তারাবীর জন্য হাফেজ নিয়োগ যায়েজ কি ?
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ৩০ জুন, ২০১৪, ০৮:১৮:২১ সকাল
১৭১৪.প্রশ্ন: খতম তারাবীর ইমামতি করে বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া জায়েয কি না ? এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন দিলে জায়েয হবে কি না ? কেউ কেউ বলেন, ফরয নামাযের ইমামতির বিনিময় যখন জায়েয তখন খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণও জায়েয হবে । এছাড়া হাফেজ সাহেবকে যদি দু’এক ওয়াক্ত ফরয নামাযের দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে তো নাজায়েয হওয়ার প্রশ্নই আসে না । তাদের একথা ঠিক কি না ? ইমামতির হীলা হোক বা অন্য কোনো উপায়ে তারাবীর বিনিময় বৈধ কি না ?
উত্তর:খতম তারাবীর বিনিময় দেওয়া-নেওয়া দুটোই নাজায়েয । হাদিয়ার নামে দিলেও জায়েয হবে না । এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন হিসাবে দিলেও জায়েয নয় । কারণ এক্ষেত্রেও প্রদেয় বেতন তারাবীহ এবং খতমের বিনিময় হওয়া স্বীকৃত । মোটকথা, খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণের জন্য হিলা অবলম্বন করলেও তা জায়েয হবে না । কারণ খতমে তারাবীহ খালেস একটি ইবাদত, যা নামায ও রোযার মতো ‘ইবাদতে মাকসূদা’-এর অন্তর্ভুক্ত । আর এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় বা বেতন দেওয়া-নেওয়া উম্মতে মুসলিমার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাজায়েয । এতে না কোনো মাযহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকীহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে ।
ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েয, কিন্তু খতম তারাবীর বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না; বরং তা মূলত খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে । আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল ফকীহ্ নিকট হারাম । অধিকন্তু পরবর্তী ফকীহ্গণ যে ইমামতির বেতন জায়েয বলেছেন সেটা হল ফরযের ইমামতি । সুন্নাত জামাতের ইমামতি এর অন্তর্ভুক্ত নয় ।
আর হাফেযদের দেওয়া বিনিময়কে জায়েয করার জন্য এই হিলা অবলম্বন করা যে, শুধু রমযান মাসের জন্য তার উপর দু-এক ওয়াক্ত নামাযের দায়িত্ব দেওয়া হবে-এটা একটা বাহানামাত্র; যা পরিহার করা জরুরি । কারণ এই হিলার যে বিমিনয়টা তাকে ফরযের ইমাতির জন্য দেওয়া হচ্ছে আর তারাবীর খতম সে বিনিময়হীনভাবেই করে দিচ্ছে । কিনা' আপনার মনকে একটু প্রশ্ন করে দেখুন, যদি ওই হাফেয সাহেব তার দায়িত্বে অর্পিত ফরয নামাযের ইমামতি যথাযথ গুরুত্বের সাথেও আদায় করেন আর খতম তারাবীতে অংশগ্রহণ না করেন তবে কি তাঁকে ওই বিনিময় দেওয়া হবে, যা খতম তারাবী পড়ালে দেওয়া হত ? এ কথা সুস্পষ্ট যে, কখনো তা দেওয়া হবে না । বোঝা গেল, বিনিময়টা মূলত খতম তারাবীর, ফরযের ইমামতির নয় । এ জন্যই আকাবিরের অনেকে এই হিলা প্রত্যাখ্যান করেছেন । আর দলীলের ভিত্তিতেও তাঁদের ফতওয়াই সহীহ । দেখুন: ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৬৪
সারকথা হল, কুরআন তেলাওয়াত, বিশেষত যখন তা নামাযে পড়া হয়, একটি খালেস ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই হওয়া চাই । তাতে কোনো দুনিয়াবী উদ্দেশ্য শামিল করা গুনাহ । নিচে এ বিষয়ে কিছু হাদীস, আছারের অনুবাদ ও ফিকহের উদ্ধৃতি পেশ করা হল ।
১. হযরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না । কুরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না ।’-মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৪০; কিতাবুত তারাবীহ
২. ‘ইমরান ইবনে হোসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা কর । তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে ।’-মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭; জামে তিরমিযী ২/১১৯
৩. ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মা’কিল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমযান মাসে লোকদের নিয়ে তারাবীহ পড়লেন । এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ রাহ. তাঁর কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম পাঠালেন । তখন তিনি কাপড় জোড়া ও দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন যে, আমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না ।’-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৩৭
আরো দেখুন: ফাতাওয়া শামী ৬/৫৭; তানকীহুল ফাতাওয়া হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; আলইখতিয়ার লিতা’লীলিল মুখতার ২/৬২; শিফাউল আলীল ওয়াবাল্লুল গালীল (রাসায়েলে ইবনে ইবনে আবেদীন) ১/১৫৪-১৫৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩১৫-৩১৯ ও ৩২২; রাফেউল ইশকালাত আনহুরমাতিল ইসি-জার আলাত্তাআত, মুফতিয়ে আযম হযরত মাওলানা মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ.
সংগ্রহ-http://www.alkawsar.com/section/question-answer?page=244
বিষয়টির উত্তর জানা ও সংগ্রহে রাখা খূবই জরুরী এবং আপনার মসজিদের ইমাম সাব, হাফেজ ও আলেম সমাজকে কপি প্রিন্ট করে দিতে পারেন ।
বিঃ দ্রঃ সমাধানের উপায়ঃ-
¤ মসজিদের ইমাম হিসাবে হাফেজ ও আলেম যোগ্যতাসম্পন্ন ইমাম নিয়োগ দিতে পারেন ।
¤ মুয়াজ্জিন হিসাবে একজন হাফেজ নিয়োগ দিতে পারেন ।
তাহলে প্রতি রমযানে এদের দ্বারাই খতমে তারাবীর নামায পড়ানো যাবে ।
¤ মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন কেউ কুরআনে হাফেজ না হলে, রমযান মাসে তারাবীর জন্য হাফেজ নিয়োগ না করে (ইমাম-মুয়াজ্জিন যা জানে তা দ্বারা) তাদের দ্বারাই তারাবীর নামায পড়াতে পারেন ।
¤ কোন এতিম খানার হাফেজ দ্বারা খতমে তারাবী পড়াতে পারেন । তবে উক্ত হাফেজকে কোন রকম হাদিয়া নেওয়া বা দেওয়া যাবে না ।
¤ এতিম খানা পরিচালকের নিকট তারাবীর বিনিময় না ভাবিয়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বাৎসরিকভাবে প্রতি বছর নির্দিষ্ট অংকের হাদিয়া দিতে পারেন যা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কাজে ব্যয় করবেন ।
¤ পরিচালক সেখান থেকে উক্ত হাফেজকে একটি টাকা এমনকি কোন পোষাক, লেখা পড়ার সামগ্রি কিনে দিতে পারবে না । অর্থাৎ হাফেজকে কোনভাবেই এ টাকার অংশ দেয়া যাবে না ।
¤ কোন হাফেজ বিনা মুল্যে স্বেচ্ছায় তারাবী পড়াতে চায় অর্থাৎ যাতায়াত খরচ, খাওয়ার খরচ, জামা কাপর ইত্যাদি কোন খরচই নিবে না, তাহলে পড়ানো যেতে পারে ।
এভাবে কুরআন-হাদিসের আলোকে সহিহ হতে পারে ।
এছাড়া সমাধানের আর কোন পদ্ধতি বা নিয়ম অবলম্বন করা যায় কিনা তা আপনারা নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠু শান্ত মস্তিষ্কে চিন্তা করুন ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সহিহ দ্বীন বুঝার তাওফিক দিন ।
আমীন!!
বিষয়: বিবিধ
৩১১৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি শুধু ফতোয়ার রেফারেন্স দিয়েছেন। কুরআন হাদীসের কোনো দলীল দেন নি।
শুধুই কি ফতোয়া!!! নিচের গুলো কি???
১. হযরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না এবং তার প্রতি বিরূপ হয়ো না । কুরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না ।’-মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৫/২৪০; কিতাবুত তারাবীহ
২. ‘ইমরান ইবনে হোসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা কর । তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে ।’-মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭; জামে তিরমিযী ২/১১৯
আমরা একটু ইনসাফের সাথে চিন্তা করি। এ লোকগুলির কর্মসংস্থানের বিকল্প ব্যবস্থা নেই। সুতরাং তাদের খুশি মনে কিছু হাদীয়া দেয়াটা কি দোষনীয়?
সকল বেদাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন,
কুরআন -হাদিসের নিয়ম নীতির বিরুদ্ধে যুক্তি দেখাবেন না !!!
প্রথমেই বললেন শুধু ফতোয়া!!!
আবার বলছেন "কুরআন হাদীসের বিরুদ্ধে যুক্তি কোনো অবস্থাতে গ্রহণযোগ্য নয়।"
ভাল
তবে
এটা কি "মুসল্লীরা বা মসজিদ কর্তৃপক্ষ খুশি মনে হাদীয়া দিলে সমস্যা মনে করি না"
যুক্তি না হলে কুরআন ও সহিহ হাদিসের পুর্ণাঙ্গ দলিল দেন!!!
লিখেছেন : ইসলাম
ইনসাফ কায়েম এর
উপর জোর দেয়।
আমাদের মত দরিদ্র
রাষ্ট্রের দরিদ্র
এইসব হাফেজদের
কিছু হাদীয়া দেয়াটা
ইনসাফেরই অংশ
বলে মনে করি।
আপনি শুধু ফতোয়ার
রেফারেন্স দিয়েছেন।
কুরআন হাদীসের
কোনো দলীল দেন নি।
সকল বেদাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন,
কুরআন -হাদিসের নিয়ম নীতির বিরুদ্ধে যুক্তি দেখাবেন না !!!!
আসলে হাদিয়া অর্থ বিনিময় নয়। সোজাসাপটা কথা হল, বিনিময়ের মাধ্যমে তা করা যাবে না, তবে হাদিয়ার মাধ্যমে করা যাবে। স্বয়ং রাসুল (সাঃ) হাদিয়া তথা উপহার গ্রহণ করেছেন। তিনি কোনদিন দান গ্রহণ করে নাই।
আমরা মসজিদে দানরাক্স স্থাপন করি। কেউ যদি প্রকৃত দানের নিয়তে সেই বক্সে অর্থ দেয় সেটাও গ্রহণ যোগ্য নয়। কেননা মসজিদ বানানো প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেভাবে নিজের ঘর বানাতে ভূমিকা রাখা হয়, সেভাবে মসজিদ বানাতেও ভূমিকা রাখতে হবে। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নহেন সুতরাং মানুষের দানে গড়ে উঠা মসজিদেও তিনি মুখাপেক্ষী নন। সেজন্য ফিতরা, জাকাত, দানের টাকা মসজিদে দেওয়া নিষেধ।
সেই ভাবে দানের টাকার কোরআন শুনার জন্য নামাজে দাড়ানো নিষেধ। কারো মুখের সুন্দর সুললিত ভাষায় যেহেতু আমি কোরআন শুনতে চিন্তা করেছি, সেহেতু তাকে সম্মানীত করা যায়। কেননা, তারাবিহ নামাজ ফরজ নয়, একটি সুন্নাত কাজের আঞ্জাম দিয়ে গিয়ে তিনি একটি মাস কষ্ট করেছেন, এর পিছনে শ্রম দিয়েছেন, খেটেছেন। অথচ তিনি ইমামতির দায়িত্ব না নিলেও সবার নামাজ হয়ে যেত। তারপরও তিনি অনেকের অনুরোধে কাজটি করতে রাজি হয়েছেন। তাই তিনি হাদিয়া গ্রহণ করতে পারেন এবং এটা বিনিময় নয়। অনেক ধন্যবাদ
মুসল্লিরা যদি ঈমামকে খুশী হয়ে কিছু দেয় সেটা নেওয়া জায়েজ আছে বলে অনেক আলেম মত দিযেছেন। অবশ্য কুরআনের বিনিময়ে বা নামাজ পড়ানোর বিনিময় আল্লাহর কাছ থেকেই নেওয়া উত্তম। একটা আয়াতে দেখেছিলাম...যারা আল কুরআনের বিনিময় গ্রহন করে,তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছু ঢুকায়না....সম্ভবত সুরা বাকারা
ভাগে কি ইন-সাব হল ?
সব প্রতিষ্ঠান পারমানেন্ট লোকদের বোনাস দেওয়া হয় । কারো বোনাস ভাগ করে অন্যকে দেওয়া হয় না ।
কিন্তু......
মন্তব্য করতে লগইন করুন