জন্মদিন (Birthday) কিভাবে পালন করবেন !!!

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ৩০ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:৪৩:১১ রাত



সকল প্রশংসা এক আল্লাহর যিনি আমাকে লেখার তৌফিক দান করেছেন । অসংখ্য দুরুদ ও সালাম নবী মোহাম্মদ সা: এর উপর ।

ইসলামে জন্মদিন, পালন করা যায়েজ নেই । কথাটি কি সঠিক ?!

নাকি প্রচলিত যে পদ্ধতিতে জন্মদিন পালন করা হয় এটা ঠিক নয় ?

তাহলে কিভাবে পালন করতে হবে বা ইসলামে এর বিধান কি ?

এর সমাধান জানার জন্য লেখাটি মনযোগ সহ বুঝে পড়ার জন্য বিশেষভাবে আমার আন্তরিক অনুরোধ ।

আমার পরিচিত একজন আমাকে তার জন্মদিনের আমন্ত্রণ করেন ।

আমি তার জন্ম বছর, মাস, তারিখ, দিন বা বার, ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড জানতে চাইলাম।

সে জানালো ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসের ২০ তারিখ রবিবার রাত ৮ টায় তার জন্ম ।

তার উত্তরে জানালাম যে,

আপনার জন্মের সাল ১৯৯৬ যা জীবনে এক বারই এসেছিল । আর ফিরে আসবে না । ইংরেজিতে বলা যায় Year of birth (জন্মের বছর বা সাল) = বলা যায় Birthyear বা জন্মসাল/বছর । এটা মৃত্যুর পূর্বে ২য় বার আসা/পালন করা কারো পক্ষে সম্ভব না ।

জন্ম মার্চ মাসে যা প্রতি বছরে এক বার আসবে । ইংরেজিতে বলা যায় Month of birth (জন্মের মাস) = Birthmonth (জন্ম মাস); আপনি প্রতি বছরে জন্মের মার্চ মাস ১ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ১ মাস পালন করতে পারেন ।

জন্মের তারিখ ২০শে মার্চ যা প্রতি বছরে এক বার আসবে । ইংরেজিতে বলা যায় Date of birth (জন্মের তারিখ) = Birthdate (জন্মতারিখ); আপনি জন্মের তারিখ হিসাবে প্রতি বছরে এক বার মার্চের ২০ তারিখে পালন করতে পারেন ।

জন্মের দিন রবিবার যা প্রতি সপ্তাহে এক বার, মাসে চার বার, বছরে ৫২ (বায়ান্ন) বার আসবে । ইংরেজিতে বলা যায় Day of birth (জন্মের দিন) = Birthday (জন্মদিন); আপনি জন্মদিন হিসাবে প্রতি সপ্তাহে এক বার, মাসে চার বার, বছরে বায়ান্ন বার পালন করতে পারেন ।

জন্মের সময় রাত ৮টা যা প্রতি দিন এক বার, বছরে ৩৬৫ বা ৩৬৬ বার আসবে । ইংরেজিতে বলা যায় Time of birth (জন্মের সময়) = Birthtime (জন্মসময়); আপনি জন্ম সময় হিসানে বছরের প্রতি দিন রাত ৮টায় পালন করতে পারেন ।

আমার প্রশ্নঃ এখন আপনি আমাকে প্রতি বছরের ২০শে মার্চ তারিখে এক বার কিসের আমন্ত্রণ দেন । উত্তরে বলে জন্মদিনের, (Birthday)র ।

লেখাটি যারা পড়েছেন, বুঝেছেন, আপনারা বলুন তার উত্তরটা “সঠিক” না “ভুল” ?

আমাদের পার্থিব জীবনে, জীবন বৃত্তান্ত বা Bio data প্রয়োজন পড়ে । সেখানে আমরা জন্মদিন বা Birthday এরকম কোন শব্দ লিখি না । সেখানে উল্লেখ থাকে জন্মতারিখ, জন্মের তারিখ বা Date of birth .

“এবার দেখুন ইসলামের বিধান”

عن أبي قتادة رضى الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم الاثنين، فقال : ذلك يوم ولدت فيه ويوم بعثت فيه أو أنزل علي فيه ( رواه مسلم(

عَنْ أَبِى قَتَادَةَ الأَنْصَارِىِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ قَالَ « ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَىَّ فِيهِ ».

আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবারে সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল । তিনি বললেন এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে বা আমার উপর কোরআন নাজিল শুরু হয়েছে (মুসলিম : ২৮০৪)

একটু গভীরভাবে অনুধাবন করুন- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন উম্মী অর্থাৎ নিরক্ষর । আল্লাহ’র সৃষ্টির কেউ তাঁর শিক্ষক বা জ্ঞানদাতা ছিল না ।

স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামিন, ফেরেস্তা জিব্রাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে তাকে জ্ঞানদান করেছেন । আল্লাহু আকবার ।

উপরের হাদিসটি থেকে বুঝা যায়- জন্মদিন (Birthday) বা রাসুল (সাঃ) এর মিলাদুন্নবী হবে প্রতি সপ্তাহে এক বার ।

দিন, দিবস, Day বলতে Sunday, Monday….etc বা রবিবার, সোমবার…ইত্যাদি সাত দিনের যে কোন এক দিনকে বুঝায় ।

জন্মদিনে রাসুল (সাঃ) সপ্তাহে এক দিন সিয়াম (রোজা) রেখে একাকী পালন করেছেন ।

যা উম্মী নবী (সাঃ) তাঁর বাণীতে বলে গেছেন এবং পালন করে গেছেন ।

সর্বোচ্চ স্বরে বলুন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ।

আর আমরা কেক, নানা ধরনের বিলাসী খাবার, মিলাদ ইত্যাদি বেদাতী (নব আবিষ্কৃত) আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে বছরে এক দিন পালন করি ।

আমরা প্রতিনিয়তই দিন, দিবস, Day বলে আসছি অথচ বারের সাথে না মিলিয়ে বছরে ১ বার তারিখের সাথে মিলিয়ে পালন করে আসছি !!! !!! !!!

পৃথিবীর অধিকাংশ লোক ব্যক্তিগত জন্মদিন এবং রাসুল (সাঃ) এর মিলাদুন্নবী বা জন্মদিন যে নব আবিষ্কৃত প্রচলিত পদ্ধতিতে পালন করে আসছে তা উপরের বর্ণনা অনুযায়ী ভ্রান্ত পদ্ধতি বা বেদাতী ।

ইসলামের কিছু হক্কপন্থী আলেম বেদাতীদের বিরধীতা করতে যেয়ে বলে থাকেন জন্মদিন পালন করা যায়েজ নেই ।

আপনারা যদি আল্লাহ ও রাসুলের সহীহ সত্য বাণী জানাতে চান তাহলে এভাবে না বলে কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে বলতে পারেন যে,

প্রচলিত পদ্ধতিতে পালন করা যায়েজ নেই । তবে

কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে প্রতি সপ্তাহে ১ (এক) দিন সিয়াম (রোজা) রেখে পালন করা যায়েজ, তবে বাধ্যতামুলক নয় ।

লেখাটি যারা মনযোগসহ পড়েছেন, বুঝেছেন, ভাল লেগেছে আপনারা কপি করে, প্রিন্ট মিডিয়া বা অন লাইনের যে কোন সাইটে প্রকাশ করতে পারেন অথবা এর শেয়ার করে অন্যদের নিকট ব্যপক প্রচার করতে পারেন ।

যারা অন্য ভাষায় পারদর্শী আপনারা হুবহু ঐ ভাষায় রূপান্তর করেও প্রচার, প্রকাশ করতে পারেন ।

কোন ধরণের ভুল পেলে বা কোথাও প্রকাশ করলে জানাবেন । সংশোধন করব । ইনশা আল্লাহ !

I. Q. এক বছরে এক জনের কত বার জন্মদিন (Birthday) হতে পারে ?

<***>বিঃদ্রঃ রাসুল (সাঃ) নিজে প্রতি সোমবার সিয়াম রেখে মিলাদুন্নবী বা জন্মদিন পালন করেছেন; তবে কারো জন্য বাধ্যতামূলক করেন নাই<***>

তাই আপনাদের ইচ্ছে হলে রাসুল (সাঃ) এর মিলাদুন্নবী প্রতি সোমবারে সিয়াম রেখে একাকি পালন করতে পারেন । বছরে একবার পালনের কোন সহীহ দলিল নাই ।

আর আপনাদের

জন্মসময়/জন্মদিন/জন্মতারিখ/জন্মমাস/জন্মসাল......যাই পালন করেন উত্তম পদ্ধতি হল নফল সিয়াম রেখে একাকি পালন করা । এ ছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে পালন করা গুনাহের কাজ<***>

আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা যেন আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন ।

আমীণ!

বিষয়: বিবিধ

১৩৪৩ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347908
৩১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৪:৩৪
শেখের পোলা লিখেছেন : অকাট্য যুক্তি৷ ধন্যবাদ৷
০৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৫৮
289554
সত্যের লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
347930
৩১ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১১:০৯
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : অকাট্য যুক্তির মাধ্যমে ইসলামের সুন্দর্য উপস্থাপন করেছেন
অনেক ধন্যবাদ
০৪ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২৭
289228
সত্যের লিখেছেন : যাজাকাল্লাহ
348208
০২ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৩৪
সত্যের লিখেছেন : হ্যাঁ ভাই । আমরা মুখে বলি দিন/দিবস/Day....
অথচ সপ্তাহের দিনের সাথে না মিলিয়ে বছরে ১বার প্রচলিত নব আবিস্কৃত পদ্ধতিতে পালন করে গুনাহ করছি । গুনাহ করার চেয়ে পালন না করাই ভাল ।
যদি করতে চান তবে প্রতি স্পতাহে একবার নফল সিয়াম রেখে একাকি পালন করাই উত্তম ।
349400
১১ নভেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৩০
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : অসাধারণভাবে তথ্য ও তত্বের ভিত্তিতে প্রদত্ত ব্লগটির জন্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আশাকরি আরো লিখবেন..ধন্যবাদ..
350367
১৯ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:২০
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। অসাধারণ একটা কথা বলেছেন। ফেসবুকে ঠিক এই কথাটা বলায় একজন আহলে হাদিস সমর্থক আমাকে বেদাতি বলে গালমন্দ করেছিল। আমার ব্যর্থতা আমিও অবস্হানটা পরিষ্কার করতে পারিনি। বেশ গুছানো লেখা। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File