বিশ্বের ধর্ম নিয়ে কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ১৪ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:৩১:৩৬ সকাল
সম্মানিত বিশ্ববাসী আস্সালামু আ’লাইকুম ।
আমি বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে কিছু বিষয় পরিলক্ষিত হই যা সকল ধর্মের অনুসারীরা কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন ।
বিশ্বে আমরা যারা ধর্ম পালন করি তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ লোকই জন্মগতভাবে তাদের বাবা মায়ের ধর্মকেই অনুসরন করেন ।
পরবর্তীতে অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধর্ম বিষয়ক শিক্ষা গ্রহন করে যা তাদের ওস্তাদ শিক্ষায় বা তাদের বিভিন্ন ওস্তাদদের লিখিত বই থেকে । ওস্তাদরা অনুসরণ করেন তাদের কোন ধর্ম গুরুকে । এভাবেই অধিকাংশ লোক বিশ্বে বিভিন্ন ধর্ম পালন করে থাকেন । খুব কম সংখ্যক লোকই তাদের মুল ধর্ম গ্রন্থ অনুসরণ করেন ।
কোন লোক তাদের মুল ধর্ম গ্রন্থের কোন অধ্যায়, পরিচ্ছেদ, বিষয় ইত্যাদি কোন ধর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত লোকের কাছে নিয়ে গেলে তারা তা না বুঝিয়ে তাদের ওস্তাদদের কথাই তাকে বুঝিয়ে বলেন । কেউ লিখিত জানালে তাহা ওস্তাদদের নিকট পাঠিয়ে দেয় যা ওস্তাদরা তাদের ধর্মগুরুর শিখানো মতামত অনুসারে লিখিত জানান । এতে কোন কোন ক্ষেত্রে মুল ধর্ম গ্রন্থের সাথে অমিল দেখা যায় । আবার বিভিন্ন ওস্তাদদের মতামত বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে এবং সকলেই তার মতামতকে সঠিক বলেন এবং অন্য জনের মতামত ভুল বলেন ।
কিছু ধর্ম শিক্ষিত লোক, ওস্তাদ বা গুরু আবার অনেক রকম ধর্মীয় বই লিখেন সেখানে দেখা যায় তাদের ব্যাক্তিগত মতামতে ভরপুর যদিও মাঝে মাঝে দুই একটা মুল গ্রন্থের নাম উল্লেখ থাকে । মুল ধর্ম গ্রন্থগুলো দেখা যায় অনেক খন্ডে বিভক্ত । তাদের বইতে যদি শুধু গ্রন্থের নাম উল্লেখ থকে তাহা কোন খন্ডে, কোন অধ্যায়, কত নম্বর পৃষ্ঠায় ইত্যাদি দলিল না থাকে খুজে বের করে উক্ত লেখা মিলিয়ে দেখা খুবই কষ্টকর ও সময়ের ব্যাপার হয়ে দাডায় ।
অনেক বইতে দেখা কোন মুল ধর্ম গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়েছে এবং দলিল ও পেশ করেছে । অনেক লোক তা যাচাই বিচার না করে সঠিক বলেন । কিন্তূ মুল গ্রন্থের সাথে মিলিয়ে দেখতে গেলে দেখা যায় কোন ক্ষেত্রে যে পূর্ণ বিষয় তুলে না ধরে সংক্ষিপ্ত কিছু তুলেছেন যা শুধু ব্যক্তি স্বার্থে বা তার অনুসারীদের স্বার্থে ব্যবহিত হয় । প্রকৃত পক্ষে মুল গ্রন্থের পূর্ণ বিষয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে তা ভুল প্রমাণিত হয় বা উদ্ধৃতির কোন অশংই মুল ধর্ম গ্রন্থের উক্ত দলিলে পাওয়া যায় না ।
কোন কোন ধর্মীয় শিক্ষিত লোক, ওস্তাদ বা গুরুরা আবার বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা বা সভা ইত্যাদি করে থাকেন । আলোচনার সময় দেখা যায় অমুক গ্রন্থে আছে এতটুকু বলেন কোন খন্ডে, কোন অধ্যায়, কোন পৃষ্ঠায় আছে অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ দলিল উল্লেখ করে না বা করলে ও পূর্ণ বিষয় উপস্থাপন না করে কাটছাট করে আংশিক কিছু বলেন । তার আংশিক ব্যাখ্যা এবং মুল ধর্ম গ্রন্থের পূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ উল্ট হয়ে যায়।
উপরোক্ত সকল বিষয়ই কোন কোন লোকের চিন্তা শক্তিতে আঘাত হানে এবং ধর্মহীনতায় ভুগতে থাকেন ।
সংশোধণী প্রস্তাবঃ
•
• যারা লিখিত ভাবে কোন বিষয় জানতে চায় এবং যারা জানাবেন তাদের উচিত হবে কোন ওস্তাদ বা গুরুর মতামত বা লিখিত কোন বইয়ের মতামত না জানিয়ে মুল ধর্ম গ্রন্থের আলোকে পূর্ণাঙ্গ দলিল আকারে পেশ করা যাতে উক্ত ব্যক্তি মুল ধর্ম গ্রন্থের সাথে মিলিয়ে সঠিক সমাধান পেতে পারে ।
•
• একজনের লিখিত দলিল মুল ধর্ম গ্রন্থের আলোকে সঠিক নাও হতে পারে তখন যে জানতে চায় সে কয়েকজন ওস্তাদ বা গুরুর কাছে লিখিত দিতে পারেন এবং সকলের দলিল একত্রিত করে সংখ্যায় যে দলিল বেশী মিলে তা মুল ধর্ম গ্রন্থের সহিত মিলিয়ে নিতে পারেন ।
•
• মুল ধর্ম গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে, একই ভাষায় বিভিন্ন অনুবাদক আছে । তাই পাওয়া দলিল একজন অনুবাদকের সাথে না মিলিয়ে কয়েকজন অনুবাদকের সাথে মিলাতে পারেন । যা সংখ্যায় বেশী মিলবে তা অনুসরণ করতে পারেন ।
•
• কোন লোকের জানার বিষয়, কোন ধর্মীয় বই, কোন বিষয়ে আলোচনা বা সভা ইত্যাদিতে মনগড়া, দুনিয়ার স্বার্থে, দলের স্বার্থে, ব্যক্তি স্বার্থে কোন কথা না থাকাই ভাল । মুল ধর্ম গ্রন্থের কোন দলিল কাটছাট না করে পূর্ণাঙ্গ রূপে পেশ করলে সকল ধর্মের লোকই উপকৃত হবে ।
•
• কেউ জানতে চাইলে জানানে ওয়ালা বিরক্ত হবেন না । অপব্যাখ্যা দিবেন না । আপনার জানা না থাকলে পরে জানাবেন বা উপরের কোন লোকের কথা বলে দিতে পারেন । যা জানতে চায় তা জানাবেন ভিন্ন কিছু জানাবেন না । জানার বিষয় সাদৃষ্য অন্য কিছু থাকলে তা দলিল আকারে জানাতে পারেন ।
•
• মুল ধর্ম গ্রন্থের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন যারা বুঝতে পারেন না তারা কয়েকজন ধর্মীয় শিক্ষিত লোক, ওস্তাদ বা গুরু কাছে জেনে নিতে পারেন । সংখ্যায় যে ব্যাখ্যা বেশী মিলবে তা অনুসরণ করতে পারেন ।
•
• যারা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সভা করেন তাদের বক্তিতায় যখনই কোন মুল ধর্ম গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিবেন তখন পূর্ণাঙ্গ দলিল পেশ করবেন । মনে না থাকলে নোট করে আনতে পারেন ।
উপরোক্ত লেখায় কেউ যদি ভুল বুঝেন এবং ভাষাগত কারনে আঘাত প্রাপ্ত হন তার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী । আমি সকল ধর্মীয় শিক্ষিত লোক, ওস্তাদ বা গুরুদের দোষারোপ করছি না । সকল ধর্মেই অনেক ভালো ভালো ধর্মীয় শিক্ষত লোক, ওস্তাদ বা গুরু আছে যাদের লেখা বা কথা মুল ধর্ম গ্রন্থের সাথে পুরপুরি মিলে যায় এবং পরিপূর্ণ দলিল ও থাকে । আমার কথা হলো যে যাই লেখেন বা বলেন তা মুল ধর্ম গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ দলিল পেশ করবেন যাতে সকলেই উহা যাচাই বাচাই করতে পারে
আসলে আমার উদ্দেশ্য এই, সকল ধর্মেই দেখা যায় বিভিন্ন গ্রুপ আছে । একেকটি গ্রুপ আবার বিভিন্ন দলে বিভিক্ত । একই ধর্মের লোক একে অপরের সাথে তর্ক বির্তকে লিপ্ত এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সংঘাতে ও লিপ্ত হয় ।
এটি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ী তর্ক বির্তক সংঘাত নিরুপনের একটি সংক্ষিপ্ত দিক নির্দেশণা মাত্র । আমি বিশ্ব ধর্ম জগতে সবচেয়ে কম জ্ঞানের অধিকারী । আমার চেয়ে বিশ্বে অনেক জ্ঞানী গুনী লোক আছে । তারা হয়তো আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে আরো বড় আকারে তাদের মুল ধর্ম গ্রন্থের আলোকে ব্যাপক ভাবে উপস্থাপন করতে পারবে । এতে সকল ধর্মের লোকই শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্ম পালন করতে পারবে এবং সংঘাতকে এড়িয়ে চলতে পারবে ।
পরিশেষে আমি বলতে চাই বিশ্বে যত ধর্ম আছে তার মধ্যে এক ধর্মের অনুসারীর কিছু লোক অন্য ধর্মের অনুসারীদের কটাক্ষ করে । ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানে এমনকী কোথাও আবার প্রচন্ড সংঘাতে লিপ্ত হয় । আমি সকল ধর্মের অনুসারীদের বলতে চাই এভাবে তর্ক বিতর্ক না করে মুল ধর্ম গ্রন্থের আলোকে সকলের মধ্যে মিলগুলো খুজে বের করুন এবং মিলে মিশে চলুন ।
আমি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়ায় সকলের জন্য কোরআনের তিনটি আয়াত উল্লেখ করে আমার লিখনী শেষ করলাম ।
মিল
সুরাঃ আল ইমরানঃ আয়াত নং-৬৪
“এস সে কথায় যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই”
অমিল
সুরাঃ কা-ফিরুনঃ আয়াত-০৬
“তোমাদের ধর্ম তোমাদের আমার ধর্ম আমার কাছে”
সুরাঃ আশ-শুরাঃ আয়াত-১৫
“আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তমাদের কর্ম”
বিষয়: বিবিধ
১৭৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন