এ’তেকাফ, লাইলাতুল ক্বদর, সদকায়ে ফিতর এবং………

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ২৯ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৫৪:০৭ সকাল



প্রত্যেক বছর নবী (সাঃ) দশ দিন এতেকাফ করতেন । কিন্তু যে বৎসর হুজুর (সাঃ) ইন্তেকাল করলেন সে বছর বিশ দিন এতেকাফ করেছিলেন ।-সহিহ আল বুখারী ৪/৬৩৯ হাদিস নং ৪৬২৭

হযরত ছফিয়্যা (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এতেকাফ অবস্থায় ছিলেন, আমি রাত্রে হুজুরের (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আসি এবং অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলি, পরে যখন ফিরে যাওয়ার জন্য উঠি তখন নবী (সাঃ) আমাকে পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্য আমার সাথে সাথে আসেন ।-মুসলিম, সহিহ আল বুখারী ৩/২৯৭ হাদিস নং ৩০৩৯

হযরত আয়েশা (রাজিঃ) বলেন, এতেকাফকারীর জন্য সুন্নাত হলো সে যেন কোন অসুস্থকে দেখতে না যায়, জানাযায় শরীক না হয়, স্ত্রীকে স্পর্শ না করে, তার সাথে সহবাস না করে এবং এতেকাফের স্থান থেকে মানবীয় প্রয়োজন ব্যতীত বের না হয় । রোযা বিনে এতেকাফ হয় না । আর জামে মসজিদ ব্যতীত অন্য জায়গায় এতেকাফ হয় না ।-সহিহু সুনানি আবিদাউদ ২/৮৭ হাদিস নং ২৪৭৩

হযরত আয়েশা (রাজিঃ) বলেন, নবী (সাঃ) ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত রমযানের শেষ দশ তারিখে এতেকাফ পালন করতেন । হুজুরের (সাঃ) পর হুজুরের সহধর্মীনিরা এতেকাফ পালন করেন ।-মুসলিম শরীফ ৪/১৪৮ হাদিস নং ২৬৫১

হযরত ইবনে উমর (রাজিঃ) নবী (সাঃ) থেকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি জাহেলী যুগে মসজিদে হারামে এক রাত এতেকাফ করার নযর করেছিলাম, তা কি পূরা করতে হবে ? হুজুর (সাঃ) বললেন, মান্নত পূরা কর ।-সহিহ আল বুখারী ২/২৮৮ হাদিস নং ১৮৮৯

কদর

হযরত আয়েশা (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রমযানের শেষ দশ তারিখের বেজড় রাতসমুহে লাইলাতুল কদরকে তালাশ কর ।-সহিহ আল বুখারী ২/২৮৪ হাদিস নং ১৮৭৪

হযরত আয়েশা (রাজিঃ) বলেন, আমি রাসুল (সাঃ) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আমি শবে কদরকে পাই তাহলে কোন দোয়া পড়ব ?

হুজুর (সাঃ) বললেন, এই দোয়া পড়- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী ।-সহিহু সুনানিত তিরমিযী ৩/১৭০ হাদিস নং ৩৭৬০

সদকায়ে ফিতর

হযরত ইবনে আব্বাস (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) রোযাদারকে অনর্থক কথ্য ও অশ্লীল ব্যবহার থেকে পবিত্র এবং গরীবদের মুখে অন্ন দেওয়ার জন্য সদকায়ে ফিতর ফরজ করেছেন ।

যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করেছে তার সদকায়ে ফিতর আদায় হয়ে গেছে ।

আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পর আদায় করল তার সদকা সাধারণ সদকায় পরিণত হবে ।-আহমাদ, সহিহ সুনানি ইবনে মাজাহ ২/১১১ হাদিস নং ১৮৫৪

হযরত ইবনে উমর (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) রমযানের সদকা ফিতর হিসাবে এক ছা খেজুর অথবা এক ছা জব, গোলাম, আজাদ, পুরুষ, মহিলা, ছোট বড় প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ করেছেন ।-মুসলিম, সহিহ আল বুখারী ২/৬০ হাদিস নং ১৪১৫

কাযা রোযা

হযরত আয়েশা (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি মারা গেলে আর তার উপর ফরজ রোযা বাকী থাকলে তখন তার ওয়ারিসগণ কাজা আদায় করে দিবে ।-মুসলিম, সহিহ আল বুখারী ২/২৫৫ হাদিস নং ১৮১২

হযরত আসমা বিনতে আবুবকর (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এর জামানায় একদিন আমরা মেঘের কারনে রোযা ইফতার করেছি, কিন্তু পরে সূর্য দেখা গেছে । [হাদিসের রাবি বলেন] আমি হিশামের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষদের কি কাজার আদেশ দেয়া হয়েছিল ? হিশাম বলল, কাজা ব্যতীত অন্য কোন পন্থাও তো ছিল না ।-ইবনে মাজাহ, সহিহ আল বুখারী ২/২৫৮ হাদিস নং ১৮২০

নফল রোযা

শা’বান মাস হল রমজানের প্রস্তুতি মাস। রাসুলুল্লাহ সা: এ মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোজা রেখে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ একাধারে এত বেশি রোজা পালন করতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম, তিনি হয়তবা আর রোজা ত্যাগ করবেন না। আবার কখনো এত বেশি পরিমাণে রোজা না করা অবস্থায় কাটাতেন যে, আমরা বলাবলি করতাম যে, তিনি বোধহয় আর নফল রোজা পালন করবেন না । আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে রজমান ব্যতিত অন্য কোন মাসে পুরা মাস রোজা পালন করতে দেখিনি ।

আর শা’বান মাস ব্যতিত অন্য কোন মাসে এত বেশি পরিমাণের নফল রোজা পালন করতেও দেখি নি । [বোখারী-১৮৩৩, বাংলা বোখারী-১৮৪৫, মুসলিম-১৯৫৬, আবু দাউদ-২০৭৯, মুসনাদু আহমদ-২৩৬১৩, মিশকাতুল মাছাবীহ-২০৩৬,সহীহ আত-তারহীব ওয়াত তারগীব-১০২৪]

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমযানের রোযা রেখে প্রত্যেক বৎসর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখবে, সে সারাজীবন রোযা রাখার ছাওয়াব পাবে ।-আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসলিম শরীফ ৪/১৩১ হাদিস নং ২৬২৫

হযরত আবু হুরায়রা (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, সোমবার এবং বৃহস্পতিবার মানুষের কার্যসমুহ আল্লাহর কাছে পেশ করা হয় তাই আমি চাই যখন আমার আমল পেশ করা হবে তখন আমি যেন রোযাবস্থায় থাকি ।-সহিহু সুনানিত তিরমিযী ৩/১২২ হাদিস নং ৪৪৭

হযরত আবু কাতাদাহ (রাজিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আরাফার রোযা আগের পরের দু’বৎসরের গুনাহ মাফ করে দেয় এবং আশুরার রোযা বিগত এক বৎসরের গুনাহ সমুহ ক্ষমা করে দেয় ।-আহমাদ, আবুদাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসলিম শরীফ ৪/১২৬ হাদিস নং ২৬১৪

মাকরুহ রোযা

হযরত আয়েশা (রাজিঃ) বলেন, যে হাজী কোরবানী দিতে অক্ষম সে ব্যতীত অন্য কারো জন্যে আয়্যামে তাশরীকের রোযা রাখার অনুমতি দেয়া হয়নি ।-সহিহ আল বুখারী ২/২৭৪ হাদিস নং ১৮৫৭

বিষয়: বিবিধ

১৯১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File