শকুন-ঈগল খামছে ধরেছে আমার পতাকা
লিখেছেন লিখেছেন প্রতিবেশী ফারুক ২১ জুলাই, ২০১৩, ০৩:২৭:৫৮ দুপুর
“সারা শরীর ক্ষত, ঔষধ দেব কত?” এই প্রবাদ ব্যবহার করেই আজকের লেখা শুরু করলাম। বাদশাহ আকবর তার আমলা-কামলাদের একদিন জিজ্ঞেস করলেন- আমার রাজ্যে কোন পেশার লোক বেশী? সবাই সবার মত জবাব দিল। কিন্তু বিরবল ভিন্ন। তিনি বললেন- কবিরাজ। সভার উপস্থিতির সবাই এর বিরোধীতা করল। হৈ চৈ’র মাঝে আকবর ক্ষ্যাপে গেলেন। বিরবল বাদশাহর কানের কাছে গিয়ে ফর্মূলাও বলে দিলেন। তাৎক্ষণিক বাদশাহ বলে উঠলেন- “আমার পেট ব্যাথা করছে।” শুরু হল ডাক্তারী। এই করেন মহারাজ, সেই করেন, এটা করা যাবেনা, ওটা করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সম্রাট আকবরেরও বুঝতে বাকী রইলনা যে তার রাজ্যে কোন জাতের মানুষের সংখ্যাধিক্য।
সেই বাদশাহী আমল নেই কিন্তু কবিরাজের অভাব নেই বরং এখন আরো ‘সরব উপস্থিতি’ আছে। রূপটাও পরিবর্তন হয়েছে।
আসুন শেষ থেকে শুরু করি-
একজন মন্ত্রী বাহাদুর তার সংবাধানিক দায়িত্বের বাহিরে গিয়ে একটা মন্তব্য করলেন। আর অমনি আমাদের দন্ত-নখর বিহীন, ঠুটো জগন্নাথ দুদক আমাদের কপালে আরেকটা লজ্জার তিলক পরিয়ে দিল। দুদক না জেনে এই কাজটি করেছে? নাকি জাতিকে লজ্জায় ডুবানোর জন্য অন্য কারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করল? দুদক কী জানেনা ‘ইন্টারপোল’ কোন ক্যাটাগরির আসামী হ্যান্ডল করে? নাকী সেই পুরাতন ইস্যু ইস্যু খেলা? বিএনপি তারেক ইস্যুতে ব্যস্ত থাকবে, সরকার নির্বিঘ্নে অন্য কোন চুক্তি সই করে নিবে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে?
জাস্ট এর পূর্বের ইস্যুর সাথে এটা যোগ করলে আমার সন্দেহের সত্যতা বুঝা সহজ হবে। পিলার তত্বের আবিষ্কারক মন্ত্রী মহোদয় চট্টগ্রামের একটা থানা উদ্বোধনে মিছিল সমাবেশ করা নিয়ে অসাংবিধানিক একটা কথা বলেছেন। সেই কথার ব্যাখ্যা বিকেলে ঢাকায় দিলেন অন্য রকম; রাতে আবার বিকেলের ব্যাখ্যাও পাল্টে গেল। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মাথায় সারাদেশে শিবির ঘোষণা দিয়ে সেই জরুরী অবস্থার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাল। এই জরুরী অবস্থা আর তারেক ইস্যুর আড়ালে চলছে আরেক জঘণ্য তৎপরতা।
১. টিকফা চুক্তি।
২. রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
৩. নারায়নগঞ্জে ভারত কর্তৃক কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের টেন্ডার।
৩নং ইস্যুটির ব্যাপার কনসার্ন হলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না! এখন যিনি ব্যবস্থা নিবেন, রাষ্ট্রের যে ব্যক্তিটি এটা নিয়ে ইয়েস-নো কিংবা ভেরী গুড বলবেন তিনি নাকি কিছুই জানেন না!! এই হলো আমাদের সার্বভৌমত্ব!!! আমরা নাগরিকরা কত অসহায় সেটা অনুমানের জন্য এই একটি ব্যাপারই যথেষ্ট।
রামপাল এবং টিকফা নিয়ে লেখা লেখি হচ্ছে, হবে। কিন্তু ‘চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী’ এই প্রবাদ সবারই জানা আছে। যে কোন মূল্যে আমার সোনার হরিণ চাই, ক্ষমতা নামক সোনার হরিণ! ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে, অভ্যান্তরীন রুটে তাদের নৌ চলাচল করছে। আরো যা যা চাইছে সবই দেয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীও নীরব। কারণ ভারতের চাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের একটা বিশেষ চেতনায় আঘাত লাগে! সেই পরগাছারা একটা বিশেষ গোষ্ঠীর পা-চাটা গোলাম তা দেশের যে কয়েকজন মানুষ বুঝে তাদেরকে রাখা হয়েছে কোণঠাসা করে। আওয়ামীলীগ-বিএনপি কেউ ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবেনা। শুধু ক্ষমতার জন্য। আবার এ্যামেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধেও কেউ যাবে না, সেটাও নিশ্চিত।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে সুন্দরবন ধ্বংসের শেষ আয়োজন। তবে ডান-বাম মিলে আম জনতা রামপালের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলনের সম্ভাবনা আমি দেখতে পাচ্ছি। রামপাল নিয়ে আওয়ামীলীগ বেশীদুর এগুতে পারবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে।
কিন্তু টিকফা চুক্তিতে বাংলাদেশ সই করার যে ইঙ্গিত মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়েছেন তা চরম হতাশাব্যাঞ্জক। টিকফায় স্বাক্ষর করলে-
পেটেন্ট আইনের বাস্তবায়ন কৃষি, ওষুধ শিল্প, কম্পিউটার সফটওয়্যারসহ গোটা তথ্যপ্রযুক্তি খাত হুমকির মুখে পড়বে, এল ডি সি’র নেতা হিসেবে বাংলাদেশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মার্কিন আধিপত্য নিরঙ্কুশ হবে।
শুধু ক্ষমতার জন্য দেশের এত্তবড় সর্বনাশের আয়োজন সরকারকে না করার জন্য একজন নাগরিক হিসেব বিনীত অনুরোধ করছি। আপনাদের সন্তানরা হয়তো ইউরোপে পাড়ি জমাবে; কিন্তু আমরা খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা একবার অনন্ত ভাবুন। আমাদের জন্যই আপনারা, আপনাদের জন্যই আমরা।
http://www.bdbreaking24.com/view.php?id=2233
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন