★ দুঃশাসনের রক্ত চাই !! ★
লিখেছেন লিখেছেন মুজাহিদ খান বাবু ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:২৫:৪৬ রাত
পরশুদিন বিকেলে আমার একটি মোবাইল নাম্বারে ২০ টাকা লোড দিলাম। যথারীতি মেসেজ পেলাম। একটুপর আবারও একই রকম মেসেজ। এবারে টাকার পরিমাণ ১০০। আমিতো অবাক ! আমি সচরাচর ২০-৫০ টাকা, কখনওবা ১০ টাকাও লোড দেই। শুধুমাত্র ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার জন্য, মাঝেমধ্যে (বছরে দু-চারবার) ফ্লেক্সিলোডের অঙ্ক শতকের ঘরে পৌছয়। আমার এমন কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী নেই যে, আমার মোবাইলে (অন্ততপক্ষে না জানিয়ে) টাকা পাঠাবে। তাহলে কি দোকানী ভুল করে পাঠিয়েছে ! আমি সাধারণত যে দোকানে ফ্লেক্সিলোড করি, সেখানে গেলাম। জানলাম — সে টাকা পাঠায় নি ; অন্য কোনো নাম্বার থেকে এসেছে।
তারপর একটি ফোনকলের জন্য অপেক্ষা। কখন ফোন আসবে ! কেউ বলবে, 'আমি ভুল করে আপনার নাম্বারে ...।' আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। কয়েকঘণ্টা পর অধৈর্য হয়ে, গ্রামীণফোনের হেল্পলাইনে (121) ফোন করলাম। জানতে চাইলাম, সর্বশেষ রিচার্জ কোত্থেকে করা হয়েছে? কাস্টমার এক্সিকিউটিভ জানালো, এ তথ্য তাদের কাছে নেই। হালকা বাকবিতণ্ডার পর বললো — তথ্য আছে ; কিন্তু, আমাকে তা জানানো হবে না। এসব তথ্য গ্রাহককে দেওয়ার নিয়ম নেই ! আমার তথ্য, আমিই জানতে পারবো না ! যস্মিন্ দেশে যদাচার ! যেই দেশে যেই আচার, আরকি !
অবশেষে, আমার অপেক্ষার পালা ফুরিয়েছে। গতকাল বিকেলে ফরিদপুর জেলার এক ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী, আমাকে ফোন করে বললেন যে — তিনি ভুলবশত আমার নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছেন। তিনি সঠিক গ্রাহকের মোবাইল নাম্বার দিলেন। তাঁর কাছ থেকে জানলাম — এই গ্রাহক জামায়াতে ইসলামীর, স্থানীয় ইউনিয়ন শাখার আমীর ; তাঁর নাম ...। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে, তিনি (গ্রাহক) মোবাইলে কথা খুব কম বলেন। অপরিচিত কারও সাথে কথা বলেন না। আমি ফোন করলে তিনি কথা বলবেন কি না, সন্দেহ ! মন চাইলে আমি যেন, টাকাটা ফেরৎ পাঠাই।
সঙ্গত কারণে এই গ্রাহক তথা জামায়াত নেতার নাম প্রকাশ করছি না। ধরে নিন, তাঁর নাম আহমদ খন্দকার (ছদ্মনাম)। তাঁর উপজেলা ও ইউনিয়নের নামও গোপন রাখলাম। তিনি অপরিচিত কারও সঙ্গে, মোবাইলে কথা বলেন না — এই তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাকে ফোন করলাম ; তিনটি ভিন্ন নাম্বার থেকে, পরপর তিনবার। তিনবারই ফোন রিসিভ হলো। আমি সালাম দিই, হ্যালো-হ্যালো বলি ; জবাব আসে না, তিনি লাইন কেটে দেন। চতুর্থবার ফোন করলাম ; আমার ওই নাম্বার থেকে, যেটাতে টাকা এসেছিলো। নাম্বার (প্রায় কাছাকাছি) দেখে তিনি সম্ভবত ঘটনা বুঝতে পেরেছেন। কল রিসিভ করলেন।
— আসসালামু আলাইকুম।। আমি বললাম।
— ওয়ালাইকুম আস্সালাম।
— আমি মুজাহিদ, লালমনিরহাট থেকে বলছি। আপনি কি আহমদ খন্দকার ভাই, বলছেন?
— হ্যা, বলুন !
— আমার মোবাইলে আপনার ১০০ টাকা এসেছিলো। আমি টাকাটা আপনার নাম্বারে ট্রান্সফার করে দিচ্ছি।
তিনি খানিকক্ষণ হাসলেন। তারপর বললেন, "আমি ভেবেছিলাম, কোথায়-না-কোথায় — কার মোবাইলে টাকা চলে গেছে, ওটা কি আর ফেরৎ পাওয়া যাবে ! আর, আমি আজকাল মোবাইলে ...। তাই, ...।"
— বুঝতে পেরেছি।। আমি বললাম।
তারপর, আহমদ সাহেব একটা কাণ্ড করলেন। আমার নাম দুবার উচ্চারণ করে বললেন, "মুজাহিদ ! মুজাহিদ ! আপনাকে আমার মনে থাকবে !"
আমি সালাম দিয়ে লাইন কেটে দিলাম।
মোবাইলে টাকা আসা বা ফেরৎ দেওয়া অতিসাধারণ বিষয়। এটি আমার এ লেখার উপজীব্যও নয়। ঘটনা বর্ণনায় টেনে এনেছি মাত্র। এই টানাটানিকে, কেউ অপ্রাসঙ্গিক-অবান্তর হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইলে — তাকে খুব বেশি দোষ দেওয়া যাবে বলে, মনে হয় না ! আমার প্রশ্ন হলো — পরিস্থিতি কোন্ পর্যায়ে পৌছলে, একজন নাগরিক নির্ভয়ে কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেন? এ কোন্ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাস করছি, আমরা ! এই যদি হয়, স্বাধীনতার স্বরূপ ; তাহলে, ছড়াকার আবু সালেহ কে আশ্রয় করে বলতে চাই —
"ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা,
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা !"
কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন —
"ঘোষো দিকে দিকে এই কথাই,
দুঃশাসনের রক্ত চাই !
দুঃশাসনের রক্ত চাই !!"
অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন-নিপীড়নে নিষ্পেষিত জনগণ, সরকারের পতন দেখতে উন্মুখ। কিন্তু, সরকার পতনে কার্যকর আন্দোলনে নেতৃত্ব-নির্দেশনা দিতে কেউই এগিয়ে আসছে না। বিরোধীদলগুলো আন্দোলনের চেয়ে, সরকারের সাথে সমঝোতাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। তবে, এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ আর বেশিদিন বসে থাকবে না। তারা স্বেচ্ছায় রাজপথে নেমে আসবে। স্বপ্রণোদিত এই আন্দোলনে কেউ কারো নেতা নয়, কেউ কারো কর্মী নয় ! সেই জনস্রোতে আমিও মিশে যাবো। স্লোগান তুলবো — দুঃশাসনের রক্ত চাই ! দুঃশাসনের রক্ত চাই !!
এমন বিচিত্র আন্দোলন কি সম্ভব? হয়তো সম্ভব ; হয়তো না। আন্দোলনের অপেক্ষায় থাকতে-থাকতে, ইদানিং এ রকম অদ্ভুত স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।
পুনশ্চ : আহমদ ভাইয়ের সাথে কথা বলার সময়, তার বয়স খুব বেশি মনে হয়নি। বড়জোর ৪০-৪৫। চরাই-উৎরাই পেরিয়ে, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী টিকে গেলে (সম্ভবনা শতভাগ) — তিনি আরও বড় দায়িত্ব পাবেন। পত্রপত্রিকায় তার নাম দেখে, তাকে আমার মনে পড়বে। তিনি ব্যস্ত মানুষ। তাই, চাইলেও আমাকে মনে রাখতে পারবেন না। তবে, আমার নাম তার মনে থাকবে। একজন ফাঁসির আসামীর নাম, কেউ সহজে ভুলে যায় না। তাছাড়া, তিনি এবং মুজাহিদ (আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ) — একই জেলার মানুষ ; একই আদর্শের সৈনিক। এই মনেথাকা-মনেরাখা, ভুলে যাওয়া আর মনে পড়া নিয়েই আমাদের জীবন।
বিষয়: রাজনীতি
১২৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন