বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে(৬ষ্ঠ)

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ১১ জুন, ২০১৫, ০৭:৩৫:৪৮ সন্ধ্যা



সমস্যাঃ-ধরুন এক দেশের সাথে পৃথিবীর অন্য যে কোন স্থানের সময়ের ব্যবধান বার ঘন্টার নিচে (ধরা যাক ১০ ঘন্টা) ।

ঐ দেশে যখন সন্ধ্যা তক্ষণাৎ ১ম চাঁদের খবর প্রচার করা হলে অন্য দেশে তখন সুবহে সাদিক হবে । রমযানের তারাবী, সেহেরী, নিয়ত অন্য দেশের লোকেরা কিভাবে করব ?

সমাধানঃ-তারাবীর জন্য-

রাসুল (সঃ) সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে মাত্র তিন দিন জামাতের সহীত তারাবীর নামায পড়েছেন ।

হযরত আবু যর (রাঃ) বলেন আমরা রাসুল (সঃ) এর সাথে রোযা রেখেছি, নবী (সঃ) আমাদের তারাবীর নামায পড়ালেন না, এমনকি রমযানের আর সাত দিন বাকি ছিল অর্থাৎ তেইশ তারিখ পর্যন্ত । তারপর তেইশ তারিখে রাত্রে আমাদের তারাবীর নামায পড়ালেন তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত । চব্বিশ তারিখ পড়ালেন না । পঁচিশ তারিখ রাত্রে অর্ধ রাত পর্যন্ত তারাবী পড়ালেন । আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! কতইনা ভাল হত যদি আপনি আমাদের সারারাত নামায পড়াতেন । নবী (সঃ) বললেন যে ব্যক্তি ইমাম মসজিদ থেকে চলে আসা পর্যন্ত ইমামের সাথে জামাতে নামায পড়েছে সে সারা রাত ইবাদত করার ছওয়াব পাবে । এরপর যখন সাতাশ তারিখ হয়ে গেছে তখন আবার নামায পড়লেন এবার পরিবারবর্গ এবং মহিলাদেরকেও আহবান করলেন এবং সুবহে ছাদেক পর্যন্ত নামায পড়ালেন (তিরমিযী । নাসাঈ । ইবনে মাযাহ । সহীহু সুনানি আবি দাউদ ১/৩৭৯ হাঃ ১৩৭৫)

তারাবীর নামায ছাড়াও রোযা রাখা যায় । উপরের হাদিসটি কি বলছে ভাল করে বুঝুন, জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিন ?

এছাড়া উক্ত দেশের লোকেরা ব্যক্তিগতভাবে তাহাজ্জুদ নামায পড়তে পারে যা তারাবীর সমতুল্য ।

কেউ বলে কিয়ামু রমযান হলো- তাহাজ্জুদ । কিয়ামু রমাযান অর্থাৎ তারাবীহ (মুসলিম শরীফ ৩য় খন্ড অনুচ্ছেদ ১০৯ অধ্যায় সালাত পৃঃ ৮৯ ইঃ ফাঃ)

আনোয়ার শাহ কাশমিরি হানাফী (রহঃ) লিখেছেন- আমার নিকট এ দুটি নামায (তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ) একই নামায । সাধারণ লোকেরা এটার অর্থ না বুঝে দুটো আলাদা নামায বানিয়ে দিয়েছে (ফয়জুল বারী শরাহ বুখারী ২য় খন্ড ৪২০ পৃঃ)

দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রটিষ্ঠাতা আল্লামা কাসেম নামুতুবী (রঃ) তার কিতাবে লিখেছেন- জ্ঞানীদের নিকট এ কথা গোপন নয় যে, কেয়ামে রমযান (তারাবীহ) ও কেয়ামুল্লায়ল (তাহাজ্জুদ) আসলে এ দুটো একই নামায । যেটা মুসলমানদের সুবিধার জন্য (রমযানের) রাতের প্রথম অংশে নির্দিষ্ট করা হয়েছে । কিন্তু গুরুত্ব হচ্ছে শেষ রাত্রে আদায় করা (ফয়েজে কাসেমিয়া ১৩ পৃঃ)

সেহেরী নিয়তের জন্য-যাদের দেশে চাঁদ দেখা যায় নাই তারা ২৯ শে শা’বান দিবাগত রাত্রে সেহেরী খেয়ে রমযানের নিয়ত করতে পারেন । যদি দিবাভাগে জানতে পারেন বিশ্বে চাঁদ উদয় হয়েছে তাহলে এক সাথে হয়ে গেল ।

আর যদি চাঁদ উদয় হয় নাই জানতে পারেন তাহলে ঐ দিনের রোজা ভেঙ্গে দিবে (যারা নিয়মিত শা’বানের রোজা রাখে না তাদের জন্য)

ঠিক এমনই একটি সন্দেহযুক্ত দিনে একবার প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রাঃ) এর সামনে একটি ভূনা বকরী উপস্থিত হয় এবং তখন তিঁনি (সাঃ) সকলকে বললেন-খাও । কিন্তু জনৈক ব্যক্তি দূরে সরে গিয়ে বলল-আমি রোজাদার । আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রাঃ) বললেন-যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত দিনে রোজা রাখে সে আবুল কাসিমের (রসূল সাঃ) সাথে অবাধ্য আচরণ করেছে (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩২৭, তিরমিযী)

নবী করীন (সাঃ) বলেছেন, তোমরা রমজান মাসের একদিন বা দুই দিন আগে থেকে রোযা রেখ না । তবে কারও যদি আগে থেকেই কোনো নির্দিষ্ট দিন রোযা রাখার অভ্যাস থাকে এবং ঘটনাক্রমে সে দিনটি ২৯ ও ৩০ শাবান হয় তাহলে সে ওইদিন রোযা রাখতে পারে (সহিহ বুখারী ১/২৫৬ হাঃ/১৯১৪)

আর যারা একেবারেই অলস অজ্ঞ গুরুত্বহীন চেষ্টা করবেন না ঘুম থেকে জেগে দেখলেন ফজর হয়ে গেছে পরে চাঁদ উদয়ের খবর পেলেন পূর্বে মনে যদি নিয়ত থাকে সম্ভব হলে এ অবস্থায় সেহারী না খেয়েও রোজা রাখতে পারেন ।

না রাখলে একই দিনে এক সঙ্গে ঈদ করে পরে একটি রোজা কাযা করে নিবেন ।

শরীয়া ক্ষেত্রে উদাসীনতার জন্য আল্লাহ’র নিকট খাঁটি তওবা করুন ।

হযরত আসমা বিনতে আবুবকর (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এর জামানায় একদিন আমরা মেঘের কারনে রোযা ইফতার করেছি, কিন্তু পরে সূর্য দেখা গেছে । [হাদিসের রাবি বলেন] আমি হিশামের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষদের কি কাজার আদেশ দেয়া হয়েছিল ? হিশাম বলল, কাজা ব্যতীত অন্য কোন পন্থাও তো ছিল না ।-ইবনে মাজাহ, সহিহ আল বুখারী ২/২৫৮ হাদিস নং ১৮২০

অনুরুপে বলা যায়, চাঁদ দেখার খবর সুবহে সাদেকের পূর্বে না পেলে এবং বিশেষ কারনে রোজা রাখতে না পারলে ঈদের পরে কাযা করা যাবে ।

(৬) গ্রন্থ “তাবয়ীনুল হাকায়েক”-এর ভাষ্য হচ্ছে-......এমনকি এক দেশের মানুষ ৩০টি রোযা রাখল, অন্য দেশের মানুষ রোযা রাখল ২৯টি, তাহলে অন্যদেরকে একটি রোযা কাযা করতে হবে (তাবয়ীনুল হাকায়েক, খন্ড-২, পৃঃ-১৬৪/১৬৫)

ইমাম মালিক (রহঃ) এর অভিমতঃ-

১. যখন বসরা শহরবাসী রমজানের নতুন চাঁদ দেখবে, অতঃপর তা কুফা, মদীনাও ইয়েমেনবাসীদের কাছে পৌছবে তাহলে ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে তাঁর শিষ্যদ্বয় ইবনুল কাসিম ও ইবনে ওয়াহাবের বর্ণনামতে শেষোক্ত দেশবাসীর প্রতিও ওয়াজিব হয়ে যাবে । অথবা

যদি বাদ পড়ে তবে সে রোযা কাযা করতে হবে (উৎস আল-মুনতাকা-শরাহল মুয়াত্তা ২য় খন্ড পৃঃ ৩৭)

সমস্যাঃ-সব কিছু এক সাথে করা সম্ভব নয় । যেমন সেহেরী ও ইফতারের সময় এবং নামাযের সময় ।

সময় সূর্যের সাথে শয়ীয়া দ্বারা নির্ধারিত । সময় এক না হলেও দিন বা তারিখ (যা চাঁদের সাথে সম্পর্কযুক্ত) এক করা সম্ভব ।

যা লেখার শুরুতে দেখানো হয়েছে । কারো দেশে রাত (দিনের শুরু) কারো দেশে দিবা (দিনের অর্ধাংশ) অর্থাৎ

একই দিন, একই দিন, একই দিন, একই সময় নয় । এটাই অনেকের বুঝের অভাব ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায় । অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত- আল বাকারা আয়াত ১৮৭)

অতএব সেহরী, ইফতার নামায...সকল ইবাদতের সময় যার যার দেশের সূর্যের সাথে সম্পর্ক করে যার যার স্থানীয় সময়ে একই দিনে, একই দিনে, একই দিনে পালিত হবে একই সময় নয় ।

এক সময় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একই রাষ্ট্র ছিল । তখন ভারতের আকাশে চাঁদ দেখা গেলেই রোযা ও ঈদ পালন করা হতো । ৪৭ এর পর পাক-ভারত আলাদা হয়ে যায় । তখন থেকে দু’দেশের আকাশও আলাদা হয়ে গেল । ৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্দে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয় । তখন থেকে ‘বাংলাদেশের আকাশ’ নামে একটি আকাশেরও জন্ম হয়েছে । মহান আল্লাহ কি এভাবে পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের জন্য পৃথক আকাশ তৈরি করেছেন ? নি:সন্দেহে ‘না’ ।

আমাদের পূর্বপুরুষরা কি ভুল করেছেন ?

এভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে অত্র মাসয়ালার উপরে কুরআন, সুন্নাহ্‌ এবং ফিকহের ইজমা বা ঐক্যমত থাকা সত্বেও তাৎক্ষনিক সংবাদ দেওয়া-নেওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় তারা পারিপার্শিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যতদূর পর্যন্ত সংবাদ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ততদূর এলাকায় আমল করেছেন । আমি মনে করি তাদের এ আমল সমসাময়িক পরিস্থিতিতে ছহীহ ও যুক্তিপূর্ণ ছিল (আল্লাহ ভাল জানেন)

অপর দিকে বর্তমানে সে ওজর বা সমস্যা না থাকায় এবং তাৎক্ষনিক সংবাদ দেয়া-নেয়ার ব্যবস্থা থাকায় আমাদেরকে অবশ্যই মূল মাসয়ালা অনুযায়ী আমল করতে হবে । এটাই ফিকহের সিদ্ধান্ত এবং বিবেক ও সময়ের দাবী ।

আল্লাহপাক বলেন-

‘প্রত্যেক সংবাদের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে প্রকাশের জন্য’ (৬:৬৭)

সমস্যাঃ-বর্তমান সময়ের জ্ঞানীরাও এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন কিভাবে সকল ইবাদত বিশ্ব মুসলিম এক হয়ে পালন করা যায় । অনেকে আধুনিক প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে এ বিষয়ে লেকচার, বইয়ের মাধ্যমে প্রচারনা চালাচ্ছে ।

সকলের প্রচারনায় দেখায় যায়-সউদির চাঁদ দেখার খবরের সাথে মিলিয়ে এক করতে চান ! কেন ?

সমাধানঃ-

---চলবে---

বিষয়টি ভালকরে বুঝার জন্য ১ম অংশ, ২য়..., ৩য়......এভাবে ধারাবাহিক ভাবে মনযোগ দিয়ে পড়েন । কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন । ইন-শাআ-আল্লাহ! জবাব দেওয়া হবে ।

১ম অংশে দেখুন নামাজ কিভাবে একই দিনে হয়

http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65221#.VWJ70_mqooI (pls click & read)

২য় অংশে দেখুন চাঁদের দেখার হাদিস গুল কি দেশ ভিত্তিক ?

http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65484#.VWJ-DfmqooI (pls click & read)

৩য় অংশে দেখুন যেকোন এক দেশের প্রথম চাঁদ দেখাই বিশ্বের সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে

http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65593#.VWWgPU-qooI (pls click & read)

৪র্থ অংশে দেখুন সারা বিশ্বে একই সাথে সিয়াম-ঈদ পালনের মাযহাবী মতামত

http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65893#.VXEOGM-qooI (pls click & read)

http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65893#324803

৫ম অংশে দেখুন যে কোন দেশে প্রথম চাঁদ দেখা অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী হিজরী মাস শুরু না করলে বহু জটিলতা সৃষ্টি হবে

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=567251780081083&id=539232086216386 (pls click & read)

বিষয়: বিবিধ

১১১১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

325219
১১ জুন ২০১৫ রাত ০৮:০৯
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : প্রিয় ভাইজান, যতই পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। লেখাটি ভবিষ্যতে বই আকারে বের করে উম্মাহর খেদমতে পেশ করার আবেদন রাখছি..কারণ এত তথ্য সম্বলিত লেখা, যে বিষয় িলখছেন এখন তা মানুষের অগোচরে্এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা খুবই কম-লেখাটি একটি মাইফলক হিসেবে গণ্য হবে সামনে ইনশাল্রাহ..
১২ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:০৯
267407
সত্যের লিখেছেন : বই করার ইচ্ছা আছে ?
লেখাটি শেয়ার করে বা কপি করে যে কোন সাইটে প্রকাশ করতে পারেন । জাযাকাল্লাহ !

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File