হজ্জে মাবরুর (কবুল হজ্জ) এর কিছু বাহ্যিক লক্ষণ

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:০৯:২১ রাত



হজ্জ কবুল হওয়ার শর্তঃ হজ্জে মাবরূরঃ

১। যে হজ্জে গোনাহ করা হয়নি এবং ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক আদায় করা হয়েছে ।

২। হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর পূর্বের চেয়ে উত্তম হওয়া (ফতহুল বারী ৩/৪৪৬ হা/১৫১৯-এর ব্যাখ্যা)

ইসলামী লেবাস-ছুরুতঃ

এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখব ।

টাকনুর উপর কাপড় পড়ব ।

আহাল পরিবারকে শরীয়া অনুযায়ী পর্দার সাথে পরিচালনা করব । এই বলে আল্লাহ্‌র নিকট খাটি তাওবা অঙ্গীকার করব ।

নিজে ও আহালদেকে টিভিতে নাটক, সিনেমা, নাচ, গান ইত্যাদি যাবতীয় শরীয়াত বিরোধী অনুষ্ঠান দেখা থেকে বিরত রাখা ।

প্রয়োজনে টিভিতে খবর ও ইসলামিক অনুষ্ঠান দেখা যাবে ।

নিজে ও আহালদের প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা কুরআনের তাবসীর “ইবনে কাছিরের অনুবাদ” এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অনুবাদ কিনে পড়াব ।

৩। অনেকে লোন নিয়ে ব্যবসা, বাড়ি করছেন । পরিশোধ না করে হজ্জে আসছেন ।

হজ্জেই খাটি তাওবা করুন জীবনে আর লোন নিবেন না, দেশে যেয়েই পরিশোধ করে দিবেন ।

তাহলে আপনার হজ্জ আল্লাহ কবুল করতে পারেন ।

কুরআনে বর্ণিত সুদ হারাম এবং দেয়া-নেয়া কবিরা গুনাহ ।

ঋণ মুক্তির দো’আঃ আল্লা-হুম্মাকফিনী বেহালা-লেকা ‘আন হারা-মেকা ওয়া আগ্‌নিনী রেফাযলেকা ‘আম্মান সেওয়া-কা (হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হারাম ব্যতীত হালাল দ্বারা যথেষ্ট কর এবং তোমার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন কর)

রাসুল (সাঃ) বলেন, এই দো’আ পাঠের দ্বারা পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করে দেন (মিশকাত হা/২৪৪৯)

তবে তাড়াহুড়া করবেন না । ঋণ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পড়তেই থাকুন । আপনার সদিচ্ছা থাকলে একদিন ঋন মুক্ত হবেনই । ইনশা-আল্লাহ!

এটাও পড়ুনঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখ্‌লি, ওয়া যালা’ইদ দায়নি ওয়া গালাবাতির রিজা-লি (হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ হ’তে, অক্ষতা ও অলসতা হ’তে, ভীরুতা ও কৃপণতা হ’তে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের যবরদস্তি হ’তে-মিশকাত হা/২৪৫৮)

৪। ইতোপূর্বে যদি আল্লাহ্‌র হক নষ্ট করে থাকেন, ছালাত, সিয়াম ও যাকাতে অমনোযোগী থাকেন ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন ।

কুরআন ও সহীহ হাদিসে বর্ণিত সহীহ আক্বীদা রাখুন । বিশেষ করে “আল্লাহ আরশে অবস্থিত” “আল্লাহ্‌র আকার আছে তবে তুলনীয় নয়” “রাসুল (সাঃ) মাটির তৈরী” বিশ্বাস করাই সহীহ আক্বীদা ।

হারাম ভক্ষণ করবেন না । বিশেষ করে তামাক (বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল, হুক্কা) জাতীয় দ্রব্য খাবেন না ।

একটু চিন্তা করুন দুনিয়ার সকল বিশেক্ষজ্ঞ তামাক ক্ষতিকর বলেছে । আপনি কেন খাবেন ?

আল্লাহ বলেছেন - وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ

“তিনি তোমাদের জন্য পবিত্র ও ভাল (তাইয়েবাত) বস্তু হালাল করেন আর তিকর - নোংড়া (খাবায়িস) জিনিষ হারাম করেন (সূরা আল-আরাফ :১৫৭)

আউয়াল ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন, যেমনটি মক্কা-মদিনা করে আসলেন । সমাজে জামায়াত দেরিতে হলে, একাই পড়ে নিবেন, আবার সম্ভব হলে জামাতেও শরীক হ’তে পারেন (এটা নফল হবে)

সালাতের সহীহ ত্বরিকা ইকামত আযানের অর্ধেক, পায়ের সাথে পা-কাধের সাথে কাধ মিলিয়ে দাঁড়ানো, বুকের উপরে হাত বাঁধা, সুরা ফাতেহা পাঠ করা, আমীণ জোড়ে বলা, তাকবীরে তাহরীমা, রুকুর আগে ও পরে এবং মধ্য বৈঠক থেকে উঠে রফউল ইয়াদাইন করা...... ইত্যাদি গ্রহন করুন ।

সালাতের সহীহ ত্বরিকা জানার জন্য বুখারী ও মুসলিম শরীফের সালাত অধ্যায় অনুবাদ কিনে পড়ুন ।

প্রচলিত সম্মিলিত মুনাজাত, মিলাদ, শবে-বরাত, মিলাদুন্নবী......ইত্যাদি সকল বেদাত সহীহ না জানা পর্যন্ত আর করব না ।

সকল প্রকার বেদ’আত এবং সন্দেহযুক্ত বিষয় বর্জন করব । সমাজের ইমাম বা আলেমদের নিকট থেকে “লিখিত পূর্ণাঙ্গ সহীহ দলিল” না পাওয়া পর্যন্ত আর করব না ।

যত বড় পীর বুজুর্গ আলেম হোক না কেন কুরআন হাদিসের সহীহ দলিল দেখাতে না পারে তার কথাও মানব না ।

কোন সু-সজ্জিত মাযারে আশা পূরণের উদ্দেশ্যে মান্নত ও দান খয়রাত করব না । জ্ঞাতব্যঃ মাযার করা ইসলামে যায়েজ নাই ।

হজ্জের পড় নিয়ত করুন-আমি সকল ইবাদত কুরআনের তাফসীর, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম......এর অনুবাদ কিনে অধ্যায়ন করে মিলিয়ে পালন করব ।

হজ্জের দিনগুলো আল্লাহর নিকট হতে ক্ষমা লাভের বিশেষ দিন । সকল প্রকার শিরক, বেদাত, হারাম হ’তে খাটি তাওবা করে ফিরে আসুন কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ্‌র দিকে । মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আর শিরক, বেদাত, হারামে লিপ্ত হব না এই বলে দৃঢ় অঙ্গীকার করুন ।

যারা কুরআন ও সহীহ হাদিস অনুযায়ী আক্বীদা রাখে, ইবাদত বন্দেগী করে বা পূর্ণাঙ্গ দলিল সহ বলে, প্রচার করে, অন্য কারো কথা বা যুক্তি দিয়ে বিরোধিতা না করে, দলিলগুলো যাচাই করে আপনিও সহীহ তরিকা ধরুন ।

ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বলেছেন, মুসলমানগণ ইজমা করেছেন যে, যার সামনে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাত প্রকাশ পাবে-অন্য কারো কথার নির্ভরতায়-তা উপেক্ষা করা বৈধ হবে না (ইবনুল কাইয়েমঃ মাদারিযুস্‌সালিন ২/৩৩২)

৫। হজ্জ করলেও হক্কুল ইবাদ (বান্দার হক) ক্ষমা হবে না, যতক্ষণ না ক্ষতিপূরণ দিয়ে বা ক্ষমা চেয়ে ওই ব্যক্তিকে রাজি খুশি করা হবে ।

গণ মানুষের হক ঘুষ এবং জন কল্যানের কাজের টাকা আর নিব না বলে খাটি তাওবা করুন এবং বেনামে সওয়াবেন নিয়ত না করে দান করুন ।

বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘হে লোকসকল!......। অতএব সাবধান! তোমরা আজকের দিনের পর যেন পুনরায় পথভ্রষ্ট হয়ো না(মিশকার হা/২৬৫৯)

হজ্ব পালনের পরে যারা উপরোক্ত বিষয় মেনে চলে না, বাহ্যিকভাবে আমরা বলতে পারি, তাদের হজ্ব কি করে কবুল হতে পারে !!! (অন্তরযামী আল্লাহ)

Plz share & comment

বিষয়: বিবিধ

১৪০৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

341480
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:২৫
341548
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:২৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর
341553
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০২:৩৫
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খায়ের
341562
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:১৮
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : নিজে ও আহালদের প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা কুরআনের তাবসীর “ইবনে কাছিরের অনুবাদ” এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অনুবাদ কিনে পড়াব ।

ইবনে কাছির কেন ?
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৩৭
283874
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : ইমাম ইবনে কাসির একজন বিখ্যাত ইমাম। তিনি তাফসির ও হাদিসের ইমাম। মুসনাদে আহমাদের সকল হাদিস তার মুখস্ত ছিলো। তাফসির ইবনে কাসির সবার কাছে একটি গ্রহনীয় তাফসীর। এই তাফসির হাদীস দিয়ে তাফসির করা।

এই তাফসির সালাফদের তাফসির। এটি সকল মাযহাবের আলেমদের নিকট গ্রহনীয়। তবে এর মানে এই নয় অন্য তাফসির পড়া যাবে না। তবে তাফসির হিসেবে এটি খুব সুন্দর তাফসির। সহজ সরল ও প্রাণবন্ত। গ্যাঞ্জামহীন। পা পিছলানোর ভয়হীন।

ইমাম ইবনে কাসির সম্মন্ধ্যে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
Biography of Hafiz Ibn Kathir

Ibn Kathir

বই: তাফসীর ইবনে কাসীর (১ম-১৮শ খণ্ড, সম্পূর্ণ)

এজন্যই তাফসির ইবনে কাসির দরকার বলে আমি মনে করি। পোস্টদাতা হয়তো আরও ভালো উত্তর দিতে পারবেন।
341729
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৫৬
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। সুন্দর পোস্ট, ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
342498
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৩৮
জ্ঞানের কথা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খায়র।
347986
৩১ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২২
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আমিন। একবার পড়েছি বারবার পড়ার জন্যে প্রিয় রাখলাম.. অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File