ইউসুফ বাচ্চুর মন্তব্য প্রসঙ্গে......
লিখেছেন লিখেছেন মোয়াজ্জেম হুসাইন সায়েম ২৫ জুলাই, ২০১৬, ০৭:৩৫:৫১ সকাল
'শিশুরা জুম'য়ার নামাযে গিয়ে ঘৃণা শিখে!' একাত্তর টিভির এক টক-শো'তে এমন মন্তব্য করেছে তথাকথিত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ওরফে কুত্তা বাচ্চু। এ বিষয়ে অনেকেই আশংকা প্রকাশ করছেন যে, যেহেতু রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এই শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে (যেগুলি জাতিকে বিভক্ত করছে), সেহেতু এদের বক্তব্যের সূত্র ধরেই হয়তো কোন এক সময় এদেশে 'অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মসজীদে নেয়া'র বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা আসতে পারে। এতে করে নতুন প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার ষোলকলা পূর্ণ হবে। ইসলামবিরোধীদের এই দূরদর্শী সিদ্ধান্ত কয়েক যুগ পর তাদের একটি ধর্মহীন বাংলাদেশ উপহার দেবে। যেখানে থাকবে আব্দুল্লাহ, আব্দুর রাজ্জাক আর আব্দুর রহমানেরা, কিন্তু থাকবেনা ইসলাম।
.
বাচ্চাদের মসজিদে যাওয়া নিয়ে আমাদের 'মুরব্বী' সমাজের বেশ এলার্জি রয়েছে। সেই সাথে অনেক মসজিদে একই এলার্জিওয়ালা ইমামও রয়েছেন। আমার পার্শ্ববর্তী মসজিদ যেখানে আমি নামায আদায় করি, সেখানে গত রামাদ্বানে লক্ষ্য করলাম আশ্চর্য কিছু বিষয়। সেকেন্ড ফ্লোরে কমিটির পক্ষ থেকে একজন গভর্ণর নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যার কাজই হচ্ছে বাচ্চাদের 'শাসন' করা। দশ/বারো বছরের বাচ্চাদের কিছুটা ফিসফিসানির স্বভাব থাকাটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে তাদের বুঝিয়ে নীরব থাকতে বলা উচিৎ। তা না করে গভর্ণর মহোদয় চড়-থাপ্পড় থেরাপী শুরু করে দিলেন। এমনকি একটি বাচ্চা কাতার থেকে একটু দূরে সরে গেলে বা একা একা বসে থাকলে তাকে বের করে দেয়া হলো। ধমক আর গালিগালাজ তো আছেই! শেষমেশ ইমাম সাহেবকে রিপোর্ট করলেন তিনি-
* বাচ্চারা কথা শোনেনা!
* হাফিজ সাহেব রুকুতে যাবার আগ পর্যন্ত বসে থাকে!
* একে অন্যের সাথে ফিসিফিস করে!
* থ্রি কোয়ার্টার পরে আসে!
* কাতার ভেঙ্গে দূরে নামায পড়ে ইত্যাদি ভয়ংকর সব অভিযোগ!
আর ইমাম সাহেবও পরের জুম'আয় নির্দেশনা দিলেন, যা অনেকটা 'বাচ্চাদের বাসায় রেখে আসা'র ইঙ্গিত বহন করে। উনারা সফলও হলেন। পরদিন থেকে শিশু কিশোরদের আসা কমে গেলো।
.
ঘটনাটি এজন্য বললাম যে, আমরা সবসময়ই কুত্তা বাচ্চুদের দোষ দিই। কিন্তু আমরা নিজেরাই মূর্খ! ইমাম সাহেব ঐদিন শিশু কিশোরদের উদ্দেশ্য করে কিছু নসীহত করতে পারতেন! এটা শুধু এই মসজিদ নয়, বাংলাদেশের অন্তত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মসজিদেই এই অবস্থা। এখানে শিশু কিশোরদের মসজিদে একটা উটকো জিনিস হিসেবে দেখা হয়। পিছনের কাতারে ঠেলে দেয়া হয়। ধমকের সুরে কথা বলা হয়। আমার ৯ বছর বয়সী ছোট ভাইটিকে সেদিন ফজরের নামাযে নিয়ে গেলাম। আমার পাশে দাড় করিয়েছি, তবুও পাড়ার এক ভাই আমার সামনেই তাকে কাতারের শেষ প্রান্তে যাবার হুকুম দিলেন! আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে 'বাচ্চারা কাতারের মাঝখানে থাকলে সবার নামায মাকরুহ হয়' বলে সাফ জানিয়ে দিলেন! এই হলো আমাদের জ্ঞানের পরিধি। সেদিন আমি প্রতিবাদ করায় এখনো সেই ভাইটি আমার দিকে আড়চোখে তাকান। আমাদের সন্তানদের যখন মসজিদ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছি আমরা নিজেরাই, তখন ইসলামবিদ্বেষীরা তো এর সুযোগ নেবেই। কিছুদিন পর তারা যদি কোমল শিশুদের মসজীদে না নেওয়ার আইন করার দাবী জানায়, তবে অবাক হবার কিছু থাকবেনা!
.
ইদানিং এদেশে ইসলামবিদ্বেষ বেশ বিস্তৃতি লাভ করেছে। সফলতার সাথেই চলছে এ কাজ। হঠাৎ করেই জঙ্গীবাদ ফোবিয়ায় প্রবেশ করা বাংলাদেশে এখন চলছে খুৎবা নিয়ন্ত্রণ! ড. তুহিন মালিকের একটি লিখা গতকাল চোখে পড়লো। নামাযী বা একটু ধর্মঘেষা সুসন্তানদের কৌশলে মাতাপিতার কাছে ভয়ের কারণ হিসেবে দাড় করানো হচ্ছে বলে দাবী তার। পক্ষান্তরে উশৃংখল সন্তানদের নিয়ে বেশ নিশ্চিন্তই আছেন অভিভাবকরা। তবে কেমন সন্তান চাইতে পারেন তারা? যে চিন্তায় ফেলবে, নাকি যে নিশ্চিন্ত রাখবে?
.
পরিশেষে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নামের সাথে 'কুত্তা' যুক্ত হওয়ার রহস্য রম্পর্কে বলি। বিশ্বময় জনপ্রিয় বাংলাদেশের শীর্ষ এক আলেমকে 'কুত্তার বাচ্চা' বলে গালি দেয়ায় এই নর্দমার কীটের নামের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই গালিটি বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
.
#লাল_ভাই।
.
নিচের লিংক এ দেখুন ভিডিও-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10202037418933785&id=1735790219
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৫ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন