তেতুল বড় টক
লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ২৯ জুলাই, ২০১৩, ১২:১৩:৩৮ দুপুর
আজ তেতুল থিয়োরি নিয়ে সম্পূর্ণ নতুন কিছু বিষয় বলবো। এটা হয়তো অনেকের ই অজানা , আবার অনেকের ই জানা। কিন্তু আজ নতুন করে বিষয়টা নিয়ে বলছি। অনেকেই ইতিমধ্যে ডেইলি মেইল পত্রিকায় প্রকাশিত তেতুলের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জেনেছেন।
যাইহোক । আমি ওই দিকে যাচ্ছি না আপাতত। এখনকার যুগে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষিত হয়, বড় বড় ডিগ্রী নেয়। একই সাথে সমান ভাবে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে হয়। কিন্তু পুরুষের চেয়ে নারী শারীরিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় পেরে ওঠা অনেক টাই মুশকিল।
সাংবাদিকতা
যেমন , সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেই ধরা যাক! দেখতে তেতুলের মতো লোভনীয় না হলে সাংবাদিকতায় নারীর কোন ভাত নেই। সেদিন পত্রিকায় পড়লাম নারী সাংবাদিকতায় যৌন নির্যাতনের একটা রিপোর্ট । পড়ে আঁতকে উঠলাম , পুরুষের তেতুল লোভী মনোভাব দেখে। মিডিয়া মানেই এখন কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে এমন একটা যায়গায় পরিণত হয়েছে, শুধুই এই তেতুল লোভীদের জন্য। আর তারাই যখন নারীকে তেতুল বলায় দিন ভর হুজুরের বিরুদ্ধে টিটকারি করতে থাকে, তখন সেটা কোন ব্যাপার ই না। কারন তাদের টা তো কেউ দেখেনা, প্রমাণ নেই, খারাপ বলবে কি করে!
আর তাছাড়া সংবাদপত্র গুলোর কথা আর কি বলবো! কোথায় কোন মডেল খোলামেলা ছবি তুলল সেই খবরটা ছবিসহ রঙিন কালিতে না ছাপলে যে উঠতি বয়সী পাঠক কমে যাবে। প্রথম আলো , জুগান্তর , সমকাল ,জনকণ্ঠ মানবজমিন সহ পত্রিকা গুলো খুললে মনেহয় যেন তারা অশ্লীল ছবি ছাপানোর প্রতিযোগিতা করছে। কি আর করবে! অশ্লীল লিখা না ছাপালে যে হলুদ পত্রিকাগুলোর কাটতি কমে যায়। বাসে করে কোথাও যাচ্ছি, পাশের ভদ্রলোক হয়তো সেই বিনোদন পাতাই আমার সামনে মেলে ধরে পড়ছেন, আর লজ্জায় তাকাতে পারছিনা, এমন ঘটনাও জীবনে বহুবার ঘটেছে । এই লজ্জা কি আমাদের সবার নয়? এভাবে কি সংবাদপত্রগুলো নারীদের নিয়ে ব্যবসা করছেনা? তখন কেউ কিছু বলেনা কেন?
আমাদের এই সমাজেই কিছু মানুষ আছে যারা চোখের সামনে খারাপ টা দেখতে পারে, সহ্য ও করতে পারে নির্বিকার চিত্তে , কিন্তু সেই খারাপ টার কারণ খোলাসা করে বললেই তাদের চোখে অশ্লীল ঠেকে যায়।
সাংবাদিকতার কথা গেলো।
পুলিশ
এবার আসা যাক নারী পুলিশদের পোশাক প্রসঙ্গে। সরকারী ভাবেই নারীদের কেমন পোশাক পড়ান হচ্ছে , সেই উদাহরণ দিলে এখন অনেক নারীবাদীরই এখন কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা পড়তেই পারে। তবে বলবো কি, নারী পুলিশ অনেক মুসলিম দেশেও আছে, কিন্তু আমাদের দেশের মতো এতো খোলামেলা পোশাক তারা পড়েনা । এ ক্ষেত্রে সরকার নিজেই নারীকে তেতুল রূপে উপস্থাপনে একধাপ অগ্রসর।
মডেল
ইফতারের পর বাংলাভিশনে একটা ফ্যাশন অনুষ্ঠান হয়। নাম lux fashion file. এই অনুষ্ঠানটা দেখলেই পাঠক বুঝতে পারবেন নারীকে কিভাবে তেতুল রুপে উপস্থাপন করে রমরমা ব্যবসা করা যায়। উপস্থাপিকা সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় পড়েন । কিন্তু তার ওড়না কিনার পয়সা নেই। তাকে আবার কেউ যেয়ে তেতুল ডাকলে সে বলবে ছি ছি এসব কি কথা! আর এই অনুষ্ঠানে যিনি বিভিন্ন মার্কেট এ যেয়ে ক্রেতাদের দামী দামী জুতা শাড়ি জামার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন তার তো কোন তুলনাই হয়না। তিনি একটা গেঞ্জি পড়েন , তার সাথে একটা জিন্সের প্যান্ট! মার্কেটের পণ্য গুলো কেনার জন্য ক্রেতাদের অনুরোধ করতে করতে তিনি নিজেই যে কখন হাজার পুরুষের চোখের পণ্য হয়ে যান, হয়তো নিজেও জানেননা । এটা কি তেতুল দেখিয়ে লালসা বাড়ানো নয়? নারী ! তুমি মায়ের জাতি! তুমি কেন পণ্য হবে? আর lux এর সুন্দরী প্রতিযোগিতার কথা আজ নাহয় নাই বললাম!নারী কে কত রুপে ব্যাবহার করা যায় তার উত্তম শিক্ষা সমাজপতিরা এই অনুষ্ঠান থেকে লাভ করতে পারেন।
ছাত্রী
ভার্সিটির টিচার হওয়াটা সব ভার্সিটি পড়ুয়ার জীবনেই একটা বড় স্বপ্ন। কিন্তু একজন নারী হয়ে ভালো রেজাল্ট থাকা সত্ত্বেও সে স্বপ্ন দেখা অনেক টাই দুঃস্বপ্নের মতো। কারণ , বি এন সি সির জন্য স্নাতক শেষে ২৫ নাম্বার অতিরিক্ত যোগ হয় রেজাল্ট এ। আপাতত এটা না থাকলেও শুনেছি আবার চালু করার জোর চেষ্টা চলছে। বি এন সি সি মানেই কিন্তু পর্দা করাটা কঠিন। কারণ , এতে ক্যাডার দের পোশাক পড়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামে ডিউটি দিতে হয় , যা অন্তত আর যাইহোক আমার মতো মেয়ের জন্য সম্ভব নয়। অনেকেই অনেক কিছু ত্যাগ করে বি এন সি সি করে, আমি ও কয়েকদিন ভেবেছিলাম কোনমতে পর্দা ঠিক রেখে করা যায় কিনা । কিন্তু অবশেষে এক বন্ধু অনেক ভিতরের সত্যতা ও বাস্তবতা সহ আমাকে সাবধান করে দিলো। আমি আর বি এন সি সির নাম মুখেও আনলাম না। জানিনা , এর জন্য হয়তো আমাকে জীবনের শ্রেষ্ঠ স্বপ্ন বিসর্জন ও দিতে হতে পারে। তবুও এই নদী আর নারীর দেশে এভাবেই নারীরা সমাজপতিদের বানানো নিয়মের শিকার হচ্ছে , যা নারীকে খোলামেলা ভাবে চলতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করছে।
আর সবচেয়ে বড় কথা কিন্তু নারী কি পড়লো সেটা না। সবচেয়ে বড় কথা হোল পুরুষের ভোগবাদী চিন্তা চেতনা এবং সমাজকে পর্দার জন্য । আমি জানি , অনেক আপুর ই এমন অভিজ্ঞতার কথা যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছেন, রাস্তা ঘাঁটে যাদের নিত্য চলাফেরা করতে হয়। সেদিন এক আপু বললেন- রাস্তায় যে কোন ছেলেই যেকোনো মেয়েকে নিজের বউ ভাবে। এমন ভাবে তাকায় যেন তার প্রপার্টি ।
ব্যাংক ও বহুজাতিক কোম্পানি
ব্যাংক ও বহুজাতিক কোম্পানি গুলোতে সুন্দরী লাস্যময়ী নারীদের জয় জয়কার। সমানে ব্যবসা করে চলেছে নারীকে পণ্য বানিয়ে। ব্যাংক এশিয়া তার প্রতিটা শাখায় মেয়ে অভ্যর্থনাকারী নিয়োগ দেয়। ওই যে এক কথা এক থিয়োরি ! ব্যাংক অধিপতিরা জানে , যে তেতুল দিয়ে আকর্ষণ ধরে রাখতে পারলেই কাস্টমার ভিড় জমাবে।
কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা
*আমার এক কাজিনের ঘটনা বলি। আগে বোরখা পড়তো ,এই ঘটনার পরে সে আর বোরখা পড়েনা। একদিন সে ফার্মগেট ব্রিজের উপর দিয়ে হেটে বাসায় যাচ্ছিলো। এক তেঁতুল লোভী পুরুষ কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল- রেট কত? সে বেচারি ভয়ে কেঁদেই দিল।হনহন করে বাসায় এসে মাকে বলল - সে বোরখা পড়বে না। কারণ বোরখা নাকি পতিতা রা পড়ে । আমাকে বলার পড়ে আমি বললাম - পতিতারা তো ভাত ও খায়, তুমি তাইলে ভাত ও খেয়না। একটা সমাজ কত টা অধঃপতিত হলে এরকম একটা শালীন পোশাক কে অস্র করে নেয় মানুষ।
ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে দিব্বি এরা ঘুরে বেড়ায় , পুলিশের নাকের ডগার নিচে, শুনেছি প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আর তার ভাইয়ের নাকি যৌথ বিজনেস ও আছে এটার। তাহলে , সমাজে নারীকে তেঁতুল হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়ার দ্বায় টা আপনারা কিভাবে এড়িয়ে যান? আবার এই পতিতাদের ই পক্ষ নিয়ে হুজুরদের বিরুদ্ধে মিডিয়ার অপপ্রচার করতেও আপনাদের বাঁধে না, মাদারীপুরের সেই পল্লী উচ্ছেদ করতে গেলে তাদের পক্ষে সে কি নাকি কান্না আপনাদের! দেখলাম , ছাত্র লীগ ও বেশ চালিয়ে যাচ্ছে নারী ব্যবসা।
*আমার এক বান্ধুবির খুব ইচ্ছা হয় হিজাব পড়তে । কিন্তু ওর বাবা মা নাকি দেখলে হাত পা ভেঙ্গে বসিয়ে রাখবে ঘরে। তাই ও আর ভয়েও ওই কথা মুখে আনেনা।কিন্তু তার মা যখন মেয়েকে তেতুলের মতো টক সাজিয়ে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে তখন কি হুজুরের সেই কথাটার দ্বায় সেই মমতাময়ী মায়ের ঘাড়েও বর্তায় না?
কিংবা সেই বাবা, যিনি বিশাল বড় জুব্বা পড়ে সারাদিন মার্কেট এ ব্যবসা করেন , অথচ তার ই মেয়েরা অশালীন পোশাক পড়ে ঘুরলেও যিনি কিছুই বলতে পারেননা । হুজুরের এই বাস্তব কথার দ্বায় তিনি ই বা কীভাবে এড়াতে পারেন?
*অরিন, এক এলাকার পরিচিত এক খালাম্মার মেয়ে। মা বোরখা পড়ে , মুখ ঢেকে হাঁটলে কি হবে! মেয়েকে পুরোদমে আধুনিক তালিম দিচ্ছেন।সে যে পোশাক পড়ে ঘুরে বেড়ায় তা বোধহয় পাশের দেশ ভারতেও মেয়েরা নিজ এলাকায় পড়েনা । নাচ , গান , ক্যারাটে কুংফু কিছুই বাদ নেই আল্লাহর রহমতে । ক্লাস এইটে পড়া এই মেয়ে এলাকাসুদ্ধ সব ছেলেকে নাচিয়ে বেড়ায় । মা সব জানেন, এও জানেন , এটা ও আধুনিকতার একটা অংশ। তাই মেয়েকে তিনি বাঁধা দেন না। আবার মাঝে মাঝে শুনি ওর কোন স্যার ওকে কোচিং এ বাজে ইঙ্গিত দিয়েছে। ব্যাস! সেই কোচিং ছেঁড়ে দেওয়াই তার একমাত্র সমাধান ভাবেন, কিন্তু আসলে যে সমস্যাটা কোচিং ছাড়লেই ফুরাবেনা তা তাদের কে বুঝায়?
* মিতু। পাশের বাসার আলাউদ্দিন আঙ্কেলের মেয়ে। ছোট বেলা থেকেই লাগামহীন চলাফেরা। ঢাকা শহরের সব বার তার চেনা। বেশি লাগামহীনটার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে। এলাকার এক লীগের ছেলে ওর পিছু লেগেছে। এরপর ৩ বছর প্রেম করার পর ওই ছেলের সাথে ব্রেক আপ। এরপর কলেজের ভদ্র গোছের এক ছেলের সাথে আবার প্রেম। কিন্তু এলাকার সেই রংবাজ কি ছেঁড়ে কথা কয়? একদিন মিতুর পরের প্রেমিক কে ডেকে নিয়ে গেলো বুড়িগঙ্গা ব্রিজে। ওই ছেলের ইহলিলা শেষ হয়ে গেলো। রংবাজের আগেই সব ঠিক ছিল। খুন করার ৫ ঘণ্টা পর সে ইটালির উদ্দেশ্যে পগারপার, আর এদিকে পুলিশ ধরল মিতুকে। মিতু এখন কাশিম পুর কারাগারে প্রেমিক হত্যার দায়ে।
উপরের কোন ঘটনাই বিচ্ছিন নয়। সব গুলো ঘটনার সুত্র মিশে গেছে আল্লামা শফির তেতুল সুত্রের সাথে। তিনি শুধু বলেছেন, ভোগ লালসায় মত্ত পুরুষ কীভাবে সৌন্দর্য প্রদর্শনের সুযোগ নেয় ফ্রি নিজের চোখের পিপাসা মিটায় । আমরা বলছিনা , রাতারাতি সবাইকে হিজাব পড়তে হবে, কিন্তু আপনার শালীনতায় যদি সমাজে সুস্থিরতা বিরাজ করে ক্ষতি কি? হিজাব না পরেও পোশাকে শালীনতা বজায় রাখা যায়। সমাজপতিদের বাণিজ্যিক পসরায় নিজেকে যুক্ত করে তাদের পণ্যে পরিণত হয়ে আপনার কি লাভ?
আর তাছাড়া আপনি ই বা হাজার হাজার টাকা খরচ করে মানুষকে ফ্রি আমোদ দিতে যাবেন কেন? আর এতে আপনার কিংবা আপনার সন্তানের ই কোন না কোন ক্ষতি হয়ে যাবে, আপনি থেকে যাবেন শুধু ভুলের মাশুল গুনার জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১৮০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন