অপেক্ষা।।
লিখেছেন লিখেছেন আবদুজ জাওয়াদ ২০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:১৯:৫৮ রাত
বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে তুহিন। আজ শুক্রবার, তার বাবার আসার কথা। তার বাবা সপ্তাহের শুক্রবার আর মঙ্গলবার অদের বাসায় আসেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার আসেন নি। হুম, ওর বাবা-মা একসাথে থাকেন না। উহু, ডিভোর্স হয় নি। শুধু তারা তিন বছর ধরে আলাদা থাকেন।
তুহিন লক্ষ্য করলো, সকাল থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকলেও তার মা কোন রাগ করেনি বরং একটু পর পর এসে খোঁজ নিয়ে যাচ্ছেন। যেদিন ওর বাবা আসে সেদিন ও খুবই খুশি হয় কিন্তু তার চেহারায় প্রকাশ পায় না। কেন পায় না সেও জানে না। কিন্তু সে দেখতে পায় তার মার মুখে এক উজ্জ্বলতার সৃষ্টি হয়। যেন কিছু বলতে চাচ্ছে। তার বিশ্বাস তার বাবারও একি অনুভূতি যদিও তা চেহারা দেখে বোঝা যায় না। ওর ধারনা এখন তো অনেক ছোট তাই বুঝে না আরেকটু বড় মানে ক্লাস ফোরে উঠলে বুঝতে পারবে।
তুহিনের বাবার সাথে ফোনেও কথা হয় না।প্রয়োজন না হলে ফোন করা হয় না। তার বাবাও ফোন করেন না। যদি কোনদিন না আসেন তাহলে রাতে ফোন করেন। কিন্তু গতবার করেন নি। বাবা বাসায় এলেও ও খুব একটা কথা বলে না। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়। শুধু বাবার পাশে বসে থাকে। ওর বাবাও বেশি কথা বলেন না। বেশ কিছুক্ষন থেকে চলে জান। বাবা আসলে উচ্ছ্বাস, আনন্দ, কলে ওঠা বা বাবাকে জরিয়ে ধরা কিছুই করে না। এতে ওর মা খুবই বিরক্ত হয়।ওর মায়ের ধারনা, এ কেমন ছেলে, এইটুকু বড় হয়েছে অথচ কোন অনুভূতির প্রকাশ নেই! ওর ধারনা, হয়তো এর জন্যই বাবা-মা একসাথে থাকেন না।
তুহিন চিন্তা করছে আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করবে।আজও বাবা না আসলে সে ছাদে চলে যাবে। এই ফ্ল্যাট বাড়ির ছাদটা সুন্দর। কবুতর আছে। তার থেকে বড় কথা ছাদে গেলে তাহমিদ ভাইয়াকে পাওয়া যাবে। সে প্রায় সময়ই ছাদে এসে গল্পের বই পড়ে আর কবুতর গুলোকে খওয়ায়। তাহমিদকে ওর খুব ভাল লাগে। ওর ধারনা তাহমিদের হাসি পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর হাঁসি।তাহমিদ ওকে অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প শুনায়, ভালো কথা বলে, খুব আদর করে ছোট ভাইয়ের মত। তুহিনও তাকে সব কথা বলে। তার বাবা-মার কথাও বলে।
চিন্তা করতে করতে দেখল,ওই তো বাবা এসেছে। ও বারান্দা থেকে দেখতে পাচ্ছে, ওর বাবা রিকসা থেকে নামছে। আস্তে করে বারান্দা থেকে বেড়িয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল, যেন কলিং বেল বাজা মাত্রই খুলতে পারে। বাবা ঘরে ঢুকে ওকে ছোট্ট করে আদর করে সোফায় বসল। একটু পড়ে ওর মা চা নিয়ে এলো। তুহিন ওর মায়ের মুখে সে উজ্জ্বল আভা দেখতে পেল। ওর বাবাও উনার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। এই দৃশ্য ওর খুবই ভালো লাগে। চোখে পানি এসে যায়। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না। ও জানে একদিন ওর বাবা-মা একসাথে থাকা শুরু করবে। শুধু আরেকটু অপেক্ষা।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুভকামনা জানবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন