তামাক জাতিয় দ্রব্যে ইসলামের বিধান

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ২৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০৩:১৯:৩০ দুপুর



বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে প্রতি বছর তামাক সেবন করার কারনে ১০ লক্ষেরও বেশী লোক মারা যায় । যারা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায় তাদের মধ্যে ৯৫%, যারা ব্রংকাইটিস রোগে মারা যায় তাদের মধ্যে ৭০% এবং যারা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এ মারা যায় তাদের মধ্যে ২৫% লোক তামাক সেবন কারী ।

এছাড়াও তামাক সেবন করার কারনে হাতের আঙ্গুল, ঠোট, দাঁত কালো হয় । দাঁতের মাড়ি ক্ষয়ে যায় । গলার ক্ষতি হয় এতে করে পেপটিকালসার হয় । ক্ষুধা কমে যায় । স্বাস্থ্য খারাপ হয় । কোষ্ঠ কাঠিণ্য হয় । যৌন শক্তি কমে যায় । স্মৃতি শক্তিও কমে যায় । এছাড়াও বহু রোগের কারন হল তামাক ।

বর্তমানে তামাক দারা তৈরী সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লিখা থাকে, “ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর । ধুমপানে ফুসফুসে ক্যান্সার হয় । ধুমপান বিষপান” ইত্যাদি ।

বৈজ্ঞানিক গবেষনায় আরও জানা যায়, যে ধুমপান করে তার ধোঁয়া পাশের মানুষের ক্ষতি করে এবং নানাবিধ রোগের সৃষ্টি করে ।

বিশেষজ্ঞ মহলের মতে-একেকটা জ্বলন্ত সিগারেট থেকে কম করে হলেও চার হাজার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় ।

সর্বোপরি তামাক সেবন হলো একটি স্লো পয়জনিং, যা ধীরে ধীরে মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় ।

এর পরও যারা ধূমপানের উপকারের পক্ষে বলেন, তারা হয় জ্ঞান পাপি, না হয় বোকার স্বর্গে বাস করছে ।

অনেকে বলেন :- আল-কুরআনে তো বলা হয়নি “তোমরা তামাক সেবন করো না ।” হাদীসে কোথাও নেই যে, “তামাক সেবন করা যাবে না”, তা হলে তামাক দ্রব্য ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ হলো কিভাবে ?

এ প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব এ লেখায় । ইনশাআল্লাহ !

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ. “তোমরা নিজেদের জীবন ধ্বংশের সম্মুখীন করো না ।” (সূরা আল-বাকারা আয়াত ১৯৫)

তামাক সেবনে যক্ষা, ব্রংকাইটিস, দন্তক্ষয়, ক্ষুদামন্দা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ প্রভৃতি মারাত্মক রোগ হয় ।

আরো ইরশাদ হচ্ছে- "তোমরা নিজে নিজেকে হত্যা করো না । (সূরা নিসা-২৯) ।

অধিকাংশ তামাক সেবনকারী ব্যক্তি মারাত্মক দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয় ।

বিজ্ঞানীরা অনেক অনুন্ধান করে দেখেছেন তামাকে একটা বিষাক্ত জিনিস রয়েছে যাকে নিকোটিন বলা হয় । নিকোটিন হচ্ছে মারাক্তক রকমের বিষ ।

আমেরিকা থেকে বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে খবরে লিখেছে, তিনটি সিগারেটের তামাকে যে নিকোটিন থাকে তা ভিজিয়ে, তা থেকে নির্যাস বের করে যদি একটা জীবন্ত মানুষের শরীরে ইনজেক্শন করে দেয়া যায়, তবে মানুষটার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়ে যাবে ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা বলেছেন, "পৃথিবীর এত ধূলি, ধোঁয়া ও গ্যাস যদি মানুষের ফুসফুসে না ঢুকত, তাহলে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সুস্থ অবস্থায় জীবিত থাকত ।"

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন: وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ

“তিনি তোমাদের জন্য পবিত্র ও ভাল (তাইয়েবাত) বস্তু হালাল করেন আর তিকর - নোংড়া (খাবায়িস) জিনিষ হারাম করেন । (সূরা আল-আরাফ :১৫৭) ;

‘পবিত্র বস্তু থেকে তোমাদের যা জীবিকা হিসেবে দিয়েছি, তোমরা তাহা আহার কর ৷’ (সুরা তাহা-৮১);

হে মানুষ ! পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার মধ্য থেকে পবিত্র ও উত্তম জিনিসগুলো খাও (সুরা বাকারা ১৬৮)

--আর তামাক নিশ্চয়ই খাবায়িস এর অন্তর্ভুক্ত, তাই তা পান করা বৈধ (হালাল) নয় । আর তামাক একটি ক্ষতিকারক, অপবিত্র ও দুর্গন্ধময় বস্তু ।

এ আয়াতের ভিত্তিতে এমন বহু জিনিষ আছে যা হারাম হয়েছে অথচ তা কুরআন- হাদীসে নাম ধরে বলা হয়নি ।

তামাক ক্ষতিকর ও খারাপ । এ ব্যাপারে দুনিয়ার সুস্থ বিবেক সম্পন্ন সকল মানুষ একমত । কোন স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী দ্বি-মত পোষণ করেননি ।

তারপরও যদি কেহ বলেন, তামাক শরীয়তের নিষিদ্ধ বস্তুর মধ্যে পড়ে না তা হলে তাকে ঐ ডায়াবেটিস রোগীর সাথে তুলনা করা যায়, যিনি ডাক্তারের নির্দেশ মত চিনি ত্যাগ করলেন ঠিকই কিন্তু রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ সবই খেলেন আর বললেন কই ডাক্তার তো এ গুলো নিষেধ করেন নি !

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নামীদের খাদ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন: لَا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِنْ جُوعٍ

“এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবে না ক্ষুধাও নিবারণ করবে না ।” (সূরা আল-গাশিয়াহ : ৭)

তামাক তথা বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, হুক্কা, জর্দা, গুল ইত্যাদিও সেবনকারীর জন্য কোন প্রকার পুষ্টির যোগান দেয় না, ক্ষুধাও নিবৃত্ত করে না । তামাকের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যই রয়েছে যে তা সেবন কারীর পুষ্টির যোগান দেয় না, ক্ষুধাও নেভায় না ।

তামাক সেবন কারীদের তুলনা জাহান্নামী খাবারের সাথেই করা যায় ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: “… এবং খাও ও পান কর, কিন্তু অপব্যয় ও অমিতাচার করোনা । কেননা, আল্লাহ অপব্যয় কারীদের ভালবাসেন না ?” (সূরা আরাফঃ ৩১)

إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ “তোমরা অপচয় করো না । অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই ।” (সুরা আল-ইসরা: ২৭)

তামাক সেবন একটি অপচয় ।

অনেক এমন অপচয় আছে যাতে মানুষের লাভ-ক্ষুতি কিছু নেই । এগুলো সকলের কাছে অন্যায় ও সর্বসম্মতভাবে তা অপচয় বলে গণ্য ।

কিন্তু তামাক সেবন এমন একটি অপচয় যাতে শুধুই মানুষের ক্ষুতি । কোন লাভই নেই

আল্লাহ তাআলা মদ ও জুয়া হারাম করতে যেয়ে বলেন:

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا.

“তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে । বলে দিন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ । আর তার মধ্যে মানুষের জন্য উপকারিতাও আছে । তবে এগুলোর পাপ উপকারের চেয়ে বড় ।” (সূরা আল-বাকারা:২১৯)

আল্লাহ তাআলার এ বানী দ্বারা বুঝে আসে মদ জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্বেও তা হারাম করেছেন ।

তাহলে তামাক সেবন তো মদ জুয়ার চেয়েও জঘন্য । কারন তাতে কোন ধরনের উপকার নেই । বরং একশ ভাগই ক্ষতিকর ।

আর মদ খেলে আপনি একাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, কিন্তু ধুমপানে (তামাক) আপনি একাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন না পাশ্বের আরেক জনকে ক্ষতিগ্রস্থ করছেন ।

আসলে যেসব বিষয়ে আমাদের সন্দেহ থাকে সেগুলোকে বাদ দিতে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন

“হালাল স্পষ্ট, এবং হারাম স্পষ্ট । এ দুয়ের মাঝে আছে সন্দেহ জনক বিষয়াবলী । (তা হালাল না হারাম) অনেক মানুষই জানে না । যে ব্যক্তি এ সন্দেহ জনক বিষয়গুলো পরিহার করল, সে তার ধর্ম ও স্বাস্থ্য রক্ষা করল । আর যে এ সন্দেহ জনক বিষয়গুলোতে লিপ্ত হল সে প্রকারান্তরে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ল .. .. (বুখারী ও মুসলিম)

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

“যে সকল কথা ও কাজ মানূষের কোন উপকারে আসে না, তা পরিহার করা তার ইসলামের সৌন্দর্য ।” (মুসলিম)

আমরা সকলেই স্বীকার করি যে তামাক সেবনে কোন উপকারে আসে না । বরং ক্ষতিই করে ।

ধূমপান (তামাক) নির্মল পরিবেশকে দূষিত করে । সিগারেটের গন্ধ আশপাশের মানুষকে কষ্ট দেয় । এই গন্ধ যে কতটা অসহ্য তা শুধু অধূমপায়ীরাই বুঝে ।

ঘুম থেকে উঠার পরে একজন ধূমপায়ীর মুখে যে দুর্গন্ধ হয়, তা দুনিয়ার কোন বাজে গন্ধের সাথেও তুলনা করা যাবেনা ।

এর ফলে স্ত্রী-পরিজন, সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও আশে-পাশের লোকজনের কষ্ট হয়ে থাকে ।

বাসে, ট্রেনে ও অন্যান্য যানবাহনে প্রকাশ্যে ধূমপান করার ফলে অনেক সহযাত্রী নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে মনে ধূমপায়ীকে অভিশাপ দেন ।

আবার কেউ প্রতিবাদ করে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান । অনেকে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অপমানিত হন । কখনো ধূমপানকারীরা ধোঁয়ালো কন্ঠে বলে উঠে একটা গাড়ী বা ট্রেন কিনে তাতে আলাদাভাবে চলাফেরা করলেই হয় । কেউ কেউ আবার এও বলেন যে, ‘মনে হয় গাড়ীটা উনি নিজেই কিনে নিয়েছেন বা গাড়ীটা মনে হয় তার বাবার’ ।

জেনে রাখা উচিত, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ধূমপানকারীর প্রতিবেশী শারীরিকভাবে ধূমপায়ীর মতই ক্ষতিগ্রস্ত হন ।

হাদীছে প্রতিবেশীকে কষ্টদানকারী ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে ।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فلا يؤذي جاره

‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়’ (বুখারী হা/৪৭৮৭; মুসলিম হা/৬৮)

হাদিসে এসেছে : لا ضرر ولا ضرار

নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করার কোনো স্থান ইসলামে নেই । [ ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক, দারা কুতনি

অযথা ব্যয় আল্লাহর কাছে একটি ঘৃণিত বস্তু বলে বিবেচিত, হাদিসে এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন

إن الله كره لكم ثلاثا : قيل وقال وكثرة السؤال وإضاعة المال

"আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাদের জন্য তিনটি বিষয়কে ঘৃণা করেন ৷" (এক) ভিত্তিহীন কথা-বার্তা ৷ (দুই) অধিকহারে প্রশ্ন করা ৷ (তিন) সম্পদ নষ্ট করা ৷ [ বুখারি ও মুসলিম ];

আর তামাক সেবন করে যে অযথা সম্পদ নষ্ট করে এ ব্যাপারে কারো দ্বি-মত নেই ৷

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'তোমরা নিজেদের ক্ষতি সাধন করো না এবং অপরের ক্ষতি সাধন করো না ।' (মুসনাদ আহমদ - সহীহ্ হাদীস)

আর তামাক সেবন এমনই একটা বস্তু যা নিজের ক্ষতির সাথে সাথে পার্শ্ববর্তী লোকের কষ্টের কারণ হয়ে দাড়ায় এবং ধন-সম্পদেরও অপচয় হয় ।

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ 'আল্লাহ তোমাদের জন্য সম্পদ বিনষ্ট করা হারাম করেছেন ।' - (বুখারী ও মুসলিম)

আর তামাক সেবন সম্পদ ধ্বংসকারী যা আল্লাহ তা'য়ালা পছন্দ করেন না ।

তামাক সেবন যে বিষপান এটা সবাই একবাক্যে স্বীকার করে । এমনকি ইউরোপে একসময় এটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং সেবন কারীকে শাস্তি প্রদানও করা হত । ইসলামে সকল বিষাক্ত জিনিস ভক্ষন করা নিষিদ্ধ ।

রাসুল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অনন্তকাল তাই চাটতে থাকবে । সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে ।” (সহিহ মুসলিম)

আলেমগণ বর্তমান সময়ে তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি হারাম বলছেন কারন, জেনে শুনে তামাক সেবন করা নিজকে আত্নহত্যার মত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার শামিল !

খ্যাতনামা মুফতিদের ফতোয়া

সৌদি আরবের প্রয়াত গ্রান্ড মুফতি শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রা. তামাক হারাম বিষয়ে ফতোয়া দিয়ে বলেন:

( أن التبغ بكل أنواعه محرم كالخمر لكونه خبيثا ويشتمل على أضرار كثيرة ولا يجوز بيعه ولا تدخينه ولا التجارة فيه

(সকল প্রকার তামাক হারাম । ঠিক মদের মতোই । কেননা তা খাবিস বা মন্দ, এবং এর রয়েছে বহু অনিষ্টকারিতা । তামাক বিক্রি করা, সেবন করা, তামাকের ব্যবসা-বানিজ্য সবই অবৈধ)

তিনি আরো বলেন : ‘যারা তামাক সেবন করে অথবা তামাকের ব্যবসা করে তাদের তাওবা করে ফিরে আসা উচিত, যা ঘটে গেছে তার জন্য লজ্জিত হওয়া উচিৎ । কোনো দিন আর এ কাজে ফিরে যাবে না বলে দৃঢ়চিত্ত হওয়া জরুরি । [ দৈনিক আল কাবাস, কুয়েত:২.৬.১৯৯৪ ইং]

ফেকাহবিদ ড. ইউসুফ আল কারদাবি বলেন: ‘

إنه حرام، لأنه مضر بالصحة، مسبب للسرطان، وهو قتل بطيء للنفس، والله تعالى يقول: (ولا تقتلوا أنفسكم إن الله كان بكم رحيما) وهو حرام، لأنه يضر بمن يجالس المدخن، ويشركه في التدخين رغما عنه، والحديث النبوييقول: «لا ضرر ولا ضرار.

وهو حرام، لأنه خبيث في رائحته وفي أثره، والإسلام جاء ليحل الطيبات ويحرم الخبائث.. وهو حرام، لأنه من باب الإسراف أو التبذير وإضاعة المال فيما لا ينفع في الدنيا والآخرة.. وهو حرام لأنه يضر الضرورات الخمس: يضر بالدين، ويضر بالنفس، ويضر بالنسل، ويضر بالعقل، ويضر بالمال، لهذا كان تعاطيه محرما، واستيراده محرما، وبيعه محرما، والترويج له والإعلان عنه محرما

ধূমপান (তামাক) হারাম; কারণ তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ক্যানসারের কারণ, এটা হল মন্থর গতিতে মানব হত্যা । ইরশাদ হয়েছে : { তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর দয়াশীল।} [বাকারা ১৯৫ ]

ধূমপান হারাম; কেননা ধূমপানরত ব্যক্তির কাছে গিয়ে যে বসে তাকে তা ক্ষতি পৌঁছায়, অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরোক্ষভাবে তাকে ধূমপান করায় । হাদিসে এসেছে, (নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করার স্থান ইসলামে নেই)

ধূমপান হারাম ; কেননা তা গন্ধে ও প্রভাবে খারাপ । আর ইসলাম এসেছে, যা কিছু পবিত্র-উত্তম তা হালাল করতে ।

ধূমপান হারাম, কারণ ধূমপানে এমন একটি খাতে সম্পদ অপচয় ও নষ্ট করা হয় যার দুনিয়া আখেরাতে আদৌ কোনো ফায়দা নেই

ধূমপান হারাম, কারণ তা পাঁচটি প্রয়োজনীয় বিষয়ের ক্ষতিসাধন করে, দীন-ধর্মের ক্ষতি করে, নাফসের ক্ষতি করে, নসল তথা বংশানুগতির ক্ষতি করে, বুদ্ধিমত্তার ক্ষতি করে এবং অর্থের ক্ষতি করে ।

এ কারণেই তামাক সেবন হারাম, তা ইম্পোর্ট করা, বিক্রি করা, ধূমপানের পক্ষে প্রচারণা ও এ্যাডভারটাইসম্যান্টও হারাম ।

তামাক সেবন ছেড়ে দেওয়ার ব্যক্তিগত লাভ

১- একটি হারাম ও গর্হিত কাজ বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হবে ।

২- নবী রাসূল ও সৎ লোকদের কেউই তামাক সেবন করেন নি, তাই তা বর্জন করে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ সম্ভব হবে ।

৩-ফুসফুসের রোগ-ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে ।

৪- হার্টের অসুখ বা ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে ৷

৫- হার্টে চাপ কম পড়বে ৷

৬- আপনার ধোঁয়া থেকে আপনার প্রিয়জন ও প্রতিবেশীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বেঁচে যাবে ৷

৭- সর্দি, কাশি, শ্লেষ্মা ইত্যাদি থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যাবে ধূমপান বর্জনের সাথে সাথে ৷

৮- মুখের যাবতীয় ক্যানসার থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ।

৯- দাঁত আরও সাদা আরও পরিষ্কার হবে ।

তামাক সেবন ছেড়ে দেওয়ার সামাজিক লাভ

১ - আপনি আজ ও আগামী দিনে আপনার সন্তানের একজন সুস্থ অভিভাবক হতে সক্ষম হবেন ৷

২- অন্যান্য উপকারী খরচার জন্য আপনার হাতে আরো বেশি টাকা থাকবে ৷

৩ – তামাক সেবন না করার কারণে আপনি আলাদা সামাজিক মর্যাদায় ভূষিত হবেন ।

তামাক সেবন বর্জনে সহায়ক কিছু টিপস

১- তামাক দ্রব্য হারাম এ বিষয়টি হৃদয়ে জাগ্রত রাখুন ।

২- আল্লাহর কাছে বেশি-বেশি দুআ-প্রার্থনা করুন যাতে তিনি তামাক সেবনের বদভ্যাস ছাড়তে তাউফিক দেন, সাহায্য করেন ।

৩ - তামাক বা সিগারেট খাবার ইচ্ছে হলে আপনার সন্তানের সম্বন্ধে ভাবুন এবং আপনার কোনো তামাক ঘটিত ভয়ঙ্কর অসুখ হলে তাদের ভবিষ্যতের উপর কী প্রভাব পড়বে তা চিন্তা করুন ৷

তথ্যসূত্র: দৈনিক ইনকিলাব তারিখ ১৫-১২-২০০০ ইং । সাপ্তাহিক আরাফাত বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ১, ১৮ই আগস্ট ২০০৩ । কারিমা বিন্তে খামিস আল বু সাইদিয়াহ, আল ইনহিরাফ আল খুলুকি । http://www.islamhouse.com/p/144554

http://www.qaradawi.net ও Unlimited Free Islamic Article Download

এবং http://www.zilhajjtravels.com

তামাক দ্রব্য তথা বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা, গুল, সাদার পাতা ও জর্দ্দা ইত্যাদি এগুলির ব্যবসা করা যাবে কি ?

উক্ত বস্ত্তগুলি নেশা জাতীয় দ্রব্য । নেশাদার দ্রব্য মাত্রই হারাম । হারাম বস্ত্ত খাওয়া যেমন হারাম, তার ব্যবসাও তেমন হারাম ।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন সম্প্রদায়ের উপর কোন কিছু খাওয়া হারাম করেন, তখন তিনি তার ব্যবসাও হারাম করেন (আবুদাঊদ হা/৩৪৮৮)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্ত্ত হালাল ঘোষণা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্ত্ত সমূহ’ (আ‘রাফ ১৫৭)

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা মসজিদে গিয়ে বললেন, মদের ব্যবসা করা হারাম (মুসলিম হা/৪০২৩ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়)

যে সমস্ত বস্ত্ত পান করা হারাম, সেগুলোর ব্যবসা করাও হারাম (মুসলিম হা/৪০২০)

বাস্তবতার আলোকে:

কোন রান্নার ঘরে যদি জানালায় কাচ থাকে অথবা বাল্ব থাকে তাহলে দেখা যায় ধোঁয়ার কারনে তাতে ধীরে ধীরে কালো আবরন পড়ে ।

এমনি ভাবে তামাক সেবন কারীর দাতে, মুখে ও ফুসফুসে কালো আবরন তৈরী হয় ।

কাচের আবরন পরিস্কার করা গেলেও ফুসফুসের কালিমা পরিস্কার করা সম্ভব হয় না । ফলে তাকে অনেক রোগ ব্যধির শিকার হতে হয়

একজন অধুমপায়ী ব্যক্তির চেয়ে একজন ধুমপায়ী অধিকতর উগ্র মেজাজের হয়ে থাকেন ।

সমাজে যারা বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়ায় তাদের ৯৮% ভাগ তামাক সেবন করে থাকে । যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে তাদের ৯৫% ভাগ প্রথমে ধুমপানে অভ্যস্ত হয়েছে তারপর মাদক সেবন শুরু করেছে । এমনকি তামাক সেবন কারী মায়ের সন্তান উগ্র স্বভাবের হয়ে থাকে (সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব তারিখ ১৫-১২-২০০০ ইং)

সম্প্রতি উইনকনসিন বিশ্ব বিদ্যালয়ে ৩৭৫০ জন লোকের উপর এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে অধুমপায়ীদের চেয়ে ধুমপায়ীদের শ্রবন শক্তি কমার সম্ভাবনা শতকরা ৭০ ভাগ বেশী থাকে । গবেষকরা আরো দেখেছেন যে, একজন ধুমপায়ীর ধূমপানকালীন সময়ে কোন অধুমপায়ী উপস্থিত থাকলে তারও একই সমস্যা দেখা দেবে ।(সুত্র: সাপ্তাহিক আরাফাত বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ১, ১৮ই আগস্ট ২০০৩)

সিগারেট শুধু নিজেই জ্বলে না, অন্যদেরও জ্বালায়

নিরীহ গৃহপালিত পশুর পর্যন্ত পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

আশ্চর্যের বিষয় হলো ‘Colorado State University' ও ‘University of Massachusetts'-এর পর্যবেক্ষণ অনুসারে ধূমপায়ী গৃহস্বামী ও অন্যান্য সদস্যদের ধুমপানের কারণে নিরীহ গৃহপালিত পশুরাও রেহাই পাচ্ছে না এবং এর ফলে গৃহপালিত কুকুর- 'Canine lung cancer' ও বিড়াল- 'Feline lymphoma' নামক অজ্ঞাত ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে ।

অধুমপায়ীদের আত্ম আহাজারী

বাল্যকাল থেকে জেনে এসেছি ধূমপান কলিজা ছিদ্র করে দেয়, আরো ডেকে আনে অযুত অসুখ । তারপরও ধূমপান কি থেমে আছে ? না । বাড়ছেই ।

এখন, আপনি এত লেখা পড়া শিখে যদি ধূমপান করতে চান করুন, আপনার কলিজা আপনি ফুটো করবেন করুন, মরতে চান মরুন,

কিন্তু আমার কলিজা ছিদ্র করার অধিকার আপনাকে কে দিল ?

নিম্ন শ্রেণী কি উচ্চ শ্রেণী একযোগে পাইকারী দরে তামাক সেবন করে চলছে । করুন, আপনার পয়সা আপনি খরচ করুন, পানিতে ফেলে দিন, নিজের পায়ে মারার জন্য কুড়াল কিনতে খরচ করুন, যা ইচ্ছে তাই করুন । আপত্তি অন্যখানে ।

বিষাক্ত সিগারেটের ধোয়া গিলতে আমাকে কেন বাধ্য করেন ?

পাশ থেকে হেটে যাবার সময় কেন আমাকে এক কুন্ডুলি বিষ উপহার দিয়ে যান ?

অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় কেন নিরবে গিলতে বাধ্য করেন নিকোটিনের বহর ?

২০০৫ সালে বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন পাশ হয় । ২৬ শে মার্চ ২০০৫ হতে এই আইন কার্যকর হয় । এই আইনে পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধুমপান নিষিদ্ধ করা হয় । এ বিধান লংঘন করলে ৫০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে । এছাড়াও তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ । তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোন পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান, স্পন্সর, কোন টুর্নামেন্টের আয়োজন বা বিনামূল্যে নমুনা প্রদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে ৩০ ভাগ জায়গা পরিমান স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী ব্যবহার করবে । কোন ব্যক্তি এ সকল বিধান লংঘন করলে অনুর্ধ ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনোধিক ১০০০ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন । ব্যক্তি অর্থে কোম্পানি সমিতি বা সংস্থা অন্তর্ভূক্ত হবেন ।

২০০৫ সালে উল্লেখিত আইনের আওতায় যা দেয়া তার বাস্তবায়ন বর্তমানে তেমন নেই বললেই চলে ।

তাছাড়া বিদ্যমান আইনে ধোয়াবিহীন তামাকের ক্ষেত্রে কোন বিধান দেয়া নেই । তাই ধোয়াবিহীন তামাক ও আইনের আওতায় এনে যথাযথ আইনের বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে এবং একই সাথে তামাকজাত পণ্যের ওপর মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে অধিক হারে করের হার বৃদ্ধি ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা তৈরীও জরুরী ।

এখন আমরা যদি একজন তামাক সেবন কারীকে প্রশ্ন করি যে, কিয়ামতের দিন সিগারেট, বিড়ি, হুক্কা, গুল, জর্দ্দা, সাদার পাতা ইত্যাদি তামাক জাতিয় দ্রব্য নেকীর পাল্লায় রাখা হবে না গুনাহের পাল্লায় ?

তখন সে নিশ্চয় জবাব দেবে যে, গুনাহের পাল্লায় ।

আমি যা লিখেছি তা কুরআন হাদিস থেকে এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্কলারদের (the Standing Committee for Scholarly Research and Issuing Fatwas, http://www.islamqa.com) দেওয়া ফতোয়া থেকে লিখেছি যাদের চেয়ারম্যান বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বাজ ।

এমনকি বর্তমান সময়ের প্রখ্যাত ইসলামিক চিন্তাবিদ ডা. জাকির নায়েকেরও এই মত । তাছাড়া শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন, ড. মুহাম্মদ আলি আল বার, শায়খ মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম, শায়খ আব্দুর রহমান বিন নাসির আল সাদিসহ প্রখ্যাত সকল ইসলামিক স্কলাররা ধূমপানকে হারাম হিসেবে গণ্য করেছেন ।

আর বন্ধুকে তামাক খাওয়ানোর আগে একটু চিন্তা করুন ।

রাসুল (সঃ) বলেছেন, “যে ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতির পথনির্দেশ দিল, সে উহার সওয়াব পাবে এবং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না ।

আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে উহার পাপ বহন করবে, এবং যারা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে, তাতে তাদের পাপের কোন কমতি হবে না ।” (মুসলিম)

যারা তামাক সেবন (বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা, গুল, পানের সাথে জর্দ্দা, সাদার পাতা ইত্যদি) এখনো করছেন, তারা খাস দিলে আল্লাহর কাছে তওবা করে যেভাবে পারেন, এই মুহূর্তে তামাক সেবন ও অন্যান্য পান বন্ধ করুন । আল্লাহ আপনাকে নিশ্চিত উত্তম প্রতিদান দিবেন ।

আল্লাহ বলেন,

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর, একেবারে বিশুদ্ধ তওবা যাতে আল্লাহ তোমাদের ক্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করে দেন এবং তোমাদেরকে সেই জান্নাতে প্রবেশ করান যার পাদদেশ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত ।” (সূরা আত্ তাহরীম-আয়াত-৮)

লেখাটি সবাই প্রচার করুন । অতএব আসুন ! আমরা সকলে মিলে আমাদের সমাজকে তামাক মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করি ।

আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন !!

বিষয়: বিবিধ

১৬১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File