সুনসান নিরবতা

লিখেছেন লিখেছেন মারুফ_রুসাফি ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:২৪:৫৬ রাত

সুনসান নিরবতা মনে হয় ঢাকা শহরে হয়ে ওঠে না।

তিলোত্তমা নগরীতে অনেক লোকের আনাগোনা চলতেই থাকে। একটু জায়গা পেলেই মাটি ফুঁড়ে জেগে উঠে ডেভেলপার কোম্পানির নতুন প্রজেক্ট। নতুন অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে নতুন কিছু সংসার।

নতুন দম্পতি, পুরোনো দম্পতি, ব্যাচেলর। নির্ঘুম রাতে জেগে উঠে আলো- আঁধারির মাঝে জানালা দিয়ে, বারান্দা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলেই অন্য কাউকে পাওয়া যায় দূরে কোথাও -- এক টুকরো মোবাইলের আলোতে জেগে থাকা কিশোর, কিশোরী। অথবা হয়ত কোন তরুণ বা তরুণী। এভাবেই অপচয় হয় কৈশোরের, তারুণ্যের।

যে রাতকে তিঁনি বিশ্রামের জন্য রাহমাত হিসেবে দিয়েছেন,

সেই রাতে মোবাইল প্রজন্ম জেগে থাকে নিতান্ত অশান্তিতে। নেটওয়ার্ক কানেক্টেড রাখার এক অদম্য প্রয়াস, হয়ত চেনা-অচেনা কোন বিপরীত লিঙ্গের কাউকে কাছে না পাওয়ার এক বুক তৃষ্ণা।

খানিক আগেই হয়ত টেলিভিশন বন্ধ করে বারান্দায় এলো, কিংবা ঘরের জানালার পাশে... টিভিতে গান দেখছিলো, নায়ক-নায়িকার অন্তরঙ্গ রোমান্স, নাচানাচি, গাছ-পালা-সমুদ্র-পাহাড়ে গান গাওয়া... অথচ নিজের জীবনটা কেমন একঘেয়ে,

বাড়ি আর কলেজ/ভার্সিটির এক বৃত্ত -- এমনটা ভেবে আবার অস্থির হয় সেই তরুণ বা তরুণী। মোবাইল অপারেটর এসএমএস দেয়, বন্ধু হতে চাইলে/পেতে চাইলে অমুক-তমুক ডিজিট চাপুন... তারুণ্য আরো অস্থিরতায় ডুবে যায়।

অপেরা , মজিলা কিংবা গুগল ক্রোমে ফেসবুক ডট কমে এসে দেখা যায় বন্ধুরা 'হ্যাং আউটে' ছিলো, কিংবা একটা কাপল কেএফসিতে গিয়ে সেলফি তুলেছে। দু'জনের হাসিমুখ দেখে তারুণ্যে একাকীত্বের জোয়ার আসে... কাউকে পাওয়ার তৃষ্ণা জাগে আরো... শয়তান তার বুকে জ্বালা দিতে থাকে, আরও

আরো জ্বালা... আরো আরো একাকী ফিলিংস।

একবার হয়ত মনে হলো, তাহাজ্জুদে দাঁড়াই, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে যদি তাও বুকটা হালকা হয়। পরক্ষণেই মনে হয়, সারাদিন কোন নামাজই পড়িনি, তাহাজ্জুদে দাড়ালে আর কী এমন হবে। আল্লাহ তো আমার দোয়া কবুল করবে না! অথচ, আরেকটু হলেই হয়ত অন্তরের প্রশান্তির স্রোত বয়ে যেত একটানা। আরেকটু হলেই এই জীবনের অর্থটা সার্থক করার এক অনুভূতির দিকে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত...কৈশোর, তারুণ্য, যৌবন... এমনি এক নাগরিক জীবনে বহুমুখী অস্থিরতায় কেটে চলেছে। প্রতিটি বুকে অনেক জ্বালা।

বন্ধুত্বের জ্বালা, বান্ধবীর জ্বালা, বন্ধুর জ্বালা, ত্রিমুখী প্রেমের জ্বালা, একাকীত্বের জ্বালা, অভিভাবকের অমতের জ্বালা,

ইন্টারনেটে ফটো ও ভিডিও আপলোড হওয়া অন্তরঙ্গ মূহুর্তগুলোর জ্বালা... জ্বালামুক্তির সেই সহজতম উপায়টি থেকে শয়তান আরো আরো দূরে সরায়। পাপের সমুদ্রে পাপাচারী আত্মাগুলো আরো ডুব দেয়... গহন ডুব।

রাতে ইউটিউবে গিয়ে ভিডিও চালানো, কিংবা কোন মেয়ের

ইনবক্সে গিয়ে মেসেজিং...আরো আরো গহীনে পাপাচার...

এমন সময় হয়ত এমন এক তরুণ/তরুণীর ঘুম ভাঙ্গলো যে ওযূ সেরে বারান্দায় তোয়ালেতে মুখ মুছতে গিয়ে দেখলো দূরে কোথাও মোবাইল ফোনের আলো, কেউ জেগে আছে।

কিবলামুখী হয়ে হাত বেঁধে স্থির দাঁড়ানো অশ্রুসিক্ত মানুষের

সলাতের প্রশান্তিটা কেউ বুঝতেও পারবে না। সারা পৃথিবীকে ফেলে প্রকৃত শান্তির অবগাহনে সিক্ত হয়ে সে আত্মাকে আরো উচ্চ মাকামে নিয়ে যাওয়ার পথে ব্যস্ত... প্রকৃত শান্তি, প্রকৃত

মুক্তি, প্রকৃত সুখ তো সেই হৃদয়েই...!

বিষয়: বিবিধ

১২৩৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

262761
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১৪
পবিত্র লিখেছেন : দারুন! অসম্ভব ভালো লাগলো! Happy Happy Good Luck Good Luck Rose Rose Rose
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
206968
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : ধন্যবাদ। সাথেই থাকুন।
262777
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫৯
ফেরারী মন লিখেছেন : প্রকৃত শান্তি, প্রকৃত মুক্তি, প্রকৃত সুখ তো সেই হৃদয়েই...
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
206969
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : হুম। কথা সত্য।
262796
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১১:৫১
নিউজ ওয়াচ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
206970
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও। সাথেই থাকবেন।
262856
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৪৪
কাহাফ লিখেছেন : কিবলা মুখী হয়ে হাত বেধে স্হির দাড়ানো অশ্রু সিক্ত মানুষের সালাতের প্রশান্তি টা অনেকেই বুঝে না। অসাধারণ এক প্রশান্তি দায়ক বানী।অনেক ধন্যবাদ.......
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
206971
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : আপনাকেওও
315414
১৭ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৫:২৮
শেখের পোলা লিখেছেন : "অতীব গভীর হয় রজনী যখন,
নীরবে প্রভুর নাম পিও তখন৷
প্রভুর করুনা যদি পাইবারে চাও,
সকল সময়ে তার যশঃগান গাও৷"
ধন্যবাদ, জবর হয়েছে৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File