বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে (২য় পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ২৯ মে, ২০১৪, ০৭:২৮:১৬ সন্ধ্যা

১ম পর্ব

http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/6753/soter/45670 (plz click & read)

চাঁদের উদয়ের উপর নির্ভরশীল ইবাদত

রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ । আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী । কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে । আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে । আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুণ আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর- আল বাকারা আয়াত ১৮৫

পৃথিবীর সকল জীবিত লোকই এ মাস পাবে । তথাপী উক্ত আয়াতে “যে লোক এ মাসটি পাবে” কেন বলা হল ?

এর ব্যাখ্যায় যারা চাঁদের উদয়স্থলের বিভিন্নতা গ্রহন করে নিজ নিজ দেশে চাঁদ দেখে রোজা রাখতে হবে তারা বলে

যে দেশে চাঁদ দেখা গেল তারা এ মাস পেল । যে দেশে চাঁদ দেখা গেল না তারা এ মাস পেল না । তাদের দেশে চাঁদ দেখার পরে পাবে ।

আয়াতে অসুস্থ, মুসাফির ব্যক্তির কথাও আছে । অর্থাৎ দেশের সকলে মাস পেয়ে রোজা রাখলেও অসুস্থ, মুসাফির অন্য মাসে সুস্থ, মুক্বীম অবস্থায় রোজা রাখতে পারবে । অর্থাৎ সামগ্রীকভাবে বলা যায়

যারা এ মাসে রোজা রাখতে পারবে তারা এ মাস পেল আর যারা রোজা রাখতে পারল না তারা এ মাস পেল না [অসুস্থ, মুসাফির]

ইসলামে মাসের শুরুর তারিখ নির্ধারিত হয় নতুন চাঁদের উদয়ের উপর নির্ভর করে । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে । বলে দাও যে

এটি মানুষের জন্য (মাসের) সময় (তারিখ) নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় (তারিখ) ঠিক করার মাধ্যম (সূরাহ আল বাকারাহ- ১৮৯)

চাঁদ দেখা

*রসূল সা: বলেন, তোমরা রোজা রাখবে না, যে পর্যন্ত না চাঁদ দেখতে পাও । একইভাবে তোমরা রোজা ভঙ্গ (ঈদ) করবে না, যে পর্যন্ত না শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পাও । তবে যদি মেঘের কারনে তা তোমাদের কাছে গোপন থাকে, তবে শাবান মাস পূর্ণ করবে ত্রিশ দিনে । অপর বর্ণনায় আছে, তিঁনি (সাঃ) বলেন- মাস কখনও উনত্রিশ দিনেও হয় (সূত্র: সহীহ বুখারী-৩য় খন্ড, ১৭৮৫-১৭৯০, সহীহ মুসলিম-৩য় খন্ড, ২৩৬৭-২৩৯৪)

মুহাম্মদ (সাঃ) আরো বলেছেন, “ঐ রোযা আরম্ভ হবে যেদিন সকলে রোযা রাখবে, রোযা ভাঙ্গতে হবে ঐ দিন যেদিন সবাই রোযা ভাঙ্গে আর কুরবানী করতে হবে ঐ দিন যে দিন সকলে কুরবানী করে” (তিরমিযী, হাদিস নং ৬৯৭)

উপরের হাদিসে কি বুঝা যায়ঃ-

১) রমযানের সঠিক তারিখ জানার পূর্বে শা’বান মাসের চাঁদ দেখে সঠিকভাবে শা’বানের শুরু তারিখ নির্ধারণ করা । অথচ রমযানের চাঁদ দেখার উপর বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয় । শা’বানের (যে কোন মাসের) ২৯ তারিখের দিবাগত রাত্রে চাঁদ দেখা না গেলে মাস ৩০ দিনে শেষ হবে এবং

৩০ তারিখের দিবাগত রাত্র থেকে (পরবর্তী মাস) রমযান মাসের শুরু হবে (চাঁদ না দেখা গেলেও)

অতএব রমযানের চেয়ে শা’বানের চাঁদ দেখার গুরুত্ব বেশী (আরবী সকল মাসের চাঁদ দেখার গুরুত্ব আছে)

আয়েশা (রাঃ) বলেন, মুহাম্মদ (সাঃ) শাবানের মাসের দিন গণনার ক্ষেত্রে অতিশয় সাবধানতা অবলম্বন করতেন এবং তিনি যখনই নতুন চাঁদ দেখতে পেতেন তখন রোযা শুরু করতেন । আর যদি নতুন চাঁদ না দেখতে পেতেন তাহলে শাবান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করে রোযা রাখতেন” (আবু দাউদ হাদিস নং ২৩১৮)

২) “তোমরা, না চাঁদ দেখতে পাও” কথা দ্বারা বুঝা যায় পৃথিবীর সকল মানুষ যারা স্বচক্ষে চাঁদ না দেখবে রোজা রাখবে না, ঈদ করবে না; যারা দেখবে রোজা রাখবে, ঈদ করবে (এমন নয়) ।

রাসুল (সাঃ) এর সমাধান করে গেছেন নিম্নের হাদিস দ্বারা

এক জন মুসলমানের স্বাক্ষীর উপর রোযা শুরু করা যেতে পারে ।

হযরত ইবনে উমর (রাজিঃ) বলেন, লোকেরা চাঁদ দেখেছে আমি নবী করীম (সাঃ) কে বললাম, আমিও চাঁদ দেখেছি, তখন নবী (সাঃ) নিজেও রোযা রাখলেন এবং লোকজনকেও রোযা রাখার আদেশ দিলেন-সহিহু সুনানি আবিদাউদ ২/৫৫ হাদিস নং ২৩৪২; আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৫, দারেমী

*একবার সাহাবীগণ রমজানের চাঁদ দেখা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন । তারা তারাবিহ নামাজ না পড়ার এবং পরদিন রোজা না রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন । এমতাবস্থায় ‘হাররা’ নামক এক স্থান থেকে জনৈক বেদুইন এসে সাক্ষ্য দেয় যে, সে চাঁদ দেখেছে । তখন তাকে রসূল সা: এর দরবারে নিয়ে আসা হয় । রসূল সা: তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল ? সে বলে, হ্যা আমি সাক্ষ্য দেই এবং আরও সাক্ষ্য দেই যে, আমি নতুন চাঁদ দেখেছি । অত:পর রসূল সা: হযরত বেলাল রা: কে নির্দেশ দিলেন, লোকদেরকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যে যাতে তারা তারাবিহ নামাজ পড়ে এবং পরদিন রোজা রাখে (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩, ২৩৩৪, তিরমিযী,নাসাঈ, ইবনে মাজাহ,দারেমী)

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে এমন এক ব্যক্তির চাঁদ দেখাই যথেষ্ট, যার দ্বীনদার হওয়া প্রমাণিত অথবা বাহ্যিকভাবে দ্বীনদার হিসেবে পরিচিত (সুনানে আবু দাউদ হাঃ/২৩৪০)

দুই জন মুসলমানের স্বাক্ষীর উপর রোজা শেষ করা যেতে পারে ।

*“রসূল সা: আমাদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন যে, আমরা যেন শাওয়ালের চাঁদ দেখাকে ইবাদত হিসেবে গুরুত্ব দেই । আর আমরা স্বচক্ষে যদি তা না দেখি তবে দুজন ন্যায় পরায়ন লোক এ ব্যাপারে স্বাক্ষ্য প্রদান করলে তখন আমরা যেন তাদের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করি (সূত্র: আবু দাউদ-৩য় খন্ড/২৩৩১, ২৩৩২)

হযরত আবু উমাইর ইবনে আনাস (রাঃ) আপন এক আনসারী চাচা থেকে বর্ণনা করেন তারা বলেছেন মেঘের কারনে আমরা শাওয়ালের চাঁদ দেখিনি বলে রোযা রেখেছিলাম । পরে দিনের শেষ ভাগে একটি কাফেলা আসল । তারা নবী করিম (সঃ) এর কাছে রাত্রে চাঁদ দেখেছে বলে সাক্ষী দিল । হুজুর (সঃ) লোকজনকে সে দিনের রোযা ভেঙ্গে দেয়ার আদেশ দিলেন এবং তার পরের দিন সকলে ঈদের নামাযে আসতে বললেন (আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, সহীহু সুনানি আবি দাউদ ১/৬৮৪ হাঃ ১১৫৭)

*একবার লোকেরা রমজানের শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখা নিয়ে মতভেদ করেন । তখন দুজন বেদুইন রসূল সা: এর কাছে হাজির হয়ে আল্লাহর কসম করে সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, গত সন্ধ্যায় তারা শাওয়ালের চাঁদ দেখেছে । তখন রসূল সা: লোকদেরকে রোজা ভাঙ্গার নির্দেশ দেন। রাবী খালফ তার হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, রসূল সা: আরও বলেন যে, লোকেরা যেন আগামীকাল ঈদগাহে আসে” (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩, ২৩৩৪)

সুতরাং অধিকাংশ আলেম বলেন যে রোযা রাখার জন্য একজন দর্শক হলেই চলবে তবে রোযা ভঙ্গ করার জন্য দুইজন দর্শক প্রয়োজন ।

চাঁদ দেখার স্বাক্ষী নিজ দেশের লোক, পার্শ্ববতী দেশের লোক, পৃথিবীর যে কোন দেশের লোক কোথাকার হবে অর্থাৎ “তোমরা” “সবাই” “সকলে” বলতে কাদের বুঝিয়েছেন ?

(চলবে)

(৩য় পর্ব)

http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/6753/soter/46397 (plz click & read)

বিষয়: বিবিধ

২৫১১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

228257
৩০ মে ২০১৪ সকাল ১১:৩৬
হতভাগা লিখেছেন : ''বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’র সকল ইবাদত একই দিনে (২য় পর্ব)''



০ মানে, সৌদি আরবে জুলাইয়ের ১ তারিখে চাঁদ দেখা গেলে ২ তারিখ থেকে সৌদি আরব , বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে সব মুসলিম উম্মাহ আছে তারা সবাই ২ তারিখেই রোজা শুরু করবে বা ঈদ পালন করবে সে সব দেশে চাঁদ না দেখা গেলেও ?


তাহলে আরেকটা কথা আসবে , বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের সময়ের পার্থক্য ৩ ঘন্টা । মানে বাংলাদেশ এগিয়ে । বাংলাদেশে যখন রাত ১০ টা তখন সৌদি আরবে সন্ধ্যা ৭ টা , মাগরিবের আযান শুরু হয়েছে । কিন্তু ততক্ষনে বাংলাদেশের এশার নামাজ শেষ হয়ে গেছে । বা ওদের ওখানে যখন এশার নামাজ শুরু হবে , তখন বাংলাদেশে রাত ১২ টা পার হয়ে গেছে। তাহলে কিভাবে হবে ?

আবার , বাংলাদেশে সেহরীর শেষ সময় যদি ভোর সাড়ে তিনটায় হয় এবং সৌদিতেও একই হয় , তাহলে ৩ ঘন্টার ব্যবধানের জন্য সৌদিতে যখন সেহরী শেষ হবে তখন বাংলাদেশে বাংলাদেশে সকাল সাড়ে ছয়টা । সূর্য উঠে গেছে ঘন্টা খানেকেরও বেশী হয়েছে । সেক্ষেত্রে কি সৌদি আরবের সাথে তাল মিলিয়ে সেহরী করা যাবে ?
০২ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:৫৪
176053
সত্যের লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ । বাকি পর্বগুলো পড়ার বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি । আপনার প্রশ্নের সমাধান ১ম পর্বে কিছুটা দেওয়া আছে । বিস্তারিত অন্য পর্বে পাবেন । ইনশা-আল্লাহ !
একটু বিবেগ দ্বারা চিন্তা করুন "একই দিন" আর "একই সময়" এর অর্থ সম্পূর্ন ভিন্ন নয় কি ? আপনার কমেন্ট আর আমার লেখার কোন বিরধ আছে কি ?
১০ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:৩৬
179797
সত্যের লিখেছেন : ৫ম পর্যন্ত চলছে আপনাকে পড়ার আমন্ত্রণ এবং প্রত্যেক পর্বে মতামত জানানোর অনুরোধ রইল ।
240845
০২ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:৩১
মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) লিখেছেন : এই পর্বটিও পড়ে নিলাম।
০৭ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:৫২
188327
সত্যের লিখেছেন : লেখার ভাল-মন্দ মতামত দিন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File