তুমি কে, আমি কে......
লিখেছেন লিখেছেন আবদুজ জাওয়াদ ০৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:২৯:২১ রাত
স্লোগানটার সাথে আমরা সবাই খুবই পরিচিত। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম স্লোগান ছিল এটি। অবাঙ্গালি পাকিস্তানীদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষে এই স্লোগান দেয়া হত। আমরা যেন আমাদের অস্তিত্ব বা জাতিগত চেতনা ভুলে না যাই সেটার এক বিরাট দাবি এর মধ্যে আছে। বৃহৎ অর্থে এরকম জাতিগত স্লোগান কাম্য না হলেও তখন সমগ্র বাংলায় তা বারুদের মত ছড়িয়ে পরে। মুক্তির সংগ্রামে ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, অবিচার, ভুল ধারনার পাশাপাশি এই জাতিগত চেতনাও বিরাট ভূমিকা রেখাছিল।
দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৪২ বছর। কিন্তু আজও কতিপয় রাজনৈতিক দল প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ও বিভিন্ন সময় এই স্লোগান ব্যাবহার করে থাকে। বিশেষ করে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের ফাঁসি চাই আন্দোলনে তা মারাত্মক আকার ধারন করে। সেখানে একটি শ্লোগান বার বার ধ্বনিত হয়ে উঠেছে ‘তুমি কে, আমি কে, বাঙালি বাঙালি”। এই শ্লোগানটি স্বভাবতই পাহাড়ি তরুণ প্রজন্মকে অনুৎসাহিত করছে।
১৯৭২ সালে যখন সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে এদেশে নতুন সংবিধান রচনা করা হয় তখনও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তা মেনে নেয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তৎকালীন নির্বাচিত সাংসদ মানবেন্দ্র লারমা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, “একজন পাহাড়ি কখনো বাঙালি হতে পারে না, অনুরূপ একজন বাঙালিও কখনো পাহাড়ি হতে পারে না।” এরপর ‘৭৩ সালে রাঙামাটিতে এক জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাহাড়িদেরকে বাঙালি হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন,তোরা সবাই বাঙালি হ।” তৎসময়ের পাহাড়ি প্রজন্ম তা মেনে নেয়নি।
এরপর ২০১১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে যখন ‘বাংলাদেশের জনগণ সবাই বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন’ অন্তর্ভুক্ত করেন তখনি পাহাড়ি জনগণ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। শাহবাগেও ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’ এই শ্লোগানের ধ্বনি শুনে পাহাড়ি তরুণ প্রজন্ম আসলেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ। পাহাড়ি তরুণ প্রজন্ম এই আন্দোলন থেকে এটি কিছুতেই আশা করেনি। দেশের যত অসঙ্গতি আর বিবাদ, সবই যেন আওয়ামীলীগের সৃষ্টি!
আমাদের পরিচয় বাংলাদেশী । এ ব্যাপারে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। এখন এসব বলার কোন দরকার ছিল না যদি তা সংবিধান থেকে সংশোধন করা হত। অথবা ন্যূনতম কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে যেন ব্যাবহার না হত। কিন্তু এত বলার পরও সেই রাজনৈতিক দল আজও নির্বাচনী সহিংসতার প্রতিবাদে করা লোক দেখানো কর্মসূচীতেও এ স্লোগান ব্যাবহার করেছে! আবার তার সাম্প্রদায়িকতার বুলি আওরায়। এটা কি সাম্প্রদায়িকতা নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে যুগ যুগ ধরে এদেশে বসবাস করে আসছে। কিন্তু যখন রাষ্ট্র তার সংবিধানে এসব জাতিগুলোকে অস্বীকার করে, যখন বামপন্থী সংগঠনগুলো ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি’ বলে শ্লোগান দেয় তখন তাদের অসাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পর্কেও সন্দেহ জাগে। প্রশ্ন জাগে এদেশ কি শুধু বাঙালিদের, এদেশে কি শুধু বাঙালিরাই বসবাস করে? সংখ্যায় কম বলে বাঙালি ভিন্ন অন্য জাতিগুলোকে কি বাঙালি পরিচয ধারণ করতে হবে?
তাই আমরা বলব, বাংলাদেশী বাংলাদেশী।
বিষয়: বিবিধ
১২২১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7218
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
মন্তব্বের জন্য ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন