বাকশাল ও অন্য রকম কিছু ভাবনা..!!!

লিখেছেন লিখেছেন চিন্তিত মন ২৩ জুলাই, ২০১৩, ১০:১৮:০৬ সকাল

’৭১এ বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল এমন একটা প্রত্যয় নিয়ে নয় কি? সমাজতন্ত্র ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যানোফেষ্টোর অন্যতম পয়েন্ট, আর এমন একটা শোষনহীন সমাজব্যবস্থা কায়েমের জন্যেই এ দেশের মানুষ ভোট দিয়েছিল আওয়ামী লীগকে। শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থার অর্থ একদলীয় শাষন, ’৭১এর আগে আমাদের কি এমনটা জানা ছিলনা? জানা থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিলাম এ প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের এখন সমগ্র জাতিকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করাতে হবে। বাকশাল গঠন ছিল ম্যান্ডেট প্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।আজকে যারা বাকশাল নিয়ে তোলপাড় করছেন তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারণ ছিল সম্পদের সূষম বন্টন তথা সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্রে বহুদলীয় গণতন্ত্রের কোন স্থান নেই, এ বিচারে আওয়ামী লীগের বাকশাল গঠন ছিল তাদের নির্বাচনী ওয়াদা পূরন মাত্র।একদলীয় শাষন ভাল কি মন্দ তার পক্ষে বিপক্ষে রয়েছে হাজার যুক্তি, এ নিয়েহয়ে গেছে যুগব্যাপি ঠান্ডা লড়াই। বাংলাদেশের যদু মধু রাম শ্যাম আর ছিঃ’এর দল জিয়ার মত কসাইয়ের অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বাকশাল তত্ত্ব দিয়ে হালাল করার প্রয়াশ নিতান্তই ছেলে মানুষী। ১৯৭৫'এ শেখ মুজিব হত্যার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল বহুদলীয় গনতন্ত্র উদ্বার করা, এ সব ছেলে ভূলানো গাল-গপ্প আজকাল মাদ্রাসার ছাত্রদের কাছেও গ্রহনযোগ্য নয়। একদল কুকুর বাংলাদেশকে মরা গরু বানিয়ে ক্ষুধার্ত হায়েনার মত চেটেপুটে খাওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়েই ১৫ই আগষ্টের জন্ম দিয়েছিল। যার উচ্ছিষ্ট আজকের মজুমদার পরিবারের হাভাতে চোরের দল।

যাহা ৬ তাহাই ৯!

বাংলায় একটা কথা আছে, কানা গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভাল। তথাকথিত বহুদলীয় গনতন্ত্র বাংলাদেশের জন্যে কতটা সূফল বয়ে এনেছে তার র্নিলজ্জ প্রমান আজকের অসূস্থ রাজনীতি। এমন রাজনীতির ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছে চোর, বাটপার আর টাউটের দল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নামেই রয়েছে ১৪টা চাদাবাজীর মামলা, আর ভুবন খ্যাত আপোষহীনার শরীরে প্রবাহিত আপোষহীন রক্তে সাতার কেটেবেড়ে উঠেছে তারেক ককোর মত নর্দমার আবর্জনা। সূস্থ রাজনীতির কোন সংজ্ঞায়ই বাংলাদেশের গনতন্ত্রকে বহুদলীয় গনতন্ত্র বলা যায় না, এ হচ্ছে পরিবারতন্ত্রের স্বৈরশাষন, যা বাংলাদেশের মালিকানা রাজতন্ত্রের মত রাজার পর রাজপুত্র, রাজপুত্রের পর উত্তরাধীকার সূত্রে দাবিদার আরও এক রাজপুত্র অথবা রাজপুত্রানীর হাতে ন্যস্ত হওয়ার চীরস্থায়ী বন্দোবস্ত। রাজতন্ত্রেরসাথে একটাই পার্থক্য, আর তা হচ্ছে সিংহাসনের দাবীদার রাজা, রানী আর রাজপুত্রের সংখ্যা এখানে একাধিক। ধিক এমন গনতন্ত্রে!থু থু ফেলি এমন গনতন্ত্রে!

অনেকেই ১৫ই আগষ্টের নৃশংসতম হত্যাকান্ডকে বিপ্লবের সাথে তুলনা করে জৈবিক আনন্দ নেয়ার চেষ্টা করতে ভালবাসেন। জ্ঞানের এমন ভান্ডার নিয়ে যারা রাজনৈতিক তর্ক করতে চান তাদের অনুরোধ করব এ লাইনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। সেনাছাউনির লোভি কুকুরদের রক্ত পিপাসার নাম বিপ্লব হতে পারে না, এ নিছকই লোভ লালসা বাস্তবায়নে একদল নরপিচাশের ভয়াবহ নির্মমতা। জেনারেল জিয়া, জেনারেল শফিউল্লাহ, ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ, কর্নেল তাহের, শাফায়েত জামিল, এই চক্ত্রের সবাই সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত বন্যা বইয়ে দেয় ৩২নং রাস্তায়, যা পরবর্তীতে রুপ নেয় হালুয়ার বখড়া নিয়ে নিজদের ভেতর কামড়া কামড়িতে। এর নাম বিপ্লব? তাও আবার বলশেভিক বিপ্লব! ধিক এমন জ্ঞানে!

এক কাপ চা আর একটা আকিজ বিড়ি দিয়ে যতদিন ভোটের রাজনীতি ক্রয় করা যাবে ততদিন বহুদলীয় রাজনীতির আসল অর্থ হবে ভাওতাবাজী, যা এক অর্থে বাকশালের চেয়েও নিকৃষ্ট। বাংলাদেশে এমন এক ভাওতাবাজীকেই লালন পালন করছে রাজনৈতিক দলগুলো, যার সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করছে প্রচার মাধ্যম, বুদ্বিজীবি নামের পরজীবি দল, ছাত্র, শিক্ষক সহ কথিত আমজনতা।

উপরের লেখাটার মূল উদ্দেশ্য বাকশালতন্ত্রের স্তূতি গাওয়া ছিলনা, বরং এ ছিল তৎকালিন বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সাথে বাকশালী ব্যবস্থার একটা বাস্তব তুলনা।

একদলীয় বনাম বহুদলীয়

"বাকশাল সমাজতন্ত্র ছিলনা, বরং এ ছিল গনতন্ত্র কবর দিয়ে মুজিব রাজত্ব পাকাপোক্ত করার রাজনৈতিক হাতিয়ার", শুনতে বেজায় ভাল শোনায়। গনতন্ত্রের প্রতি এমন অপরিসীম শ্রদ্বাবোধ এবং কমিটমেন্ট কেবল বাংলাদেশেই হয়ত খুজে পাওয়া সম্ভব। কথিত বহুদলীয় গনতন্ত্রের অলংকার একমাথা এক ভোটের ফলাফল আজকে আমাদের কিউপহার দিচ্ছে, নেত্রী তথা পারিবারিক রাজত্ব নয় কি? হ্যা, পার্থক্য একটা নিশ্চয় আছে, আর তা হল,রাজত্বের দাবীদার এখন রাজার বদলে রানী, এবং তখত তাউসের উত্তারাধীকার এক রানীর স্থলে দুই রানী এবং স্ব স্ব রাজপুত্রদ্বয়। অতীতের বাকশালকে যদি টাকশাল নামে অভিহিত করে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা হয় খুব কি অন্যায় কিছুহবে? আজকের বহুদলীয় রাজনীতির পদচারনা কি টাকশালকে ঘিরে নয়? নিউ ইয়র্ক সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মহা আয়োজনে পালন করা হচ্ছে তারেক জিয়া মুক্তি বার্ষিকী। গনতন্ত্রের পূজারীদের কাছে সবিনয় প্রশ্ন, এ কোনমহা মানবের পূজায় নেমেছেন আপনারা? শেখ মুজিব পূজার অন্তত বৈধ একটা ভিত্তি ছিল, যার শিকরের গভীরতা ছিল জনগনের সন্মান, শ্রদ্বায় এবং ভালবাসায়। আর এই তারেক জিয়া? ক্ষমতার আবর্জনায় যার উত্থান, রাজনীতির ভান্ডার যার চুরির মালামালে পরিপূর্ন তাকে নিয়ে বহুদলীয় গনতন্ত্রের বড়াই?

আওয়ামীরা ক্ষমতায় এসে অল-আউট পাপাচারে লিপ্ত হয়ে দেশকে চুরি চ্যম্পিয়নশীপে বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন বানাবে এবং এর প্রতিবাদ/প্রতিদান হিসাবে ফিরিয়ে আনা হবে বিএনপি নামের আলী বাবা ৪০ চোরের দলকে (and vice-versa), এটাই ত আমাদের বহুদলীয় গনতন্ত্র, তাই নয় কি? এমন একটা বাংলাদেশ নিয়ে যারা সন্তূষ্ট তাদেরজন্যে আমার এ লেখা নয়, আমার এ লেখা তাদের জন্যে যারা দেশকে দেখতে চায় সত্যিকার দেশ হিসাবে যেখানে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা নিশ্চয়তার পাশাপাশি থাকবে স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তা। এ অর্জন বহুদলীয় গনতন্ত্র অথবা একদলীয় লৌহ শাষনেই আসুক তাতে আমার মত সাধারন মানুষের হারানোর কিছু নেই।

বিষয়: রাজনীতি

১৩৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File