প্রসঙ্গঃ স্বরূপ উদঘাটন।
লিখেছেন লিখেছেন মোয়াজ্জেম হুসাইন সায়েম ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৫:৩৭:৩৫ বিকাল
বিগত কয়েক বছর যাবত সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে এক ধরণের অদ্ভুত সমাবেশের আয়োজন দেখছি। সারাদেশেও এমনটি হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে আমি ওয়াকিবহাল নই। কিছু আলেম-উলামা একত্রিত হয়ে আজ এখানে, কাল ওখানে এভাবে স্থান পরিবর্তন করে করে কোন একটি নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির স্বরূপ উদঘাটন করছেন! আর সেই ব্যক্তি হচ্ছেন- মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী। মাওলানা মওদূদী প্রায় শ'খানেক বই এবং "তাফহীম-উল-কোরআন" নামক পবিত্র আল-কোরআনের একটি তাফসীর গ্রন্থের লেখক। আলেম সমাজের মধ্যকার মতপার্থক্য কেবল এ উপমহাদেশেই নয়, বরং গোটা বিশ্বে বিদ্যমান। কিন্তু তাই বলে নাস্তিক ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের টোপে পড়ে জনসমক্ষে একজন আলেমের সমালোচনা করার আগে তথাকথিত এসব আলেমদের একটিবার ভাবা উচিৎ, যেসব সাধারণ জনগনের উদ্দেশ্যে তারা বক্তব্য দিচ্ছেন, এরা শরীয়তের বিভিন্ন মাসয়ালার ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। এরা আলেম ওলামাদের নিকট থেকে যা শুনে, সাধারণত তা-ই বিশ্বাস ও পালন করে থাকে। এই শ্রেণীর মানুষের কাছে আরেকজনের গীবত করা মানে আলেম হিসেবে নিজের সম্মানকে খাটো করা ছাড়া আর কি হতে পারে?
এসব সমাবেশে যারা আসেন তাদের বেশীরভাগই গ্রাম থেকে আগত। দেখেই বুঝা যায় এরা কোন এক গ্রাম্য মাদরাসার শিক্ষক, বা কোন এক গ্রাম্য মসজিদের ইমাম বা এ জাতীয় কেউ। আমি তাদের গ্রাম্য বলে কটাক্ষ করছিনা, বরং এরা নিতান্তই দূর্বল আর্থিক অবস্থার অধিকারী যা এদের বেশভূষা দেখলেই বুঝা যায়। যার স্বরূপ উদঘাটন করতে এরা এসেছেন, তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে অধিকাংশের কাছ থেকেই সঠিক কোন জবাব পাওয়া যায়না। গত কিছুদিন আগে এমনি একটি সমাবেশ চলাকালীন সমাবেশের অদূরে আগত একজন হুজুরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- 'মওদূদীর ব্যাপারে আপনি কতটুকু জানেন?'
জিজ্ঞেস করা মাত্রই ঝট করে উত্তর দিলেন- 'ও একটা এই, ও একটা সেই, ও নবীকে গালি দিয়েছে, সাহাবায়ে কেরামকে অসম্মান করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।'
পাল্টা প্রশ্ন করলাম- 'উনি যে গালি দিয়েছে বা অসম্মান করেছে, এটা আপনি জানলেন কিভাবে?'
আবারো ঐ একই ভঙ্গিতে উত্তর- 'তবে কি ওলামায়ে কেরাম মিথ্যা বলছেন?'
আমি বললাম- 'না, সেটা নয়! তবে ঊনারা তো ভূল বুঝতেও পারেন! সমালোচনাধর্মী কিছু বই থেকে উনারা হয়তো কিছু তথ্য পেয়েছেন, সেটা কি মূল বইগুলির সাথে মিলিয়ে দেখা উচিৎ না?'
উনার উত্তর- 'ঐ বইগুলিও তো কোন না কোন আলেম লিখেছেন!'
এই হচ্ছে উনাদের যোগ্যতা। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে সবচেয়ে উত্তম কাজ হচ্ছে সেটা ভালো করে খতিয়ে না দেখে, এর সত্যতা পূর্নাঙ্গ যাচাই না করে অন্যের নিকট প্রচার না করা। এটা স্পষ্ট হারাম।
আচ্ছা! মওদূদী কি মানুষ নয়? উনার কি ভূল থাকতে পারেনা? অবশ্যই থাকতে পারে। এ জগতে ভূলের উর্ধ্বে কোন মানুষই নয়। নয় মহাপুরুষেরাও। প্রত্যেক ভূলেরই সংশোধন আছে। সংশোধনের ধারেকাছে না গিয়ে জনসমক্ষে এসব ভূল নিয়ে অবাধ চর্চা অবশ্যই নিন্দনীয়। আর সে যদি আলেম উলামার মধ্যে হয়, তবে তো এটা জঘন্য! এটা ইসলাম বিরোধী শক্তির খুশির বিষয়ই হবে। ধরুণ, আজ যদি কেউ তাবলীগ জামায়াতকে 'ইলিয়াছবাদ' বলে এরকম 'স্বরূপ উদঘাটন' করতে চায়, তবে তার হাতে কি যুক্তির কোন অভাব হবে? হবেনা। অনেক যুক্তি দেখানো যাবে এর বিপক্ষে। কিন্তু সাধারণ জনগনের সমক্ষে এসব চর্চা করা কি বোকামী নয়? উপমহাদেশের ইসলামের সামাজিক প্রসারে তাবলীগ জামাতের অবদানকে তো খাটো করা যাবেনা! বা ধরুণ সিলেটের একজন প্রয়াত আলেম আল্লামা আব্দুল লতিফ চোধুরী ফুলতলীর কথাই বলি। উনিও তো ফেরেশতা নন। উনার অনেক ভূল আছে। কেউ যদি সারাদিন এই ভূলগুলির তথাকথিত 'স্বরূপ উদঘাটন' করে, তবে সহীহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলে উনার অবদানটা কি ম্লান হয়ে যাবে? হবেনা।
যারা অন্যের স্বরূপ উদঘাটনে লিপ্ত, তাদের একটি প্রশ্ন করি- নবুওয়তের দাবীদার কাফের গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ধর্ম কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের লোকেরা তো বহুদিন যাবত এদেশে বসবাস করছে মুসলিম পরিচয়ে। পাকিস্তান সরকার এদের স্বীকৃতি দেয়ায় মাওলানা মওদূদী এর প্রতিবাদ করেছিলেন। বিনিময়ে ফাঁসির কুঠুরি পর্যন্ত যেতে হয়েছে তাকে! বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত আলেম সমাজের প্রাণের দাবী হচ্ছে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা। কিন্তু কোন সরকারই তা করছেনা। বরং একের পর এক বানিজ্যিক সুবিধা নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে একচ্ছত্র ব্যবসায়িক অবস্থান তৈরী করেছে তারা। কই, আপনারা তো এর কোন প্রতিবাদ করেননি! হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা আহমদ শফী তার সংগঠনের সর্বশেষ দাবীনামায় 'কাদীয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার' দাবী তুলে এনেছেন। কিন্তু আপনারা কি করছেন? আপনারা কি একটিবারও এদের স্বরূপ উদঘাটন করেছিলেন? মানুষকে বুঝিয়েছিলেন কেনো ওরা অমুসলিম? নাহ! তা আপনারা করেননি? দরকার নেই তো এসব করার! কারণ এরা তো আপনাদের বাড়া ভাতে বালি দিচ্ছে না!
তথাকথিত এসব 'স্বরূপ উদঘাটনের' মূল এজেন্ট হচ্ছেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসুদ। এই মাসুদ আল্লাহ ও রাসুল সা. কে নিয়ে অশ্লীল ভাষায় কটাক্ষকারী নাস্তিক ব্লগারদের হাতে হাত মিলিয়ে শাহবাগের তথাকথিত প্রজন্ম চত্বরে গিয়েছিলেন। আল্লাহ ও রাসুল (সা.) কে নিয়ে বিদ্রুপকারী এসব ব্লগারদের বিরুদ্ধে অন্দোলন করতে গিয়ে প্রান হারিয়েছেন অসংখ্য কুরআনে হাফেজ ও আলেম। নাস্তিক ব্লগারদের বিচার তো হয় ই নি, বরং নির্যাতিত হতে হয়েছে দেশের শীর্ষ আলেমদের। আর তখন এই ফরিদ উদ্দিন মাসুদেরা আয়েশের সাথে শাহবাগীদের সঙ্গ দিয়ে এসেছেন। এখনও তিনি দেশের কিছু একরোখা আলেমদের, তাদের কিছু অন্ধ ভক্তদের এবং গরীব শ্রেণীর কিছু মৌলভীদের অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করে কিছুদিন পরপরই এসব গীবত আর অপপ্রচারের আসর বসাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীর সাথে ব্যক্তিগত দন্দ্ব থাকতেই পারে মাসুদ সাহেবদের, কিন্তু তাই বলে এরকম আসরের আয়োজন করে নিজেকে ছোট করা ছাড়া আর কিছু পাচ্ছেননা এককালের জনপ্রিয় আলেম মাসুদ।
আজ সারা বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। বুলেটের আঘাতে প্রতিদিন ঝরছে অসংখ্য প্রাণ। খাবার-পানির অভাবে মারা যাচ্ছে মুসলমানের বাচ্চারা। এমন সময় ঐক্যই একমাত্র সমাধান। আপনার ভিন্নমতের ইসলামী দলগুলির সাথে যদি আপনি এরকম আচরণ করেন, যা তাদের এবং আপনার মধ্যকার দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়, তবে এটা ধরেই নেয়া যায় যে আপনি প্রকৃত অর্থে ঐক্য চান না। চান না অন্যের সংশোধন। শুধু নিজেই বড় থাকতে চান, ঠিক ব্রাহ্মনদের মতন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সর্বোত্তম মানুষ- ভালো আলিম
নিকৃষ্টতম মানুষ- মন্দ আলিম
সবার আগে জাহান্নামে যাবে তিনজন-
তাদের একজন আলিম
সুতরাং.....
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন