আমাকেই পাত্রীর হয়েমুরুব্বি্র কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। আপত্তি যে কাজে আসবে না জানাই ছিল, তবুও করলাম। কাজ হলনা।
সকাল হতেই চারদিকে মহা আয়োজন। বার্বুচীর তর্জন গর্জন, গরম মসলার মৌ মৌ গন্ধ আর উঠানে শামিয়ানার ছায়া। বর পক্ষকে ইমপ্রেস করার আয়োজনে কোন ত্রুটি দেখলাম না। সাথেঅনাকাঙ্খিত কিছু অতিথি;থ্যাঁতলানো থালাবাটি হাতে একদল
টোকাই এবং ঘেউ ঘেউ করা ক’টা লোমহীন নেড়ী কুকুর। এরা পাশাপাশি না থাকলেবাংলাদেশেরকোন অনুষ্ঠানই বোধহয় সম্পূর্ণ হয়না! দুপুর ১২টার অতিথি বিকেল ৪টায় এসে হাজির। সাথে পান সুপারি আর আর অতুল ময়রার এক হাড়ি মিষ্টি। সেই একই অজুহাত, জোহরের নামাজ আর যানবাহনের ঝামেলা।এটাও বোধহয় এ ধরনের অনুষ্ঠানের আবশ্যিক অংশ! মার কড়া নজরদারির কারণে দুপুরের খাবার খাওয়া হলনা, পাত্র পক্ষের সাথে খেতে হবে। এটাই না-কি গৈ গেরামের নিয়ম। মা আবারও সাবধান করে দিলেন বেয়াদবি না করতে, আবোল তাবোল প্রশ্ন করে পাত্র পক্ষকে বিব্রত করা হতে বিরত থাকতে।
তেনারা এলেন। হাড্ডিসার এক যুবক, মাথায় ভাসানী টুপি লাগিয়ে মোবাইল এন্টেনার মত মাথা ঘুরাতে দেখে ভেতরের অজগরটা নড়ে চড়ে উঠল। তিনিই আমাদের পাত্র বাবাজী। জানালার ফাক গলে মার কঠিন চাউনি দেখে দমে গেলাম।না, আজ দিনটাই বোধহয় ভাল যাবে না। ভূরি ভোজনের পর শুরু হল আসল আয়োজন। পাত্রীকে ঘষে মেজে হাজির করা হল আসরে। প্রথমে সূরা পড়তে বলা হল, তারপর হাটার নির্দেশ (নিশ্চিত করতে চাইল পাত্রী বিকলাঙ্গ নয়)। এ সব চলল অনেকক্ষণ ধরে। এ ফাকে পান সূপারীর ফোয়ারা বয়ে গেল।পাত্রী দেখতে আহামরি কিছুনা হলেও মেট্রিক পাস এবং গ্রামীন ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র একটা প্রকল্প চালাচ্ছে। পাত্র পক্ষ খবরটা জানতে পেরে হায় হায় করে উঠল, এমন বেগানা কাজ মেয়ে মানুষদের না-কি মানায় না! এ শুনে আমি ঘামতে শুরু করলাম।
এবার আমার পালা, এ জন্যেই আমাকে জরুরী তলব। পাত্রের খবর নিতে হবে। নাম ধাম জানার পর জানতে চাইলাম কাম-কাজের ঠিকানা। এর উত্তরে যা বল্ল তা শুনে আমার হ্যচকি উঠার অবস্থা, পাত্র জাতীয়তাবাদী যুবদলেরইউনিয়ন শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক। ‘তা ভাল, কিন্তু আয় রোজগারহয় কোন পথে?‘। জিজ্ঞেস করতেই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল প্রতিপক্ষের। একইউত্তর, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক এবং আয় রোজগারের কোন কমতে নেই। আমাকে কিছুটা উত্তেজিত দেখাতেই একজন এসে জানাল মা আমাকে অন্দর মহল যেতে বলছেন। এর অর্থ আমার জানা ছিল, তাই চুপ করে গেলাম।
পাত্র পক্ষের পছন্দ হয়েছে, এবার তারিখ করার পালা। আমি বেকে বসলাম, সময় চাইলাম এবং চিল্লাতে অবস্থানরতমুরুব্বিদের দোহাই দিয়েসময় মঞ্জুর করিয়ে নিলাম। শালা এন্টেনার শেষটা জেনেই ঢাকা ফিরব বলে ঠিক করলাম। এবংখবর পেতে বেশী দেরী হলনা।পাত্র স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপির দূর্ধর্ষ নেতা আম্বর আলীর ডানহাত। চাঁদাবাজী এবং খুনাখুনিতে সিদ্ধহস্ত। জেল খেটেছে বেশ ক’বার। ইতিপূর্বে বিয়ে করেছে ২ বার এবং অজ্ঞাত কারণে প্রথম স্ত্রী গলায় গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। যদিও দুর্মুখেরা বলে অন্য কথা। যাই হোক, আমি জোড় গলায় ঘোষনা দিলাম এ বিয়ে হবেনা। হায় হায় করে উঠল সবাই, পাত্রীর বাবা এসে আমাকে তিরস্কার করতে শুরু করল। এ মুহূর্তে দ্বিতীয়এমন একটা পাত্রের সন্ধান পাওয়া কত যে কষ্টের তা বুঝাতে চাইলেন। আমার এক কথা, বিয়ে হবেনা। মাকে বোঝালাম এবং বিস্তারিত জানালাম। মাও একমত আমার সাথে। ঢাকায় ফিরে খবর পেলাম পাত্রী পক্ষ আমাদের পাশ কাটিয়ে বিয়ের আয়োজন করতে চাইছে।
খবরের কাগজের ভেতরের পাতায় খবরটা পড়ে চমকে উঠলাম। আমাদের গ্রামের বাড়িতে বিএনপির দুই গ্রুপের মারামারিতে ২জন নিহত ও ৪০ জন আহত। নিহতদের মধ্যে আমাদের সেই এন্টেনা বাবাজী। হয়রান হয়ে ফোন করলাম মাকে, মা জানাল বিয়ে হয়নি তবে সবকিছু প্রায় পাকা ছিল। মেয়েটা বেচে গেল এ যাত্রায়! কোথায় যেন এমন মৃত্যুতে স্বস্তি বোধ করলাম।
বর্ষাকালে দাদাবাড়ি গেলে মেয়েটার সাথে দেখা হল। নাকের পানি চোখের পানি এক করে ঝাপিয়ে পরল পায়ের উপর।মুখে কোন ভাষা ফুটল না। চুপ করে অনুভব করতে চাইলাম বাংলাদেশের রাজনীতি এবং এর আবর্জনায় বেড়ে উঠা আমাদের সামাজিক জীবন।দুঃখজনক হলেও এই এন্টেনা যুবকের মত লাখ লাখ যুবক রাজনীতিকে স্থায়ী প্রফেশন বানিয়ে জীবিকার সন্ধান করছে অন্যায়, অনাচার আর মিথ্যাকে পুঁজি বানিয়ে। আর এই অসৎ বেচে থাকার নাটের গুরু হিসাবে কাজ করছে হাসিনাখালেদার মত অপরাধীর দল।
বিষয়: বিবিধ
২৭৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন