গল্পঃ

লিখেছেন লিখেছেন মারুফ_রুসাফি ০৫ মে, ২০১৪, ০৪:০৯:২৫ বিকাল

ছেলেবেলা থেকেই... রিকশা থেকে নেমে বাসার গেটে ঢুকতে যাবে রত্না, হঠাৎ শুনতে পেলো পাড়ার চায়ের দোকান থেকে ভেসে আসা গানের আওয়াজ। পুরো একটা লাইনও শোনেনি, কিন্তু ধরতে পারলো কোন গান। পারবে নাই বা কেন? ছোটবেলায় কত শুনেছে! তখনকার বিখ্যাত ব্যান্ডদলের বিখ্যাত গান! তাছাড়া ছোটবেলায়

যা যা শুনেছে কিছুই ভুলেনি, কম তো শুনত না! এখনই নাহয় আর গান টান তেমন শুনে না। নামাজ পড়া শুরু করার পর থেকে পর্দাও ধরল, আর তারপর আস্তে আস্তে এসব থেকে একটু সরেই গিয়েছে!

চাবি দিয়ে গেট খুলে বাসায় ঢুকল রত্না। বাসায় আর কেউ নেই।

একবার ভাবল পাশের ফ্ল্যাটের আদিবের আম্মুর সাথে গল্প করে আসবে। কিন্তু এই ভর দুপুরে বেচারি হয়ত ঘুমাচ্ছেন। আদিব রত্নার ছেলে সায়েমের সমবয়সী। হয়ত দু চার মাসের ছোট বড়। পাঁচ বছরের ছেলেদুটার বড় ভাব। একই স্কুলে পড়ে, একই সাথে খেলে। কেবল এই দুপুরে দুজনের দুই রুটিন। আদিব এই সময়

হুজুরের কাছে পড়ে, আর সায়েম যায় আর্ট শিখতে। হুজুরের কাছে এত আগে কেন পড়ছে আদিব প্রথমটায় রত্না বুঝতে পারেনি...

পরে বুঝেছে যে এখনো কুরআন পড়া শেখা শুরু করেনি, আদিবের

মায়ের শখ ছেলে যেন কুরআন মুখস্থ করে পুরাটা, তাই এই ব্যবস্থা,

শুনে শুনেই মুখস্থ করছে আর উচ্চারণ ঠিক করছে। "এত অল্প বয়সে এত লোড নিতে পারবে আপা, এখনই দিলেন যে??" প্রশ্ন করেছিলো রত্না। মিষ্টি হেসে মহিলা উত্তর দিয়েছিলেন, "পারবে ইনশাআল্লাহ!" এই যে, একারণেই মহিলাকে এত ভালো লাগে রত্নার। অল্প কথা বলেন, কিন্তু সুন্দরভাবে বলেন। আবার নিজের

সিদ্ধান্ত থেকে অন্যের কথায় সরে যান না!! ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো রত্না। মন চাইছে একটু বিশ্রাম করতে। কিন্তু একটু পরই তো সায়েমকে আনতে যেতে হবে, তাই শান্তিমত বিশ্রাম নেয়ারও উপায় নেই! পেপার খুলে চোখ বুলালো। আপন মনেই গুন গুন করে গেয়ে উঠলো চায়ের দোকানে বাজতে থাকা সেই গানের লাইন। আশ্চর্য!! সেই বিশ বছর আগের শোনা গান ও আজও ভুলেনি!! আসলে বাচ্চা বয়সটাই আলাদা-- যা শোনে সব মুখস্থ হয়ে যায়!! কথাটা ভেবে নিজের মনেই চমকে উঠলো রত্না!! সেদিন আদিবের বাবা তার হাজবেন্ডকেও এ কথাই বলেছিলেন। "ভাই সায়েমকেও হুজুরের কাছে দেন, এখন যা শিখবে মনে রাখবে আজীবন!!" ওদের দিতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু প্রেশার পড়বে যে!!

রত্না আবার ভাবল-- প্রেসার পড়বে যে!! আচ্ছা, ওরা কি চায় না যে ওদের ছেলেও কুরআন মুখস্থ করুক? চায় তো, কিন্তু ভেবেছে একটু বড় হোক!! কিন্তু প্রেশার কি নিতে অক্ষম?? আর্ট স্কুলের প্রেসার নিচ্ছে না? আচ্ছা, এই বয়সে শোনা গান যদি ওর আজও মনে থাকে, ওর ছেলে কি বড় হলে এই বয়সে শেখা কুরআনও একটা লাইন শুনলেই মনে করে বাকি লাইন পড়তে পারবে?? ঘড়ির দিকে তাকালো রত্না। এখনো সায়েমকে আনার সময় হয়নি।

হাজবেন্ডকে ফোন করে জানালো ওর মনের ভাবনা। বাসার গেট লাগিয়ে পাশের ফ্ল্যাটে যেয়ে বেল টিপল। সাথে বাড়তি টাকা নিতেও ভুলল না। আদিবের মা দরজা খুলে দিলেন। ঘুমিয়েই

ছিলেন মহিলা আসলে! তবু রত্নার আজ আর অস্বস্তি লাগলো না।

"আপা, কাল থেকে সায়েমও ইনশাআল্লাহ হুজুরের কাছে পড়বে।

একটু বলে রাখবেন!" মাসের শেষ দিন আজ, আর্ট স্কুলের বেতন দিয়ে সব শেষ করে দিয়ে আসবে। ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দেরী করতে নেই। শেখাতে চাইলে এখন থেকেই, এই ছেলেবেলা থেকেই! ইনশাআল্লাহ ওর ছেলে একদিন মসজিদ থেকে ভেসে আসা কোনও সূরার লাইন অর্ধেক শুনেই পুরোটা বলে দিতে পারবে। ইনশাআল্লাহ!

বিষয়: বিবিধ

১১৬৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

217718
০৫ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:২২
মেঘ ভাঙা রোদ লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ ওর ছেলে একদিন মসজিদ থেকে ভেসে আসা কোনও সূরার লাইন অর্ধেক শুনেই পুরোটা বলে দিতে পারবে।

এমনই যেন হয়
217723
০৫ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:২৬
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
217737
০৫ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:২০
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : এভাবে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। সুন্দর গল্প হয়েছে।
218014
০৬ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : উত্তম বুদ্ধি Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File