কুরবানী ও আক্বীকার কিছু মাসায়েল
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ০৯ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:২৩:৩২ রাত
আমাদের মাঝে কুরবানীর ইতিহাস ইব্রাহিম আঃ এর পুত্র ইসমাঈল আঃ কে কুরবানী করার মাধ্যমে ব্যপক ভাবে প্রসিদ্ধতা লাভ করেছে । সূরা আছ-ছফফাত এর ১০০ থেকে ১১১ পর্যন্ত এর ঘটনাকে চমৎকারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে । বলা হয়েছে,
‘সে বলল, হে আমার পরওয়ারদেগার, আমাকে একটি পুত্র সন্তান দান কর । সুতরাং আমি তার ডাকে সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম । অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহীম তাকে বলল, বৎস, আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে যবেহ করছি । এখন তোমার অভিমত কি ? সে বলল, আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা করুন, আমাকে সবরকারী পাবেন । যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করলো এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্য শায়িত করলো, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে । আমি এভাবে সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি । নিশ্চয়ই এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা । আমি তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু (ফিদিয়া) প্রদান করলাম । আর ভবিষ্যতের জন্য ইব্রাহীমের এ সুন্নাত স্মরণীয় করে রাখলাম ।
অর্থাৎ যে ফিদিয়া বা বিনিময় দ্বারা ইসমাঈল (আ.) কে কুরবানী করা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত সেই ফিদিয়ার কুরবানী চলবে । এভাবে আত্মোৎসর্গের নিদর্শনস্বরূপ কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানেরা আল্লাহর নামে শুধু কুরবানী করবে ।
কিন্তু, তার সুচনা এখান থেকেই নয় । বরং পৃথিবীর প্রথম মানব আদম আঃ থেকেই কুরবানীর ইতিহাসের সুচনা হয়েছে এবং প্রত্যেক নবী রাসুলগণের যুগেই তা বহাল ছিল ।
এই সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুরাতুল হজ্জের ৩৪ নাম্বার আয়াতে বলেন وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যই কুরবানীর বিধাণ নির্ধারণ করেছি, যাতে করে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ জবেহ করার সময় তার নাম নেয় ।
সর্বপ্রথম কুরবানী হাবিল ও কাবিলের কুরবানী
পৃথিবীর ইতিহাস যত পুরাতন কুরবানীর ইতিহাসও ততো পুরাতন । আদি পিতা আদম (আ.) এর দু' সন্তান হাবিল ও কাবিলের কুরবানীই সর্বপ্রথম কুরবানী । সূরা মায়িদার ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-
‘তাদেরকে আদমের দু' পুত্রের ঘটনাটি ঠিকভাবে শুনিয়ে দাও । তা হচ্ছে এই যে, তারা দু'জনই কুরবানী করলো । এক জনের কুরবানী কবুল করা হলো আরেক জনের কুরবানী কবুল করা হলো না । সে বলল, আমি তোমাকে হত্যা করবো । উত্তরে সে বলল, আল্লাহতো মুত্তাকীদের কুরবানীই কবুল করেন' ।
তবে সকল সময় সকলের উপর এক রকম বিধান ছিল না । আদম (আ.)-এর যুগে কবুলকৃত কুরবানীর পশুকে উপর থেকে একটি আগুন এসে পুড়ে ফেলতো । আর কবুল না হলে যেভাবে যবেহ করেছে সেভাবেই পড়ে থাকতো । ইব্রাহীম (আ.) ও তার পরবর্তীতে কুরবানীর পশুকে যবেহ করে কাবার সামনে অথবা উপসনালয়ের সামনে রেখে দিত । বর্ণিত আছে, হযরত নূহ (আ.) জন্তু যবাই করার জন্য একটি কুরবানীগাহ নির্মাণ করেছিলেন । সেখানে তিনি জবাইকৃত জন্তু আগুন দ্বারা জ্বালিয়ে দিতেন । আরব দেশেও প্রাচীনকালে আতিয়া ও ফারা নামক দু' শ্রেণীর বলি উৎসর্গ বা এক বিশেষ ধরনের কুরবানী প্রথা চালু ছিল । রজব মাসে অনুষ্ঠিত হতো বলে এ কুরবানীকে রাজাবিয়াহও বলা হতো । যে দেবতার নামে এই বলিদান অনুষ্ঠিত হতো বলিদানের পর নিহত পশুর রক্ত তার উপর নিক্ষেপ বা লেপন করা হতো (বোখারী ও মুসলিম)
পবিত্র কুরআনে নবী করীম (সা.) কে নামায, কুরবানী করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে । বলা হয়েছে, ‘তোমার রবের জন্য নামায পড়ো এবং কুরবানী করো'(সূরা কাউসার-২)
ইবরাহীম (আঃ) এর কুরবানী কেন এত স্মরণীয় এবং আমাদের কি শিক্ষণীয়ঃ-পৃথিবীর প্রথম মানব আদম (আঃ) থেকে শুরু করে এ যাবত পর্যন্ত সকল নবী রাসুলগণ, সামর্থবান ঈমানদার ব্যক্তি কুরবানী করেছেন । কিন্তু আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ) এর কুরবানী কেন স্মরণীয় করে রাখলেন!
যখন আল্লাহ নিষ্পাপ ছেলেকে স্বপ্নের মাধ্যমে জবাই করার ওহী করলেন তখন ইব্রাহীম (আঃ) কোন রকম অজুহাত, বাহানা, হুকুম রদ করার জন্য প্রার্থনা করেননি । এমনকি মনের ভিতরে আল্লাহর হুকুমের বিপরীত কোন যুক্তি, সংশয়ের উদ্বেগ হয়নি ।
বলতে পারতেন, “হে আল্লাহ তোমার দ্বীন প্রচারের জন্য ছেলে চেয়েছিলাম । একে দ্বীনের কাজের জন্যই বেঁচে থাকতে দাও” । “আল্লাহ তোমার জন্যই আগুনে গিয়েছি, দেশ ছেড়েছি, ঘর বাড়ী, ধন-সম্পদ, আত্মীয় স্বজন সব ছেড়েছি । এ সবের বিনিময়ে আমার ছেলেটাকে কুরবানী করা থেকে রেহাই দাও” । এ সবের কিছুই তিনি বলেননি এবং মনে মনে কোন রকম চিন্তা কল্পনাও করেননি ।
কারন তিনি জানতেন “আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন । আল্লাহর ইচ্ছার বিপরিত কোন ইচ্ছা করা বা বলার কারো কোন অধিকার নেই । আল্লাহর ইচ্ছা ‘ভাল’ না ‘মন্দ’ এ চিন্তা করাও কুফরী” ।
আল্লাহর হুকুম না মানলে কি অপরাধঃ-
যখন আল্লাহ বলেছিলেন “আস্লিম্” (তুমি মুসলমান হও) অর্থাৎ আল্লাহর পুরা অনুগত হও । তখন তিনি বলেছিলেন “আসলামতু লিরাব্বিল আ’লামীন” (আমি রাব্বুল আ’লামীনের পুরা আনুগত হয়ে গেলাম)
কাজেই মুসলমান হলে আল্লাহর কোন হুকুম অমান্য করা যায় না । আর আল্লাহর কোন হুকুম অমান্য করলে মুসলমান হওয়া যায় না ।
ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর আদেশ মান্য করার জন্য তাঁর নিষ্পাপ ছেলেকে কুরবানী করতেছিল অথচ আমাদের আহাল (পরিবার, ছেলে-মেয়ে ও আপনার অনুগত অন্যান্যরা) হাজারো গুনাহর কাজে লিপ্ত (নামায পড়ে না, রোজা রাখে না, পর্দা মানে না, গান-বাজনা, বেহায়াপনা নাচ, কল্পকাহিনী নাটক সিনেমায় ব্যস্ত, মদ-জুয়া, তামাক, চুরী-ছিন্তাই ইত্যাদি হারাম কাজে লিপ্ত, জেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত, সুদের আদান-প্রদানে করে ইত্যাদি নানা শরীয়া বিরোধী কাজে জড়িত) এসব ব্যাপারে আপনি পরিবারের অভিবাবক হিসাবে দ্বীনের জন্য কি কুরবানী করেন, কি দায়িত্ব পালন করেন ? !
পশু কোরবানীর সাথে পশুত্বের কোরবানী করতে হবে:
ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য যখন নিষ্পাপ ছেলেকে কুরবানীর জন্য শায়িত করলেন তখন আল্লাহ তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য এক মহান জন্তু প্রদান করেন । এখানে আল্লাহ তার বান্দার প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল হয়েছেন । এই জন্য আমরা মুসলমানেরা প্রতি বছরে একবার পশু কুরবানী করে থাকি ।
আমি আপনি যে পশু কুরবানী করি সে পশু কি আমাদের পার্থিব জীবনে কোন ক্ষতি করে ? উত্তরঃ ‘না’ । বরং এ গৃহপালিত পশু আমাদের নানা ধরনের উপকার করে । তাহলে এই উপকারি পশুটিকে নির্দয় নির্মমভাবে জল্লাদের মত হত্যা করা কি ঠিক হয় ? পার্থিব জ্ঞানের আলোকে উত্তর হবে ‘না’ । মানুষ মাছি এমনকি কোন ক্ষুদ্র প্রাণীও সৃষ্টি করতে পারে না । তাহলে প্রতিবছর কেন এই নিঃশংস পশু হত্যাকান্ড করা হয় ? এখানে মুসলমানেরা আল্লাহর বাণীর আলোকে উত্তর জানাবে, এটা আমাদের রবের/সৃষ্টিকর্তার হুকুম পালনের জন্য করি ।
অতএব দুনিয়ার সমস্ত লোক ইহুদী, খ্রীষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ তাদের অনুসারী নামধারী মুসলমান যত যুক্তি তর্কের মাধ্যমে যে কোন বিষয়ে যত কঠিন প্রশ্ন করুক না কেন দুনিয়ার জ্ঞানের আলোকে উত্তর তাদের পক্ষে হলেও বা উত্তর না দিতে পারলেও প্রকৃত মুসলমান কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর হুকুমের বিপরিত কোন কাজ করবে না ।
শরী’আতের হুকুমের গোপন রহস্য ও হিকমাত পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না । সুতরাং শরী’আতের কোন হুকুমের রহস্য ও হিকমাত কারো বুঝে আসুক বা না আসুক তা যে মহান আল্লাহর হুকুম এজন্য বিনা দ্বিধায় অবশ্যই পালন করতে হবে । তাহলেই আমরা নিজেদের প্রকৃত মুসলমান বলে দাবী করতে পারব ।
আমরা মানুষ । আমাদের মধ্যে যেমন ফেরেশতার স্বভাব আছে তেমনি পশুর স্বভাবও আছে । মানুষের মধ্যে যত ভালো গুণ রয়েছে, সেগুলো হলো-ফেরেশতার স্বভাব । আর হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, অন্যায়ভাবে কারো উপর আক্রমণ করা, মানুষের ধন-সম্পদ অবৈধভাবে দখল করা, কারো অধিকার কেড়ে নেয়া, হারাম পরিহার না করা, জেনা ব্যভিচার করা, সুদ দেওয়া-নেওয়া, পুরুষ/নারীর পর্দার বিধান মেনে না চলা ইত্যাদি হলো পশুর স্বভাব ।
পবিত্র কোরবানী ঈদে আমরা পশু কোরবানী করে থাকি । কুরবানীর মূল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এই উপলক্ষে অর্জিত তাকওয়া বা আল্লাহভীতি দ্বারা নিজের পশু স্বভাবকে কোরবানী করি না । শরিয়তের কোন বিধান মানব আর কোন বিধান আমাদের যুক্তিতে মানা সম্ভব নয় এটা ভাবলে, করলে আমাদের পশু কুরবানী এমনকি কোন ইবাদতই আল্লাহ কবুল করবে না । শুধু নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাতের নাম ইসলাম না । এগুল পালনের পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে যত হুকুম করেছেন সবগুল পরিপূর্ণভাবে পালন করার নাম ইসলাম ।
যদি পশু কোরবানীর সাথে সাথে আমরা নিজেদের পশুস্বভাবকেও কোরবানী করতে পারি, তবেই আমাদের সমাজ হবে সুখময়, শান্তিময় ও আনন্দময় ।
আসুন আমরা সকলে এই বছরের পশু কুরবানীর সাথে নিজের ভিতরের ও আহালের (পরিবার, ছেলে-মেয়ে ও অধিনস্থ অন্যান্য) সকলের পশু স্বভাবও কুরবানি করি । আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর মহা ত্যাগের মহা স্মৃতি পবিত্র কুরবানী অনুষ্ঠান থেকে লব্ধ শিক্ষা দ্বারা আমরা যাতে নিজেদের চরিত্র গঠন করতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তওফিক দিন । এটাই একমাত্র কামনা ।
আল্লাহর রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে মানুষ যেরূপ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে জীবন যাপন করেছে, অনুরূপ পবিত্র স্বভাবের অধিকারী হয়ে আজও সেরূপ শান্তি ও নিরাপত্তা আমরা লাভ করতে পারি । সূরা আল হজ্বের ৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
‘এ কুরবানীর রক্ত ও গোশত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের অবস্থা বা তাকওয়া' ।
মুক্বীম অবস্থায় নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি পশু :
(১) আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন... অতঃপর দো‘আ পড়লেন بِسْمِ اللهِ أللّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَّ آلِ مُحَمَّدٍ وَّ مِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ-
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা তাক্বাববাল মিন মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মাদিন ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মাদিন ।
অর্থঃ ‘আল্লাহ্ নামে (কুরবানী করছি), হে আল্লাহ । আপনি কবুল করুন মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে, তার পরিবারের পক্ষ হ’তে ও তাঁর উম্মতের পক্ষ হ’তে’ । এরপর উক্ত দুম্বা কুরবানী করলেন (ছহীহ মুসলিম, ছহীহ তিরমিযী হা/১২১০, ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪২৩; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩১২৮; মিশকাত, পৃঃ ১২৭, ২৮, হা/১৪৫৪ ‘কুরবানী’ অনুচ্ছেদ)
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
يَآ أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِىْ كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَة وَ عَتِيْرَةً...
‘হে জনমন্ডলী! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী ও আতীরাহ’। আবুদাঊদ বলেন, ‘আতীরাহ’ প্রদানের হুকুম পরে রহিত করা হয় (সনদ ছহীহ, আলবানী-ছহীহ তিরমিযী হা/১২২৫; ছহীহ আবুদাউদ হা/২৪২১; ছহীহ নাসাঈ (বৈরুতঃ ১৯৮৮), হা/৩৯৪০; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/২৫৩৩; মিশকাত হা/১৪৭৮) হাদীছটির সনদ ‘শক্তিশালী’ (ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ১০/৬ পৃঃ)
(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরেও তাঁর সুন্নাত অনুযায়ী ছাহাবীগণের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে একটা করে কুরবানী করার প্রচলন ছিল । যেমন আতা ইবনু ইয়াসির ছাহাবী আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ)-কে রাসূলের যুগে কেমনভাবে কুরবানী করা হ’ত মর্মে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হ’তে কুরবানী দিত । অতঃপর তা নিজে খেত ও অন্যকে খাওয়াত (ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৬ ‘কুরবানী’অধ্যায়; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/২৫৩৩ ‘নিজ পরিবারের পক্ষ হতে একটা বকরী কুরবানী করা’ অনুচ্ছেদ, ‘কুরবানী’ অধ্যায়)
ইমাম শাওকানী (রহঃ) উপরোক্ত পরপর তিনটি হাদীছ পেশ করে বলেন, হক কথা হ’ল, একটি পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি ছাগলই যথেষ্ট, যদিও সেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা শতাধিক হয়’ (নায়লুল আওত্বার ৬/১২১ পৃঃ, ‘একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানী করাই যথেষ্ট’ অনুচ্ছেদ) ।
তাই একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই যথেষ্ট । তবে সার্মথ থাকলে একাধিক পশুও কুরবানী করতে পারবে ।
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ হাত দ্বারা দু’টি শিংওয়ালা দুম্বা কুরবানী করেছেন’ (ছহীহ বুখারী হা/৫৫৬৪-৬৫; ছহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫৩ প্রভৃতি)
কখনও তিনি দু’-এর অধিক দুম্বা, খাসী, বকরী (ছাগল), গরু ও উট কুরবানী করেছেন (ফাৎহুল বারী ১০/৯ পৃঃ ৫৭; মিরা‘আত হা/১৪৭৪, ২/৩৫৪ পৃঃ)
প্রখ্যাত ছাহাবী আবু সারীহা (রাঃ) বলেন, ‘একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটা অথবা দু’টা করে বকরী কুরবানী করা হত (সহিহ ইবনু মাজাহ হা/২৫৪৭)
কুরবানীর বদলে তার মূল্য ছাদাক্বা করা নাজায়েয । আল্লাহর রাহে পশুর প্রান ও রক্ত প্রবাহিত করাই এখানে মূল ইবাদত । যদি কেউ কুরবানীর বদলে তার মূল্য ছাদাক্বা করতে চান, তবে তিনি মুহাম্মাদী শরী‘আতের প্রকাশ্য বিরোধিতা করবেন- মাজমূ ‘ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ, ২৬/৩০৪; মুগনী, ১১/৯৪-৯৫ পৃঃ
কুরবানীর পশু যবহ করা কিংবা কুটা-বাছা বাবদ কুরবানীর গোশত বা চামড়ার পয়সা হ’তে কোনরূপ মজুরী দেওয়া যাবে না । ছাহাবীগণ নিজ নিজ পকেট থেকে এই মজুরী দিতেন । অবশ্য ঐ ব্যক্তি দরিদ্র হলে হাদিয়া স্বরূপ তাকে কিছু দেওয়ায় দোষ নেই- আল-মুগনী, ১১/১১০ পৃঃ
গোশত বন্টন: সূরা আল হজ্বের ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরবানীর গোশত কি করতে হবে সে সম্পর্কে বলেন,
‘কুরবানীর পর যখন পশু নির্জীব হয়ে যায়, তখন তা থেকে তোমরা নিজেরা খাও এবং ওই সব লোকদের খেতে দাও, যারা অল্পে তুষ্ট এবং যারা কারো কাছে হাত পাতে না । আর ওইসব লোকদেরও দাও যারা নিজেদের প্রয়োজন পেশ করে' ।
কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ (নিজেরা খাও) নিজ পরিবারের খাওয়ার জন্য, এক ভাগ প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজন (হাত পাতে না) যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদের জন্য ও এক ভাগ সায়েল ফক্বীর-মিসকীন (প্রয়োজন পেশ করে) দের মধ্যে বিতরণ করবে ।
প্রয়োজনে উক্ত বন্টনে কমবেশী করায় কোন দোষ নেই । কুরবানী যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি জন্য সেহেতু যত বেশী গোশত অন্যদের বিলিয়ে দিবেন ততই সয়াব বেশি পাবেন । এ ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা উচিত নয় । আপনি সামর্থবান গোশত কিনেও ক্ষেতে পারবেন ।
যদি কেউ মৃতের নামে কুরবানী করেন, তবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (১১৮-১৮১ হিঃ) বলেন, তাকে (মৃতের ভাগের) সবটুকুই ছাদাক্বা করে দিতে হবে- তিরমিযী তুহফা সহ, হা/১৫২৮, ৫/৭৯ পৃঃ; মির‘আত ৫/৯৪ পৃঃ
কুরবানীর গোশত যতদিন খুশী রেখে খাওয়া যায়- হজ্জ ৩৬; সুবুলুস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম ৪/১৮৮; আল-মুগনী ১১/১০৮; মির‘আত ২/৩৬৯; ঐ, ৫/১২০ পৃঃ
তবে আপনি ধনী ব্যাক্তি সুরা আল হজ্জের ৩৬ নং আয়াতে উল্লেখিত দুই শ্রেণীকে কম বা না দিয়ে ফ্রিজে রেখে দিলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন না ।
কুরবানীর গোশত বিক্রি করা নিষেধ । তবে তার চামড়া বিক্রি করে-(আহমাদ, মির‘আত ৫/১২১; আল-মুগনী ১১/১১১ পৃঃ)
শরী‘আত নির্দেশিত ছাদাক্বার খাত সমূহে ব্যয় করবে (তওবা ৬০)
প্রশ্ন (১) ভাই-বোনে পৃথক পরিবার । তারা কি একত্রে কুরবানী দিতে পারবে ?
উত্তরঃ প্রতিটি পরিবারের জন্য পৃথক পৃথক কুরবানী দেওয়াই ছহীহ হাদীছ সম্মত । সুতরাং ভাই-বোনে যেহেতু পৃথক পরিবার, সেহেতু তাদেরকে পৃথক ভাবে একটি করে কুরবানী দিতে হবে । একটি কুরবানী অর্থ একটি পশু । পশুর ভাগা নয় (দলিল উপরের আলোচনা দ্রঃ)
ভাগা কুরবানী: সফরে থাকাকালীন সময়ে ঈদুল আযহা উপস্থিত হ’লে একটি পশুতে একে অপরে শরীক হয়ে ভাগে কুরবানী করা যায় । নিম্নে দলীল সহ বর্ণিত হ’ল-
(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- فِى سَفَرٍ فَحَضَرَ الأَضْحَى فَاشْتَرَكْنَا فِى الْبَقَرَةِ سَبْعَةً وَفِى الْبَعِيرِ عَشَرَةً ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম । এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হ’ল । তখন আমরা সাত জন একটি গরুতে ও দশ জন একটি উটে শরীক হ’লাম (ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৪; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩১২৮, ছহীহ নাসাঈ হা/৪০৯০; সনদ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/১৪৬৯, ‘কুরবানী’ অনুচ্ছেদ)
(খ) জাবির (রাঃ) বলেন, نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بالْحُدَيْبِيَةِ الْبُدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ হুদায়বিয়ার সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম । তখন একটি গরুতে সাত জন ও একটি উটে সাত শরীক হয়ে কুরবানী করেছিলাম (ছহীহ মুসলিম হা/১৩১৮ ‘হজ্জ’অধ্যায়; ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪৩৫; ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৪; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩১৩২)
(গ) জাবির (রাঃ) বলেন, حَجَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَحَرْنَا الْبَعِيرَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হজ্জের সফরে ছিলাম । তখন সাত জনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং সাত জনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছিলাম (ছহীহ মুসলিম ২/৯৫৫ পৃঃ হা/৩২৪৯)
(ঘ) উক্ত জাবির (রাঃ) বলেন, كُنَّا نَتَمَتَّعُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَذْبَحُ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ ‘আমরা নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে তামাত্তু হজ্জের সফরে ছিলাম । তখন সাত জনে মিলে একটি গরু কুরবানী করেছিলাম’ (মুসলিম হা/৩২৫২, নাসাঈ হা/৪৩৯৩, আবুদাউদ হা/২৮০৭)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে মুক্বীম ও মুসাফির অবস্থায় কুরবানী করার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ।
‘উপরন্তু কুরবানী হ’ল পিতা ইবরাহীমের সুন্নাত । আর তা ছিল ইসমাঈলের জীবনের বিনিময়ে আল্লাহর পক্ষ হ’তে পাঠানো একটি পশুর জীবন । অর্থাৎ দুম্বা যা একটি মানব প্রানের বিনিময়ে একটি পশুর জীনব ও রক্ত প্রবাহিত করা হয়েছিল ।
এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহ’লে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারব, কিন্তু তার জীবনটা কার ভাগে পড়বে ?
অতএব ইবরাহীমী ও মুহাম্মাদী সুন্নাতের অনুসরণে নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে আল্লাহ্ রাহে একটি জীবন তথা একটি পূর্ণাঙ্গ পশু কুরবানী দেওয়া উচিত, পশুর দেহের কোন খন্ডিত অংশ নয়’
অনেকে বলেন, সফরের হাদীছগুলো আম । যদি আম হয় তাহ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ মুক্বীম অবস্থায় ভাগা কুরবানী করতেন মর্মে দলীল কোথায় ?
প্রশ্নঃ সাত ভাগে কুরবানী দেয়ার পক্ষে অনেক আলেমকেই জোর প্রচারণা চালাতে দেখা যায় । বিষয়টি কেন শরী’আত সম্মত হবে না- তা ছহীহ হাদীছের আলোকে বিস্তারিতভাবে জানিয়ে বাধিত করবেন ?
উত্তরঃ ভাগা কুরবানীর হাদীছ সফরের সাথে সংশ্লিষ্ট । মুক্বীম অবস্থায় ভাগে কুরবানী করার কোন ছহীহ দলিল পাওয়া যায় না । তবে সফরে বা মুসাফির অবস্থায় ভাগে কুরবানী দিতে পারবে এর ছহীহ দলিল আছে (উপরের আলোচনা দ্রঃ)
আক্বীকাঃ
রাসুল (ছঃ) বলেন সন্তানের সাথে আক্বীকা জড়িত । অতএব তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহত কর এবং তার থেকে কষ্ট দূর করে দাও (বুখারী, মেশকাত হা/৪১৪৯ আক্বীকা অনুচ্ছেদ)
তিনি (ছঃ) বলেন প্রত্যেক শিশু তার আক্বীকার সাথে বন্ধক থাকে । অতএব জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেক পশু যবেহ করতে হয়, নাম রাখতে হয় ও তার মাথা মুন্ডন করতে হয় (আবুদাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আহমদ, ইরওয়া হা/১১৬৫)
ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, আক্বীকার সাথে শিশু বন্ধক থাকে- একথার ব্যাখ্যায় ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, যদি বাচ্চা আক্বীকা ছাড়াই শৈশবে মারা যায়, তা’হলে সে তার পিতা মাতার জন্য ক্বিয়ামতের দিন শাফা’আত করবে না । কেউ বলেছেন, আক্বীকা যে অবশ্য করণীয় এবং অপরিহার্য বিষয়, সেটা বুঝানোর জন্যই এখানে বন্ধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা পরিশোধ না করা পর্যন্ত বন্ধকদাতার নিকট বন্ধক গ্রহিতা আবদ্ধ থাকে (শাওকানী, নায়লুল আওতার ৬/২৬০ পৃঃ আক্বীকা অধ্যায়)
শাফেঈ বিদ্বানগণের মতে সাত দিনে আক্বীকার বিষয়টি সীমা নির্দেশ মুলক নয় বরং এখতিয়ার মুলক । ইমাম শাফেঈ বলেন, সাত দিনে আক্বীকার অর্থ হল, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ সাত দিনের পরে আক্বীকা করবে না । যদি কোন কারনে বিলম্ব হয়, এমনকি সন্তান বালেগ হয়ে যায়, তাহলে তার পক্ষে তার অভিভাবকের আক্বীকার দায়ত্ব শেষ হয়ে যায় । এমতাবস্থায় সে নিজের আক্বীকা নিজে করতে পারবে (নায়লুল আওতার ৬/২৬১ পৃঃ)
সাত দিনের পূর্বে শিশু মারা গেলে তার জন্য আক্বীকার কর্তব্য শেষ হয়ে যায় (নায়লুল আওতার ৬/২৬১ পৃঃ)
আক্বীকা ও কুরবানী একই দিনে হলে, সম্ভব হলে দু’টিই করবে । নইলে কেবল আক্বীকা করবে । কেননা আক্বীকা জীবনে একবার হয় এবং তা সপ্তম দিনেই করতে হয় । কিন্তু কুরবানী প্রতি বছর করা যায় ।
‘কুরবানী ও আক্বীক্বা দু’টিরই উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা’ এই (ইসতিহসানের) যুক্তি দেখিয়ে কোন কোন হানাফী বিদ্বান কুরবানীর গরু বা উটে এক বা একাধিক সন্তানের আক্বীক্বা সিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন (যা এদেশে অনেকের মধ্যে চালু আছে- বুরহানুদ্দীন মারগীনানী, হেদায়া (দিল্লীঃ ১৩৫৮ হিঃ) ‘কুরবানী’ অধ্যায় ৪/৪৩৩; ঐ ( দেউবন্দ ছাপা ১৪০০ হিঃ) ৪/৪৪৯ পৃঃ; আশরাফ আলী থানভী, বেহেশতী জেওর (ঢাকাঃ এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ১০ম মুদ্রণ ১৯৯০) ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায় মাসয়ালা ২, ১/৩০০ পৃঃ)
হানাফী মাযহাবের স্তম্ভ বলে খ্যাত ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) এই মতের বিরোধিতা করেন । ইমাম শাওকানী (রহঃ) এর ঘোর প্রতিবাদ করে বলেন, এটি শরী‘আত, এখানে সুনির্দিষ্ট দলীল ব্যতীত কিছুই প্রমাণ করা সম্ভব নয়- নায়লুল আওত্বার, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায় ৬/২৬৮ পৃঃ ।
বলা আবশ্যক যে, কুরবানীর পশুতে আক্বীকার ভাগ নেওয়ার কোন প্রমান রাসুল (ছঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের কোন কথা ও কর্মে পাওয়া যায় না ।
গরু দিয়ে আকীকা করাঃ البقر في العقيقة কোন হাদীসেই গরু দিয়ে আকীকা করার কথা উল্লেখ হয়নি । অথচ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে সব ধরণের পশুই বিদ্যমান ছিল । সুতরাং উত্তম হচ্ছে ছাগল বা দুম্বা দিয়েই আকীকা করা ।
গরু দিয়ে আকীকা করা হলে একদল আলেমের মতে তা জায়েয হবে । তবে শর্ত হচ্ছে একজন সন্তানের পক্ষ হতে একটি গরু দিয়ে আকীকা করতে হবে । আকীকা যেহেতু একটি এবাদত, তাই হাদীছে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই পালন করা উচিত ।
কোরবানীর সাথে ভাগে আকীকা দেয়াঃ الاشتراك في العقيقة مع الأضحية আমাদের দেশে সাতভাগে গরু দিয়ে কুরবানী করার ক্ষেত্রে আকীকার অংশীদার হওয়ার নিয়ম ব্যপকভাবে প্রচলিত আছে । এটি হাদীছ সম্মত নয় । হাদিসে আক্বীকার পশু ছাগল, দুম্বার কথা স্পষ্টকরে উল্লেখ আছে, গরু উল্লেখ নাই ।
আবার কারো মতে একটি প্রাণের বিনিময়ে একটি প্রাণ এ হিসাবে একটি গরু দিয়ে যদি একজন সন্তানের আকীকা করা ঠিক হয়, তাহলে কুরবানীর গরুর সাথে ভাগে আকীকা করা সঠিক হওয়ার প্রশ্নই আসে না ।
ভুল সংশোধনঃ- আমাদের না জানার কারনে, যাদের ভুল হয়ে গেছে অর্থাৎ দিনে ভুল হয়েছে, এক পশুতে কয়েক সন্তানের অথবা কুরবানীর সাথে ভাগে আক্বীকা করেছি । এ ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা করি যেন আল্লাহ আমাদের সন্তানের আক্বীকা কবুল করেন ।
আর যাদের সময় দিন পার হয়ে গেছে এখনও সন্তানের আক্বীকা করেন নাই, তাহলে সামর্থ থাকলে শীঘ্রই করে ফেলুন এবং আল্লাহর কাছে জোড়ালভাবে আকুতি মিনতী করে দোয়া করুন যেন আল্লাহ আমাদের দায় মুক্ত করেন । তবে এক পশুতে কয়কজন সন্তান ও কুরবানীর পশুর সাথে ভাগে যেন না হয় এটা খেয়াল রাখবেন ।
আমাদের সন্তানেরা যেন ভবিষ্যতে ভুল না করে সে জন্য কুরআন হাদীসের ছহীহ বাণী তাদের কাছে প্রচার করার আহবান রইল ।
“আমীণ”
বিষয়: বিবিধ
২৯৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন