বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে(৪র্থ)

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ০৫ জুন, ২০১৫, ০৮:৪৮:৩৪ সকাল



ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর বক্তব্য ও এটাই এবং তিনিই সঠিক ।

পৃথিবী একটা, চাঁদ একটা, কোরআন একটা, সমস্ত মুসলিম একজাতি,

সবাই এক নবীর উম্মাত, তাহলে ঈদ কেন তিন দিনে করব ?

সন্দেহ নিরসনের জন্য বলতে হয় হানাফী মাজহাবসহ তিনটি মাজহাবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো: সর্বপ্রথম হেলালকেই সারা বিশ্বের সকলের অনুসরণ করতে হবে ।

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর অভিমতঃ-

১. যে কোন একটি দেশে নতুন চাঁদের উদয় প্রমানিত হলে বিশ্বের সকল মানুষের উপর তার অনুসরন জরুরী হয়ে পড়ে [উৎস: আল মুখতার ১ম খন্ড ১২৯ পৃঃ / ফতহুল কাদীর (শেরহে ফাতহুল কাদীয়সহ) ১ম খন্ডঃ পৃ ২৪৩/মারাকীন ফালাহ পৃঃ ৫৪০-৫৪১/ আল-বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ২৯০]

২. আর উদয়ের স্থান ও সময়ের বিভিন্নতার কোন গুরুত্ব নেই । (উৎসঃ কাদী খান ১ম খন্ডঃ পৃঃ ১৯৮/ মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড পৃঃ২৩৯ / আল মুখতার ১ম খন্ড পৃঃ ১২৯ আল-ফাতওয়া আল হিন্দিয়াহ ১ম খন্ড, পৃঃ১৯৮/ আল বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ২৯০/ ফাতহুল কাদীর ২য় খন্ড পৃঃ ২৪৩/রদ্দুল মুহতার (শামী) ২য় খন্ড পৃঃ ৩৯৩)

৩. যদি পৃথিবীর পশ্চিমাংশের বাসিন্দারা রমজান মাসের নতুন চাঁদ দেখেন তাহলে তাদের এ দেখাতেই পূর্বাংশের লোকদের উপর (রোজা ও ঈদ) ওয়াজিব হয়ে যাবে (উৎসঃ আল-বাহুরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ২৯০ / মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড ২৩৯ পৃঃ আল হিন্দিয়াহ (ফাতোয়ায়ে আলমগীরী) ২য় খন্ড ১৯৮-১৯৯ পৃঃ। ফাতহুল কাদীর ২য় খন্ড ২৪৩ পৃঃ। বাজাজিয়াহ ৪/৯৫)

ইমাম মালিক (রহঃ) এর অভিমতঃ-

১. যখন বসরা শহরবাসী রমজানের নতুন চাঁদ দেখবে, অতঃপর তা কুফা, মদীনাও ইয়েমেনবাসীদের কাছে পৌছবে তাহলে ইমাম মালিক (রহঃ) থেকে তাঁর শিষ্যদ্বয় ইবনুল কাসিম ও ইবনে ওয়াহাবের বর্ণনামতে শেষোক্ত দেশবাসীর প্রতিও ওয়াজিব হয়ে যাবে । অথবা যদি বাদ পড়ে তবে সে রোযা কাযা করতে হবে (উৎস আল-মুনতাকা-শরাহল মুয়াত্তা ২য় খন্ড পৃঃ ৩৭)

আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এর অভিমতঃ-

১. কোন একটি দেশের লোকেরা নয়া চাঁদ দেখবে সকল দেশের লোকদের উপর রোযা ফরজ হয়ে পড়ে (উৎসঃ মুঘনী পৃঃ ৭৯/ আররদুন নাদী শরহ কাফীল মরতাদী পৃঃ ১৬১/ জাদুল মুসতাকনে পৃঃ ৭৮ /আস-সালসাবীল ১ম খন্ড পৃঃ২০২ / উমদাতুল ফিকহ- পৃঃ৪৯)

সুতরাং একমাত্র ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) ছাড়া বাকী সব ইমাম ঐক্যমত পোষন করেছেন । কিন্তু পরবর্তীতে শাফেরী মাযহাবের মুজতাহিদরা (গবেষক) এ নিয়ে গবেষণা করে বিভিন্ন ধরনের মত পোষন করেছেন ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না (আল-কুরআন ৩: ১০৩)

ফিকাহ শাস্ত্রের উপরোক্ত বর্ণনা যাহেরে রেওয়ায়াতের ফতোয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।

কেন তারা বাস্তবায়ন করেননি বা করতে পারেননি তার কোন ব্যাখা পাওয়া যায় না এবং বর্তমান তাদের অনুসারীরাও সঠীকভাবে জানাতে পারছেনা ।

অনেকে ধারনা করে বলে মতভেদ ছিল অর্থাৎ এর বিপরীত মতের দলিলও ছিল অথবা সমগ্র বিশ্বের সাথে দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না, চাঁদ দেখার সংবাদ পৌছানোর জন্য ইত্যাদি । তৎকালীন সময়ে মানুষের বাহন ছিল ঘোড়া, গাধা, উট, পদযুগল ইত্যাদি ।

আল্লাহর রাসুল (সঃ) তাঁর যুগে দূরবর্তী স্থানের লোকদের চাঁদ দেখার সংবাদ পাঠানোর জন্য ‘ঘোড়সওয়ার’ এর ব্যবস্থা করেছিলেন ।

তার পরবর্তী ইসলামি রাস্ট্রের খলিফাগণ চাঁদ দেখে বা স্বাক্ষী পেয়ে যেটি করত, তা হল মুসলমানরা বিভিন্ন পাহাড়ের উপরে মশাল বা আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করতো ।

কোন খিলাফাহ এর সময়, ঘোড়া ছুটিয়ে কিংবা সমুদ্রবক্ষে জাহাজের নিরাপদে দিক চিনে চলাচলের সুবিধার্তে যে সকল লাইট হাউস বা বাতিঘর ছিল, আকাশে চাঁদ দেখা গেলে সেগুলিতে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হত ।

উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় যে সকল এলাকার মানুষ চাঁদ দেখার ব্যাপারটি বুঝতে পারত, সে সকল এলাকার মানুষেরা রোজা, ঈদ একসাথে পালন করত ।

এখান আমরা একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারব যে, আকাশে চাঁদ দেখা গেছে, এ সংবাদটি পায়ে হেটে অন্যদেরকে জানানো, ঘোড়ায় চড়ে জানানো, লাইট হাউসের মাধ্যমে জানানোর মধ্যে বিষয়ভিত্তিক কোনো পার্থক্য নেই বরং প্রযুক্তিগত পার্থক্য রয়েছে, যা প্রথম যুগ থেকেই গ্রহন করা হয়েছে । বেশী সংখ্যক মানুষকে দ্রুততার সাথে জানানোর জন্যে এ মাধ্যমগুলি প্রযুক্তি বিশেষ, যা সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়েছে । এখানে উক্ত প্রযুক্তির একটিই উদ্দেশ্য ছিল, তা হলো-দ্রুততার সাথে অন্যদেরকে চাঁদ দেখার সংবাদটি জানানো ।

বর্তমান কালে স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ইন্টারনেটের কল্যানে চাঁদকে পৃথিবীর সকল এলাকাবাসীর সামনে সরাসরি উপস্থাপন করা যায় ।

আধুনিক প্রচার মাধ্যম (টিভি, রেডিও, ইন্টারনেট, মোবাইল…) কে আমরা যাতে কাজে লাগাতে পারি তা বহু আগেই আল্লাহপাক নির্ধারণ করে দিয়েছেন ।

আল্লাহপাক বলেন, ‘আমি বাতাসকে দিয়েছি তোমাদের সুসংবাদ বহনের জন্য’ (সূরা আল ফোরআন-৪৮, নমল-৬৩, রুম-৪৭)

আজকের এই প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সময়ে যদি কেউ এক এলাকাতে চাঁদ দেখতে পায় এবং তা অন্য এলাকার লোকদেরকে টেলিফোনে, ইন্টারনেটে, টেলিভিশনে, রেডিওর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, তাহলে তা পূর্ববর্তী সময়ের পায়ে হাটা, ঘোড়ায় চড়া, লাইট হাউসের মাধ্যমে ঘটিত প্রচারণার সমপর্যায়েরই হবে । কারণ, এখানে উদ্দেশ্য একই ।

ভিন্ন ভিন্ন মতবাদের ভিত্তিতে মাস শুরুর করায় মুসলিম বিশ্বে বিচ্ছিন্নতা এবং ধর্মীয় উৎসবগুলো সার্বজনীনতা ও ধর্মীয় তাৎপর্য হারাচ্ছে......

----চলবে----

বিষয়টি ভালকরে বুঝার জন্য ১ম অংশ, ২য়..., ৩য়... ধারাবাহিক ভাবে মনযোগ দিয়ে পড়েন । কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন । ইন-শাআ-আল্লাহ! জবাব দেওয়া হবে ।

১ম অংশ

http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65221#.VWJ70_mqooI (pls click & read)

২য় অংশ

http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65484#.VWJ-DfmqooI (pls click & read)

৩য় অংশ

http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/65593#.VWWgPU-qooI (pls click & read)

বিষয়: বিবিধ

১৩৯১ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

324794
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:১৪
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : আপনার মত যোগ্য ব্লগারকে পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। চালিয়ে যান, যাযাকাল্লাহ।
১১ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:১৭
267192
সত্যের লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ
324803
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ১১:১৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : এগুলো শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। দুদিকেই দলিল প্রমান রয়েছে। কত যে বাহাস মুনাযারা হয়েছে তার কোন সীমা নেই।
যে যেভাবে আছে সেভাবেই চলুক, এসব বিষয় নিয়ে ভেধাবেদ না করে সব মুসলিম ঐক্য হয়ে তাগুতের বিরেুদ্ধে সোচ্ছার হওয়াই সময়ের দাবী। ধন্যবাদ।
০৫ জুন ২০১৫ সকাল ১১:৫৮
266744
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : আপনার সাথে একমত, তবে এটা কারো উপর চাপিয়ে দেয়া নয়। বরং যারা চাইবে এক সাথে পালন করতে পারে, যারা চাইবে না তারা নিজেরটা নিয়েই থাকবে। এটা নিয়ে কাউকে তাকফীর করা যাবে না। ধন্যবাদ।
১১ জুন ২০১৫ সকাল ০৯:২০
267193
সত্যের লিখেছেন : ইসলাম পূর্ণাংগ, তাই কুরআন ও সহীহ হাদিসে যা পাওয়া যায় তা মেনে চলতে হয় ! তা না হলে মুসলিম হওয়া যায় না------
১১ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:৪১
267235
আবু জান্নাত লিখেছেন : গত বছর রমজানে আহলে হাদীসদের দু-গ্রুপ এ বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিংহে প্রসাশনের সহায়তায় মুনাযারায় বসেছিলেন।
দু-গ্রুপের দলীল ছিলঃ কুরআন ও সহীহ হাদীস। শেষতক একই দিনের দাবীদারেরা হার মানলেন।
মজলিসে হার মানলেও পরবর্তীতে দেখা গেছে সবাই নিজেদের মত অনুযায়ী যার যার অবস্থানেই বহাল। বলুন কে মুসলিম কে মুসলিম না @সত্যের
324826
০৫ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:০৪
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আপনার লেখা আমি আগেও পড়েছি আপনার লেখার উত্তরও আমি আমার লেখায় দিয়েছি। এই লেখাটা আমার মত ধৈর্য্য আমার নেই। তবে প্রথম কয়েকটি কথাতেই আপত্তি। এক দিনে কখনো এসব পালন সম্ভব না আর সেটার ব্যাপারে আলেমরা ইজতিহাদ করেননি। তারা ইজতিহাদ করেছেন একই তারিখে মিল রাখার ব্যাপারে। যেখানে চাঁদ আগে উঠবে তার ভিত্তিতে তারিখ সবখানে ঠিক থাকবে তবে রাত-দিনের আবর্তনে কোথায় আগে বা কোথাও পরে হবে এটাই হল ইজতিহাদ। দিন কোথাও মিলানো সম্ভব না। আমরা যদি বলি সারা দুনিয়ার মানুষ একসাথে, একই সময়ে জোহর নামাজ পড়ব সেটা হাস্যকর।
০৫ জুন ২০১৫ রাত ০৮:৫৬
266869
ইসলামী দুনিয়া লিখেছেন : এটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। আপনার যেটা ভালো মনে হয় পালন করুন। এটা একটা মত, চাপিয়ে দেয়ার কিছু নয়। ধন্যবাদ।
১১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৪
267274
সত্যের লিখেছেন : একই দিনে সম্ভব নয়, আবার প্রথম চাঁদ দেখাকে তারিখ এক
আপনার কথাতে বৈপরিত্য দেখা যাচ্ছে !!!
বিশ্বের যে কোন দেশের প্রথম চাঁদ দেখাকে সারা বিশ্বে ১ তারিখ হলে একই দিনে সম্ভব হবে, একই সময় নয়-----
আপনি লেখার ১ম অংশ পড়ুন কিছুটা সমাধান পাবেন।
ধৈর্যসহ ১ম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লেই আপনার সকল সংশয় দূর হবে। ইন-শাআ-আল্লাহ !
324852
০৫ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৬
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : খুবই জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। আপনার আলোচনা এবং চিন্তাভাবনা নিয়ে মুসলিম স্কলারদের পূর্বোক্ত আলোচনা,ফতোয়া,সিদ্ধান্ত, রায় নিয়ে আমাদের কারো কি মাথা ব্যখা আছে? সময়োপযোগী এবং ভবিষ্যতের জন্য তা উপকারী হতে পারে। ধন্যবাদ।।
১১ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৬
267275
সত্যের লিখেছেন : স্যাটেলাইটের যুগে বর্তমানে অবশ্যই সময়োপযোগী

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File