purity ring ও পশ্চিমাদের হিজাব বিদ্বেষ তত্ত্ব

লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ২৯ জুলাই, ২০১৩, ১১:৪১:৫৯ রাত

আমি খুব একটা টি ভি দেখার টাইম পাইনা। সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। তবে পরীক্ষার আগে দিয়ে আমাকে এই সব সখ খুব ভালো পেয়ে বসে। সেদিন রাতে চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে একটা অনুষ্ঠানে চোখ লেগে গেলো। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে একটা documentary দেখাচ্ছিল।

purity ring এর প্রচলন সর্ব প্রথম শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান রা শুরু করে। এটা এমন এক অনুষ্ঠান যেখানে কিশোরী মেয়েরা তাদের বাবার সাথে গির্জায় যেয়ে শপথ নেয় যে - তারা তাদের বিয়ের আগ পর্যন্ত পবিত্র থাকবে। এই অনুষ্ঠানে যেতে অনেক মেয়ে ই ভীতি অনুভব করে, অনেক গবেষক ই এটাকে নারী স্বাধীনতার অন্তরায় মনে করেন। ফাদার শপথ পড়ানোর পরে মেয়েরা সিলভার কালারের পিউড়িটি রিং হাতে পড়ে। বলা হয়, এই রিং ই তাদের কে মনে করিয়ে দিবে তাদের শপথের কথা!

এই ঘটনা একটা সামান্য ব্যাপার হলেও অনেক বড় কিছুকে ইঙ্গিত দিয়ে যায়। পশ্চিমাদের সমাজ ব্যবস্থা কে আগা গোঁরা প্রশ্ন বিদ্ধ করে তোলে । সেই সমাজ কত টা কুৎসিত , কতটা লাগামহীন ও অবাধ যে কিশোরী দের কে তাদের পবিত্রতার জন্য আলাদা ভাবে শপথ করতে হয়।

আফসোস! মানুষের কাছে মানুষের তৈরি এই সংস্কার গুলোই সব সমস্যার সমাধান মনে হয়। অথচ, আরও ১৪০০ বছর আগে আমাদের প্রিয় নবী পর্দার মাধ্যমে সমগ্র নারী কুলের চারিপাশে কত সুন্দর একটি পবিত্রতার বলয় তৈরি করে গিয়েছেন! কিন্তু , তথাকথিত সুশীলরা বারেবার মহান আল্লাহ্‌র এই সুমহান আইনের উপর মানব রচিত ধর্ম নিরপেক্ষতা চাপিয়ে দিয়েছে। আর মুসলিম মেয়েদের সবচেয়ে সম্মানিত ভূষণ হিজাবকে বারবার কেঁড়ে নিতে চেয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার ও নারী স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে।

একদিন ক্লাসে ম্যাডাম বলছিলেন- তিনি চীন জাপান ব্রিটেন সব জায়াগায় ই conferrence এ যান । কেবল france এ কোন সম্মেলন থাকলে তিনি যান না। কারণ - ফ্রান্স এ হিজাব পড়া নিষেধ , আর তিনি যেকোনো কিছুর বিনিময়েও অনাবৃত অবস্থায় যাবেননা ।

মুসলিম মেয়েরা তাদের পবিত্রতার ব্যাপারে সচেতন, এবং এই সচতনতার ভূষণ ই হিজাব। মানবাধিকারের বুলি কপচানো প্রতিষ্ঠান গুলো ইউরোপ ও পশ্চিমাদের এই হিজাব নিষিদ্ধ করন নিয়ে কোন আওয়াজ তোলে না। কারণ তাদের দৃষ্টিতে মুসলিম রা হয়তো মানুষ ই না। ইদানিং কিছু নাম মাত্র মুসলিম দেশেও হিজাব বিদ্বেষ দেখা গিয়েছে। অনেক জায়গায় হিজাব পড়া নিষেধ। বাংলাদেশেও এমন কিছু ঘটনা ঘটছে । স্কুল ড্রেসের দোহাই দিয়ে হিজাব কে বাদ দিয়ে স্কুল ড্রেস পড়ার আদেশ দেওয়ার বহু তুলনাবিহিন নজির আছে এই দেশে। যদিও ইদানিং রাস্তা ঘাটে বের হলে প্রচুর বোন দের দেখি মাথা আবৃত করতে তবুও আমাদের এই সুশীল নাগরিকে ভরা সমাজে অনেক মানুষ ই এর বিপক্ষে। এবং যারা আছেন, তারা খুব ই ক্ষমতাবান । একদিন ভার্সিটির বাসে যাওয়ার সময় আমি হেড count করলাম। দেখি টোটাল ১৮ জনের মধ্যে ১০ জন ই হিজাবি।মাশাল্লাহ!

কিন্তু এর বিপক্ষের লোকদের ও পাল্লা কম ভারী নয়। আমাদের এক টিচার একদিন ক্লাসে বললেন- বঙ্গ হোল গরমের প্রাদুর্ভাব যুক্ত দেশ, এই দেশের মহিলারা আদিম কাল থেকেই গরম থেকে বাঁচার জন্য শাড়ির মতো খোলামেলা পোশাক পড়ে , আর আরবে প্রচুর লু হাওয়া থাকায় আরবে মুখ এবং মাথা আবৃত করার দরকার পড়তো , সেই থেকে হিজাব ও বোরখার আবির্ভাব । এরপর উনি বললেন - এখানের বেশিরভাগ মেয়ে ই জানেনা তারা কোন কারনে হিজাব পরেছে, সবাই ধর্মীয় অনুশাসনের অন্ধ অনুসারী ।

এরপর ওনার চোখ ঘুরতে ঘুরতে আমার উপর পড়লো। আমাকে বললেন- এই মেয়ে তুমি বোলো হিজাব কেন পড়ো? আমি দাঁড়িয়ে বললাম- ম্যাডাম হিজাব পড়ার কারনের অনেক দিক আছে, হোক সেটা বৈজ্ঞানিক , সামাজিক, কিংবা ধর্মীয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি কোন থেকে হিজাব অনেক চর্ম রোগ , ধুলাবালি , রোদ থেকে ত্বক কে বাঁচায় ,মেয়েরা যেহেতু সৃষ্টি গত ভাবেই কোমল তাই তাদের এই আবরণের প্রয়োজন আছে। আর সামাজিক দিক থেকে দেখলে দেখা যায়- হিজাব নারী কে ইভ টিজিং , রেপ, লোলুপ দৃষ্টি থেকেও বাঁচায়। সমাজে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা কে বাঁধা দেয়। কিন্তু অনেক পণ্ডিতরা সব বুঝেও যেমন না বুঝার ভান করে ঠিক প্রিয় শিক্ষিকা এমন একটা ভাব করলেন!

আমাকে বললেন- তাহলে তুমি বলতে চাও- যেদিন এই সমাজে কোন ইভ টিজিং হবেনা, কোন রেপ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটবেনা, মেয়েরা যেমন খুশি পোশাক পড়েও রাস্তায় নিরাপদে নির্ভয়ে ঘুরতে পারবে, সেদিন আর হিজাবের কোন প্রয়োজনীয়তা থাকবেনা? আমি বললাম- ম্যাম , কেয়ামতের আগ পর্যন্ত শয়তান মানুষকে কুমন্ত্রণা দিতেই থাকবে, তাই এমন দিন আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ , তাই আমি বলি- prevention is better than cure. তাই, অশ্লীলতা ঢুঁকে যেতে পারে এমন কিছু হওয়ার আগেই তার প্রতিকার করা উচিৎ। ম্যাম আমার দিকে সেদিন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।

ওহে বিজ্ঞ সুশীলের দল, হিজাবের বিরুদ্ধে যদি এভাবে আদাজল খেয়ে লাগো , তাহলে সেদিন খুব দূরে না, যেদিন তোমাদের বোন/ মেয়েদের purity ring পড়িয়ে পবিত্রতার শপথ নেওয়াতে হবে। তবু ও কাজ হবেনা। জিওগ্রাফীর ওই অনুষ্ঠানে দেখিয়েছিল, এই purity ring এর শপথ বেশির ভাগ কিশোরী ই ২/১ বছরের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলে। আর যার ফলেই ইউরোপ কিংবা ওয়েস্টার্ন দেশ গুলোতে বাড়ছে পারিবারিক ভাঙ্গন, বিবাহ বিচ্ছেদ আর অল্প বয়সী সিঙ্গেল মাদারদের সংখ্যা। অবাধ সমাজ ও নোংরামি এতোটাই সীমা ছাড়িয়েছে যে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবা মা হওয়ার রেকর্ড ও আছে।

আমাদের দেশের সুশীলরাও যদি সমাজে এসব অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার পথ হিসেবে বেপর্দা হওয়াকে সমর্থন করে, তাহলে খুব বেশি দেরি নেই যখন আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাও ভেঙ্গে যাবে। আর সভ্যতার একটা নিয়ম আছে, যখন কোন জাতি বেশি সভ্য হয়ে যায় তখন সেই সভ্যতা ও একসময় নিম্ন মুখী হয়ে ধ্বংস হয়ে যায় , পরিণত হয় নিকৃষ্ট জাতিতে। পশ্চিমারা একদিক দিয়ে হিজাব / পবিত্রতার আবরণকে কেঁড়ে নিয়েছে, আবার নিজেদের মেয়েদের পবিত্রতার শপথ করানর জন্য একটা নগণ্য আংটির দ্বারস্থ ।ইসলাম বাহ্যিক ভাবে দেহের লাবণ্য প্রকাশে যেমন বাঁধা দিয়েছে, ঠিক তেমনি মনের পর্দার উপরেও গুরুত্ব আরোপ করেছে।কুরআনে আছে- তোমরা গোপনে বা প্রকাশে অশ্লিলতার পাশ দিয়েও যেওনা । এমন শাশ্বত পবিত্রতার বলয় আর কোন ধর্মে আছে?

বিষয়: সাহিত্য

১৩১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File