মিলাদুন্নবী (সাঃ) কিভাবে পালন করবেন ???!!!
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩৮:৩৭ দুপুর
সকল প্রশংসা এক আল্লাহর যিনি আমাকে লেখার তৌফিক দান করেছেন । অসংখ্য দুরুদ ও সালাম নবী মোহাম্মদ সা: এর উপর ।
আসছে বরিউল আওয়াল মাস । এখন থেকেই মিলাদুন্নবী পালনের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা/সমালোচনা চলছে ।
>>>ইসলামে জন্মদিন, পালন করা যায়েজ নেই । কথাটি কি সঠিক ?!
>>>নাকি প্রচলিত যে পদ্ধতিতে জন্মদিন পালন করা হয় এটা ঠিক নয় ?
***তাহলে কিভাবে পালন করতে হবে বা ইসলামে এর বিধান কি ? ***
এর সমাধান জানার জন্য লেখাটি মনযোগ সহ বুঝে পড়ার জন্য বিশেষভাবে আমার আন্তরিক অনুরোধ ।
দিন, দিবস বা Day কি?
পৃথীবীর সকলে একমত যে দিন হবে শুক্রবার(Friday), শনিবার(Saterday), রবিবার(Sunday)...এ রকম ৭ দিনের(Days) এর যে কোন এক দিন ।
তাহলে দিন (Day), দিবস যাই পালন করেন তা ৭ দিনের যেকোন একদিনই হবে । মাসে ৪/৫ বার, বছরে ৫২ বার পালন করলেই আপনার বলার শব্দের সাথে মিল হবে । তানা হলে বলা হবে-
***পাগলে কি বলে, আর কি করে !!!***
দেখুন, রাসুল (সাঃ) মিলাদুন্নবী বা জন্মদিন কিভাবে পালন করেছেন-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ قَالَ « ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ ».
......রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবারে সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল । তিনি বললেন এ দিনে
***আমার জন্ম হয়েছে***
এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে বা আমার উপর কোরআন নাজিল শুরু হয়েছে [বিস্তারীত দেখুন-সহীহ মুসলিম (ইঃফাঃ) হাদিস ২৬২১; সুনান আবু দাউদ (ইঃফাঃ) হাদিস ২৪১৮; রিয়াযুস স্বা-লিহীন হাদিস ১২৬৩]
উপরের হাদিসটি থেকে বুঝা যায়- জন্মদিন (Birthday) বা রাসুল (সাঃ) এর মিলাদুন্নবী হবে প্রতি সপ্তাহে এক বার ।
জন্মদিনে রাসুল (সাঃ) সপ্তাহে এক দিন সোমবার সিয়াম (রোজা) রেখে একাকী পালন করেছেন ।
যা উম্মী নবী (সাঃ) তাঁর বাণীতে বলে গেছেন এবং পালন করে গেছেন ।
সর্বোচ্চ স্বরে বলুন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ।
আর আমরা কেক, নানা ধরনের বিলাসী খাবার, মিলাদ ইত্যাদি বেদাতী (নব আবিষ্কৃত) আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে বছরে এক দিন পালন করি ।
আমরা প্রতিনিয়তই দিন, দিবস, Day বলে আসছি অথচ বারের সাথে না মিলিয়ে বছরে ১ বার তারিখের সাথে মিলিয়ে পালন করে আসছি !!! !!! !!!
পৃথিবীর অধিকাংশ লোক ব্যক্তিগত জন্মদিন বা যেকোন দিন, দিবস, এবং রাসুল (সাঃ) এর মিলাদুন্নবী বা জন্মদিন যে নব আবিষ্কৃত প্রচলিত পদ্ধতিতে পালন করে আসছে তা উপরের বর্ণনা অনুযায়ী ভ্রান্ত পদ্ধতি বা বেদাতী ।
ইসলামের কিছু হক্কপন্থী আলেম বেদাতীদের বিরধীতা করতে যেয়ে বলে থাকেন জন্মদিন পালন করা যায়েজ নেই ।
আপনারা যদি আল্লাহ ও রাসুলের সহীহ সত্য বাণী জানাতে চান তাহলে এভাবে না বলে কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে বলতে পারেন যে,
***প্রচলিত পদ্ধতিতে পালন করা যায়েজ নেই । তবে
কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে প্রতি সপ্তাহে ১ (এক) দিন সিয়াম (রোজা) রেখে পালন করা যায়েজ, তবে বাধ্যতামুলক নয় ।***
লেখাটি যারা মনযোগসহ পড়েছেন, বুঝেছেন, ভাল লেগেছে আপনারা কপি করে, প্রিন্ট মিডিয়া বা অন লাইনের যে কোন সাইটে প্রকাশ করতে পারেন অথবা এর শেয়ার করে অন্যদের নিকট ব্যপক প্রচার করতে পারেন ।
যারা অন্য ভাষায় পারদর্শী আপনারা হুবহু ঐ ভাষায় রূপান্তর করেও প্রচার, প্রকাশ করতে পারেন ।
কোন ধরণের ভুল পেলে বা কোথাও প্রকাশ করলে জানাবেন । সংশোধন করব । ইনশা আল্লাহ !
<***>বিঃদ্রঃ রাসুল (সাঃ) নিজে প্রতি সোমবার সিয়াম রেখে মিলাদুন্নবী বা জন্মদিন পালন করেছেন; তবে কারো জন্য বাধ্যতামূলক করেন নাই<***>
তাই আপনাদের ইচ্ছে হলে রাসুল (সাঃ) এর মিলাদুন্নবী প্রতি সোমবারে নফল সিয়াম রেখে একাকি পালন করতে পারেন । বছরে একবার পালনের কোন সহীহ দলিল নাই ।
আর আপনাদের
দিন, Day, দিবস, ......যাই পালন করেন উত্তম পদ্ধতি হল নফল সিয়াম রেখে একাকি পালন করা । এ ছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে পালন করে গুনাহের কাজ না করে, পালন না করাই ভাল <***>
আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা যেন আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন ।
আমীণ!
বিষয়: বিবিধ
২৬৮৩ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দলিল দিন
ঐ দিন তার ওফাত হয়েছে কোন বাণীতে কোন হাদিসে আছে কোন হাদিসে
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে যাঁর সবচেয়ে বেশী ভালোবাসতেন সে সব সাহাবাগণ বিশ্বনবী (সাঃ) এর জীবিতকালে অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর জন্ম বা মৃত্যু বার্ষিকী পালন করেননি। এমনকি রাসূল (সাঃ) এর একমাত্র পূত্র ইবরাহীম ছাড়া বাকী পুত্রগণ তাদের জন্মের এক বছরের মধ্যেই মারা যায়। শুধু মাত্র ইবরাহীম ষোল মাস বয়সে মারা যায়।এজন্য নাবী (সাঃ) এতই দুঃখিত হন যে, তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) কিন্তু এই আদরের ছেলেটির জন্মের দ্বিতীয় বছরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার “মৃত্যু” অথবা “জন্মোৎসব পালন করেননি।
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম দিবস,মৃত্যু দিবস পালন করা এবং এ উপলক্ষে যে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয় তা হারাম এবং বিদআত।জন্ম দিবস এবং মৃত্যু দিবস পালনের কোন প্রমাণ কিংবা চর্চা রাসুল সা. কিংবা তাঁর সাহাবী (রাঃ) দের মাধ্যমে হয়েছিল বলে কোন প্রমাণ নাই।
ইসলামে সকল হুকুম আহকাম, আচার-অনুষ্ঠান সুনির্ধারিত ও কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা প্রমাণিত।কিন্তু নবী কারীম সা.এর জন্ম দিবস,মৃত্যু দিবস পালনের কথা কোথাও নেই। এমনকি নবী প্রেমের নজীরবিহীর দৃষ্টান স্থাপনকারি সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের কেহ এ ধরনের কাজ করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই।
ইসলামে কম হলেও একলাখ চব্বিশ হাজার নবী, তারপরে খুলাফায়ে রাশেদীন ও অসংখ্য সাহাবা, মনীষি আওলিয়ায়ে কেরাম জন্ম গ্রহণ করেছেন ও ইন্তেকাল করেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন ইসলাম সমর্থিত হত বা সওয়াবের কাজ হত তাহলে বছরব্যাপী জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনে ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ হয়ে যেতে হত আমাদের সকল মুলমানদের।
রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবাগন ছিলেন সত্যিকারার্থে নবীপ্রেমিক ও সর্বোত্তম অনুসারী। নবী প্রেমের নজীর ও দৃষ্টান্ত তারাই স্থাপন করেছেন। তারা কখনো নবী কারীম সা. এর জন্মদিনে অনুষ্ঠান পালন করেননি। যদি এটা করা ভাল হত ও মহব্বতের পরিচায়ক হত তবে তারা তা অবশ্যই করতেন। আর জন্মোৎসব পালন করার কালচার সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিল না তা বলা যায় না। কেননা তাদের সামনেই তো খৃষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্মদিন ( বড়দিন) উদযাপন করত।
তাছাড়া নবী কারীম সা. এর জন্মদিন পালনের প্রস্তাব সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। যেমন হিজরী ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হওয়া সময় উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে বৈঠকে বসলেন। কোন এক স্মরনীয় ঘটনার দিন থেকে একটি নতুন বর্ষগণনা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে বলে সিদ্ধান- নেয়া হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব করলেন রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্ম তারিখ থেকে সন গণনা শুরু করা যেতে পারে। উমর রাঃ এ প্রস্তাব বাতিল করে দিয়ে বললেন যে এ পদ্ধতি খৃষ্টানদের। উমার রাঃ এর এ সিদ্ধানে-র সাথে সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত পোষণ করলেন। এবং রাসূলে কারীম সা. এর হিজরত থেকে ইসলামী সন গণনা আরম্ভ করলেন।
যেহেতু রাসুল সা. এর জন্ম দিবস এবং মৃত্যু দিবস পালন করা জায়েয নয় সেহেতু অন্য কারো জন্মদিসবস,মৃত্যু দিবস পালন করা শরিয়ত সম্মত নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এগুলো ধর্মের নামে চালু করা হয়েছে কিন্তু এসব আনুস্থানিকতা পালনে ইসলামের কোন সমর্থন নেই।আমাদের সমাজে সমাজে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী সন্তান-সন্ততি,নেতা নেত্রীর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী নানা আনুস্থানিকতা এবং অত্যন্ত জমজমাট ভাবে পালন করা হয়ে থাকে।সেখানে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে বিশাল খাবার-দাবারের আয়োজন ও অন্যান্য আনুস্থানিকতা করা হয়ে থাকে,কিন্তু আমরা কজনে জানি বা জানার চেষ্টা করি যে,জন্ম বার্ষিকী এবং মৃত্যুবার্ষিকী আনন্দ উৎসব বা শোক পালন করা ইসলামি চেতনার পরিপন্থি।
জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবস কেন্দ্রিক আচার অনুষ্ঠান খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য অমুসলিমদের ধর্মীয়রীতি।তাই এটা মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য। বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান যতই ভাল দেখা যাক না কখনো তা মুসলিমদের জন্য গ্রহণ করা জায়েয নয়।
রাসূলে কারীম সা. বলেছেন – “যে ব্যক্তি কোন জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে সে তাদের অনর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে।”
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবিতকালে ওয়াহী দিবস, কুরআন নাযিল দিবস, পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ) এর জন্ম বা মৃত্যু দিবস, মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (আঃ) এর জন্ম বা মৃত্যু দিবস এসেছে কিন্তু রাসূল (সাঃ) এভাবে কোন নবীর স্মরণে বা কোন সাহাবার শাহাদাত দিবস অথবা কোন জিহাদের দিবস পালন করেন নাই এবং নির্দেশও দেন নাই। বরং তিনি বলে গেছেন , আমার পরে আমার শরীআ’তের মধ্যে যে সকল নতুন কাজকর্ম আবিষ্কার হবে, আমি তা হতে সম্পর্কহীন এবং ঐ সকল কাজকর্ম মারদূদ পরিত্যাজ্য ও ভ্রষ্ট। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) তাই মীলাদুন্নবী ও মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা কোন জীবিত ও মৃত ব্যক্তির জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে বিদ’আত তথা মনগড়া কাজ। আর ইতিহাসের দৃষ্টিতে ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপুজকদের অন্ধ অনুসরণ তথা ইসলাম বিরোধী কাজ। আর এসব জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী পালন কার তো বৈধ নয়ই বরং এগুলো থেকে অবশ্যই বিরত থাকা জরুরী।
পোষ্টে স্পষ্টদলিল সহ লেখা ছিল রাসুল (সা সোমবার সিয়াম পালন করেছেন, এর একটি কারন ঐ দিন তার জন্ম দিন।
তিনি নিজে একাকি পালন করেছেন,তবে কার জন্য বাধ্যতামুলক বলেন নি।
মিলাদুন্নবী করতেই হবে এমন কোন কথা নেই।
আবার পালন করা না যায়েজ এটাও ঠিক নয়।
স্পষ্ট কথা হল, প্রচলিত পদ্ধতিতে পালন করে গুনাহ করার চেয়ে না করাই ভাল ।
করতে চাইলে রাসুলের পদ্ধতিতে করাই উত্তম।
পোষ্টে হাদিসের দলিল থাকা সত্যেও, কিভাবে বলেন হাদিসেও নেই?
প্রচলিত পদ্ধতিতে পালন করলে গুনাহ হবে ---
ইচ্ছে হলে সোমবার নফল সিয়াম রেখে পালন করবেন।
বাধ্যতামুলক নয়, না করলে কিছুই হবে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন