দান করার নিয়ম কানুন (২য়)
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ২৭ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৫০:৪২ সকাল
যাকাতের নিয়ম কানুন (১ম)
১ম অংশ- http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/23030 (plz click& read)
দান প্রসঙ্গ
আল্লাহ তা’আলা বলেন-তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও আর আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাক । যা কিছু ভাল ও কল্যাণ তোমরা নিজেদের জন্য অগ্রীম পাঠিয়ে দিবে তা আল্লাহর নিকট সঞ্চিত মওজুদ রূপে পাবে । এটাই অতীব উত্তম । আর এর শুভ প্রতিফলনও খুব বড় (মুজাম্মিল আয়াত ২০);
তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করেছেন তা থেকে ব্যয় কর । অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরুষ্কার (আল হাদিদ আয়াত ৭);
সৎ কর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎ কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লহর উপর, ক্বিয়ামত দিবসের উপর, মালায়িকাদের উপর এবং সমস্ত নবী রাসুলদের উপর । আর সম্পদ ব্যয় করবে তারই মুহাব্বাতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষূক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য (বাকারা আয়াত ১৭৭);
তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কক্ষনো পুণ্য লাভ করবে না, যা কিছু তোমরা খরচ কর নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে খুব ভালভাবেই অবগত (আল ইমরান আয়াত ৯২)
আব্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) আসমাহ (রাযিঃ) কে বলেন-(দান না করে) গুনে গুনে সঞ্চয় করে রেখো না, তাহলে আল্লাহও তোমাকে না দিয়ে সঞ্চয় করে রাখবেন (বুখারী হাদিস ১৩৪১);
আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন-মহান আল্লাহ বলেছেনঃ হে আদম সন্তানেরা! তোমরা অকাতরে দান করতে থাক, আমিও তোমাদের উপর ব্যয় করব (মুসলিম হাদিস ২১৭৯);
দান আত্মীয় থেকে শুরু করতে হবেঃ আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন রাসুল(সাঃ) বলেন-উত্তম সদাক্বাহ হলো যা দান করেও দাতার সম্পদ কমে না । নিজের আত্মীয়দের থেকে (দান খয়রাত) শুরু কর (বুখারী হাদিস ৪৯৫৬);
আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন-একটি দীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করলে, একটি দীনার গোলাম আজাদ করার জন্য এবং একটি দীনার মিসকীনদের দান করলে এবং আরো একটি তোমার পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করলে । এর মধ্যে (ছওয়াবের দিক থেকে) ঐ দীনারটি উত্তম যা তুমি তোমার পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করলে (সহীহ মুসলিম হাদিস ২১৮২)
আপনি গিয়ে রাসুল (সাঃ) কে বলুন, দুজন মহিলা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে । তারা আপনার কাছে জানতে চাচ্ছে-যদি তারা তাদের সদাক্বাহ নিজ স্বামীকে দান করে এবং তাদের ঘরেই প্রতিপালিত ইয়াতীমদের দান করে তাহলে কি তা আদায় হবে ? আর অনুরোধ হলো আমাদের পরিচয় তাঁকে জানাবেন না । রাবী বলেন অতঃপর বিল্লাল (রাযিঃ) রাসুল (সাঃ) এর কাছে গিয়ে ব্যাপারটি জিজ্ঞেস করলেন । রাসুল (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন মহিলাদ্বয় কে ? তিনি বললেন, একজন আনসার গোত্রের এবং অপরজন যায়নাব । রাসুল (সাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কোন যায়নাব ? তিনি বললেন আব্দুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব । অতঃপর তাকে রাসুল (সাঃ) বললেন, তারা উভয়েই তাদের দানের জন্য দ্বিগুন ছওয়াব পাবে । এক আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্বব্যবহারের জন্য; দুই সদাক্বাহ করার জন্য (সহীহ মুসলিম হাদিস ২১৮৯);
তাদের ঠিক পথে নিয়ে আসা তোমার দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছে ঠিক পথে পরিচালিত করেন, বস্তুত তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজেদের জন্যই এবং তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ব্যয় করে থাক এবং যা কিছু তোমরা মাল হতে ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তার ফল পুরোপুরী দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না (বাকারা আয়াত ২৭২);
সামান্য হলেও দান করঃ আবী ইবনু হাতিম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আমি নবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম হতে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুর সদাক্বাহ করে হলেও (বুখারী আঃ প্রঃ ১৩২৫ ইঃ ফাঃ ১৩৩১)
মৃত ব্যক্তির নামে দানঃ আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি নবী (সাঃ) কে বললেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃতু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি (মৃতুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হলে কিছু সদাক্বাহ করে যেতেন । এখন আমি তার পক্ষ হতে সদাক্বাহ করলে তিনি এর প্রতিফল পাবেন কি ? তিনি নবী (সাঃ) বললেন হ্যাঁ (বুখারী হাদিস ১২৯৭, মুসলিম হাদিস ২১৯৭)
প্রতি ভাল কাজই সদাক্বাহঃ আবু যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার হাস্যজ্জ্বল মুখ করাটাও একটা দান; কাউকে ভাল কাজের উপদেশ দেয়াটাও একটা দান; পথ ভুলা মানুষকে পথ দেখানোও একটা দান; কোন চক্ষুহীন ব্যক্তিকে সাহায্য করাও তোমার একটা দান; চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা বা হাড় সরিয়ে দেয়াও একটা দান এবং তোমার বালতি হতে তোমার (অপর) ভাইয়ের বালতি ভরে দেয়াও তোমার একটা দান (তিরমি্যী, মেশকাত হাদিস ১৮১৬/২৩);
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন-প্রতিটি ভাল কাজই সদাক্বাহ অর্থাৎ দান হিসেবে গণ্য (মুসলিম হাদিস ২১৯৯);
আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাঃ) এর নিকট কিছু সংখ্যক সাহাবী তাঁর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল ! ধন সম্পদের মালিকেরা তো সব ছওয়াব লুটে নিয়ে গেছে । কেননা আমরা যেভাবে সালাত আদায় করি তারাও সেভাবে আদায় করে । আমরা যেভাবে সিয়াম পালন করি তারাও সেভাবে পালন করে । কিন্তু তারা তাদের অতিরিক্ত সম্পদ দান করে ছওয়াব লাভ করছে অথচ আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না । নবী (সাঃ) বললেন আল্লাহ তা’আলা কি তোমাদের এমন অনেক কিছু দান করেননি! যা সদাক্বাহ করে তোমরা ছওয়াব পেতে পার ? আর তা হলো প্রত্যেক তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক তাক্ববীর (আল্লহু আকবার) একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক আলহামদুলিল্লাহ বলা একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক ভাল কাজের আদেশ ও উপদেশ দেয়া একটি সদাক্বাহ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা ও বাধা দেয়া একটি সদাক্বাহ । এমনকি তোমাদের শরীরের অংশে অংশে সদাক্বাহ রয়েছে । অর্থাৎ আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও একটি সদাক্বাহ (মুসলিম হাদিস ২২০০)
দানের উত্তম সময়
যারা নিজেদের মাল রাতে ও দিনে, প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ব্যয় করে থাকে, তাদের জন্য সেই দানের ছওয়াব তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না (বাকারাহ আয়াত ২৭৪);
হে ঈমানদারগণ! আমার দেয়া জীবিকা থেকে খরচ কর সেদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ কাজে আসবে না । বস্তুতঃ কাফিরগণই অত্যাচারী-বাকারা আয়াত ২৫৪);
আমি তোমাদের যে রিয্ক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে) হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য কেন অবকাশ দাও না, দিলে আমি সদাক্বাহ করতাম এবং সৎ কর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম (মুনাফিকুন আয়াত ১০)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন-কারো আপন জীবিনকালে এক দিরহাম দান করা তার মৃত্যুকালে একশত দিরহাম দান করা অপেক্ষা অধিক উত্তম (আবু দাউদ, মেশকাত হাদিস ১৭৭৬)
যাকাত ও দানের উপকারিতা
নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সৎকাজ করে । সালাত প্রতিষ্ঠিত করে এবং যাকাত দান করে, তাদের পুরুষ্কার তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে (বাকারা আয়াত ২৭৭);
তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেন । তিনি উত্তম রিয্ক দাতা (সাবা আয়াত ৩৯)
আল্লাহর পথে দান বৃদ্ধি পায়ঃ যারা আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ব্যয় করে, তাদের (দানের) তুলনা সেই বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মিল, প্রত্যেক শীষে একশত করে দানা এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন বর্ধিত হারে দিয়ে থাকেন । বস্তুত আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, জ্ঞানময় (বাকারা আয়াত ২৬১);
দানে বিপদ কাটেঃ আলী (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন দান আল্লাহ তা’আলার রাগ প্রশমিত করে এবং মন্দ মৃত্যু রোধ করে (তিরমি্যী, মেশকাত হাদিস ১৮১৪/২১);
আলী (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন-তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবে । কেননা বিপদাপদ তাকে অতিক্রম করতে পারে না (অর্থাৎ দানে দূরীভুত হয়)-মেশকাত হাদিস ১৭৯৩;
দানের ফাযীলাতঃ রাসুল (সাঃ) বলেন-যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুরও দান করে আল্লাহ তা’আলা তার ডান হাতে গ্রহন করেন । অতঃপর তা দানকারীর জন্য বাড়তে থাকেন, যেভাবে তোমাদের মধ্যে কেউ আপন ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন-পালন করতে থেকে । অবশেষে তা একদিন পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায় (মুসলিম হাদিস ২২১২)
১) অন্তরকে পরিষ্কার পরিছন্ন করে, কৃপনতা ও কার্পণ্যের হীন চরিত্র থেকে মুক্ত করে।
২) ধনী গরীবের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করে ।
৩) যাকাত ঋণগ্রস্থের ঋণ শোধ করে দিয়ে তার মনের পেরেশানী দূর করে ।
৪) ঈমানের মধ্যে দৃঢ়তা আনে এবং পরিপূর্ন বিশ্বাস সৃষ্টি করে ।
৫) যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে যাকাত তাদের প্রস্তুত করে ।
৬) কোন মুসাফির মুসলিম যাত্রা পথে বিপদে পড়লে ঐ পরিমাণ যাকাতের মাল দেয়া যাতে ঘরে ফেরত যেতে পারে ।
এছড়া আরো বহুবিধ উপকারীতা রয়েছে । রাসুল (সাঃ) বলেছেন-ন্যায় নিষ্ঠার সাথে যাকাত দানকারী কর্মী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী গাজীর ন্যায় (আবু দাউদ, তিরমি্যী, মেশকাত হাদিস ১৬৯৩/১৪)
করযে হাসানা ও অনুসরনীয় বিষয়ঃ যদি তোমরা আল্লাহকে করযে হাসানা দাও তবে তিনি তোমাদেরকে তা কয়েকগুন বাড়িয়ে ফেরত দিবেন এবং তোমাদের গুনাহসমুহ মাফ করে দেবেন (তাগাবুন আয়াত ১৭)
(২য় চলবে ৩য় পর্যন্ত)
দান ও যাকাত না দেয়ায় দুনইয়ার ও আখিরাতের ভয়াবহ শাস্তি (৩য়)
৩য় অংশ- http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/23234 (plz click& read)
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন