তামাত্তু হজ্জের ধারাবাহিক কিছু নিয়ম কানুন (৩য়)
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ৩০ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:৫৭:০২ সকাল
১ম http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/6753/soter/51381#.U-5c3MWSxbE (plz click & read)
২য় http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/6753/soter/51878#.U_f9dMWSzYM (plz click & read)
হজ্জের নিয়মাবলীঃ-শুক্রবারে হজ্জ হলেও যোহর পড়বেন ।
৭ই যিলহাজ্জ যোহরের ছালাতের পর ইমামুল হজ্জ (হজ্জের নেতা) কাবা শরীফে প্রথম খুতবায় আগামী ৫ দিনের কর্মসুচি উল্লেখ করবেন । হাজিদের জন্য এ খুতবা শোনা উচিত । এটা হজ্জের অংশ নয় ।
৮ই যিলহাজ্জ সকালে স্বীয় অবস্থানস্থল হ’তে ওযূ-গোসল সেরে শরীরে সুগন্ধি মেখে হজ্জের ইহরাম বাঁধে দো’আ পাঠ করবেন- لبيك حَجاً
লাব্বায়েক আল্লা-হুম্মা হাজ্জান (হে আল্লাহ! আমি হজ্জের উদ্দেশ্যে তোমার দরবারে হাযির) অতঃপর
তালবিয়াহঃ ‘লাব্বাইকা আল্লা-হুম্মা লাব্বায়েক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বায়েক; ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারীকা লাক’ (আমি হাযির হে আল্লাহ আমি হাযির । আমি হাযির । তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির । নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই)
ইহরাম পড়ার পরেও গোসল করতে পারবে, ইহরাম বদলানো যাবে, ময়লা হলে ধৌত করা যাবে ।
মিনায় গমনঃ ৭ই যিলহাজ্জ দিবাগত রাতে বা ৮ই যিলহাজ্জ সকালে তালবিয়াহ পড়তে পড়তে মিন অভিমুখে রওয়ানা হবেন এবং যোহরের পূর্বেই সেখানে পৌছাবেন । এখানে ওয়াক্তিয়া ফরজ সালাত জমা না করে সময় মত কসর পড়বেন তবে জামায়াতে পড়লে ইমাম পূর্ণ পড়লে আপনিও পূর্ণ পড়বেন ।
মিনায় রাত্রি যাপন করে ৯ই যিলহাজ্জ সূর্যোদয়ের পর তালবিয়াহ পড়তে পড়তে আরাফা অভিমুখে রওয়ানা হবেন ।
আরাফায় অবস্থানঃ আরাফায় যোহর থেকে মাগরীব পযন্ত অবস্থান করবেন ।
অতপর (জমা তাক্বদীম) যোহর ও আছরের সলাত এক আযান ও দুই ইক্বামতে ক্বছর সহ মূল জামায়াতে আদায় করবেন ।
আরাফাতে সূর্য ঢলার পরে ইমাম হজ্জের সুন্নাতী খুতবা দেন, নীরবে মনযোগ দিয়ে শুনবেন ।
রাসুল (সাঃ) বলেন, শ্রেষ্ঠ দো’আ হ’ল আরাফা দিবসের দো’আ...(মিশকাত হা/২৫৮৯; ছাহীহাহ হা/ ১৫০৩)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ওরা আল্লাহর মেহমান । আল্লাহ ওদের ডেকেছেন তাই ওরা এসেছে । এখন ওরা চাইবে, আর আল্লাহ তা দিয়ে দিবেন (ইবনু মাজাহ হা/২৮৯৩; ছহীহাহ হা/১৮২০)
বিঃদ্রঃ কোন সুন্নাত, নফল ছালাত আরাফায় পড়বেন না । আরাফার জন্য নির্দিষ্ট কোন দো’আ নেই । আপনার ইচ্ছেমত জানা সকল দো’আ আরবী বা মাতৃভাষায় বেশি করে পাঠ করবেন ।
কল্পনা করুন এমনি এক ময়দানে সকল মানবজাতির রূহ আল্লাহ্র সম্মুখে অঙ্গীকার করেছিলাম আপনিই আমাদের প্রতিপালক যাকে আহ্দে আলাস্তু বলা হয় ।
দুনিয়ার এই সর্ব বৃহৎ জামায়াতে এক স্থান হ’তে কাছাকাছি অন্য স্থানে যেতে কত কষ্ট পরিশ্রম সময় ব্যয় করতে হয়, হৃদয়ের গভীরের অন্তঃকরন দিয়ে স্মরণ করুন আমল বিহীন মানুষের আমার আপনার কি অবস্থা হবে সেই হাশরের জামায়াতে । আল্লাহ্র নিকট তাওবা করুন আমাদের যেন বিনা হিসাবে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন । আমীণ!
৯ই যিলহাজ্জ সুযাস্তের পর মাগরীব না পড়ে আরাফা হ’তে তালবিয়াহ, বিভিন্ন দো’আ ও তওবা ইস্তিগফার করতে করতে মুযদালিফা অভিমুখে রওয়ানা হবেন।
তওবার দো’আঃ আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহে’ (আমি আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি । যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্ব চরাচরের ধারক এবং আমি তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি-মিশকাত হা/২৩২৫, ২৩৫৩)
মুযদালিফায় রাত্রিযাপনঃ মুযদালিফায় পৌঁছে জমা তাখীর অর্থাৎ মাগরিব পিছিয়ে এশার সাথে জমা ও ক্বছর পড়বেন । কোন সুন্নাত, নফল ছালাত মুযদালীফায় পড়বেন না । এরপর ঘুমিয়ে যান ।
এখানে ফজর নামাজ আউয়াল ওয়াক্তে পারলে মাশ’আরুল হারামে (মুযাদালিফার মসজিদ) না পারলে নিজ অবস্থানে বসে পড়ে নিবেন ।
একটু ফর্সা হলে সূর্যোদয়ের পূর্বেই মিনার অভিমুখে রওয়ানা হবেন । চলার পথে পাথর বা কংকর কুড়িয়ে নিন যা মিনায় গিয়ে বড় জামরায় মারবেন ।
মিনায় প্রত্যাবর্তনঃ ১০ই যিলহাজ্জ মিনা ফিরে এসে সূযাস্তের পূর্বে বড় জামরাকে লক্ষ করে মক্কা বাম দিকে ও মিনা ডান দিকে রেখে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন । প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলবেন । বড় জামরায় পৌঁছা মাত্রই তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবেন ।
কংকর নিক্ষেপ ও তাকবীর বলার সময় দৃঢ় সংকল্প করুন-
আমি আমার সার্বিক জীবনে শয়তান ও শয়্তানী বিধানকে ছুঁড়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহ্র বিধানকে ঊর্ধ্বে রাখব । ত্বাগূতের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র বিধান কায়েম করার সংগ্রাম করব ।
রাসুল (সাঃ) বিদায় হজ্জের এদিন কংকর নিক্ষেপের পর সকেলে্র উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়েছেন, ঈদুল আযহার ছালাত আদায় করেনি ।
বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর ঈদের তাকবীর-
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু; আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ (আল্লাহ সবার বড়, আল্লাহ সবার বড় । নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যাতীত । আল্লাহ সবার বড়, আল্লাহ সবার বড়, আল্লাহ্র জন্যই সকল প্রশংসা) বারবার পড়বেন ।
এখন কুরবানী করতে পারেন । কুরবানীর পর মাথা মুন্ডন ও ইহরাম খুলে স্বাভাবিক পোষাক পড়তে পারবেন, এটা হবে তাহাল্লুলে আউয়াল বা প্রাথমিক হালাল অর্থাৎ স্ত্রী মিলন ব্যতীত সব করা যাবে।
যে পর্যন্ত না হাদির পশু তার স্থানে পৌঁছায়, তোমরা মাথা মুন্ডন কর না (বাক্বারাহ ২/১৯৬)
যবেহ কালে দো’আঃ বিস্মিল্লা-হি ওয়াল্লা-হু আকবার; আল্লা-হুম্মা মিন্কা ওয়া লাকা, আল্লা-হুম্মা ত্বাকাব্বাল মিন্নী (আল্লাহ্র নামে কুরবানী করছি । আল্লাহ সবার বড় । হে আল্লাহ! এটি তোমারই তরফ হ’তে প্রাপ্ত ও তোমারই উদ্দেশ্যে নিবেদিত । হে আল্লাহ! তুমি এটা আমার পক্ষ থেকে কবুল কর’ ।
উল্লেখ্য যে, কুরবানী মিনা ছাড়া মক্কাতে এসেও করা যায় । ১০-১২ই যিলহাজ্জ এই তিন দিনের যে কোন দিন করবানী করা যায় ।
ত্বাওয়াফে ইফাযাহ ও সাঈঃ তাওয়াফে কুদুম বা উমরার তাওয়াফ ছাড়া বাকি সব তাওয়াফ স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করেই করবেন ।
তামাত্তু হাজীগণ মিনা থেকে মাথা মুন্ডন করে ওযু গোসল সেরে মক্কায় এসে ত্বাওয়াফে ইফাযাহ করে সাঈও করবেন । এরপরই আপনি পূর্ণাঙ্গ হালাল হবেন ।
ত্বাওয়াফে ইফাযাহ ও সাঈ করে সেদিনই মিনায় এসে রাত্রি যাপন করবেন ।
ত্বাওয়াফে ইফাযাহ ১০ই যিলহাজ্জে করাই উত্তম । আপনি আইয়ামে তাশরীকের মাধ্যেও অর্থাৎ ১১, ১২, ১৩ই যিলহাজ্জের যেকোন দিন করতে পারেন ।
আইয়ামে তাশরীক্বের তিন দিন মিনা রাত্রি যাপন করা ওয়াজিব । পাঁচ ওয়াক্ত সলাত জামা’আতে মসজিদে খায়েফে আদায় করা উত্তম । সলাত ক্বছর বা পূর্ণ পড়া দু’টিই জায়েয (মিশকাত হা/ ১৩৪৭)
আইয়ামে তাশরীকের প্রতিদিন দুপুরে সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়া হ’তে সন্ধ্যার মধ্যে তিনটি জামরায় ৩*৭=২১টি করে ৩দিনে মোট ৬৩টি কংকর নিক্ষেপ করতে হয়।
প্রথমে জামরা ছুগরা (ছোট), তারপর উস্তা (মধ্যম) ও শেষে কুবরা (বড়) ধারাবাহিক মারতে হবে ।
ছোট ও মধ্যম জামরায় কংকর মেরে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো’আ করুন ।
বড় জামরায় মেরে দো’আ করবেন না ।
বিদায়ী ত্বাওয়াফঃ বিদায়ী ত্বাওয়াফ ছাড়া মক্কা ত্যাগ করা যাবে না । আপনি আইয়ামে তাশরীকের পরবর্তী যে কোন তারিখে বা দেশে ফেরার আগের দিন (এটাই করা ভাল) বিদায়ী ত্বাওয়াফ হিসাবে শুধু বায়তুল্লাহ্র ত্বাওয়াফ করবেন সাঈ করতে হবে না ।
«لاَ يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْتِ»
নবী (সাঃ) বলেছেন, কাবাঘরে বিদায়ী তাওয়াফ করা ছাড়া যেন কেউ দেশে ফিরে না যায় (মুসলিম ১৩২৭)
বিঃদ্রঃ মক্কায় অবতরণের পর ওমরাহ্র পর হ’তে ৮ই যিলহাজ্জ পূর্ব পর্যন্ত এবং আইয়ামে তাশরীকের পর মক্কায় ফিরে যত খুশি আপনার ইচ্ছানুযায়ী স্বাভাবিক পোষাকে বায়তুল্লাহ্র ত্বাওয়াফ করতে পারবেন ।
রাসুল (সাঃ) বলেন, যখন তোমাদের কেউ হজ্জ সম্পন্ন করে ফেলে সে যেন তার পরিবার পরিজনের কাছে দ্রুত ফিরে যায় । আর এতেই বেশি ছোঁয়াব (মুসতাদরাক লিল হাকেম ১/৬৫০)
দেশে ফেরার সময় তিনবার আল্লা-হু আকবার অতঃপর
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদির; আ-ইয়িবূনা তা-ইবূনা ‘আ-বিদূনা সা-জিদূনা লি রব্বিনা হা-মিদূনা; ছাদাক্বাল্লা-হু ওয়া‘দাহু ওয়া নাছারা ‘আবদাহু ওয়া হাযামাল আহযা-বা ওয়াদাহু ।
অর্থঃ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই । তিনি এক । তাঁর কোন শরীক নেই । তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব ও তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা এবং তিনিই সকল বস্তুর উপরে ক্ষমতাবান । আমরা সফর হ’তে প্রত্যাবর্তন করছি তওবাকারী হিসাবে, ইবাদতকারী হিসাবে, সিজদাকারী হিসাবে এবং আমাদের প্রভুর জন্য প্রশংসাকারী হিসাবে । আল্লাহ সত্যে পরিণত করেছেন তাঁর প্রতিশ্রুতিকে, জয়ী করেছেন তাঁর বান্দা কে এবং পরাজিত করেছেন একাই সম্মিলিত (কুফরী) শক্তিকে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৪২৫)
সফর শেষে মুস্তাহাব হলো নিজ ঘরে প্রবেশের পূর্বে নিকটতম মসজিদে দু’রাক’আত নফল ছালাত আদায় করা (বুখারী)
নিজ গৃহে প্রবেশকালীন দো’আঃ প্রথমে বিসমিল্লাহ অতঃপর গৃহবাসী উদেশ্যে সালাম (বুখারী,মিশকাত হা/৪১৬১ নূর ২৪/৬১)
হজ্জে মাবরুর (কবুল হজ্জ) এর কিছু লক্ষণ
হজ্জ কবুল হওয়ার শর্তঃ হজ্জে মাবরূরঃ
১। যে হজ্জে গোনাহ করা হয়নি এবং ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক আদায় করা হয়েছে ।
২। হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর পূর্বের চেয়ে উত্তম হওয়া (ফতহুল বারী ৩/৪৪৬ হা/১৫১৯-এর ব্যাখ্যা)
ইসলামী লেবাস-ছুরুতঃ
এক মুষ্ঠি দাড়ি রাখব ।
টাকনুর উপর কাপড় পড়ব ।
আহাল পরিবারকে শরীয়া অনুযায়ী পর্দার সাথে পরিচালনা করব । এই বলে আল্লাহ্র নিকট খাটি তাওবা অঙ্গীকার করব ।
নিজে ও আহালদেকে টিভিতে নাটক, সিনেমা, নাচ, গান ইত্যাদি যাবতীয় শরীয়াত বিরোধী অনুষ্ঠান দেখা থেকে বিরত রাখা । প্রয়োজনে টিভিতে খবর ও ইসলামিক অনুষ্ঠান দেখা যাবে ।
নিজে ও আহালদের প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা কুরআনের তাবসীর “ইবনে কাছিরের অনুবাদ” এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অনুবাদ কিনে পড়াব ।
৩। অনেকে লোন নিয়ে ব্যবসা, বাড়ি করছেন । পরিশোধ না করে হজ্জে আসছেন ।
হজ্জেই খাটি তাওবা করুন জীবনে আর লোন নিবেন না, দেশে যেয়েই পরিশোধ করে দিবেন ।
তাহলে আপনার হজ্জ আল্লাহ কবুল করতে পারেন ।
কুরআনে বর্ণিত সুদ হারাম এবং দেয়া-নেয়া কবিরা গুনাহ ।
ঋণ মুক্তির দো’আঃ আল্লা-হুম্মাকফিনী বেহালা-লেকা ‘আন হারা-মেকা ওয়া আগ্নিনী রেফাযলেকা ‘আম্মান সেওয়া-কা (হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হারাম ব্যতীত হালাল দ্বারা যথেষ্ট কর এবং তোমার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন কর)
রাসুল (সাঃ) বলেন, এই দো’আ পাঠের দ্বারা পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করে দেন (মিশকাত হা/২৪৪৯)
তবে তাড়াহুড়া করবেন না । ঋণ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পড়তেই থাকুন । আপনার সদিচ্ছা থাকলে একদিন ঋন মুক্ত হবেনই । ইনশা-আল্লাহ!
এটাও পড়ুনঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখ্লি, ওয়া যালা’ইদ দায়নি ওয়া গালাবাতির রিজা-লি (হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ হ’তে, অক্ষতা ও অলসতা হ’তে, ভীরুতা ও কৃপণতা হ’তে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের যবরদস্তি হ’তে-মিশকাত হা/২৪৫৮)
৪। ইতোপূর্বে যদি আল্লাহ্র হক নষ্ট করে থাকেন, ছালাত, সিয়াম ও যাকাতে অমনোযোগী থাকেন ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন ।
কুরআন ও সহীহ হাদিসে বর্ণিত সহীহ আক্বীদা রাখুন । বিশেষ করে “আল্লাহ আরশে অবস্থিত” “আল্লাহ্র আকার আছে তবে তুলনীয় নয়” “রাসুল (সাঃ) মাটির তৈরী” বিশ্বাস করাই সহীহ আক্বীদা ।
হারাম ভক্ষণ করবেন না । বিশেষ করে তামাক (বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল, হুক্কা) জাতীয় দ্রব্য খাবেন না ।
একটু চিন্তা করুন দুনিয়ার সকল বিশেক্ষজ্ঞ তামাক ক্ষতিকর বলেছে । আপনি কেন খাবেন ?
আল্লাহ বলেছেন - وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ
“তিনি তোমাদের জন্য পবিত্র ও ভাল (তাইয়েবাত) বস্তু হালাল করেন আর তিকর - নোংড়া (খাবায়িস) জিনিষ হারাম করেন (সূরা আল-আরাফ :১৫৭)
আউয়াল ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন, যেমনটি মক্কা-মদিনা করে আসলেন । সমাজে জামায়াত দেরিতে হলে, একাই পড়ে নিবেন আবার সম্ভব হলে জামাতেও শরীক হ’তে পারেন (এটা নফল হবে)
সালাতের সহীহ ত্বরিকা ইকামত আযানের অর্ধেক, পায়ের সাথে পা-কাধের সাথে কাধ মিলিয়ে দাঁড়ানো, বুকের উপরে হাত বাঁধা, সুরা ফাতেহা পাঠ করা, আমীণ জোড়ে বলা, তাকবীরে তাহরীমা, রুকুর আগে ও পরে এবং মধ্য বৈঠক থেকে উঠে রফউল ইয়াদাইন করা...... ইত্যাদি গ্রহন করুন ।
সালাতের সহীহ ত্বরিকা জানার জন্য বুখারী ও মুসলিম শরীফের সালাত অধ্যায় অনুবাদ কিনে পড়ুন ।
প্রচলিত সম্মিলিত মুনাজাত, মিলাদ, শবে-বরাত, মিলাদুন্নবী......ইত্যাদি সকল বেদাত সহীহ না জানা পর্যন্ত আর করব না ।
সকল প্রকার বেদ’আত এবং সন্দেহযুক্ত বিষয় বর্জন করব । সমাজের ইমাম বা আলেমদের নিকট থেকে “লিখিত পূর্ণাঙ্গ সহীহ দলিল” না পাওয়া পর্যন্ত আর করব না ।
যত বড় পীর বুজুর্গ আলেম হোক না কেন কুরআন হাদিসের সহীহ দলিল দেখাতে না পারে তার কথাও মানব না ।
কোন সু-সজ্জিত মাযারে আশা পূরণের উদ্দেশ্যে মান্নত ও দান খয়রাত করব না । জ্ঞাতব্যঃ মাযার করা ইসলামে যায়েজ নাই ।
হজ্জের পড় নিয়ত করুন-আমি সকল ইবাদত কুরআনের তাফসীর, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম......এর অনুবাদ কিনে অধ্যায়ন করে মিলিয়ে পালন করব ।
হজ্জের দিনগুলো আল্লাহর নিকট হতে ক্ষমা লাভের বিশেষ দিন । সকল প্রকার শিরক, বেদাত, হারাম হ’তে খাটি তাওবা করে ফিরে আসুন কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ্র দিকে । মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আর শিরক, বেদাত, হারামে লিপ্ত হব না এই বলে দৃঢ় অঙ্গীকার করুন ।
যারা কুরআন ও সহীহ হাদিস অনুযায়ী আক্বীদা রাখে, ইবাদত বন্দেগী করে বা পূর্ণাঙ্গ দলিল সহ বলে, প্রচার করে, অন্য কারো কথা বা যুক্তি দিয়ে বিরোধিতা না করে দলিলগুলো যাচাই করে আপনিও সহীহ তরিকা ধরুন ।
ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বলেছেন, মুসলমানগণ ইজমা করেছেন যে, যার সামনে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাত প্রকাশ পাবে-অন্য কারো কথার নির্ভরতায়-তা উপেক্ষা করা বৈধ হবে না (ইবনুল কাইয়েমঃ মাদারিযুস্সালিন ২/৩৩২)
৫। হজ্জ করলেও হক্কুল ইবাদ (বান্দার হক) ক্ষমা হবে না, যতক্ষণ না ক্ষতিপূরণ দিয়ে বা ক্ষমা চেয়ে ওই ব্যক্তিকে রাজি খুশি করা হবে ।
গণ মানুষের হক ঘুষ এবং জন কল্যানের কাজের টাকা আর নিব না বলে খাটি তাওবা করুন এবং বেনামে সওয়াবেন নিয়ত না করে দান করুন ।
বিদায় হজ্জের ভাষণে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ‘হে লোকসকল!......। অতএব সাবধান! তোমরা আজকের দিনের পর যেন পুনরায় পথভ্রষ্ট হয়ো না(মিশকার হা/২৬৫৯)
হজ্জে যাচ্ছি এবং হাজী বা আলহাজ্জ টাইটেল বলা/দেওয়া যায়েজ কি!!!
আত্মশুদ্ধীঃ
হজ্জে যাওয়ার পূর্বে ইচ্ছা করে লোকজনকে বলে বেড়ানো, আমি হজ্জে যাচ্ছি বা ১,২,৩,...এত বার হজ্জ করেছি এবারও যাচ্ছি । অথবা
সমাজের ইমাম দ্বারা দো’আর ব্যবস্থা করা যাতে ইমাম সাব মুনাজাতে অমুক সাব, অমুক সাব বার বার নাম ধরে বলে সমাজের লোকদের জানান । এতে রিয়া হ’তে পারে ।
কেউ জিজ্ঞাসা করলে হজ্জে যাচ্ছেন কি বা কত বার করেছেন তখন বলতে পারেন । এছাড়া না বলাই ভাল । হজ্জ হবে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে, মানুষকে জানানোর জন্য নয় ।
আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন কর (বাক্বারাহ ২/১৯৬)
ছালাত, ছিয়াম, যাকাতের মত হজ্জও ফরজ । হজ্জ পালন করে নামের আগে হাজী বা আলহাজ্জ টাইটেল দেই কিন্তু ছালাতী, ছিয়ামী, যাকাতী দেই না কেন !!!
রাসুল (সাঃ) বা তাঁর কোন সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, আইয়ামে মুজতাহীদিন কেউ কি এরকম টাইটেল দিয়েছেন । প্রমাণ না থাকলে আাপনি কেন দিবেন ??? !!!
রাসুল (সাঃ) আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন-
আল্লাহুম্মা হাজ্জাতুন লা রিয়ায়া ফিহা ওয়ালা সুমআতু (হে আল্লাহ! এমন হজ্জের তাওফিক দাও যা হবে রিয়া ও সুনাম কুড়ানোর মানসিকতা হতে মুক্ত-ইবনে মাজাহ ২৮৯০)
মক্কা-মদিনা থেকে বিশেষ যা আনবেনঃ
মসজিদে নববীর দোতালায় ফ্রী বই ডিসট্রিবিউশন সেকশন আছে, সেখান থেকে বাংলা, ইংলিশ বই সংগ্রহ করে আনতে পারেন ।
খুব ভাল মানের আজওয়া খেজুর আনতে পারেন । হাদিসে আছে-যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে ৭টি আজওয়া খেজুর আহার করে, সেদিন তাকে কোন বিষ বা যাদু ক্ষতি করতে পারে না (সহীহ মুসলিম)
বরকতময় জমজমের পানি অবশ্যই আনবেন ।
আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর বর্ণিত ছহীহ ত্বরীকায় সকল ইবাদত-বন্দেগী করুন, যাবতীয় শিরক-বিদ’আত ও হারাম বর্জন করুন । আমীণ!
বিষয়: বিবিধ
১১২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন