কলম সৈনিকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান

লিখেছেন লিখেছেন সাফওয়ানা জেরিন ১৮ জুলাই, ২০১৩, ০৮:১৪:১৭ রাত

আচ্ছা! লেখালিখি করে কি লাভ? অনেকের মনে এই প্রশ্ন জাগতেই পারে! ফেবুতে বা কোন ম্যাগাজিনে কিছু লিখলেই যে আর্থিক ভাবে খুব লাভবান হয়ে যাবো এমন তো কোন কথা নেই! তাহলে কেন এই লেখালিখি ? কিসের এতো দায়বদ্ধতা?

মানুষ সৃষ্টি ই হয় হারিয়ে যাওয়ার জন্য। কিছুদিন আগেও যেসব লেখকের লিখা পড়ে আজকের এই আমি বা আমরা অথবা পুরো যুব সমাজ তাদের অনেকেই এখন আর নেই। কিন্তু তাদের আদর্শ ভাব সুপ্ত বীজের মতো লুকিয়ে আছে আমাদের অন্তরে।

অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রচনা প্রতিযোগিতা বা যেকোনো সৃজন শীল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম , বহু বার। যারা এসবের উদ্যোক্তা ছিলেন , তারাই কিন্তু সমাজ গড়ার কারিগর। কেননা , তারা আগামী প্রজন্মের জন্য কথা বলার মানুষ তৈরি করার চেষ্টা করে গেছেন।

কথায় আছে- তরবারির চেয়েও নাকি কলমের শক্তি বেশি। আসলেই তাই! কলম দিয়ে একটা মিথ্যা কথাকেও মোহময় ভাবে তুলে ধরা যায় , আবার হয়তো একটা সত্য কথাকেও। কিন্তু , আজ আমাদের চারিদিকে তাকালে দেখি চেতনাধারিদের কলমের জোর আমাদের চেয়ে কয়েকশো গুন বেশি, কারণ আমরা এই দিকটাকে আবেগ দিয়ে আচ্ছন্ন করে রেখেছি নিজেদের গণ্ডির মাঝে, ছড়িয়ে দিতে পারিনি সাধারনের মাঝে।

আপনি একজন ব্যক্তি হিসেবে ভাবতেই পারেন , একজন আপনি না লিখলে জাতির কিছুই হবেনা। কিন্তু আপনার মাঝে যদি লিখার মতো শক্তি থাকে , সেটা যে কোন উপায়ে হোক তা ছোট বড় যে কোন উদ্যোগ , চাই কেউ পড়ুক বা না পড়ুক , আপনার কলম থেমে থাকা উচিৎ নয়। আর থামিয়ে দিলে আপনার প্রতিভার জন্য অবশ্যই বিধাতার কাছে জবাব দিহিতা করতেই হবে।

রবীন্দ্রনাথ বলে গেছেন - বই কালের সাঁকো , এক কালের মানুষের সাথে আরেক কালের মানুষের সেতু বন্ধন বানিয়ে দেয়। সেই সেতু বন্ধনে যারা আবদ্ধ হয় তারা তাদের সেই ভাব পরের প্রজন্মের কাছে তা সংক্রমিত করে যায়।

আমরা যারা ভাবি , বিপ্লব একদিনেই হয়ে যাবে , এই পদক্ষেপ নিলাম , এই লিখলাম আজ ই সমাজ টা আমাদের মতো গড়ে নিব এই ধারনাটা মোটেও ঠিক নয়। বিপ্লব মানে বন্দুক তলওয়ার নিয়ে রাজপথে হাজার হাজার মানুষ নামা নয় , বিপ্লব মানে একজন মানুষের মনোজগতের আমুল পরিবর্তন , সেই সাথে সারা সমাজের সবার যদি মানসিকতা কে বদলে দেওয়া যায়, আর নচেত সেই বিপ্লব অধরাই থেকে যায়।

এই যে এতো বই , এতো লিখা এসব কেন? আপনার আমার মনকে জাগিয়ে যাওয়ার জন্যই। পৃথিবী গতিশীল , গতিশীল সমাজ বাস্তবতা এবং প্রেক্ষাপট । তাই কিছু দিক দিশারীর লিখা সামনে আছে বলেই বসে থাকা যাবে তা কিন্তু নয়। সেই দিশারিদের আদর্শে ঠিক থেকে এখনকার সমাজের জন্য চালিয়ে যেতে হবে অবিরাম কলম যুদ্ধ , যার যার যায়গা থেকে। অন্তত লিখকের একটাই দায় বদ্ধতা থাকে , সমাজ ও আগামী প্রজন্মের জন্য । হতে পারে আপনার একটা কবিতার লাইন অথবা একটা প্রবন্ধ একটা মানুষকে তৈরি করে দিবে , ভাবার জন্য, চিন্তার খোরাক জুগিয়ে যাবে কাল থেকে কালান্তরে। দেশে দেশে রাজনৈতিক বিপ্লব বিফলে যাচ্ছে তার একটা বড় কারণ হোল তারা সংস্কৃতিকে শক্ত ভীতের উপর দ্বার করাতে পারেনি, মিশর এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ , আরেকদিকে ইরানের বিপ্লব , এতো বছর পরেও কত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আর লিখালিখির প্রাচুর্যে ?

প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্তে খেলা প্রবন্ধ কে না পড়েছে? ওরা কিন্তু ওদের জন্য জ্বালাময়ী লিখক বানানোর সব তৈরি করে গেছে। এবং , জহুরি যে বলেছিলেন মন্দ কাজেও যারা নিষ্ঠাবান তারা তাদের মন্দ কাজেও সফল হয়। আমরা কি একটু নিষ্ঠাবান হতে পারিনা আমাদের ভালো কাজ গুলোয়?

বিষয়: সাহিত্য

১৩১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File