গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা by- আফরোজা হাসান

লিখেছেন লিখেছেন মারুফ_রুসাফি ১১ মার্চ, ২০১৪, ০৪:৩৪:৫৬ বিকাল

গল্পে গল্পে শিশুদের কুরআন শেখা

by- আফরোজা হাসান

দুহাতে খেলনা গাড়ি বুকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলের

দিকে কিছুক্ষণ

তাকিয়ে থেকে রান্নাঘরে রওনা করলো তানিয়া।

প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে কিন্তু আট বছর

বয়সি বাচ্চা ছেলের উপর রাগ

দেখানো অর্থহীন। নতুন খেলনা কেনার

পর পুরনো খেলনা আর ধরে না আয়াত।

তাই পাশের বাসার

ভাবীকে বলেছিলো এসে কিছু

খেলনা নিয়ে যেতে উনার বাচ্চাদের

জন্য। ছোট চাকরি করেন বিধায় সংসার

সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়

পরিবারটিকে। বাচ্চাদের জন্য

খেলনা কেনা তেমন করে হয়ে উঠে না।

একগাদা খেলনা স্টোররুমে পড়ে ছিল

তাই এসে নিয়ে যেতে বলেছিল তানিয়া।

আয়াতকে আগেই সেটা জানিয়েছিল

কিন্তু যেই বাচ্চাদেরকে নিয়ে পাশের

বাসায় ভাবী এলেন

অমনি বেঁকে বসলো আয়াত। কিছুতেই

দেবে না তার খেলনা। ঐ বাচ্চারাও শুরু

করলো কান্না। শেষ মেশ অনেক

বুঝিয়ে পছন্দের কিছু খেলনা বের

করে রেখে বাকীগুলো দেয়ার জন্য

আয়াতকে রাজী করে উভয় দিক সামাল

দিয়েছে তানিয়া।

বাচ্চারা মাঝে মাঝে এত

বেশি অপ্রস্তুত করে। উফফ...!

আযান শুনে মনের সব

বিরক্তি ঝেড়ে ফেলে ছেলেকে ডেকে নামাজ

আদায় করে নিলো তানিয়া। নামাজ

সেরেই নিজের কাজে ছুট দেয় আয়াত।

ছুট দেবার আগেই

ধরে ফেললো তানিয়া ছেলেকে। আদর

করে কাছে বসিয়ে বলল,

বাবা তোমাকে না সেদিন বুঝিয়ে বললাম

নামাজের সময় নড়াচড়া করতে নেই,

এদিক সেদিক তাকাতে নেই। কিন্তু

তুমি তো আজও নামাজের মধ্যে অনেক

নড়াচড়া করেছো।

আয়াত অপরাধী কণ্ঠে বলল, আই এম

সরি আম্মু। আর এমন হবে না দেখো।

তানিয়া ছেলেকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বলল,

আম্মুকে এখন সূরা মাউন তেলাওয়াত

করে শোনাবে বাবা?

সাথে সাথেই সূরা মাউন তিলাওয়াত

করে শোনালো আয়াত।

তানিয়া ছেলেকে আদর করে হেসে বলল,

মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর

হয়েছে তোমার তিলাওয়াত।

সূরা মাউনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন

আমাদেরকে কি বলেছেন জানো বাবা?

আয়াত আগ্রহ ভরা কণ্ঠে বলল,

কি বলেছে আম্মু?

আল্লাহ বলেছেন, আমাদেরকে খুব

সুন্দর করে নামাজ পড়তে হবে।

নামাজের সময় নড়াচড়া করা যাবে না,

এদিক সেদিক তাকানো যাবে না।

তুমি যেমন বাবার সাথে নামাজ পড়ার

সময় খুব সুন্দর করে নামাজ পড়ো,

যাতে বাবা তোমাকে গুড বয় বলেন।

তেমনটিও করা যাবে না। বাবা, আম্মু

বা অন্যকাউকে দেখানোর জন্য

না তোমাকে সুন্দর করে নামাজ

পড়তে হবে কারণ আল্লাহ

তোমাকে দেখছেন। তোমাকে গুড বয়

হতে হবে আল্লাহর কাছে।

বুঝতে পেরেছো বাবা?

জ্বি আম্মু আমি বুঝতে পেরেছি।

আমি এখন থেকে আল্লাহর কাছে গুড

বয় হবো।

ইনশাআলাহ। সূরা মাউনে আল্লাহ

আরো কি বলেছেন জানো?

কি বলেছেন আম্মু?

আল্লাহ বলেছেন, আমাদেরকে গরীব-

দুঃখী-অভাবী ও অসহায়দেরকে সাহায্য

করতে হবে। যাদের খাবার নেই

তাদেরকে খাবার দিয়ে সাহায্য

করতে হবে, যাদের পোশাক নেই

তাদেরকে পোশাক দিয়ে সাহায্য

করতে হবে। যাদের খেলনা নেই

তাদেরকে খেলনা দিয়ে সাহায্য

করতে হবে।

সাথে সাথে আম্মুর দিকে বড় বড় চোখ

করে তাকালো আয়াত। সূক্ষ্ম অপরাধ

বোধের ছায়া ভেসে উঠলো চেহারাতে।

তানিয়া সেটা দেখেও না দেখার ভান

করে বলল,

আরো কি করতে হবে জানো সোনামণি?

নিজের সাথে সাথে অন্যকেও উৎসাহিত

করতে হবে গরীব-দুঃখী-অভাবী ও

অসহায়দেরকে সাহায্য করতে। যেমন

ধরো আম্মু কাউকে তোমার

পুরনো পোশাক বা খেলনা দিতে চাইলাম।

তখন তোমাকেও হাসি মুখে আনন্দের

সাথে আম্মুকে সেসব দিতে উৎসাহিত

করতে হবে।

আয়াত চিন্তিত কণ্ঠে বলল, আল্লাহ

সত্যি এমন বলেছেন আম্মু?

হ্যা বাবা আল্লাহ সত্যি এমন বলেছেন।

আল্লাহ আর কি কি বলেছেন আম্মু?

আল্লাহ বলেছেন

প্রতিবেশীদেরকে সাহায্য করতে।

প্রতিবেশী হচ্ছে তারা যারা আমাদের

আশেপাশে থাকে। যেমন ধরো, আমাদের

পাশের বাসায় তাসনিয়া আর তাহসান।

ওরা হচ্ছে তোমার প্রতিবেশী।

ওরা যদি কখনো তোমার কাছে কিছু চায়

বা ওদের কিছু প্রয়োজন হয়

তাহলে তোমাকে ওদেরকে সেটা দিতে হবে।

কেন দিতে হবে? কারণ আল্লাহ

দিতে বলেছেন। আর তুমি যদি আল্লাহর

কথা মেনে চলো তাহলে কি হবে বলো তো?

আয়াত বলল, তাহলে মারা যাবার পর

আমরা যখন নতুন

আরেকটা জগতে যাবো যাবো তখন

আল্লাহ আমাকে জান্নাত দিবেন।

যেখানে আমার

যা ইচ্ছে আমি করতে পারবো।

যা চাইবো তাই পাবো।

তানিয়া হেসে বলল, একদম ঠিক বলেছো।

এবার আম্মুর একটা প্রশ্নের জবাব

দাও। এই যে তুমি আমাকে সবসময়

বলো তুমি বিজ্ঞানী হতে চাও। এখন

বিজ্ঞানী হবার জন্য তোমাকে অনেক

অনেক পড়াশোনা করতে হবে। কিন্তু

তুমি যদি একটুও পড়াশোনা না করে শুধু

মুখেই বলো আমি বিজ্ঞানী হবো,

আমি বিজ্ঞানী হবো। তাহলে কি আম্মু

তোমার কথা বিশ্বাস করবো?

পড়াশোনা না করলে তুমি আমার

কথা বিশ্বাস করবে কেন?

সেটাই তো! ঠিক তেমনি এই

যে তুমি বললে মারা যাবার পর

আমরা নতুন আরেকটা জগতে যাবো।

এখন তুমি যদি এই কাজগুলো সুন্দর মত

করো তাহলেই আল্লাহ বুঝবেন

তুমি সত্যিই এই কথা বিশ্বাস করো।

শুধু এই কাজ গুলো ঠিকমতো করলেই

আমি জান্নাতে যেতে পারবো আম্মু?

তানিয়া হেসে বলল, আমাদেরকে এই

কাজগুলো তো করতেই

হবে সাথে সাথে আল্লাহ

আমাদেরকে এছাড়াও

যা যা করতে বলেছেন তা করতে হবে।

এবং যা যা করতে নিষেধ করেছেন

তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ

আমাদেরকে সেই কাজগুলোই

করতে বলেছেন যেগুলো ভালো কাজ।

আর যেগুলো পচা কাজ সেগুলো করতেই

নিষেধ করেছেন। এখন

বলো আমরা যদি জান্নাতে যেতে চাই

এবং সেখানে যাবার পর যদি সবকিছু

মনের ইচ্ছা মত পেতে চাই

তাহলে আমাদেরকে কি করতে হবে?

আয়াত বলল, আল্লাহর

কথা মেনে চলতে হবে।

মাশাআল্লাহ এই

তো তুমি বুঝতে পেরেছো। এখন যাও

পড়তে বসো।

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর

আয়াত বলল, আম্মু

আমি তাসনিয়া আর

তাহসানকে খেলনা দিয়ে আসি?

কেন?

আল্লাহ দিতে বলেছেন যে!

আমি দিয়ে আসি আম্মু প্লিজ

নয়তো আল্লাহ আমাকে জান্নাত দেবেন

না।

তানিয়া ছেলেকে আদর করে হেসে বলল,

আচ্ছা ঠিকআছে যাও দিয়ে এসো।

আয়াত উঠে তার রুম

থেকে খেলনা নিয়ে তাসনিয়া আর

তাহসানকে ডাকতে ডাকতে পাশের

বাসায় উদ্দেশ্যে ছুট লাগালো।

তানিয়াও হেসে আলহামদুলিল্লাহ

বলে স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

বিষয়: বিবিধ

১১৮৯ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

190587
১১ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৫২
আবু সাইফ লিখেছেন : জাযাকুমুল্লাহ...

এমন ধৈর্যশীল বুদ্ধিমতী ও কৌশলী মা ঘরে ঘরে দরকার-
আর সেটাও তৈরী করতে পারেন মায়েরাই
190629
১১ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৪০
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : ওয়াও দারুণ তো। বিয়ের পর বাচ্চা হলে তাদের শেখানো যাবে।
190632
১১ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৭
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৪১
145130
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও
190644
১১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০১
রাইয়ান লিখেছেন : আপনার গল্প ও বাস্তবের আয়াত , নাকিব দুজনেই গুড বয় , মা'শা আল্লাহ ! আর আমারগুলো ? দুষ্টের হাড্ডি একেকটা , ওদেরকে কোনো কথা শোনাতে ধৈর্যের কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় রীতিমত Waiting .... ও আল্লাহ .... তুমি ওদেরকে ভালো আর কথা শুনে মেনে চলা বাচ্চা বানিয়ে দাও ! Praying

খুব সুন্দর লিখেছেন , আপুমনি ! জাজাকাল্লাহ ! Happy Rose
190707
১১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:০২
তরিকুল হাসান লিখেছেন : অনেক শিক্ষনীয় পোস্ট ।ধন্যবাদ ।
১৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৪২
145131
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও
190736
১১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:২৫
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাল লাগল খুব।
০৬ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:০১
152810
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : ধন্যবাদ
190822
১১ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:২৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
১৯ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৪২
145132
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : ধন্যবাদ
206023
১১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:১৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:২০
156681
মারুফ_রুসাফি লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File