আকাশের স্তর – LAYERS OF SKY
লিখেছেন লিখেছেন মারুফ_রুসাফি ০৫ মে, ২০১৪, ০৯:৪৩:১৫ সকাল
সূধী পাঠক,সরৎকালের
বিকেলে খোলা আকাশের
দিকে তাকিয়ে তন্ময়
হয়ে ভাবেনি এমন লোক
হয়তোবা খুঁজেও পাওয়া যাবেনা।
নীল সামীয়ানায়
ঢাকা দিগন্তে যখন সন্ধ্যা নামে,
গোধূলীর ধূসরাভা পশ্চিমের
নীলাকাশকে যখন কলুসিত
করে তোলে তখন পূর্ব
দিগন্তে নামে আঁধার। সেই
সাথে ফুটে উঠে দু’একটি তারা।
কখনোবা পূর্ণিমার চাঁদ
এসে উকি দেয় পূর্ব দিগন্তের কাল
রেখায়। কবিমন ভাবে আকুল হয়,
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের মন
উদ্ভেল হয়ে উঠে। শুধু কি পূর্ণিমার
চাঁদই সুন্দর! না! কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকার
আকাশটা যে আরো সুন্দর,সুশোভিত
তারার মেলায় দিগন্ত ব্যপ্রিত
ছায়াপথ যেন চোখের
সামনে নিয়ে আসে কোটি কোটি কুসুমের
ঢালি।শুধু যে কবিরাই ভেবেছেন
তা কিন্তু নয়,পৃথিবীর তাবৎ
বিজ্ঞানীরাও ভেবেছেন এই
নীলাভ আকাশ নিয়ে,সময়ের ক্রম
ধারায় তারা আকাশের নান রহস্য
উদঘাটন করেছেন তাদের অক্লান্ত
পরিশ্রম দিয়ে।
সূধী পাঠক,আজকের বিজ্ঞান তার
অনেক
সাধ্যি সাধনা দিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষার
মাধ্যামে আমাদের চারিদিকের
অদৃশ্য বায়ু স্তরকে সনাক্ত
করেছে আরও
ধারনা দিয়েছে যে এই বায়ুস্তর
বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন রকম।
আমাদের ভূপৃষ্ঠকে আবৃত এই
বায়ুস্তরকে বিজ্ঞান
সাতটি স্তরে বিভক্ত করেছে। সকল
স্তরেরই কিছু নিজস্ব স্বকীয়তা ও
বৈশিষ্ট রয়েছে ফলে সম্পূর্ণ
আলাদা স্তরের মর্যাদা পেয়েছে।
আমরা জানি আমাদের
চারিপার্শের এই বায়ুমণ্ডলই
পৃথিবীর বুকে জীবনকে সম্ভব
করে তুলেছে এই বায়ু মণ্ডলের
বিভিন্ন স্তরের যে কোন একটির
অনুপস্থিতি পৃথিবীর
বুকে জীবনকে নিশ্চিহ্ন
করে দিতে পারে।আজকের
বিজ্ঞান এমনটাই মন্তব্য করছে।
ভেবে দেখুন বিধাতার
কি ত্রুটিবিহীন সৃষ্টিশৈলী সকল
ক্ষেত্রে দৃশ্যমান।
বায়ুমণ্ডলকে নিম্নোক্ত
সাতটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে;
১: ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere);
এটি সর্বনিম্ন বায়ুস্তর
বলতে গেলে ভূপৃষ্টের লাগোয় স্তর
যা আমরা অনুভব করি।এই স্তরের
সাধারন উচ্চতা ৬ কি মি; বিষুব
রেখার দিকে ১২ কি মি পর্যোন্ত
হয়ে থাকে।
সাধারনতঃ বায়ুমণ্ডলীয়
ব্যবস্থাদী তিন থেকে চার
কি মি পর্যোন্ত চলে থাকে।প্রায়
৭৫% বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস এই স্তরেই
থাকে। ২:ট্রপোস্ফিয়ারের পর
স্ট্রেটোস্ফিয়ার (Stratosphere);এই
স্তর ৫০ কি মি উচ্চতা পর্যোন্ত
বিস্তৃত।৩:তৃতীয় স্তরটি হল ওজোন
স্তর;এটি সূর্যের ক্ষতিকর
রশ্মি থেকে রক্ষাকারী স্তর।৪:তার
উপরের স্তরটি মেসোস্ফিয়ার
(Mesosphere);৫:থার্মোস্ফিয়ার
(Thermosphere);৬:আয়নোস্ফিয়ার
(Ionosphere), ভূপৃষ্ঠ থেকে এই স্তরের
শেষ সীমানা প্রায় ৫০০ কিমি।এই
স্তর থেকে রেডিও তরঙ্গ
প্রতিফলিত হয় বলে যোগাযোগ
ব্যবস্থা উণ্ণীত করন সম্ভব হয়েছে;
এটিকে ঝালর স্তর ও বলা হয়’অর্থাৎ
বায়ুস্তরের অলঙ্কার স্বরূপ।
সর্বোপরি ৭:এক্সোস্ফিয়ার
( Exosphere),এটি দশ হাজার
কি মি পর্যোন্ত বিস্তৃত।এই
স্তরে গ্যাসের ঘণত্ব অত্যান্ত
কম,এবং আয়নিত অবস্থায় আছে।এই
ভাবে বিজ্ঞানীরা বায়ুস্তরকে সাতটি ভাগে বিভক্ত
করেছেন।প্রতিটি স্তর অত্যান্ত
সঠিকতার সাথে নিজ নিজ
দ্বায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।সকলেই
মিলিত সমন্বয়তার
মাঝে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখার
কাজে অত্যান্ত
নিপুনভাবে করে যাচ্ছে।প্রকৃত
পক্ষে বায়ুমণ্ডলে প্রাণহীন পরমানু
গুলো নীরবে নিভুতে কাজ
করে যাচ্ছে প্রাণময় পৃথিবীর
জন্যে এবং গড়ে তুলছে সচেতন
অস্তিত্ব মহান প্রভুর সহায়তায়।
বৈজ্ঞানিকগণ বিভিন্ন
ভাবে বায়ুমণ্ডলকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে সকলেই
একমত হয়েছেন যে এর স্তর ভেদ
সাতটিই রয়েছ আর এ
তথ্যটি আশ্চর্যোজনক
ভাবে কোরআনিক ধারণার
সাথে মিলে যাচ্ছে।সূধী পাঠক
আমরা আমাদের পরিচিত আকাশ
বলতে আমাদের ভূপৃষ্ঠের
চারিদিকে খোলা শূণ্যতাকে ধরে নেই
তবে তার একটা নির্দিষ্ট
সীমানাও
ধরে নেওয়া প্রয়োজন,আর সেই
চিন্তায় আমরা যদি আমাদের
বায়ুমণ্ডলকে ধরে নেই তবে তার
একটা সুনির্দিষ্ট
সীমানা পাওয়া যায় এবং এই
অঞ্চলটিও সাতটি অংশেই বিভক্ত।
সূরা আল মুলক এর ৩ নং
ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﺳَﺒْﻊَ ﺳَﻤَﺎﻭَﺍﺕٍ ﻃِﺒَﺎﻗًﺎ ﻣَّﺎ ﺗَﺮَﻯ ﻓِﻲ ﺧَﻠْﻖِ
ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻣِﻦ ﺗَﻔَﺎﻭُﺕٍ ﻓَﺎﺭْﺟِﻊِ ﺍﻟْﺒَﺼَﺮَ ﻫَﻞْ ﺗَﺮَﻯ ﻣِﻦ ﻓُﻄُﻮﺭٍ
৬৭:৩ তিনি সপ্ত আকাশ
স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন।
তুমি করুণাময় আল্লাহ তা’আলার
সৃষ্টিতে কোন তফাত
দেখতে পাবে না। আবার
দৃষ্টিফেরাও; কোন ফাটল
দেখতে পাও কি?
পবিত্র কোরআন এই সাত স্তরের
আকাশ বলতে মহাবিশ্বের
সাতটি আলাদা স্তরকেই
বুঝিয়েছে;
যা হতে পারে সাতটি আলাদা মাত্রায়,বা সাতটি আলাদা আকর্ষণ
ক্ষেত্র।অনেকে এ
বিষয়টিকে আমাদের ভূপৃষ্টের সাত
স্তরের বায়ু
মণ্ডলকে বুঝানো হয়েছে বলে মনে করেন।
গভীর গবেষণা থেকে পরিস্কার
হয়ে গেছে এই সাত স্তরের আকাশ
বলতে বায়ু মণ্ডলকে বুঝানো হয়নি।
তা বুঝানো হয়েছে ভিন্ন
আয়াতে ভিন্ন আঙ্গিকে।
আমরা তা পরে দেখবো;
তবে এখানে এই স্তরভেদ
বলতে একের অধিক বিশ্বকেই
বুঝানো হয়েছে এবং তার
সংখ্যা সাতটি বলেও পরিস্কার
ধারনা দেওয়া হয়েছে।
বায়ুমণ্ডলের স্তর- LAYERS OF THE
ATMOSPHERE
WELL PROTECTED ROOF
মহান আল্লাহ সূরা আম্বিয়ার ৩২
নং আয়াতে বলছেন,
ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﺳَﻘْﻔًﺎ ﻣَّﺤْﻔُﻮﻇًﺎ ﻭَﻫُﻢْ ﻋَﻦْ ﺁﻳَﺎﺗِﻬَﺎ
ﻣُﻌْﺮِﺿُﻮﻥَ
২১:৩২ আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ
করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ
নিদর্শনাবলী থেকে মুখ
ফিরিয়ে রাখে।
32- And We made the sky a well
protected roof. Still they
turn away from its signs.
21-The Prophets, 32
বলাচলে আমাদের বায়ুমণ্ডল
পৃথিবীর চারিদিকে এক গ্যাসীয়
আবরণ,যার গড় উচ্চতা প্রায় দশ
হাজার কিমি।সূধী পাঠক
হয়তো বলতে পারেন এত উচু গ্যাসের
স্তরের কি প্রয়োজন ছিলেএই উচু
গ্যাসের স্তরই আমাদের
পৃথিবীকে আবাসযোগ্য
করে তুলেছে, এর সামান্য ব্যতিক্রম
এই
আবাসযোগ্যতা হারিয়ে যেতে পারে কালের
গর্ভে।বিজ্ঞান বলছে,লক্ষ লক্ষ
বিভিন্ন আকৃতির মেটেওরাইট
প্রতি নিয়ত আমাদের পৃথিবীর
দিকে ধেয়ে আসছে।বায়ু স্তরের
ঘর্ষনে এই পাথরখণ্ড
গুলো ভষ্মে পরিণত
হয়ে যাচ্ছে,রক্ষা পাচ্ছে আমাদের
মাটির পৃথিবী;দিনে অন্তত
দু’চারটেও
যদি পৃথিবীতে চলে আসতো তাতে পৃথিবীতে নির্বিগ্নে জীবনধারন
প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তো।
সূর্যো থেকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর
হাজারো রকমের
অতিবেগুণী রশ্মি পৃথিবীর
দিকে আসছে।আমাদের বায়ুস্তর
এগুলোকে বাঁধা দিচ্ছে।এই
কাজে এমনই সিদ্ধহস্ত এই
স্তরগুলো,ভাবলে মণে হয় যেন
কোন
অশরিরী মহাশক্তি দূরে বসে এই
ক্রিয়াগুলো পরিচালনা করছেন
সুনিপুন ভাবে।
সূধী পাঠক আমরা বিজ্ঞানের
কাছে জেনেছি আমাদের আজকের
পৃথিবী আর জন্মলগ্নের পৃথিবী একরকম
নয়; সুপারনোভা বিস্ফোরণ
থেকে ছায়পথের উৎপত্তি;সেই
ছায়াপথেরে বিবর্তনের ধারায়
তার অসংখ্য নক্ষত্রের একটি নগণ্য
সদস্য সূর্যের দেহাংশ
থেকে আমাদের পৃথিবীর জন্ম
হয়েছে বলেই বিজ্ঞানের ধারণা।
এই জন্ম ইতিহাস থেকেই বুঝা যায়
যে আদি পৃথিবী আজকের মত সুরম্য
ছিলনা,ছিল এক জ্বলন্ত
অগ্নিগোলক,যা ধীরে ধীরে বহু
বছরের বিবর্তনে সৌন্দর্যের
রাণী হয়ে উঠেছে,গড়ে উঠেছে প্রাণের
আবাসভুমি হয়ে আজকের দিনে জ্ঞন
বিজ্ঞানের উৎকর্ষোতায় মানুষ
বুঝতে পারছে যে, কত কঠিন
পরিস্থিতির ও সুক্ষ জটীলতার মধ্য
দিয়ে কত আশ্চর্যোজনক
ভাবে গড়ে উঠেছে আমাদের এই
পৃথিবী।ভাবতে গিয়ে মানুষ
বিষ্ময়ে অবিভূত হয়ে পড়ছে এই
ভেবে যে,কি করে এই অভাবিত
সমন্বয় সাধিত হল
যেখানে রয়েছে পরস্পরের
ভারসাম্যতার নিঁখুত সমন্বয়;যার
যৎসামান্য পরিবর্তনে বিপন্ন
হয়ে পড়তে পারে প্রাণী জগৎ। অথচ
সৃষ্টি কত নিগূঢ় ভারসাম্যতায়
বিরাজিত।নেই কোন
অপ্রতুলত,চারিদিকে বিপুল
প্রাচুর্যোতা।অনেকেই সীমিত
জ্ঞানের পরিসীমায় আবদ্ধ হয়ে এই
প্রাচুর্যোতার
ব্যাখ্যা খুঁজে না পেয়ে সহজ
করে বলে ফেলেছেন,‘বিশাল এই
বস্তু সকল অনাদিকাল ধরে অবাদ
বিচরণের ফলেই
সৃষ্টি হয়েছে প্রাণ; প্রাণ সৃষ্টির
জন্য কোন স্রষ্টার প্রয়োজন হয়নি;
প্রাণ বিশৃঙ্খল প্রকৃতির স্বতঃস্ফূর্ত
দান।’ প্রাণ সৃষ্টির মহিমায়
আমরা গর্বিত।সম্ভবত এ কারণেই
ফ্রন্সিস বেকন বলেছিলন,‘সামান্য
দর্শন জ্ঞান মানুষকে নাস্তিকতার
দিকে টেনে নিয়ে যায় আবার
গভীর দর্শন জ্ঞান মানুষকে ধর্মের
দিকে টেনে নিয়ে আসে।সময়ের
বিবর্তনে আজকের পরিপক্ক
বিজ্ঞান সঠিক তথ্যের সন্ধান
দিয়ে সৃষ্টিকর্তাকেই প্রতিষ্ঠিত
করে যাচ্ছে।তাইতো ফ্রেড ওয়েল
তার বৈজ্ঞানীক হিসেব নিকেশ
থেকে বলেছিলেন,“স্রষ্টাহীণ,পরিকল্পনাহীন
এবং অবাদ বিস্তৃতির
ফলে যে ভাবনার ভূবন
সৃষ্টি হতে পারে তাতে জীবন
সৃষ্টির একান্ত পূর্বসর্ত প্রাণরস
বা এনজাইম একটি কার্যোক্ষম দল
সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা যদি হয়
একভাগ
তবে সম্ভবনাহীনতা হবে ১০ ৪০০০০
ভাগ” অথচ অসীম সংখ্যক প্রাণ
পৃথিবীর মুক্ত হাওয়ায়
অবাদে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে।এই
এত প্রাণের আবাসস্থল এই পৃথিবী,
কে দিল তাকে এই আবাসযোগ্যতা?
তাইতো মহান দয়াময় সূরা ক্কাফের
৫ নং আয়াতে বলেছেন,
ﻣَّﺎ ﻟَﻬُﻢ ﺑِﻪِ ﻣِﻦْ ﻋِﻠْﻢٍ ﻭَﻟَﺎ ﻟِﺂﺑَﺎﺋِﻬِﻢْ ﻛَﺒُﺮَﺕْ ﻛَﻠِﻤَﺔً ﺗَﺨْﺮُﺝُ ﻣِﻦْ
ﺃَﻓْﻮَﻫِﻬِﻢْ ﺇِﻥ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺇِﻟَّﺎ ﻛَﺬِﺑًﺎ
১৮:৫ এ সম্পর্কে তাদের কোন
জ্ঞান নেই এবং তাদের
পিতৃপুরুষদেরও নেই। কত কঠিন তাদের
মুখের কথা।
তারা যা বলে তা তো সবই
মিথ্যা।
আমাদের এই প্রশ্নে আরও অনেক
জবাব রয়েছে বিজ্ঞানের হাতে;
তবে জীবনের এই
আবাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে কত
হাজারো সমন্বয়
করতে হয়েছে তাঁকে,তিঁনিই
তা জানেন, যিঁনি এ সমন্বয় সাধন
করেছেন। তবে কিছু কিছু আজকের
বিজ্ঞান তার অক্লান্ত চেষ্টায়
জানতে পেরেছে।
‘আপনা আপনি গজিয়ে উঠেছে এই
বিশ্বভ্রহ্মাণ্ড’ এমন একটি ধারনা
প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কানাডার
রয়েল সোসাইটির জীবপদার্থ
বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক এ্যালন ‘The
Evidence of God in expanding Universe
গ্রনে' বলেছেন,এ পৃথিবীকে এত
ণিপুন সমন্বয়ের
মাধ্যামে এমনি করে প্রাণীদের
বসবাসের
উপযোগী করে সৃষ্টি করা হয়েছে যে,সেগুলিকে বিবেচনা করলে কোন
ভাবেই বলা যায়না যে, এই
পৃথিবী আপনা আপনি সৃষ্টি হয়েছে।’
এই কথার উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন
মহান প্রভু নিজে, সূরা আল
মুরসালাতে বলছেনি-
৭৭:২৫ ﺃَﻟَﻢْ ﻧَﺠْﻌَﻞِ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻛِﻔَﺎﺗًﺎ
৭৭:২৫
আমি কি পৃথিবীকে সৃষ্টি করিনি ধারণকারিনী রূপে?-
ইসলামী কল সেন্টার
77:25 Have We not made the earth a
container-Noble Quran
77:25] Did we not make the earth an
abode- Rashad Khalifa
ﺃَﺣْﻴَﺎﺀ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﺗًﺎ
৭৭:২৬ জীবিত ও মৃতকে।- ইসলামী কল
সেন্টার
উপরুক্ত আয়াতে কাজী জাহান
মিয়া ‘ধারনকারীনি’ শব্দের
জায়গায় ‘উপযুক্ত আবাস স্থল’ ব্যবহার
করেছেন। ৭৭:২৫ আয়াতে ﻛِﻔَﺎﺗًﺎ
শব্দটির সঠিক অর্থ কি? ডঃ রাশেদ
খলিফা তার ইংরেজী তরজমায় এই
শব্দটিকে তরজমা করেছেন Ô abode
Õ; যার অর্থ গৃহ, বাসস্থান,আবাস স্থল
ইত্যাদি। আয়াত ২৫
সে বলা হয়েছে ‘ধারণকারীনি রূপে’;
কাকে ধারণকারীনি বলা হয়েছে?
আবার আয়াত ২৬ এ
বলা হয়েছে ‘জীবিত বা মৃতকে’-
তাহলে একটা বিষয় পরিস্কার
হয়ে যায় যে,এখানে প্রাণীর
কথা বলা হয়েছে এবং আমরা জানি জীবিত
প্রাণীরা তাদের আবাস
গৃহে বসবাস করে। সেই
সূত্রে পৃথিবীকে প্রাণীর আবাস গৃহ
বলাটাই বাঞ্চণীয়। সূরা আল
আম্বিয়ায় আল্লাহ্ বলছেন,
ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻭَﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻤَﺎ ﻟَﺎﻋِﺒِﻴﻦَ
২১:১৬‘আমি আকাশ ও
পৃথিবী এবং এতদুভয়ের
মধ্যবর্তী বস্তুপুঞ্জকে খেলার
ছলে সৃষ্টি করিনাই’
২:১৬৪‘আকাশও ভূমণ্ডলের মধ্যস্থিত
বস্তুপুঞ্জের মধ্যে জ্ঞানসম্পন্ন
মানুষের জন্য নিদর্শন রহিয়াছে’
হাজারো সমন্বয়ের
মধ্যে একটি বিশেষ সমন্বয় হল
পৃথিবীর অক্ষ তির্যকতা।
আমরা জানি পৃথিবী তার
কক্ষতলে নিজ অক্ষের সাথে ২৩.৫০
কৌণিক অবস্থানে অবস্থিত। এই
অবস্থান যে কত সুক্ষ হিসাবের
ব্যাবস্থা তা বিজ্ঞানী মাত্রই
জানেন। এখানে প্রণিধানযোগ্য
যে এই অবস্থান সকল গ্রহ বা নক্ষত্রের
একরকম নয়। আর এ থেকেই পরিস্কার
বুঝা যায় যে এ
ব্যবস্থা আপনা আপনি হতে পারেনা।
হয়তো বলতে পারেন,প্রকৃতির
নিয়মে ব্যবস্থাটিআগে থেকে হয়েছিল,সেই
হয়ে থাকার
সুবাদে পৃথিবীতে প্রাণের উন্মেষ
আপনা আপনি হয়েচে।সূধী পাঠক
আমাদের পরিসর জ্ঞানের
সীমা অতি ক্ষুদ্র,মহান আল্লাহ
সুযোগ করে দিলে প্রাণ
সৃষ্টি যে কত জটীল ও সুক্ষ সমন্বয়তার
মধ্যে ঘটেছে তার আলোচনা অন্য
পরিসরে দেখবো,তখন দেখবেন
তা এই সকল মহাজাগতিক সমন্বয়ের
চেয়ে ও বহুগুন জটীল। ফলে এ
কথাএকান উপায়েই
বলা চলেনা যে এ সব
আপনা আপনি হয়েছে।
আমরা আলোচনা করছিলাম পৃতিবীর
তীর্যোকতা নিয়ে।আজকের
বিজ্ঞানীদের
পরিক্ষা নীরিক্ষায় এ বিষয়
স্বতসিদ্ধ যে, এই তীর্যকতার জন্যেই
পৃথিবীতে ঋতুচক্রের সূচনা হয়-শীত
গ্রীষ্মে তাপমাত্রার তারতম্যের
মাধ্যামে দেখাদেয় ঋতু বৈচিত্র।
আমরা জানি পৃথিবী তার
কক্ষতলে নিজ অক্ষের সাথে ২৩.৫
ডিগ্রী কৌণিক
অবস্থানে অবস্থিত। এই
তীর্যকতা সঠিক মাত্রায়
না হলে পৃথিবী হত আবাসের
অনুপযুক্ত। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল
ইউরেনাস। ইউরেনাসের এই
তীর্যকতা ৯০ ডিগ্রী বা তারও
বেশী যার ফলে গ্রহটিতে বিরাজ
করছে উদ্ভট চরম ভাবাপন্নতা। এই
গ্রহের মেরু অঞ্চলে অন্ধকারাচ্ছন্ন
সময়কাল পৃথিবীর হিসেবে প্রায়
বিশ বছর। বিজ্ঞানীগন সুক্ষ হিসেব
করে দেখেছেন যে এই তীর্যকতাও
একেবারে স্থির নয়; খুব ধীর
গতিতে এর পরিবর্তন ঘটে।
কমতে কমতে একসময় বিপরীত
মুখী হয়ে আবার তার
পূর্বাবস্থানে ফিরে আসে,এই
পর্যায় কালটি প্রায় ২৬০০০
বছর,একে বলা হয় পৃথিবীর অক্ষঘূর্ণির
অগ্রগমন চক্র। এই
তীর্যকতা পরিবর্তনের
সাথে পরিবর্তীত হয় পৃথিবীর
আবহাওয়া। এই পরিবর্তন এতটাই
ধীরলয়ে ঘটে যে প্রাণীকুল
বেঁচে থাকার
তাগিদে নিজেদেরকে খাপ
খাইয়ে নেয় অনায়াসে। ২৬০০০ বছর
পরে আবার ফিরে আসে সেই
আদি অবস্থানো। এই ফিরে আসার
চক্রটি যদি সুনিশ্চিত করা না হত
তাহলে পৃথিবী আটকে যেত কোন
একনির্দিষ্ট ভাবাপন্ন অবস্থায়,যার
প্রভাব পড়ত প্রাণীকুলের
জীবনচক্রে। হয়ত পৃথিবীর পরিবেশ
একটা নির্দিষ্ট অবস্থায় স্থির
হয়ে যেত কিছুসংখ্যক প্রাণীর চারণ
ভূমি হিসেবে।
পৃথিবীতে আবহাওয়ার এই পরিবর্তন
আছে বলেই বিলয়
হচ্ছে নানা প্রজাতির, আবার
দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন প্রাণ। সম্ভবত
দয়াময় এই চক্রটি বিধিত করেছেন
পৃথিবীর রূপ বৈচিত্রকে বিভিন্ন
প্রাণীর
জন্যে উপযোগী করে তোলার
প্রয়োজনে।
নিশ্চই এই বিবর্তন প্রকৃতি জগতে এক
মহা সুসংবাদ,হয়ত
ইহা পৃথিবীতে দয়াময়ের
সৃষ্টি বৈচিত্রের মহা নিয়ামক। হয়ত
এই ব্যবস্থাই প্রাণ সৃষ্টির এই
উদ্দীপনাকে ক্ষুদ্রত্বের
সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিয়েছে এক
বৃহৎ পরিসরে। আর সৃষ্ট
প্রাণগুলি আবাস
যোগ্যতা পেয়েছে নিজ নিজ সময়
সীমা পর্যন্ত। তাইতো হাজার
হাজার বছরের নিরলস পরিশ্রমের
ফলে প্রাপ্ত ধারনার সারমর্ম
দয়াময়ের কাছ
থেকে নেমে এসেছে চিন্তাশীল
মানব কুলের জন্যে প্রায় দেড়
হাজার বছর আগে।
জানলনা কেউ,বুঝলানা কেউ-শুধু
গুমরে কাঁদল কোরআনের বাণী।
আজো থামলনা সে কান্না।
রয়ে গেল আরো কত না জানা রহস্য
তারই পাতায়। সূরা আল
মুমিনুনে আল্লাহ্ বলছেন,
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﻓَﻮْﻗَﻜُﻢْ ﺳَﺒْﻊَ ﻃَﺮَﺍﺋِﻖَ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨَّﺎ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖِ
ﻏَﺎﻓِﻠِﻴﻦَ
২৩:১৭ আমি তোমাদের উপর
স্তরে স্তরে সাত মহাকাশ
সৃষ্টি করিয়াছি,আমি সৃষ্টি বিষয়ে অসতর্ক
নহি।’-প্রচলিত।
ﻭَﺗَﺮَﻯ ﺍﻟْﺠِﺒَﺎﻝَ ﺗَﺤْﺴَﺒُﻬَﺎ ﺟَﺎﻣِﺪَﺓً ﻭَﻫِﻲَ ﺗَﻤُﺮُّ ﻣَﺮَّ ﺍﻟﺴَّﺤَﺎﺏِ
ﺻُﻨْﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺃَﺗْﻘَﻦَ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺇِﻧَّﻪُ ﺧَﺒِﻴﺮٌ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻔْﻌَﻠُﻮﻥَ
27:88 তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল
মনে কর, অথচ সেদিন
এগুলো মেঘমালার মত চলমান হবে।
এটা আল্লাহর কারিগরী,
যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহত।
তোমরা যা কিছু করছ,
তিনি তা অবগত আছেন।(প্রচলিত
তরজমা)
সূধী পাঠক,আরো এক অভাবিত রহস্য
লুকিয়ে আছে চাঁদের বুকে।
চাঁদকে আজীবন দেখে এসেছেন
রূপলাবণ্যে অরূপা এক
লাবণ্যময়ী মহাজাগতিক
ললনা হিসেবে। শাস্বত এই
সুন্দরী ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে শুধু মাত্র
রূপের নেশায়
আমাদেরকে ভোলায়নি,
আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে তার
অপূর্ব মহিমায়। আজকের বিজ্ঞানের
চুলচেরা হিসাবের
কাছে ধরা পড়েছে এক
অশণি সংকেত। জানা গেছে,
চাঁদের প্রভাবময়
ঘূর্ণী যদি থেমে যায় কোন দিন
তবে সেই অগ্রগমন চ্রক্রের সময়কাল
হবে ৮১০০০ বছর। এই দীর্ঘ সময়কালের
জন্যে পৃথিবীর
তীর্যকতা যাবে বেড়ে ফলে অস্বাভাবিক
কম্পাঙ্কের সৃষ্টি হবে যা সমগ্র
বায়ুমণ্ডল ও আবহাওয়ার উপর অশুভ
প্রভাব ফেলবে,ডেকে আনবে ভয়ঙ্কর
পরিনতি-নিঃশেষ
হয়ে যাবে প্রাণীকুল,পৃথিবী হারাবে তার
আবাসযোগ্যতা।
প্রতিরোধ ব্যাবস্থাঃ-
আমরা আগেই জেনেছি,সৃষ্টিলগ্ন
থেকে প্রথিবী প্রাণের
আবাসযোগ্য হতে সময়
লেগেছে বহুকাল,দয়াময়
সৃষ্টি করেছেন তাঁর শ্রেষ্টতম
আবিষ্কার-প্রাণ। আর এই প্রাণের
নিরাপত্তা বিধানের জন্য
তাঁকে সমন্বয়
করতে হয়েছে আরো বহুকিছুর। এই
বিশ্বসংসার প্রাণের
জন্যে মোটেই নিরাপদ স্থান নয়।
মহাজাগতিক সকল বস্তই প্রান সৃষ্টির
বৈরী। আর সকল বৈরীতাকে দূর
করেই বিধাতা প্রাণ সঞ্চার
করেছেন পৃথিবীর বুকে। এই
প্রাণকে নিরাপদ জীবনে সংরক্ষন
করার লক্ষ্যে পৃথিবীর
চারিদিকে আবরণ দিলেন
বায়ুমণ্ডলের, যেন যুদ্ধ
ক্ষেত্রে সৈনিকের বর্ম। এই
বায়ুমণ্ডল হল
প্রাণীদেরকে বাঁচিয়ে রাখার এক
মহা সমন্বিত ব্যবস্থা।
বিজ্ঞানীদের
পরীক্ষা নীরিক্ষায়
দেখা গেছে,আমাদেরকে শক্তি দানকারী অতি দানব
সূর্যের বুকে অহরহ চলছে প্রচণ্ড
বিস্ফোরন। এক একটা বিস্ফোরন
প্রায় এক বিলিয়ন হাইড্রোজেন
বোমার সমান
শক্তিতে ছড়িয়ে পরে সূর্য-
করোনাতে অর্থাৎ সূর্যের প্রান্ত
সীমানা হতে অসীম শূণ্যতায়।
তেজস্ক্রীয় গ্যাস-
ধূলিকনা অবিশ্বাস্য উত্তাপ
সহকারে তীব্র
বেগে সমভাবে ধাবিত
হতে থাকে চতুর্দিকে। এই ধাবমান
গ্যাস-ধুলিকে বলা হয় সোলার উইণ্ড
বা সৌরবায়ু। সেকেণ্ডে প্রায় ৫০০
মাইল বেগে ধাবিত
হয়ে প্লুটো পর্যন্ত
অনায়াসে পৌঁছে যায়। একটি সৌর
বিস্ফোরনের দিন দশেকের মাথায়
এই সৌর বায়ু পৃথিবীর
বায়ুমণ্ডলে আঘাত হানে। এই
সৌরবায়ু কোন
উপায়ে যদি প্রাণী দেহের
সংস্পশে আসে তবে সেই দেহ
কোষের মুত্য বা বিকৃতি ঘটে-যার
ফলে দেহে জন্ম নেয় কেন্সার। অথচ
আমরা জানতেও পারিনা এই
মহা দূর্যোগ
থেকে বেঁচে আছি যুগযুগ ধরে। সেই
প্রাকৃতিক বর্ম অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল
মহাপ্রতাপে হজম করে নেয় সকল
ত্যজস্ক্রীয়তা। মানুষ একবারও
অনুধাবন করেনা কত
সহজে বেঁচে থাকে এই
মহাজাগতিক আক্রমন থেকে।
করুণাময়ের এই মহাদান
আমাদেরকে অবলীলায়
বাঁচিয়ে রাখে,আর সঙ্গে সঙ্গেই
মনে পড়ে
ﻓَﺒِﺄَﻱِّ ﺁﻟَﺎﺀ ﺭَﺑِّﻜُﻤَﺎ ﺗُﻜَﺬِّﺑَﺎﻥِ সূরা আর রহমান
৫৫:১৩ তোমরা উভয়ে করুণাময়ের
কোন কোন দানকে অস্বীকার করবে।
মহাশূন্যে প্রতি নিয়ত লক্ষ্য লক্ষ্য
উল্কাপাত ঘটে,তন্মধ্যে প্রায় ২০
লাখের মত পৃথিবীকে আঘাত
হানতে ছুটে আসে। এই উল্কাপাত
মাঝে মাঝে রাত্রি কালে আমাদের
দৃষ্টিতেও পড়ে। আমাদের হয়ত
জানা নেই যে,এ
উল্কা পৃথিবীতে আঘাত হানলে কত
বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। অথচ
আমাদের পৃথিবী আজও তেমন কোন
আঘাতের সম্মুখীন হয়নি।
কে রক্ষা করছেন এই বিপদ থেকে?
কি ভাবেইবা করে যাচ্ছেন এতবড়
মহতি কাজ? দয়াময় অত্যান্ত
সুকৌশলে তার
সৃষ্টিকে রক্ষাকরে যাচ্ছেন
আজন্মকাল। তাঁর দয়ার যেমন শেষ
নেই তেমনি বুদ্ধি ও কৌশলের কোন
ঘাটতি নেই। তিঁনি এই প্রাণময়
গ্রহের
চারিদিকে সৃষ্টি করে রেখেছেন
সুবিস্তৃত ও সুদীর্ঘ বায়ুমণ্ডল,যার
প্রতিরোধ্যতা অতি তীব্র।
সেকেণ্ডে প্রায় ৩০ মাইল
বেগে পতিত এই সকল উল্কা পিণ্ড
বায়ু কণার সাথে ঘর্ষণে উত্তপ্ত
হয়ে জ্বলে পুড়ে ভষ্মে পরিণত হয় আর
সে ভষ্ম ধুলি বালির মত
বাতাসে মিশে আপতিত হয় ভূ-
পৃষ্ঠে। একবার ভেবে দেখুন,আঘাত
হানতে আসে বিশাল বিশাল পাথর
খণ্ড,সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে নিজের অস্তিত্ব
হারিয়ে রূপান্তরিত হয় ধূলি কণায়।
কি অদ্ভুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা!
তাইতো মহান প্রভু দ্ব্যর্থহীন ভাষায়
ঘোষনা করেছেন,
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺟَﻌَﻞَ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻗَﺮَﺍﺭًﺍ ﻭَﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﺑِﻨَﺎﺀ
ﻭَﺻَﻮَّﺭَﻛُﻢْ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺻُﻮَﺭَﻛُﻢْ ﻭَﺭَﺯَﻗَﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕِ ﺫَﻟِﻜُﻢُ
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﻓَﺘَﺒَﺎﺭَﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺭَﺏُّ ﺍﻟْﻌَﻠَﻤِﻴﻦَ
সূরা গাফির আয়াত ৬৪
৪০:৬৪ আল্লাহ্
পৃথিবীকে করিয়াছেন তোমাদের
জন্য বাসস্থান,
আকাশকে করিয়াছেন ছাদ
এবং তোমাদের আকৃতি সুন্দর
করিয়াছেন
এবং তিনি তোমাদেরকে দান
করিয়াছেন পরিচ্ছন্ন রিযিক।
তিনি আল্লাহ্ তোমাদের পালন
কর্তা;বিশ্বজগতের পালন
কর্তা,আল্লাহ্ বরকত ময়।- ইসলামিক কল
সেন্টার।
৭৮:১২‘আমি তোমাদের
উর্দ্বে নির্মাণ
করিয়াছি সুদৃঢ়ভাবে বিন্যস্ত অনেক
স্তর।’
সূধী পাঠক,বায়ুমণ্ডলের প্রতিরোধ
ক্ষমতা এখানেই শেষ নয়,এর
রয়েছে হাজারো দিক,
হাজারো কাজ-ব্যস্ততার শেষ নেই।
আমাদের দৃষ্টিলভ্য নয়
বলে নিঃসীম
মহাশূণ্যকে আমরা একেবারে শূণ্য
বলে ধরে নিতে পারিনা।
সেখানে রয়েছে অতিসূক্ষ
ত্যাজস্ক্রীয় শক্তিকণা ও অতিক্ষুদ্র
বস্তুকণার সমাহার। এই ত্যাজস্ক্রীয়
কণাগুলি প্রতি নিয়ত ভূ-র্পষ্ঠের
দিকে ছুটে আসছে। কোন
উপায়ে যদি এ কণা আমাদের দেহ
কোষে আঘাত
করতে পারে তবে মুহুর্তেই সেই
কোষগুলি বিনষ্ট
হয়ে তৈরী করবে অসংখ্য কেন্সার
কোষ। ফলে জীবন হবে বিপর্যস্ত।
কিন্তু' না! আশ্চর্য হলেও
সত্য,প্রাণীকুল এহেন বিপদ
থেকে আজন্মকাল হতেই
বেঁচে আছে। এসবই দয়াময়ের ইচ্ছায়
বায়ুমণ্ডলের কৃপা। আজ বিজ্ঞান
জগতের সকল মেধা এক
সাথে বলছে মহাজাগতিক সকল
আঘাত
থেকে প্রাণীকুলকে বাঁচিয়ে রাখছে আমাদের
চারিপার্শ্বের বায়ু মণ্ডল।
আমরা এবার ভেবে দেখব এই
ত্যাজস্ক্রীয়
শক্তিকনাগুলো বায়ুমণ্ডল কতৃক
কি ভাবে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।
মহাজাগতিক এই ত্যাজস্ক্রীয়
রশ্মি ক্ষতিকর গুণাগুণের
সাথে পৃথিবীর চৌম্বক শক্তির ও
বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত নানা গ্যাসের
গুনাগুনের সাথে রয়েছে এক অদ্ভুত
সমন্বয়। মহাজাগতিক রশ্মির
মধ্যে রয়েছে নানারকম চার্জিত
কণা যেগুলো চৌম্বক
শক্তিতে প্রভাবিত হয়। এহেন
অবস্থায় কিছু কিছু কণা পৃথিবীর
উত্তর ও দক্ষিণ মেরু কর্তৃক আকৃষ্ট
হয়ে মেরুঅঞ্চলের দিকে চলে যায়।
ফলে নিরক্ষীয় ঘনবসতি অঞ্চল
ক্ষতিকর রশ্মির আক্রমন
থেকে বেঁচে যায়। আবার
যে কণাগুলো চৌম্বক প্রভাব মুক্ত
বা এই প্রভাবকে আগ্রাহ্য
করে চলে আসে তারা বায়ু মণ্ডলের
বিভিন্ন স্তরে শোষিত হয়,ফলে এই
মহাজাগতিক ত্যাজস্ক্রীয়তার হাত
থেকে রক্ষাপায়
হাজারো প্রাণীকুল।
আমাদের চারিদিকে এত সুরক্ষিত
প্রতিরক্ষ্যা বুহ্য যা বেধ
করে মহাজাগতিক ত্যাজস্ক্রীয়
রশ্মিগুলি পৃথিবীকে আঘাত
করতে পারেনা তার
মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য রকমের
গুণাগুন,ভাবলে মনে হবে যেন এই
প্রতিরক্ষা ছাদটিও জীবন্ত-প্রাণময়।
যেন নিজে নিজেই হিসেব
কষে প্রয়োজন মেটায়
তৎদ্বারা আচ্ছাদিত প্রাণী কুলের।
বিজ্ঞানীগন বহু
পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দেখেছেন
যে কথিত ত্যাজস্ক্রীয় রশ্মি সব
কটাই বর্জনীয় নয়।
কোনকোনটা সীমিত
পরিমানে জীবন রক্ষার জন্য এতটাই
প্রয়োজন যে তার
অভাবে প্রাণীকুল
বেঁচে থাকতে পারবেনা। আর
রহস্যটা এখানেই। জীবনরক্ষার
জন্যে অতীব প্রয়োজনীয়
রশ্মিগুলোকে প্রয়োজন মোতাবেক
পৃথিবীর বুকে আসার সুযোগ
করে দেয় আমাদের এই বায়ুমণ্ডল। এই
যে প্রয়োজন মত প্রয়োজনীয়
পরিমানে আসতে দেওয়ার হিসেব,
কে করে দেয় তা? ইহা আর কিছুই নয়,
সেই মহা মহিমের বিধিত ব্যাবস্থা;
এই ব্যবস্থার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল
বায়ুমণ্ডলে ওজন স্তর। সূর্য
থেকে আসা অতিবেগুনী রশ্মি বায়ুমণ্ডলের
এই স্তর কর্তক শোষিত হয়। তাছাড়াও
ওজন স্তর সকল দৃশ্যমান আলো শোষণ
করে এবং তা প্রয়োজন মত আমাদের
পৃথিবীতে আসতে দেয়। তার
আরেকটি বিশেষ কাজ হল বিভিন্ন
দৈর্ঘের বেতার
তরঙ্গ,নিকটবর্তী অতিবেগুণী রশ্মি,অবলোহিত
রশ্মি ইত্যাদিকে নির্দিষ্ট মাত্রায়
অর্থাৎ প্রাণীকুলের প্রয়োজন মত
প্রবেশাধিকার দেয়।
আমরা জানি বায়ুমণ্ডলে রয়েছে ভিবিন্ন
স্তর ভেদ। একেক স্তরে এক এক
প্রকারের রশ্মি এসে বিশোষিত হয়।
আশ্চর্যজনক ব্যপার হল অবলোহিত
বা ইনফ্রারেড রশ্মি বিশোষন। এ
রশ্মিটি একদিকে জীবন
রক্ষাকারী অপরদিকে প্রাণঘাতী,তাই
এর পরিমান নিরূপণ এক কঠিন বিষয়।
অথচ এই কঠিন
হিসারে কাজটি দয়াময়ের ইচ্ছায়
আমাদের বায়ুমণ্ডল ছাকুনির মত
ছেঁকে প্রয়োজনীয়
পরিমানে প্রবেশাধিকার দেয়;
ফলে জীবন রক্ষাপায় সূর্য
থেকে আগত অত্যান্ত লয়কারক রশ্মির
উত্তপ্ত প্রভাব থেকে। এই অবলোহিত
রশ্মির অভাবে যাবতীয় প্রাণ ও
ভূপৃষ্ঠ জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যেত। এ
ছাড়াও বায়ু মণ্ডলের
আরেকটি প্রধান কাজ হল সূর্যালোক
থেকে প্রাপ্ত ও পৃথিবী কর্তৃক
বিকিরীত তাপের কিয়দংশ শোষণ
করে ধরে রাখা।
যাতে করে রাত্রিকালীন
সময়ে ভূপৃষ্ঠ একেবারে শীতল
না হয়ে পড়ে,যাতে প্রাণীকূল
বিপদগ্রস্ত না হয়। আর এভাবেই মহান
আল্লাহ্র সৃষ্ট এই নিয়ামক গুলি প্রায়
সাড়ে তিনশত কোটি বছর
ধরে ক্রমান্বয়ে সৃষ্ট সেই অণুজীব
থেকে শুরু করে আজকের
মানুষকে পর্যন্ত
দিয়ে যাচ্ছে সুরক্ষিত জীবন
ব্যাবস্থা।
জীবনের প্রধান শর্ত হল অক্সিজেন।
আমরা জেনেছি যে সুপারনোভা বিস্ফোরন
থেকে সৃষ্ট মহাজাগতিক বস্তু'
সমুহে সৃষ্টি লগ্নে এই অক্সিজেন
গ্যাস জন্ম লাভ করেনি।
মহাবিস্ফোরণ থেকে সেই
নিহারীকাটি ছিল হাইড্রোজেন
ও সামান্য পরিমান হিলিয়ামের
সমাহার,সময়ের
বিবর্তনে হাইড্রোজেন ও
হিলিয়াম থেকে উৎপন্ন হয় কার্বন
তার পর দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়
সৃষ্টি হতে থাকে ভারী মৌল
ম্যাগনেশিয়াম, লৌহ। তার পর
একসময় সেই ঘূর্ণায়মান নীহারিকার
মধ্যে ঘটে বিস্ফোরণ,
টুকরো টুকরো হয়ে সৃষ্টি করে অসংখ্য
ছায়া পথ,যার মধ্যে বহু পথ
পরিক্রমায় সৃষ্টি হয় মহাজাগতিক
বস্তু তথা গ্রহ নক্ষত্র। আমাদের
পৃথিবী তাদেরই একটা ক্ষুদ্র অংশ।
তার পর শুরু হয় গ্রহ নক্ষত্রের নতুন জীবন।
আর এই পরিক্রমায়
এসে পৃথিবী তৈরী হতে শুরু
করে জীবন ধারনের জন্যে। আর সেই
লক্ষেই সৃাষ্ট হয় বায়ুমণ্ডলীয়
আচ্ছাদন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল
জীবন লালনকারী অক্সিজেন
আদি বায়ু মণ্ডলে সৃষ্টি হয়নি।
বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষায়
জানা গেছে পৃথিবী যখন উত্তপ্ত
গলিত অবস্থায় ছিল তখন এই
অক্সিজেন পৃথিবীর
অভ্যন্তরে জমা ছিল পরবর্তীতে বুধবুধ
আকারে বেড়িয়ে এসে বায়ু
মণ্ডলে মিশ্রিত
হয়,তাছাড়া আগ্নেয়গিরির
অগ্নুৎপাতের সময় কার্বনডাইঅক্সাইড
সহ নানাবিদ অক্সিজেন যৌগ
বায়ুমণ্ডলে বিমুক্ত হয়। নানাবিদ
জৈব জ্বালানী,উদ্ভিদ
ইত্যাদি ভস্মীভূত
হয়ে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন সংযুক্ত
হয়,ফলে আমাদের এই বায়ুমণ্ডল
অক্সিজেনসেবীদের জণ্যে উপযুক্ত
হয়ে উঠে। তাইতো পিটার ওয়েন
তার প্লানেট আর্থ গ্রন্থে' মন্তব্য
করেন‘ ÔThe Earth was not a readymade
home for creature like us. It was to be
modified by earlier forms of life before it
was suitable.’,পৃথিবী আমাদের
জন্যে সদা প্রস্তুত হওয়া আবাসস্থল
ছিলনা,ইহাকে তৈরী করা হয়েছে প্রাণীর
জীবন যাত্রার উপযোগী করে।
তাইতো মহান প্রভু বলেছেন,
ﻟَﻢْ ﺗَﺮَ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺳَﺨَّﺮَ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﺍﻟْﻔُﻠْﻚَ ﺗَﺠْﺮِﻱ
ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﺤْﺮِﺃَ ﺑِﺄَﻣْﺮِﻩِ ﻭَﻳُﻤْﺴِﻚُ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﺃَﻥ ﺗَﻘَﻊَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ
ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺈِﺫْﻧِﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﻟَﺮَﺅُﻭﻑٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ
২২:৬৫ তুমি কি লক্ষ্য কর
না যে,আল্লাহ্ তোমাদের
কল্যাণে নিয়োজিত করিয়াছেন
পৃথিবীতে যাহাকিছু
আছে তৎসমুহকে,তাঁহারই
নির্দেশে সমুদ্রে জাহাজ
চলে,পৃথিবী রক্ষাপায়
মহাজাগতিক বস' সমুহের আঘাত
হইতে। নিশ্চই আল্লাহ মানুষের
প্রতি অত্যান্ত দয়ালূ ও করুণাময়।’
৪০:৬৪‘ তিঁনিই মহান
আল্লাহ,যিঁনি পৃথিবীকে করিয়াছেন
আবাসযোগ্য স্থ'ল।
সূধীপাঠক আমাদের যে বায়ু স্তর এত
শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়
নিয়োজিত থেকে এক অলৌকিক
নিশ্চয়তায় দিনের পর দিন
রক্ষা করে যাচ্ছে প্রাণীকুলের
জীবন
ব্যাবস্থা,তাকে আমরা কি করে বলি,নিতান্ত
শূণ্যতায় নিছক গ্যাসীয় স্তর?
তাইতো দয়াময় বলেছেন, ৫২:২৫ শপথ
সেই সমুন্নত ছাদের।’ ৭৮:১২
আমি তোমাদের উর্দ্বে নির্মাণ
করিয়াছি সুদৃঢ়ভাবে বিন্যস্ত সপ্ত
স্তর।’ ৭৭:২৩ আমি সুনির্দিষ্ট
করিয়া দিলাম পরিমাপ,আমি কত
সুনিপুন পরিমাপ বিধান কর্তা।
৬:৯৭
ইহা মহা প্রতাপশালী মহাজ্ঞানীর
পক্ষ হইতে নির্ধারিত পরিমাপ।
১০:০১ (ওহে মানুষ) আকাশ মণ্ডলী ও
পৃথিবীতে যাহাকিছু আছে তাহার
প্রতি লক্ষ্য কর।
৩১:২০ তোমরা কি দেখনা আকাশ
মণ্ডলী ও পৃথিবীতে যাহাকিছু
আছে সমস্তই তিনি তোমাদের
কল্যাণের জন্য নিয়োজিত
করিয়াছেএবং তোমাদের
প্রতি তাঁহার প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য
অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিয়াছেন।
৮২:৭ যিনি তোমাকে সৃজন
করিয়াছেন ,সমন্বিত
করিয়াছেন,এবং সামঞ্জস্যের
সাথে পরিমিত করিয়াছেন।’
৮২:৮ অতঃপর আপন
ইচ্ছানুযায়ী সংগঠিত ও রূপায়িত
করিয়াছেন।’ ৪৫:১৩ অতঃপর
নভোমণ্ডল ও পৃথিবীতে যাহাকিছু
আছে তৎসমুহকে তিনি স্বীয় পক্ষ
হইতে তোমাদের আয়ত্তাধীন
করিয়া দিয়াছেন।
নিঃসন্দেহে ইহাতে গভীর
চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের
জন্যে রহিয়াছে শিক্ষণীয়
নিদর্শনাবলী ও নির্দেশ।
ভারসাম্য -
আমরা জেনেছি মহাবিস্ফোরণ
থেকে সৃষ্ট
নিহারীকা সুপারনোভা বিষ্ফোরণের
মাধ্যামে টুকরো টুকরো হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল
মহাজগতিক বস্তুসমুহ
এবং তারা অকল্পনীয়
গতিতে ধাবিত
হয়ে চলছে অজানার পথে। এ সময়
আয়নিত হাইড্রোজেন
নানা ক্রিয়া বিক্রিয়ার মধ্য
দিয়ে তৈরী হয় হাইড্রোজেন অণু
যা মূলতঃ গ্যাসীয় মেঘের
সৃষ্টি করে;তারপর সৃষ্টি হয় অভিকর্ষ
বল। এই অভিকর্ষ বলের
প্রভাবে কেন্দ্রমুখী মহাটান শুরু হয়
ফলে মেঘমালার বাহিরের
অংশে দেখা দেয় কেন্দ্রমুখী পতন।
এর ফলে মহাজাগতিক
বস্তুগুলি হয়ে পড়ে ভারসাম্যহীন।
অভিকর্ষ বলের
প্রভাবে কেন্দ্রমুখী সঙ্কোচনে কেন্দ্রভাগে সৃষ্টি হয়
প্রচণ্ড উত্তাপ। এই সঙ্কোচন ও
সঙ্কোচন জনিত উত্তাপে অভিকর্ষ
বলের
বিরুদ্ধে কেন্দ্রহতে বহির্মূখী প্রসার
ঘটে এবং উত্তপ্ত কেন্দ্রে সৃষ্টি হয়
পারমানবিক বিস্ফোরন। এই
বিষ্ফোরনই আনয়ন করে ভারসাম্য। আর
তখনি জাগতিক বস্তুগুলি নবজন্ম লাভ
করে নক্ষত্র বা ‘প্রটোষ্টার’ হয়ে।
সেই গ্যাসীয় মেঘ
হতে প্রটোষ্টারে পৌঁছুতে সময়
লাগে কয়েক মিলিয়ন বছর।
অভিকর্ষের
প্রভাবে প্রটোষ্টারে চলতে থাকে সঙ্কোচন
ও প্রসারণ যার ফলে পারমানবিক
শক্তির যোগান
চলতে থাকে,যা প্রটোষ্টারকে অভিকর্ষের
বিরুদ্ধে ভারসাম্যের
সাথে টিকে থাকতে সাহায্য
করে। মহাকালের অভিযাত্রায়
একদিন এই প্রটোষ্টার
মহাকাশে মহাকর্ষের
আবেশে নিজের স্থান করে নেয়
একটি জীবন্ত নক্ষত্র হয়ে।
দয়াময় এই ভারসাম্যের আরো বহু
নিদর্শন রেখেছেন তার সৃষ্টির
মধ্যে। তিনি এই সুন্দর
পৃথিবীকে আকৃতি দিয়াছেন এক
নির্দিষ্ট
পরিমাপে যাতে করে তার আদরের
সৃষ্টি প্রাণীকুল স্বাচ্ছন্দে জীবন
যাপন করতে পারে। আর সেই
সুনির্দিষ্ট পরিমাপের কারণেই
সৃষ্টি জগতে আজও
দেখা দেয়নি কোন বিপর্যয়।
সূধী পাঠক আসুন একবার
ভেবে দেখি এই পরিমাপের
হেরফের
হলে কি হতে পারতো তার ফলাফল।
ধরুন যদি আমাদের পৃথিবীটা ভর ও
আকৃতিতে চাঁদের সমান হয়ে যেত
তবে কি হত তার ফল? নিয়ম
অনুযায়ী ভরের অনুপাতে মধ্যাকষন
শক্তি বর্তমানের ছয়ভাগের একভাগ
হয়ে যেত ফলে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ
যেত কমে যার
ফলশ্রুতিতে বাস্পীভবন
তাপমাত্রা হত বর্তমানের
চেয়ে অনেক কম,পৃথিবীর সমগ্র জল
যেত শুকিয়ে। পৃথিবীর তাপ
নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা যেত হারিয়ে।
অবলোহিত রশ্মির প্রভাবে পৃথিবীর
তাপমাত্রা হয়ে যেত
অস্বাভাবিক। জীব জগৎ
জ্বলে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত
অবলীলায়। বিপরীত ভাবে পৃথিবীর
আয়তন যদি তার বর্তমান ব্যসের
দ্বিগুন হত তবে তার বর্ধিত
কলেবরের কারণে তার মধ্যাকর্ষন হত
দিগুণ। বায়ুমণ্ডলের চাপ যেত
বেড়ে ফলে বাস্পীভবন
তাপমাত্রা হত বেশী,বাতাসের
আদ্রতা কমে গিয়ে অধিকাংশ
অঞ্চল হয়ে পড়ত শীতপ্রধান
যা জীবকুলের জন্যে বৈরী।
মধ্যাকর্ষন শক্তি বৃদ্ধির
ফলে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা হ্রাস
পেত,তাতে আমাদের
পৃথিবী মহাজাগতিক
রশ্মি,উল্কাপাত ইত্যাদির আক্রমন
থেকে বাঁচতে পারতোনা,প্রাণীকুলের
হত অনিবার্য ধ্বংস।
সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের
বেলায়ও এমনিতর অবস্থা। পৃথিবীর
সাথে সূর্যের বর্তমান দূরত্ব
যদি দিগুন হয়ে যায়
তবে পৃথিবী সূর্য
থেকে বর্তমানে প্রাপ্ত তাপের
চারভাগের এক ভাগ
পেত,ফলে পৃথিবী হয়ে যেত
শীতল,তা ছাড়া পৃথিবীর কক্ষ
পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানের
দিগুন হয়ে যেত ফলে সৌর বৎসরের
পরিমাপ হত বর্তমানের চারগুণ।
তাতে শীতকালও হত বর্তমানের
চারগুন,সমগ্র জীবজগৎ জামাটবদ্দ
হয়ে ধীরে ধীরে পৃথিবীর বুক
থেকে হারিয়ে যেত।
আমরা যদি পৃথিবীর
চারিদিকে অপরাপর
গ্রহগুলিকে বিবেচনা করি তবে উপরের
আলোচনার চাক্ষুস প্রমাণ
পেয়ে যাব। তাইতো রিক গোর
বলেছেন‘ We are very smart, we
humans,but are we intelligent enough to
absorb the lesson our grand glimpses of
our sister planets have given us? ’
আমরা সুচতুর মানুষ
কি বুঝতে পারি যা আমাদের
প্রতিবেশী গ্রগগুলি শিখাতে চায়।
তাইতো সূরা ফুরকান আয়াত ২ এ
মহান প্রভু বলেছেন,
ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻟَﻪُ ﻣُﻠْﻚُ ﺍﻟﺴَّﻤَﻮَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺘَّﺨِﺬْ ﻭَﻟَﺪًﺍ ﻭَﻟَﻢْ
ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻪُ ﺷَﺮِﻳﻚٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤُﻠْﻚِ ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻓَﻘَﺪَّﺭَﻩُ
ﺗَﻘْﺪِﻳﺮًﺍ
২৫:২ তিনিই সেই
মহাস্বত্ত্বা যাঁহার রাজত্ব
নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল; না আছে তাঁহার
কোন পুত্র না কোন অংশীদার।
তিনিই সমস্ত বস' সৃষ্টি করিয়াছেন
সঠিক পরিমাপে এবং যথাযথ
আকৃতিতে।’
ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﺗَﺤْﻤِﻞُ ﻛُﻞُّ ﺃُﻧﺜَﻰ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﻐِﻴﺾُ ﺍﻷَﺭْﺣَﺎﻡُ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺰْﺩَﺍﺩُ
ﻭَﻛُﻞُّ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺷَﻲْﺀٍ ﻋِﻨﺪَﻩُ ﺑِﻤِﻘْﺪَﺍﺭٍ
সূরা রাদ ১৩:৮ আল্লাহ্ জানেন
প্রত্যেক নারী কি বহন
করে এবং প্রতিটি মাতৃজরায়ু
কি নির্গত করে। আল্লাহ্র
রাজত্বে প্রত্যেকটি বস্তুই
রহিয়াছে সঠিক অনুপাতে।’-
এখানে ﺑِﻤِﻘْﺪَﺍﺭٍ শব্দটির অর্থ হল সঠিক
অনুপাতে।
ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﺳَﺒْﻊَ ﺳَﻤَﻮَﺍﺕٍ ﻃِﺒَﺎﻗًﺎ ﻣَّﺎ ﺗَﺮَﻯ ﻓِﻲ ﺧَﻠْﻖِ
ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻣِﻦ ﺗَﻔَﺎﻭُﺕٍ ﻓَﺎﺭْﺟِﻊِ ﺍﻟْﺒَﺼَﺮَ ﻫَﻞْ ﺗَﺮَﻯ ﻣِﻦ ﻓُﻄُﻮﺭٍ
সূরা আল মুল্ক
৬৭:৩‘আল্লাহ্ সপ্ত আকাশ
স্তরে স্তরে সৃষ্টি করিয়াছেন,
তুমি করুণাময়ের সৃষ্টিতে কোন
অপূর্ণতা দেখিতে পাইবেনা;
তাকিয়ে দেখ কোন
অসঙ্গতি দেখিতে পাওকি
আমাদের এই পৃথিবীতে জড় ও
জীবের আশ্চর্যতম সুষম বিকাশ
দেখে ফ্রাঙ্ক এ্যালেন বলেছেন
সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব,আকার ও
কক্ষপথের গতিবেগ এমনই
যে,পৃথিবী প্রাণীকে রক্ষা করে চলতে পারে এবং সেই
সঙ্গে যেন মানুষ জাতির আজকের
মত শারীরিক,বুদ্ধিবৃত্তি সক্রান্ত ও
আধ্যাতিক জীবন উপভোগ
করতে পারে-পৃথিবীতে তারও
ব্যবস্থা রয়েছে।’
মহান দয়াময় আকাশের চাঁদকে শুধু
সৌন্দর্য বিধানের
জন্যে সৃষ্টি করেননি,আবার এও নয়
যে,
আপনা আপনি সৃষ্টি হয়ে পৃথিবীর
পাশে ঝুলে আছে, অনেক হিসেব
নিকেশের ফলশ্রুতিতেই
এটি পৃথিবীর পাশে স্থান
পেয়েছে; এই মহাকাশীয়
বস্তুটি আমাদের পরিবেশ রক্ষায়
আরেকটি বিশেষ নিয়ামক। এই
নিস্প্রাণ বস্তটির মহাকর্ষ প্রভাব
পৃথিবীর বুকে না পড়লে জোঁয়ার
ভাঁটার মত অতীব প্রয়োজনীয়
ঘটনা ঘটতোনা। তারই
প্রভাবে সমুদ্রের জল সচল। এখন এই
চাঁদের আয়তন যদি বর্তমারে দিগুণ
হয় বা দূরত্ব অর্ধেক
কমে আসে তবে কি হতে পারে একবার
ভেবে দেখেছেন কি? এ অবস্থায়
পৃথিবীর বুকে চাঁদের মহাকর্ষ প্রভাব
বর্তমানের দ্বিগুণ
হয়ে যাবে ফলে জোঁয়ারের
পানি অসম্ভব পরিমান
ফুলে ফেঁপে লবনাক্ত
পানিতে ছেয়ে যাবে অধিকাংশ
সমতল ভুমি। মানুষের জীবন
হয়ে পড়বে বিপর্যস্ত। প্রাকৃতিক
দূর্যোগের প্রকোপ যাবে বেড়ে।
এখানেও দয়াময়ের সেই
ভারসাম্যতারই হিসেব।
তাইতো এ্যালেন মাইক রবার্ট তার
‘Sky & Telescope
গ্রন্থে লিখেছেন,ÔIt is as if the
universe where deleverately designed for
our benifit.’ আমাদের
সুবিদার্থে অজ্ঞাত কেউ যেন এই
মহাবিশ্বকে সুচিন্তিত
ভাবে সাজিয়ে দিয়েছেন।
হয়তোবা কোরআনের এই কথাটাই
বিজ্ঞানী তার ভাষায়
বলতে চেয়েছেন-
৬৭:৩ তুমি করুণাময়ের সৃষ্টিতে কোন
অপূর্ণতা দেথিতে পাইবেনা;
তাকিয়ে দেখ কোন
অসঙ্গতি দেখিতে পাওকি।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য দয়াময়ের
সৃষ্টিতে আরেক নিয়ামত। আমাদের
চারিপার্শের
প্রকৃতিতে হাজারো সমন্বয়ের
মাধ্যামে যে পরিবেশ
ব্যবস্থা তৈরী হয়েছে তা এই
পরিবেশে অবস্থানরতদের
মাধ্যামেই ভারসাম্য
রক্ষা হয়ে থাকে,এও দয়াময়ের
আরেক অভাবিত কৌশল।
আমরা জানি উদ্ভিদের
বংশবিস্তারের লক্ষ্যে ফুলে ফুল
যে পরাগায়ন
ঘটে তাতে সহযোগীতা করে বায়ু,কীটপতঙ্গ,পাখি ও
পানি। পরিণত পুরুষ ফুলের পুংকেশর
থেকে লক্ষকোটি পরাগ রেণু
বাতাসের দোলায়
উড়তে উড়তে স্ত্রী ফুলের
গর্ভকেশরে গিয়ে পড়ে। কীটপতঙ্গ ও
পাখি ফুলে ফুলে বিচরণ করেও এই
কাজে সহায়তা করে।
এটি একটি অতি জটীল
প্রক্রিয়া অথচ কত সহজে অবলীলায়
ঘঠে যাচ্ছে প্রকৃতির বুকে। সকলের
সম্মিলিত সহযোগিতা যার যার
প্রয়োজন
মিটছে এবং টিকে থাকছে যার
যার মতকরে। এই টিকে থাকার
মধ্যে রয়েছে প্রকৃতির অদ্ভুত সব নিয়ম
কানুন যা অতীব জটীল আবার
পুরো ব্যবস্থাটি একটা অনিশ্চিত
ব্যবস্থা যা কিনা সামান্য
ব্যতিক্রমেই প্রকৃতি ধ্বংসের
মুখোমুখি হয়ে যেতে পারে,অথচ
কোটি কোটি বছর ধরে কত
সুনিশ্চয়তার
মধ্যেইনা টিকে আছে আমাদের এই
প্রকৃতি। সুক্ষাতিসুক্ষ ফুলরেনুর
পরিস্ফূটন প্রক্রিয়ায় কত
হাজারো সমন্বয়। একটা পরিপক্ষ
রেণুর ছোঁয়ায় গর্ভাশয়ে জন্মলাভ
করে একটা নতুন জীবন যার
মধ্যে ঘুমিয়ে থাকে একটা উদ্ভিদের
পরবর্তী প্রজন্ম। প্রকৃতি কত অদ্ভূত
উপায়ে তাকে লালন করে,আবার
উপযুক্ত
পরিবেশে দেহকলেবরে বৃদ্ধির
মাধ্যামে সৃষ্টি করে পরবর্তী বংশধর।
সূধী পাঠক একটা মজার বিষয় লক্ষ্য
করে দেখবেন কি? বাতাসের
দোলায় দোল খেয়ে হাজার লক্ষ
নানা প্রজাতীর ফুলের
গর্ভকেশরে গিয়ে পড়ে অসংখ্য
পরাগ রেনু, কিন্তু
উপযুক্তটি না হলে পরিস্ফূটন ঘটেনা।
নিশিক্ত করণ কাজটি শুধুমাত্র তখনই
ঘটে যখন সম জাতীয় রেনু
এসে আঘাত করে,ভিন জাতীয় এমন
কি খুব কাছাকাছি প্রজাতির কোন
রেনুকেও গর্ভমুণ্ড প্রবেশাধিকার
দেয়না। কত জটীল কত অদ্ভুত হিসেব।
এতটুকু ভুল হলেও যেখানে আম
গাছে কাঠাল ফলত, তা না হয়ে কত
সুক্ষতার সাথে লক্ষ লক্ষ
প্রজাতি তাদের নিজ
বংশধারাকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যতের
দিকে। তাইতো কানের পর্দায় বার
বার আঘাত করে সেই বাণী-
ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﺳَﺒْﻊَ ﺳَﻤَﻮَﺍﺕٍ ﻃِﺒَﺎﻗًﺎ ﻣَّﺎ ﺗَﺮَﻯ ﻓِﻲ ﺧَﻠْﻖِ
ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﻣِﻦ ﺗَﻔَﺎﻭُﺕٍ ﻓَﺎﺭْﺟِﻊِ ﺍﻟْﺒَﺼَﺮَ ﻫَﻞْ ﺗَﺮَﻯ ﻣِﻦ ﻓُﻄُﻮﺭٍ
সূরা আল মুল্ক
৬৭:৩ তিঁনি সপ্ত আকাশ
স্তরে স্তরে সৃষ্টি করিয়াছেন,রহমানের
সৃষ্টিতে অনুপাত ও সামঞ্জস্যের
ব্যতিক্রম দেখিতে পাইবেনা।
৮২:৭ যিনি তোমাকে সৃজন
করিয়াছেন ,সমন্বিত
করিয়াছেন,এবং সামঞ্জস্যের
সাথে পরিমিত করিয়াছেন।’
সূধী পাঠক যেদিকে তাকাবেন
সেদিকেই সমন্বিত ব্যবস্থা;
কোথাও এটুকু বিশৃঙ্খলা নেই,সবই
যেন
আপনা থেকে তৈরী হয়ে বিকশিত
হয়ে আছে আপন মহিমায়।
‘তিঁনি সপ্ত আকাশ
স্তরে স্তরে সৃষ্টি করিয়াছেন,রহমানের
সৃষ্টিতে অনুপাত ও সামঞ্জস্যের
ব্যতিক্রম দেখিতে পাইবেনা।’
-আবদুল আজিজ খন্দকার-
বিষয়: বিবিধ
১২৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন